যে সময়ে দলের ফুটবলারদের ভাল পারফরম্যান্স আশা করেছিলেন ইস্টবেঙ্গলের সমর্থকেরা, ঠিক সেই সময়েই তাদের পারফরম্যান্সের রেখচিত্র নিমনগামী হওয়ায় স্বাভাবিক ভাবেই ক্ষুব্ধ তারা। বুধবার এফসি গোয়ার বিরুদ্ধে লাল-হলুদ বাহিনীর হারের পর সোশ্যাল মিডিয়ায় কার্যত ক্ষোভে ফেটে পড়ে লাল-হলুদ জনতা। তা সত্ত্বেও অবশ্য দলের ফুটবলারদের পাশেই আছেন তাঁদের কোচ কার্লস কুয়াদ্রাত। তাঁদের ক্রমাবনতির কারণও ব্যাখ্যা করেন তিনি। আসন্ন কলকাতা ডার্বিতে দলের সম্ভাবনা নিয়েও তাঁর কপালে চিন্তার রেখা দেখা গেল।

টানা পাঁচ ম্যাচে জয়হীন থাকার পর বুধবার ফতোরদায় ঘরের মাঠে ইস্টবেঙ্গলকে হারিয়ে জয়ে ফিরে আসে এফসি গোয়া। চলতি ইন্ডিয়ান সুপার লিগে ঘরের মাঠে অষ্টম ম্যাচে তারা জেতে ১-০-য়। ৪২ মিনিটের মাথায় একমাত্র গোলটি করেন মার্কিন মিডফিল্ডার নোয়া সাদাউই। খুব কম সময়ই ম্যাচের রাশ নিজেদের হাতে রাখতে পারে ইস্টবেঙ্গল এফসি। বেশিরভাগ সময়ই তাদের প্রবল চাপে রাখেন কার্লোস মার্তিনেজ, নোয়া সাদাউইরা।

সারা ম্যাচে যেখানে সাতটি শট লক্ষ্যে রেখে একটিকে গোলে পরিণত করে এফসি গোয়া, সেখানে ইস্টবেঙ্গল সারা ম্যাচে একটিমাত্র শট লক্ষ্যে রাখতে পারে, তাও সেটি নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার ছ’মিনিট আগে। প্রতিপক্ষের বক্সে গোয়ার ফুটবলাররা যেখানে ৪৬ বার বলে পা লাগান, সেখানে ইস্টবেঙ্গল প্রতিপক্ষের বক্সে ১২ বারের বেশি বল ছুঁতে পারেনি।

এই হারের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে কোচ কুয়াদ্রাত সাংবাদিকদের বলেন, “ওরা আজ শরীরী লড়াইয়ে জিতেছে। তাই ওদের বিরুদ্ধে শক্তিশালী হয়ে ওঠা খুবই কঠিন হয়ে ওঠে। বলের গতিবিধি আগাম বোঝার ব্যাপারেও ওরা আমাদের ছেলেদের পিছনে ফেলে দিয়েছে। মাঝমাঠে লোক বাড়িয়ে আমরা সুবিধা পাওয়ার চেষ্টা করি। ওদের ৪-৪-২-এর বিরুদ্ধে আমরা তাই ৪-৩-৩-এ খেলি। কিন্তু প্রথমার্ধে আমরা প্রায়ই বারবার বলের নিয়ন্ত্রণ হারাই। ওরা আমাদের এই ভুলই কাজে লাগিয়ে নেয়। এছাড়া শরীরী সুবিধা তো পেয়েইছে”।

খেলোয়াড়দের ক্লান্তিকেই পারফরম্যান্সের রেখচিত্র নিম্নগামী হওয়ার কারণ হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করে কোচ বলেন, “আমাদের গত চার সপ্তাহে আটটা ম্যাচ খেলতে হয়েছে, যা আমাদের ছেলেরা ঠিকমতো নিতে পারছে না। অক্টোবর, নভেম্বরে কম ম্যাচ খেলার পরে হঠাৎ এক মাসে আটটা ম্যাচ খেলতে হওয়ায় ফুটবলাররাও সমস্যায় পড়ে গিয়েছে। তার ওপর সল, পার্দোর চোটের ফলে চাপটা আরও বেড়ে যায়। যে বিদেশীরা নতুন এসেছে, যেমন ফেলিসিও, ভাজকেজ, প্যানটিচ, তাদের দলের কৌশল ভাল করে বোঝার আগেই মাঠে নেমে পড়তে হয়। ওদের কাছ থেকে আমাদের বেশিই চাইতে হয়েছে, যা ওরা সব সময় দিতে পারেনি। ফুটবলে এ রকম হয়। একরকম পরিকল্পনা থাকে। কিন্তু হঠাৎ চোট-আঘাত সমস্যা এসে যাওয়ায় সব ভেস্তে যায়”।

