তিনি নিজে এখনও পর্যন্ত সেরা ছন্দে ফিরতে না পারলেও দলের ছন্দে ফেরা নিয়ে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই তাঁর মনে। তিনি ইস্টবেঙ্গলের স্প্যানিশ ফরোয়ার্ড হাভিয়ে সিভেরিও টোরো, যিনি গত বছর হায়দরাবাদ এফসি-র হয়ে খেলার পর এ মরশুমের আগে যোগ দিয়েছেন ইস্টবেঙ্গল শিবিরে।

তবে তাঁর কাছ থেকে যে ফর্মের প্রত্যাশা ছিল, তা এখন পর্যন্ত পূরণ করতে পারেননি সিভেরিও। চলতি ইন্ডিয়ান সুপার লিগে এখন পর্যন্ত সবকটি ম্যাচে খেললেও কোনও গোল করতে বা করাতে পারেননি তিনি। অথচ গত দুই মরশুমে হায়দরাবাদের হয়ে যথাক্রমে পাঁচটি ও সাতটি গোল করেছিলেন তিনি। কিন্তু এ বছর লাল-হলুদ জার্সি গামে মাঠে নেমে তিনি প্রতিপক্ষের গোলের কাছাকাছি পৌঁছলেও জালে বল জড়াতে পারছেন না। সাতটি ম্যাচে তাঁর একটিমাত্র শট গোলে রাখতে পেরেছেন। একটিই গোলের সুযোগ তৈরি করতে পেরেছেন এখন পর্যন্ত।

মরশুমের শুরুটা এতটা খারাপ হয়নি তাঁর। ডুরান্ড কাপে আর্মি ও পাঞ্জাব এফসি-র বিরুদ্ধে একটি করে গোল করেছিলেন তিনি। গোকুলাম এফসি-র বিরুদ্ধে একটি গোলে অ্যাসিস্টও করেন। কিন্তু আইএসএল শুরু হতেই হঠাৎ কেন ছন্দ হারালেন সিভেরিও, তা তিনি নিজেও জানেন না। তবে তাঁর আশা, তিনি ছন্দে ফিরে আসবেন।

সম্প্রতি indiansuperleague.com কে দেওয়া এক একান্ত সাক্ষাৎকারে সিভেরিও বলেছেন, “কার্লস কুয়াদ্রাতের প্রশিক্ষণে খেলা উপভোগ করছি। কারণ, উনি আমার ওপর অনেক আস্থা রেখেছেন। আশা করি, তাঁর আস্থার যথাযোগ্য প্রতিদান দিতে পারব”।

ইস্টবেঙ্গল গত ম্যাচেই দুঃসময় কাটিয়ে উঠেছে দারুন ভাবে। নর্থইস্ট ইউনাইটেড এফসি-কে তারা ৫-০-য় হারিয়ে জয়ের সরণিতে ফিরেছে। এই সাফল্য ধরে রাখতে গেলে দলের সবাইকে ভাল খেলতে হবে বলে মন্তব্য করেন কোচ। কিন্তু সিভেরিওর যা পারফরম্যান্স, তাতে কোচের তাঁর ওপর সন্তুষ্ট হওয়ার কথা নয়। শুরু থেকে তাঁকে পুরো ম্যাচেই খেলার সুযোগ দিয়েছেন কুয়াদ্রাত। এ পর্যন্ত সাতটি ম্যাচেই স্কোয়াডে থাকলেও তিনি তিনটি ম্যাচে প্রথম এগারোয় তাঁকে রেখেছিলেন ইস্টবেঙ্গল কোচ। কিন্তু তিনি ছন্দে নেই দেখে বেশিরভাগ ম্যাচেই ম্যাচের মাঝখানে তাঁকে তুলে নিয়েছেন। চারটি ম্যাচে তিনি পরিবর্ত হিসেবে নামেন।

তবে কলকাতার ক্লাবে যোগ দিয়ে কোনও আফসোস নেই তাঁর। এই সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “মরশুমের শুরুটা ভালই হয়েছিল। অনেক বছর পর আমরা ডুরান্ড কাপের ফাইনালে উঠেছি। যদিও চ্যাম্পিয়ন হতে পারিনি। তবে পুরো টুর্নামেন্টেই আমরা ভাল খেলেছি। ইস্টবেঙ্গলে যোগ দিতে পেরে আমি খুশি”।

