গোল ও ভারতীয় গোলদাতার সংখ্যায় সবার ওপরে হিরো আইএসএল
যাঁরা হিরো আইএসএল ২০২১-২২ একেবারে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দেখেছেন, তাঁরা খুব ভাল করেই জানেন এ মরশুমের বেশির ভাগ ম্যাচই কতটা উত্তেজনায় ভরপুর ছিল। নিন্দুকেরা অনেকে অনেক কথা বললেও, এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে এ বারের হিরো আইএসএলের মতো হাড্ডাহাড্ডি লড়াই আর কোনও মরশুমে দেখা যায়নি। শুধু লড়াই নয়, এ বারের মতো এত গোল, গোলদাতা এবং ভারতীয় গোলদাতাও কোনও বার দেখা যায়নি। আরও ভাল খবর হল এ বারের মতো পরিচ্ছন্ন ফুটবল আগের কয়েকবারে হয়নি।


যাঁরা হিরো আইএসএল ২০২১-২২ একেবারে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দেখেছেন, তাঁরা খুব ভাল করেই জানেন এ মরশুমের বেশির ভাগ ম্যাচই কতটা উত্তেজনায় ভরপুর ছিল। নিন্দুকেরা অনেকে অনেক কথা বললেও, এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে এ বারের হিরো আইএসএলের মতো হাড্ডাহাড্ডি লড়াই আর কোনও মরশুমে দেখা যায়নি। শুধু লড়াই নয়, এ বারের মতো এত গোল, গোলদাতা এবং ভারতীয় গোলদাতাও কোনও বার দেখা যায়নি। আরও ভাল খবর হল এ বারের মতো পরিচ্ছন্ন ফুটবল আগের কয়েকবারে হয়নি।
যদি কেউ মনে করে থাকেন, এ সব নিছকই কথার কথা, তা হলে তিনি সবচেয়ে বড় ভুল করবেন। কারণ, এই প্রতিটি কথার পিছনে আছে তথ্য-পরিসংখ্যান, যার নড়চড় হওয়ার কোনও সুযোগই নেই।
প্রবাদই আছে, সকালটা দেখেই বোঝা যায় দিনটা কেমন যাবে। তাই এটিকে মোহনবাগান ও কেরালা ব্লাস্টার্সের মধ্যে প্রথম ম্যাচেই হাফ ডজন গোল ইঙ্গিত দেয়, এ বারের হিরো আইএসএল মরশুমে আসতে চলেছে গোলের বন্যা। হায়দরাবাদ এফসি ও ব্লাস্টার্সের মধ্যে ফাইনালে ১২০ মিনিটে মাত্র দু’গোল হলেও একবার ভেবে দেখুন, কত গোলের সুযোগ হাতছাড়া করেছে দুই দল।
শুধু এই ম্যাচ কেন? সেমিফাইনালের দ্বিতীয় লেগে কত গোলের সুযোগ হাতছাড়া হয়েছে এটিকে মোহনবাগান ও হায়দরাবাদের, তাও একবার মনো করে দেখুন। সমর্থকদের আফসোস, অর্ধেক সুযোগও যদি কাজে লাগাতে পারত সবুজ-মেরুন বাহিনী, তাও চার গোলের ব্যবধানে জিতে ফাইনালে উঠতে পারত গতবারের রানার্স আপ-রা। কিন্তু ম্যাচটা দেখে যে ফুটবলপ্রেমীরা প্রচুর আনন্দ পেয়েছেন, এই নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই।
