নয় থেকে এক লাফে ছয়ে আসাটা খুব একটা সোজা নয় ঠিকই। কিন্তু চলতি ইন্ডিয়ান সুপার লিগে নয় ও ছয়ের দূরত্ব মাত্র তিন পয়েন্টের, যা একটা ম্যাচ জিতলেই অর্জন করা যায়। কিন্তু আইএসএলে এক-একটা ম্যাচ জেতা যে কতটা কঠিন, কত ঘাম ঝরাতে হয় তিন পয়েন্ট পেতে, তা ইস্টবেঙ্গল এফসি-র ফুটবলারদের চেয়ে ভাল বোধহয় কেউই জানে না এবং ইদানীং টের পাচ্ছে এফসি গোয়াও। 

ভাল খেলে, প্রচুর পরিশ্রম করার পরেও যে তিন পয়েন্ট পাওয়া যায়, তাও না। এই ইস্টবেঙ্গলই এ বারের লিগে জয়ের দোরগোড়া থেকে একাধিকবার ফিরে এসে হয় হেরেছে, নয় ড্র করেছে। এই ভাবে ১৬টা পয়েন্ট নষ্ট করেছে তারা, যার অন্তত অর্ধেকও তাদের খাতায় থাকলে এত দিনে সেরা ছয়ে কেন, সেরা চারেও থাকত তারা। কিন্তু এ বার আর এ ভাবে পয়েন্ট খোয়ালে তাদের চলবে না। 

এখন থেকে প্রতিটি ম্যাচই তাদের কাছে নক আউট পর্বের ম্যাচের মতো। মরণ-বাঁচন লড়াই। না জিতলেই ছিটকে যাওয়ার ঝুঁকি নিয়েই মাঠে নামতে হবে তাদের। তবে বুধবার জিততে পারলে ছ’নম্বরে থাকা বেঙ্গালুরু এফসি-কে সরিয়ে ওই জায়গায় বসে পড়বে লাল-হলুদ বাহিনী। কারণ, গোলপার্থক্যে বেঙ্গালুরুর চেয়ে এগিয়ে তারা। জিতলে পয়েন্ট ও ম্যাচের সংখ্যাও সমান হয়ে যাবে দুই দলের। তাই ইস্টবেঙ্গলের শুধু চাই তিনটি পয়েন্ট।

বুধবার যাদের বিরুদ্ধে নামছে লাল-হলুদ বাহিনী, সেই এফসি গোয়ার সমস্যাটা অন্য রকম। টানা এক ডজন ম্যাচে অপরাজিত থাকার পর টানা তিন ম্যাচে হেরে হঠাৎ লিগশিল্ডের দৌড়ে অনেকটা পিছিয়ে পড়েছে তারা। এখন তাদের প্লে অফে জায়গা পাকা করাটাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ এবং তা করতে গেলে এফসি গোয়াকে আরও পাঁচ পয়েন্ট পেতেই হবে। অর্থাৎ, বাকি ছ’টি ম্যাচের মধ্যে অন্তত পাঁচটি ড্র অথবা একটি জয় ও দু’টি ড্র। কিন্তু চলতি লিগের প্রথম বারো রাউন্ডে যারা একটি ম্যাচে হারেনি, তাদের স্বপ্ন তো লিগশিল্ড। 

সেই রাস্তাটা এখন বেশ কঠিন হয়ে গিয়েছে। সে জন্য শুধু যে সব ম্যাচে তাদের জিততে হবে, তা নয়। সঙ্গে মোহনবাগান এসজি ও মুম্বই সিটি এফসি-কে চার পয়েন্ট করে খোয়াতেও হবে। সেই সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না দু’টি কারণে। এক, এই দুই দলের মধ্যে ম্যাচ এখনও বাকি আছে এবং দুই, গোয়ার দলকে বাকি ম্যাচগুলি খেলতে হবে তালিকার নীচের দিকে থাকা দলগুলির বিরুদ্ধে। অর্থাৎ, যথেষ্ট আশা ও সম্ভাবনা নিয়ে বুধবার ঘরের মাঠে জয়ে ফেরার লড়াইয়ে নামবে মানোলো মার্কেজের দল। 