সতীর্থদের সম্পর্কেও যথেষ্ট উচ্ছ্বসিত ২৬ বছর বয়সী সিভেরিও। সতীর্থ ফরোয়ার্ড ক্লেটন সিলভা সম্পর্কে তিনি বলেন, “ক্লেটনকে খুব ভাল করেই চিনি আমি। ইস্টবেঙ্গলে যোগ দেওয়ার আগে ওর বিরুদ্ধে অনেক ম্যাচ খেলেছি। আইএসএলে যারা খেলে, তারা জানে ক্লেটন কতটা দক্ষ ফুটবলার। ক্লেটনকে আমি আমার মেন্টর হিসেবে দেখি। অনুশীলনে ক্লেটনই সবচেয়ে বেশি প্রাণোচ্ছল থাকে ও পরিশ্রমও করে খুব। ওর মানসিকতাই এ রকম। সেই জন্যই তো ও আইএসএলের অন্যতম সেরা অ্যাটাকার”।

শুধু ক্লেটন নয়, দলের দুই ভারতীয় উইঙ্গার নাওরেম মহেশ সিং ও নন্দকুমার শেখরকে নিয়েও যথেষ্ট উচ্চ ধারণা তাঁর। তাঁদের সম্পর্কে সিভেরিও বলেন, “আমাদের দলে ভারতের অন্যতম সেরা দুই উইঙ্গার রয়েছে। এই সুবিধাটা আমাদের কাজে লাগাতে হবে। ওরা খুবই পরিশ্রমী। মহেশ (২) ও নন্দ (২) দুজনেই গোল পাচ্ছে। অ্যাসিস্টও (যথাক্রমে ২ ও ৩) করছে ওরা। ওরা যে আমাদের দলের দুই গুরুত্বপূর্ণ সদস্য, এটা নিশ্চয়ই আলাদা করে বলে দিতে হবে না”।

গত মরশুম পর্যন্ত হায়দরাবাদ এফসি-তে খেলেন সিভেরিও। গত মরশুমে তিনি ক্লাবের হয়ে ন’টি গোল করেন। তার আগেরবার আইএসএলে হায়দরাবাদের চ্যাম্পিয়ন দলেরও সদস্য ছিলেন তিনি। ২০২১-এ স্পেনের লা পালমা আতলেটিকো থেকে হায়দরাবাদে যোগ দেন সিভেরিও। স্পেনের রেসিং সানতান্দার ও তাদের বি দল, লা পালমার বি দলের হয়েও খেলেছেন এই সেন্টার ফরোয়ার্ড। হিরো আইএসএলে ৪৫টি ম্যাচে ১২টি গোল রয়েছে তাঁর। গত মরশুমের শেষ টুর্নামেন্ট সুপার কাপে ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে জোড়া গোল করেন তিনি। সেই ইস্টবেঙ্গলই তাঁকে গত বছর জুনে সই করিয়ে নেয়।

শুধু যে সতীর্থদের জন্য ইস্টবেঙ্গলে ফুটবল জীবন উপভোগ করছেন সিভেরিও, তা নয়। তার কারণ লক্ষ্য লক্ষ্য সমর্থকেরাও। সমর্থকদের নিয়ে রীতিমতো উচ্ছ্বসিত স্প্যানিশ ফরোয়ার্ড বলেন, “সমর্থকদের কাছ থেকে যে সমর্থন আমরা পাচ্ছি, তা অসাধারণ। ওরা আমাদের যা ভালবাসে, সে জন্য ওদের যতই ধন্যবাদ দিই, তা যথেষ্ট নয়। সমর্থকদের ছাড়া আমাদের চলবেই না। কারণ, ওরাই আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তি। রাস্তায় দেখা হলেই ওরা জড়িয়ে ধরে, সেলফি তোলার জন্য বা সইয়ের জন্য আবদার করে। আমার খুব ভাল লাগে। এটা ঠিকই যে আমরা কতগুলো গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট হাতছাড়া করেছি, খারাপ সময়ও গিয়েছে আমাদের। তবে আমরা ফিরে আসব। সমর্থকদের এটুকু আশ্বাস দিতে পারি, আমরা তাদের মুখে হাসি ফোটাবার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করছি”। সেই ইঙ্গিত অবশ্য গত ম্যাচেই ৫-০-য় জয়ের মাধ্যমে রেখেছে লাল-হলুদ বাহিনী।