এই মরশুমে হিরো আইএসএলে মোট ৩৫৪ গোল হয়েছে, যা আগের সব নজিরকে ছাপিয়ে গিয়েছে। এর আগে কোনও মরশুমে এত গোল হয়নি দেশের এক নম্বর ফুটবল লিগে। গত মরশুমের চেয়ে ৫৬টি বেশি গোল হয়েছে এ বারে। অর্থাৎ ১৯ শতাংশ বেশি।
ম্যাচপ্রতি গড় গোলের ক্ষেত্রে অবশ্য গত ২০১৯-২০ মরসুমই সবার চেয়ে এগিয়ে। সে বার ম্যাচের সংখ্যা কম হলেও গোলের সংখ্যা ছিল সেই তুলনায় বেশি। তাই গড়ের হিসাবও বেশি ছিল। মোট গোল, গোলের গড় ও গোলের গড় সময়ের হিসাব কোন মরশুমে কত ছিল, তা একবার দেখে নেওয়া যাক।
- ২০২১-২২: ম্যাচ- ১১৫, গোল- ৩৫৪, গড়ে ম্যাচপ্রতি গোল- ৩.০৮, গোলপ্রতি সময়- ২৯.৩৪ মিনিট
- ২০২০-২১: ম্যাচ- ১১৫, গোল- ২৯৮, গড়ে ম্যাচপ্রতি গোল- ২.৫৯, গোলপ্রতি সময়- ৩৪.৭৩ মিনিট
- ২০১৯-২০: ম্যাচ- ৯৫, গোল- ২৯৪, গড়ে ম্যাচপ্রতি গোল- ৩.০৯, গোলপ্রতি সময়- ২৯.০৮ মিনিট
- ২০১৮-১৯: ম্যাচ- ৯৫, গোল- ২৫৪, গড়ে ম্যাচপ্রতি গোল- ২.৬৭, গোলপ্রতি সময়- ৩৩.৬৬ মিনিট
- ২০১৭-১৮: ম্যাচ- ৯৫, গোল- ২৬১, গড়ে ম্যাচপ্রতি গোল- ২.৭৫, গোলপ্রতি সময়- ৩২.৭৬ মিনিট
- ২০১৬: ম্যাচ- ৬১, গোল- ১৪৫, গড়ে ম্যাচপ্রতি গোল- ২.৩৮, গোলপ্রতি সময়- ৩৭.৮৬ মিনিট
- ২০১৫: ম্যাচ- ৬১, গোল- ১৮৬, গড়ে ম্যাচপ্রতি গোল- ৩.০৫, গোলপ্রতি সময়- ২৯.৫২ মিনিট
- ২০১৪: ম্যাচ- ৬১, গোল- ১২৯, গড়ে ম্যাচপ্রতি গোল- ২.১১, গোলপ্রতি সময়- ৪২.৫৬ মিনিট
২০১৮-১৯ মরশুমের পর থেকে লক্ষ্য করা যায় যে, গোলদাতাদের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। লিগের কয়েকজন বাঁধাধরা তারকাদের মধ্যে আর গোল সীমাবদ্ধ নেই। তারকা গোলদাতারা ছাড়াও আরও অনেকের পা বা মাথা থেকে গোল আসছে, যাঁরা এত দিন স্কোরশিটে নিজেদের নাম তুলতে পারেননি। তাই ২০১৯-২০ মরশুম থেকে গোলদাতার সংখ্যাও বাড়তে শুরু করল।
এ বারের ফাইনালের কথাই ধরুন। গোল করলেন কারা? রাহুল কেপি ও সাহিল তাভোরা, যাঁরা সারা লিগে আর একটিও গোল পাননি, তাঁরা কি না গোল করলেন ফাইনালে। শুধু তা-ই নয়। পরিসংখ্যান দেখলে বোঝা যাবে, হিরো আইএসএলে গত কয়েক বছরে ভারতীয় গোলদাতার সংখ্যা উল্লেখযোগ্য ভাবে বেড়েছে। আর এ বারে তো সবচেয়ে বড় খবর হল বিদেশিদের চেয়ে ভারতীয় ফুটবলাররা লিগে বেশি গোল করেছেন। সেই হিসেবও নীচে দেওয়া হল।
