ইন্ডিয়ান সুপার লিগ যত শেষ পর্যায়ের দিকে এগোচ্ছে, ইস্টবেঙ্গল এফসি-র প্লে অফে যাওয়ার রাস্তা ততই কঠিন হয়ে উঠছে। বুধবার তারা এফসি গোয়ার কাছে হারার পর তাদের ভাগ্য শুধু নিজেদের হাতে নেই, রয়েছে আরও তিনটি দলের হাতে। নিজেদের জয় ছাড়াও এখন তারা কী করবে, সে দিকেও তাকিয়ে থাকতে হবে লাল-হলুদ শিবিরকে। 

কলকাতার আর এক দল মোহনবাগান এসজি-র সামনে অবশ্য প্লে অফে যাওয়ার রাস্তা এতটা কঠিন নয়। তবে লিগশিল্ড জেতার দৌড়ে সবার আগে থাকার জন্য তাদের এখন সব ম্যাচে জিততে হবে। এই পরিস্থিতির মধ্যেই কলকাতার দুই প্রধান মুখোমুখি হচ্ছে আগামী রবিবার। যা হতে চলেছে আরও একটি ব্লক বাস্টার ফুটবল শো। 

বুধবার এফসি গোয়ার বিরুদ্ধে ০-১-এর হারে ইস্টবেঙ্গল। ফতোরদায় তাদের মার্কিন মিডফিল্ডার নোয়া সাদাউইয়ের দেওয়া ৪২ মিনিটের গোলে জয় পায় এফসি গোয়া। এই হারের পরে ইস্টবেঙ্গলের কোচ কার্লস  কুয়াদ্রাত সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, “এখনও ১২ পয়েন্ট পেতে পারি আমরা। তাই আমাদের ইতিবাচক মনোভাব বজায় রাখতে হবে”। কিন্তু এই মুহূর্তে লিগ টেবলের যা অবস্থা, তাতে ইস্টবেঙ্গলকে শুধু ১২ পয়েন্ট পেলেই হবে না, তাদের আশেপাশে থাকা তিনটি দলের পারফরম্যান্সের দিকেও তাকিয়ে থাকতে হবে তাদের। 

অবস্থাটা ঠিক কী রকম? লাল-হলুদ বাহিনীর এখনও চারটি ম্যাচ বাকি, মোহনবাগান এসজি (১০ মার্চ), কেরালা ব্লাস্টার্স (৩ এপ্রিল, কোচি), বেঙ্গালুরু এফসি (৭ এপ্রিল, কলকাতা) ও পাঞ্জাব এফসি (১০ এপ্রিল, দিল্লি)-র বিরুদ্ধে। এই চারটি ম্যাচের মধ্যে তারা যদি একটিতেও হারে, তা হলে তাদের প্লে অফের রাস্তা কার্যত বন্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু এই চার ম্যাচে জিতলেও যে তাদের সামনে প্লে অফের দরজা খুলে যাবে, তা একেবারেই নয়। এর পরেও তাদের নর্থইস্ট ইউনাইটেড এফসি, চেন্নাইন এফসি এবং জামশেদপুর এফসি-র গতিবিধির ওপর নজর রাখতে হবে। 

কিন্তু তারা বাকি সব ম্যাচে জেতার পরেও এই তিন দল কী করলে দেশের এক নম্বর ফুটবল লিগের সেরা ছয়ে যেতে পারে? নর্থইস্ট ইউনাইটেড এফসি-কে তাদের বাকি পাঁচটি ম্যাচের মধ্যে অন্তত পাঁচ পয়েন্ট খোয়াতে হবে। আজ, বৃহস্পতিবারই তারা নামছে পাঞ্জাব এফসি-র বিরুদ্ধে। এ ছাড়াও তাদের ম্যাচ বাকি মুম্বই সিটি এফসি, কেরালা ব্লাস্টার্স, চেন্নাইন এফসি, ওডিশা এফসি-র বিরুদ্ধে। 

তাকিয়ে থাকতে হবে চেন্নাইন এফসি-র শেষ পাঁচটি ম্যাচের দিকেও। কারণ, ইস্টবেঙ্গলকে সেরা ছয়ে উঠতে গেলে এই পাঁচ ম্যাচে তাদেরও অন্তত তিন পয়েন্ট খোয়াতে হবে এবং জামশেদপুর এফসি-কেও তাদের শেষ চারটি ম্যাচে অন্তত দু’পয়েন্ট খোয়াতে হবে। এই মুহূর্তে পরিস্থিতি এ রকমই, যা বদলে যেতে পারে আজকের নর্থইস্ট বনাম পাঞ্জাব ম্যাচের পর। 