এ বার পূর্ণশক্তির দল 

গত মাসে কুড়ি দিনের মধ্যে ছ’টি ম্যাচ খেলতে হয় ইস্টবেঙ্গলকে। তাই দলের ফুটবলারদের ঘুরিয়ে ফিরিয়ে খেলান কোচ কার্লস কুয়াদ্রাত। তার ওপর কলিঙ্গ সুপার কাপের পর হঠাৎ চার বিদেশীর অভাব দেখা দেয় দলে। বোরহা হেরেরা, হাভিয়ে সিভেরিও চলে যান অন্য দলে এবং হোসে পার্দো ও সল ক্রেসপো চোট পেয়ে বসে পড়েন। ফলে দলের সব বিদেশীকে একসঙ্গে পাননি নতুন বছরের কোনও ম্যাচেই। বুধবার ফতোরদা স্টেডিয়ামে দলের সব বিদেশীকে নিয়েই মাঠে নামবে তারা। এ ছাড়া দলের বাকিরা প্রায় সবাই সুস্থ ও চোটমুক্ত। শুধু উইঙ্গার নন্দকুমার শেকরের চোট রয়েছে। তিনি সেরে উঠলেও বুধবার শুরু থেকেই মাঠে নামতে পারবেন কি না, সেটাই দেখার। 

রক্ষণে হিজাজি মাহের ও পার্দো, মাঝমাঠে ক্রেসপো ও আক্রমণে ক্লেটন সিলভা— প্রথম দলে এদেরই থাকার কথা। নতুন যোগ দেওয়া ভিক্টর ভাজকেজ ও ফেলিসিও ব্রাউনকে হয়তো পরে মাঠে নামাবেন। তাতে দল কিছুটা হলেও সচল হতে পারে ও আক্রমণের ঝাঁঝও বাড়তে পারে। এর আগে একাধিক ম্যাচে ইস্টবেঙ্গল এগিয়ে থেকেও পরে গোল খেয়ে হয় ড্র করেছে বা হেরে গিয়েছে। লিগের শেষ দিকের ম্যাচগুলিতে তাঁরা যদি একই ভুল করে, তা হল তাদের শেষ ছয়ে যাওয়ার রাস্তা আরও কঠিন হয়ে উঠবে। 

গোলের খরা, জয়ের খরা 

এফসি গোয়া যেখানে প্রথম ১২টি ম্যাচে ১৮টি গোল করেছিল, সেখানে গত পাঁচটি ম্যাচের মধ্যে মাত্র চারটি গোল পেয়েছে তারা। আসলে কার্লোস মার্টিনেজ, নোয়া সাদাউই-রা গত কয়েকটি ম্যাচে গোল না পাওয়ায় অনেকটাই দুর্বল হয়ে পড়ে আরব সাগর পাড়ের দল। সন্দেশ ঝিঙ্গন, ভিক্টর রড্রিগেজদের চোটও সমস্যায় ফেলে দেয় তাদের। যার ফলে কেরালা ব্লাস্টার্সের বিরুদ্ধে দু’গোল দিয়েও চার গোল খায় তারা। সেই ম্যাচে আবার বোরহা হেরেরাও চোট পান। ফলে মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে শেষ কয়েক মিনিট খেলেন তিনি এবং প্রায় জয়সূচক গোল করেও ফেলেছিলেন তিনি। কিন্তু অল্পের জন্য সেই সুযোগ হাতছাড়া হয় তাঁর।  

টানা তিন ম্যাচে হারের পর মুম্বই সিটি এফসি-র বিরুদ্ধে ১-১ ড্র করে কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরে আসে গোয়া শিবিরে। কোচ মার্কেজ সে দিন ম্যাচের পর দাবি করেন, তাদেরই সে দিন জেতা উচিত ছিল। গত ম্যাচের সেরা খেলোয়াড় ও দলের একমাত্র গোলদাতা মহম্মদ ইয়াসিরের দুরন্ত ফর্ম এফসি গোয়াকে আশাবাদী করে তুলতেই পারে। কিন্তু মার্টিনেজ, নোয়া-রাও যদি ফর্মে ফিরে আসেন, তা হলে তাদের আটকানো কঠিন হয়ে উঠবে ইস্টবেঙ্গলের পক্ষে।   

