হিরো ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপের প্রথম ম্যাচেই জয় পেল ভারত। শুক্রবার ভুবনেশ্বরে মঙ্গোলিয়াকে ২-০-য় হারিয়ে চতুর্দেশীয় টুর্নামেন্ট শুরু করল বিশ্বের ১০১ নম্বর ফুটবলখেলিয়ে দেশ। ম্যাচের প্রথম ১৫ মিনিটের মধ্যেই এ দিন দু’গোলে এগিয়ে যায় ভারত। সেই দু’গোলের পর একাধিক সুযোগ পেলেও ব্যবধান বাড়াতে পারেননি সুনীল ছেত্রীরা।

ম্যাচের দ্বিতীয় মিনিটেই কেরালা ব্লাস্টার্সের সাহাল আব্দুল সামাদের গোলে এগিয়ে যায় ভারত। ১৫ মিনিটের মাথায় গত হিরো আইএসএলের সেরা ফুটবলার লালিয়ানজুয়ালা ছাঙতে ব্যবধান বাড়ান। কিন্তু ওডিশার রাজধানীর চরম উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়ায় বাড়তি পরিশ্রম করতে পারেনি কোনও দলই। বিশ্বের ১৮৩ নম্বর মঙ্গোলিয়া এ দিন সম্ভবত পুরোপুরি রক্ষণাত্মক ফুটবল খেলার পরিকল্পনা নিয়েই নেমেছিল। দু’টি গোল খাওয়ার পর তারা আরও রক্ষণাত্মক হয়ে ওঠে।

এ দিন বল দখলের লড়াইয়ে অনেক এগিয়ে (৬৫-৩৫) থাকা আক্রমণাত্মক ভারতের এগারোটি শটের মধ্যে গোলমুখী ছিল চারটি। সেই জায়গায় মঙ্গোলিয়া মাত্র দু’টি শট নেয়, যার মধ্যে একটি ছিল গোলে। ভারত যেখানে আধ ডজন কর্নার আদায় করে নেয়, সেখানে মঙ্গোলিয়া একটির বেশি কর্নার পায়নি।

প্রথম এগারোয় মাঝমাঠে আক্রমণাত্মক মিডফিল্ডারদের রেখে ভারতীয় কোচ ইগর স্টিমাচ এ দিন আগাম বুঝিয়ে দেন যে, তারা আক্রমণাত্মক ফুটবলই খেলবে। লালেঙমাউইয়া রালতে (আপুইয়া) থেকে শুরু করে উদান্ত, থাপা, ছাঙতে, সাহাল প্রত্যেকেই আক্রমণাত্মক ফুটবলার। আর সামনে সুনীল ছেত্রী তো ছিলেনই। ভারতের খেলায় তাই শুরু থেকেই আক্রমণের ঝাঁঝ টের পায় মঙ্গোলিয়া।

দ্বিতীয় মিনিটেই গোল করে ভারতকে এগিয়ে দেন সাহাল আব্দুল সামাদ। ডানদিকের উইং দিয়ে ওঠা অনিরুদ্ধ থাপার মাটি ঘেঁষা ক্রস দখলে নেওয়ার চেষ্টা করেও পারেননি মঙ্গোলিয়ার গোলকিপার এঙ্খতাইভান। তাঁর হাত ছুঁয়ে সেই বল বক্সের মাঝখানে সহালের বাঁ পায়ে এলে তিনি ঠাণ্ডা মাথায় তা গোলে ঠেলে দেন (১-০)। 

দ্বিতীয় গোলটি আসে ১৫ মিনিটের মাথায়, যখন কর্নার থেকে বল গোলে পাঠিয়ে দেন লালিয়ানজুয়ালা ছাঙতে। কর্নার থেকে প্রথমে গোলের উদ্দেশ্যে হেড করেন সন্দেশ ঝিঙ্গন। প্রতিপক্ষ তা আটকে দেওয়ার পর ফিরতি বল ঝিঙ্গনের গায়ে লেগে তাঁর কাছে গেলেসোজা গোলে শট নেন ছাঙতে (২-০)।

দ্বিতীয় গোলের দু’মিনিট পরেই গোলমুখী উদান্ত সিংকে বক্সের মধ্যে ফাউল করেন মঙ্গোলিয়ার দুলগুন। ভারতীয় ফুটবলাররা পেনাল্টির জোরালো আবেদন জানালেও রেফারি তা নাকচ করে দেন। এই সিদ্ধান্ত ভারতের পক্ষে গেলে হয়তো আরও একটি গোল পেয়ে যেত তারা। বিরতির পাঁচ মিনিট আগে বাঁ দিক থেকে আকাশ মিশ্রর দেওয়া ক্রস পেয়ে সাহালকে তাঁর দ্বিতীয় গোল কার্যত সাজিয়ে দেন সুনীল। কিন্তু তাঁর শট বারের ওপর দিয়ে চলে যায়।

আক্রমণের পাশাপাশি এ দিন মঙ্গোলিয়াকে মাঝমাঠেই আটকে রাখেন ভারতীয় মিডফিল্ডার ও ডিফেন্ডাররা। মঙ্গোলিয়া সম্ভবত অনভ্যস্ত উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়ায় বাড়তি পরিশ্রম করে ম্যাচে ফিরতে পারেনি। ভারতের দক্ষ রক্ষণ-প্রহরীদের বিরুদ্ধে যথেষ্ট দক্ষতাও দেখাতে পারেননি তাঁরা।