- ২০১৪: বিদেশি গোলদাতা- ৪৪, ভারতীয় গোলদাতা- ২০
- ২০১৫: বিদেশি গোলদাতা- ৪৯, ভারতীয় গোলদাতা- ২০
- ২০১৬: বিদেশি গোলদাতা- ৪৪, ভারতীয় গোলদাতা- ২১
- ২০১৭-১৮: বিদেশি গোলদাতা- ৫৭, ভারতীয় গোলদাতা- ৩১
- ২০১৮-১৯: বিদেশি গোলদাতা- ৫৫, ভারতীয় গোলদাতা- ৪১
- ২০১৯-২০: বিদেশি গোলদাতা- ৫৭, ভারতীয় গোলদাতা- ৪৩
- ২০২০-২১: বিদেশি গোলদাতা- ৫৬, ভারতীয় গোলদাতা- ৩৯
- ২০২১-২২: বিদেশি গোলদাতা- ৫৬, ভারতীয় গোলদাতা- ৬১
এই পরিসংখ্যান দেখে বুঝতেই পারছেন, শেষ দুই মরশুমে বিদেশি গোলদাতাদের সংখ্যা এক থাকলেও ভারতীয় গোলদাতাদের সংখ্যা কত বেড়েছে? শতকরার হিসাব কষলে তা দাঁড়াবে ৫৬ শতাংশ বেশি, ভারতীয় ফুটবলের পক্ষে যা সত্যিই দারুন খবর।
এটা অবশ্য প্রত্যাশিতই ছিল। কারণ, এই মরসুম থেকে প্রথম এগারোয় ভারতীয় খেলোয়াড়ের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। গতবার পর্যন্ত যেখানে প্রথম এগারোয় পাঁচজন বিদেশি ফুটবলার খেলানোর অনুমতি দেওয়া হত, সেখানে এ বার থেকে চারজন করে বিদেশিকে প্রথম এগারোয় থাকার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। সুতরাং, বোঝাই যাচ্ছে যে, প্রথম এগারোয় ভারতীয়র সংখ্যা বাড়ানোর সিদ্ধান্তটা একেবারেই খারাপ হয়নি।
শুধু যে গোলের সংখ্যা বা গোলদাতার সংখ্যা বেড়েছে, তা-ই নয়। পরিচ্ছন্নতার দিক থেকেও এ বারের হিরো আইএসএল মরসুম অন্যান্য মরশুমের চেয়ে এগিয়ে। নীচের পরিসংখ্যান দেখলেই বুঝতে পারবেন, রেফারিরা ম্যাচপ্রতি গড়ে সবচেয়ে কম হলুদ কার্ড দেখিয়েছেন এ বার। লাল কার্ডের পরিসংখ্যানও একই কথা বলছে।
- গড়ে প্রতি ম্যাচে হলুদ কার্ড:
২০২১-২২: ৩.৪৩, ২০২০-২১: ৪.০৩, ২০১৯-২০: ৪.৩৪, ২০১৮-১৯: ৩.৫৮, ২০১৭-১৮: ৩.৫৫, ২০১৬: ৩.৮৪, ২০১৫: ৪.১০, ২০১৪: ৩.৭৫
- গড়ে প্রতি ম্যাচে লাল কার্ড:
২০২১-২২: ০.১০, ২০২০-২১: ০.১৯, ২০১৯-২০: ০.২৩, ২০১৮-১৯: ০.৩২, ২০১৭-১৮: ০.২১, ২০১৬: ০.২৫, ২০১৫: ০.১৩, ২০১৪: ০.২৩
পারফরম্যান্সের মান, রক্ষণের দক্ষতা এবং মানসিকতা যে ক্রমশ উন্নত হচ্ছে ভারতের এক নম্বর ফুটবল লিগে, তা এই পরিসংখ্যানগুলি থেকেই স্পষ্ট। এর পরে এটাই দেখার, হিরো আইএসএলের পরের মরসুমগুলিতে আরও কত উন্নত, পরিচ্ছন্ন ও নিখুঁত ফুটবল দেখতে পাওয়া যায়।