পরিসংখ্যান বলছে 

ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে গত তিনটি আইএসএল ম্যাচেই জয় পেয়েছে এফসি গোয়া। অন্য কোনও দলের বিরুদ্ধে তারা টানা এতগুলি ম্যাচে জয় পায়নি। গত পাঁচটি ম্যাচে জয়হীন রয়েছে গোয়ার দল। এর আগে ২০২১-এর ফেব্রুয়ারি থেকে ডিসেম্বর টানা ছ’টি ম্যাচে জয়হীন থাকার নজির রয়েছে তাদের। জেতার জায়গায় গিয়েও এ পর্যন্ত পাঁচ পয়েন্ট খুইয়েছে এফসি গোয়া। 

আইএসএলে কার্লস কুয়াদ্রাতের দল এ পর্যন্ত দু’বার মানুয়েল মার্কেজের দলের মুখোমুখি হয়েছে। কিন্তু কোনওবারই জিততে পারেনি। একবার ড্র করেছে ও একবার হেরেছে। ইস্টবেঙ্গলের গোলকিপার প্রভসুখন গিল এ পর্যন্ত এফসি গোয়ার বিরুদ্ধে ১২টি গোল হজম করেছে। আর কোনও দলের বিরুদ্ধে এত গোল খাননি গিল। ইস্টবেঙ্গলের উইঙ্গার নন্দকুমার শেকর আইএসএলে এ পর্যন্ত ৯৯টি ম্যাচে মাঠে নেমেছেন। বুধবারও তিনি মাঠে নামলে শততম ম্যাচ খেলবেন।  

ইস্টবেঙ্গল গত দুটি অ্যাওয়ে ম্যাচে হেরেছে। ২০২২-এর ডিসেম্বর থেকে ২০২৩-এর ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত টানা চারটি অ্যাওয়ে ম্যাচে হেরেছিল তারা। গত চারটি ম্যাচেই একটি করে গোল পেয়েছে তারা। চলতি লিগে জেতার জায়গায় গিয়েও ১৬ পয়েন্ট খুইয়েছেন ইস্টবেঙ্গল এফসি। একই ঘটনা ঘটেছে নর্থইস্টের সঙ্গেও।   

দ্বৈরথের ইতিহাস

হিরো ইন্ডিয়ান সুপার লিগে দুই দল মুখোমুখি হয়েছে সাতবার। গোয়া জিতেছে চারবার। ইস্টবেঙ্গল একবার। বাকি দু’বার ড্র হয়েছে। দু’বারই ড্র হয় ১-১-এ, ২০২০-২১ মরশুমে। ২০২১-২২ মরশুমে প্রথম লেগে এফসি গোয়া ৪-৩-এ জেতে এবং ফিরতি লেগে ২-১-এ জিতে তার বদলা নেয় ইস্টবেঙ্গল। গত মরশুমের প্রথম সাক্ষাতে ২-১-এ জেতে এফসি গোয়া। দ্বিতীয় লড়াইয়ে ৪-২-এ জেতে তারা। এ মরশুমেও সেই জয়ের ধারা বজায় রাখে আরব সাগর পাড়ের দল ও জেতে ২-১-এ। এ বারও সেই ধারা অব্যহত থাকবে কি না, সেটাই দেখার।       

ম্যাচ- এফসি গোয়া বনাম ইস্টবেঙ্গল এফসি 

ভেনু- পন্ডিত জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়াম, ফতোরদা 

কিক অফ- ৬ মার্চ, ২০২৪, সন্ধ্যা ৭.৩০

সরাসরি সম্প্রচার ও স্ট্রিমিং 

টিভি চ্যানেল: ডিডি বাংলা ও কালার্স বাংলা সিনেমা- বাংলা, স্পোর্টস ১৮ খেল- হিন্দি, স্পোর্টস ১৮ ১ এসডি ও এইচডি- ইংলিশ, ভিএইচ ১ এসডি ও এইচডি- ইংলিশ

অ্যাপ: জিও সিনেমা ও ওয়ানফুটবল