প্রথমার্ধে একবারই, ৩৭ মিনিটের মাথায়, বল নিয়ে ভারতের বক্সে ঢুকে পড়তে দেখা যায় বালজিনিয়াম বাটমুঙ্খকে। কিন্তু তাঁকে বেশ ঝুঁকি নিয়েই পিছন থেকে ট্যাকল করেন আনোয়ার আলি। রেফারি আর একটু সজাগ হলে হয়তো এক্ষেত্রে পেনাল্টিও দিতে পারতেন। কিন্তু সৌভাগ্যবশত বেঁচে যান আনোয়ার।

এ দিন সন্ধ্যায় ভুবনেশ্বরের ৩১ ডিগ্রি সেলসিয়স তাপমাত্রার সঙ্গে ৮২ শতাংশ আর্দ্রতা যে দুই দলের খেলোয়াড়দের প্রথমার্ধেই বেশ কাবু করে ফেলে, তা দৃশ্যতই বোঝা যায়। তার ওপর মঙ্গোলিয়ায় এখন তাপমাত্রা ২৫ থেকে ৫ ডিগ্রির মধ্যে ঘোরাফেরা করছে। তাই তাঁদের বেশি সমস্যায় পড়তে দেখা যায়।

দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে বল যথাসম্ভব নিজেদের পায়ে রেখে ম্যাচের গতি কমিয়ে রাখার প্রবণতা দেখা যায় মঙ্গোলিয়ার খেলায়। তবে মিনিট দশেকের মধ্যে ভারত প্রতিপক্ষের পা থেকে বল কেড়ে নেয় এবং বাঁ দিকের উইং দিয়ে আক্রমণে ওঠে। উদান্তর ক্রস থেকে থাপা বল গোলে রাখলেও তিনি অফসাইডে থাকায় সেই গোল নাকচ হয়ে যায়।

এরপর থেকে বলের দখল ফের ভারতের দিকেই চলে যায় এবং নিজেদের গোলের সামনে কার্যত দেওয়াল তুলে দেয় মঙ্গোলিয়া। ভারতকে আটকানোই তখন প্রধান কাজ ছিল তাদের। এবং সেই কাজে তারা সফলও হয়।

৫৯ মিনিটের মাথায় জোড়া পরিবর্তন করেন কোচ স্টিমাচ। সাহালের জায়গায় রোহিত কুমার ও উদান্ত সিংয়ের জায়গায় নামান নাওরেম মহেশ সিং-কে। ফের ভারত জোড়া পরিবর্তন করে ৭১ মিনিটের মাথায়, যখন সুনীল ছেত্রীর জায়গায় নামেন রহিম আলি এবং আপুইয়ার জায়গায় নামেন জিকসন সিং। কিন্তু এতজন আক্রমণাত্মক ফুটবলার নামিয়েও ব্যবধান বাড়াতে পারেনি তারা।

সুনীল ছেত্রীকে এ দিন চেনা ছন্দেদেখা যায়নি। কিছুটা নেমে খেলতে দেখা যায় তাঁকে। গোল করার চেয়ে গোলের সুযোগ তৈরির প্রবণতা বেশি দেখা যায় তাঁর মধ্যে। গোলের জন্য তিনি থাপা, ছাঙতে, সাহালদের ওপরই বেশি ভরসা করেন ভারতের সবচেয়ে বেশি আন্তর্জাতিক গোলের মালিক।

নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার ছ’মিনিট আগে তাঁর প্রথম আন্তর্জাতিক গোলটি করার সুযোগ পেয়েও হাতছাড়া করেন রোহিত কুমার। বাঁ দিকের কর্নার স্পটের সামনে থেকে নেওয়া থাপার ফ্রি-কিকে হেড করেন তিনি। যা সোজা ক্রসবারে গিয়ে ধাক্কা মারে। প্রথমার্ধে ভারতকে যতটা আক্রমণাত্মক মেজাজে দেখা গিয়েছিল, দ্বিতীয়ার্ধে সেই মেজাজে পাওয়া যায়নি তাদের। প্রথমার্ধে দু’গোলে এগিয়ে যাওয়ায় এবং সম্ভবত চরম আবহাওয়ার জন্য শেষ দিকে হাল ছেড়ে দিতে দেখা যায় ভারতীয় দলকে।

এ দিন ভারতের মতো লেবাননও জয় দিয়ে টুর্নামেন্ট শুরু করে। ৩-১-এ ভানুয়াতুকে হারিয়ে ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপ অভিযান শুরু করে তারা। 

ভারতীয় দল: অমরিন্দর সিং(গোল), আকাশ মিশ্র, সন্দেশ ঝিঙ্গন, আনোয়ার আলি (মেহতাব সিং), নিখিল পূজারি,লালেঙমাউইয়া রালতে (জিকসন সিং), উদান্ত সিং (নাওরেম মহেশ সিং), অনিরুদ্ধ থাপা, লালিয়ানজুয়ালা ছাঙতে,সাহাল আব্দুল সামাদ (রোহিত কুমার),সুনীল ছেত্রী (রহিম আলি)।