মোহনবাগান সুপার জায়ান্টের ক্ষেত্রে অবশ্য হিসেবটা তিন দিন আগে যা ছিল এখনও তা-ই আছে। প্লে অফে পৌঁছতে গতবারের কাপ চ্যাম্পিয়নদের প্রয়োজন আর মাত্র এক পয়েন্ট। তাদের বাকি ছয় ম্যাচে জিতলে সবুজ-মেরুন বাহিনীর পয়েন্ট দাঁড়াবে ৫১, যা অন্য যে কোনও দলের সম্ভাব্য সর্বোচ্চ পয়েন্টের তুলনায় বেশি। তাই তারা বাকি সব ম্যাচ জিতলেই লিগশিল্ড জিতে নিতে পারবে। মুম্বই সিটি এফসি-র সঙ্গে তাদের যদি ড্র হয়, তা হলেও তারা শিল্ড জিততে পারে, যদি বাকি সব ম্যাচে জিততে পারে আন্তোনিও হাবাসের দল। 

এএফসি এশিয়ান কাপের জন্য জানুয়ারির অবকাশের পর যে ভাবে এগিয়েছে মোহনবাগান শিবির, তার পরে তাদের সম্ভাবনা নিয়ে আশাবাদী হওয়া যায়। নতুন বছর শুরুর পর জানুয়ারির শেষ থেকে ফের শুরু হয় আইএসএল। ততদিনে লিগের প্রায় অর্ধেক ম্যাচ খেলা হয়ে গিয়েছিল সব দলেরই। 

অবকাশের পর গত পাঁচ সপ্তাহে সব দলই ৫ থেকে ৮টি করে ম্যাচ খেলে ফেলেছে। অবকাশের পরের পারফরম্যান্সের কোনও টেবল যদি বানানো যায়, তা হলে দেখা যাবে, তাতে এক নম্বরে রয়েছে মোহনবাগান এসজি। কিন্তু ইস্টবেঙ্গল সেই ন’নম্বরেই রয়েছে। 

মোহনবাগান এই সময়ে ছ’টি ম্যাচ খেলে চারটি জয় ও দু’টি ড্র-সহ ১৪ পয়েন্ট পেয়ে সবাইকে পিছনে ফেলে দিয়েছে। মুম্বই সিটি এফসি জানুয়ারির অবকাশের পর ছটি ম্যাচ খেলে ১৩ পয়েন্ট অর্জন করে রয়েছে মোহনবাগানের পরেই। কিন্তু ওডিশা এফসি ছ’টির মধ্যে তিনটি জিতে ১১ পয়েন্ট নিয়ে আছে তিনে। জামশেদপুরেরও ৬ ম্যাচে ১১ পয়েন্ট। কিন্তু গোলপার্থক্যের জন্য তারা চার নম্বরে। বেঙ্গালুরু ৬ ম্যাচে দশ পয়েন্ট নিয়ে পাঁচে ও উল্লেখযোগ্য ভাবে পাঞ্জাব এফসি পাঁচ ম্যাচে তিনটি জয়ের ফলে ৯ পয়েন্ট নিয়ে রয়েছে ছ’নম্বর জায়গায়। 

এই সময়ে সবচেয়ে খারাপ ফল করেছে এফসি গোয়া, যারা সাত ম্যাচে দু’টি মাত্র জেতে ও আট পয়েন্ট সংগ্রহ করে এই তালিকাতেও ইস্টবেঙ্গল নয়ে, যারা আটটি ম্যাচের মধ্যে দুটি জয়, একটি ড্র ও পাঁচটি হারের ফলে অর্জন করেছে সাত পয়েন্ট এবং তার ফলে এখন শেষ রাউন্ডে তাদের কাছে প্রতি ম্যাচই ফাইনালের মতো। নতুন বছরে চেন্নাইন এফসি ও কেরালা ব্লাস্টার্স পাঁচটি করে আইএসএল ম্যাচ খেলে যথাক্রমে ছয় ও তিন পয়েন্ট অর্জন করেছে। 

চলতি মাসে ভারতীয় দলের বিশ্বকাপ বাছাই পর্বের ম্যাচের জন্য ১৫ থেকে ২৯ তারিখ ফের অবকাশ আসছে। ৩০ মার্চ থেকে ফের লিগের আসর বসবে এবং ওই সময়েই লিগ টেবলের ফয়সালা হয়ে যাবে এবং জানা যাবে প্লে অফে কে কার মুখোমুখি হবে।