এ দিনের হারের পরেও অবশ্য ১৮ ম্যাচে ১৮ পয়েন্ট নিয়ে প্লে-অফের দৌড়ে টিকে রইল ইস্টবেঙ্গল এফসি। অঙ্কের হিসেব অবশ্য বলছে পাঁচ নম্বরে থেকেও লিগ শেষ করতে পারে তারা। তাই কোচ এখনও আশাবাদী। বললেন, “আমাদের এখনও চেষ্টা করে যেতে হবে। এখনও ১২ পয়েন্ট পেতে পারি আমরা। আমাদের ইতিবাচক মনোভাব বজায় রাখতে হবে”।

কিন্তু বুধবারের পারফরম্যান্সের পরে তাদের নিয়ে আশায় থাকা কঠিন। রক্ষণ, মাঝমাঠ, আক্রমণ— সব বিভাগেই উন্নতি করতে না পারলে তাদের প্লে অফের রাস্তা আরও কঠিন হয়ে উঠবে। আসন্ন কলকাতা ডার্বির আগেই এই হার ইস্টবেঙ্গল শিবিরকে আর যাই হোক, আত্মবিশ্বাস জোগাবে না।   

কোচের কথাতেও ডার্বি নিয়ে দুশ্চিন্তার সুর স্পষ্ট। বলেন, “এর পরে আমাদের সামনে গুরুত্বপূর্ণ ‘বড়ম্যাচ’। সেই ম্যাচে আমাদের জিততে হবে, যার জন্য ছন্দে ফেরা দরকার। তবে ছেলেদের মানসিক ও শারীরিক ভাবে এই ম্যাচের জন্য পুরোপুরি তৈরি হতে হবে। ক্লাবের জন্য আমাদের পরিশ্রম করতেই হবে”।

তিনি মনে করেন কলকাতা ডার্বির জন্য দলের ছেলেদের বাড়তি আত্মবিশ্বাস বা মোটিভেশন জোগানোর প্রয়োজন নেই। প্রয়োজন অন্য কিছু। কী সেটি? এর উত্তর দিয়ে কুয়াদ্রাত বলেন, “ডার্বির জন্য আলাদা করে মোটিভেশনের প্রয়োজন নেই। প্রত্যেক ফুটবলারই এই ম্যাচে খেলতে চায়। তবে মাত্র চারদিনের মধ্যে এই রকম গুরুত্বপূর্ণ একটা ম্যাচের জন্য নিজেদের মানসিক ও শারীরিক ভাবে ফের স্বাভাবিক জায়গায় ফিরিয়ে আনতে হবে। আমাদের অনেক লড়াই করতে হবে ওই ম্যাচে। কারণ, এই ধরনের ম্যাচে ভাল খেলাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার”। ডার্বি নিয়ে যে দুশ্চিন্তায় আছেন, তার ইঙ্গিত কোচের এই কথাতেই স্পষ্ট।

তরুণ ডিফেন্ডার মহম্মদ রকিপ এ দিন হলুদ কার্ড দেখায় পরের ম্যাচে তিনি মাঠে নামতে পারবেন না। তাঁকে নিয়ে কোচ বলেন, “আমরা শুধু মহম্মদ রকিপের ওপরই নির্ভর করি না, এই জায়গায় খেলার মতো দলে আরও খেলোয়াড় আছে। তবে ওর বয়স কম, মাত্র ২৩। ওকে আরও অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করতে হবে, অনেক কিছু শিখতে হবে। সেগুলো শেখানোর চেষ্টা করে যাচ্ছি। সুপার কাপের পর চেষ্টা করেছি যাতে ও উন্নতির পরবর্তী স্তরে উঠতে পারে। তবে ও কিছু গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ভুল করেছে। জামশেদপুরের বিরুদ্ধে একটা বাজে ভুল করে ও। গত ম্যাচে ওডিশার মরিসিওকে বক্সে ফাউল করে ওদের পেনাল্টি দেয়। এগুলো নিয়ে ওকে চর্চা করতে হবে, ওকে বুঝতে হবে কী ভুল করছে, কী ভাবে এই ভুলগুলো এড়ানো যায়। তবে ওর পারফরম্যান্সে আমি খুশি”।