বেঙ্গালুরু এফসি-র মতো দলের বিরুদ্ধে দাপুটে জয়ের পর লিগ শিল্ড নিয়ে ক্রমশ আশাবাদী হয়ে উঠছে মোহনবাগান শিবির। বৃহস্পতিবার বেঙ্গালুরুতে এই ম্যাচে ৪-০ ফল তাদের দলের ফুটবলারদের অনেক আত্মিবশ্বাসী তুলবে।  

রীতিমতো দাপুটে ফুটবল খেলে সুনীল ছেত্রীর বেঙ্গালুরু এফসি-কে ৪-০-য় হারিয়ে তাদের লিগ টেবলের দশ নম্বরে নামিয়ে দেয় মোহনবাগান এসজি। সুনীল ছেত্রীর পেনাল্টি মিস করার মাশুল তাদের চরম ভাবে দিতে হয় এ দিন। মুম্বই সিটি এফসি-র বিরুদ্ধে ঘরের মাঠে নামার আগে এই ম্যাচ থেকে প্রচুর আত্মবিশ্বাস জোগাড় করে নিল বাগান-বাহিনী এবং মুম্বইয়ের দলও বুঝে নিল, তাদের লিগ শিল্ড জয়ের রাস্তা বেশ কঠিন হয়ে উঠতে চলেছে। 

নিজের দলের ফুটবলারদের প্রশংসার পাশাপাশি বেঙ্গালুরু এফসি-র খেলোয়াড়দেরও প্রশংসা শোনা গেল দলের ভারপ্রাপ্ত কোচ মানুয়েল কাসকালানার মুখে। ম্যাচের বিশ্লেষণ করে মানুয়েল বলেন, “বেঙ্গালুরু এফসি আজ প্রথম ২০-২৫ মিনিট ভাল খেলে। ওদের এই ম্যাচ থেকে কিছু হারানোর ছিল না। তাই ওরা চাপমুক্ত হয়ে খেলে। প্রথম গোলটা পেয়ে যাওয়ার পর আমরা ক্রমশ খেলা ধরে নিই। দ্বিতীয়ার্ধে আমাদের প্রতি আক্রমণ, ট্রানজিশন অনেক ভাল হয়েছে। যার ফল আমরা পাই। দলের পারফরম্যান্সে আমরা খুশি। পরিবর্ত খেলোয়াড়রাও আজ যা খেলেছে, তা অনবদ্য। দলের সবাই সোমবার ঘরের মাঠে মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে নামার জন্য মুখিয়ে রয়েছে”।

এ দিন প্রচুর মোহনবাগান সমর্থকে ভরা কান্তিরাভায় প্রথমার্ধে এক গোলে এগিয়ে থাকার পর দ্বিতীয়ার্ধে মাত্র ন’মিনিটের মধ্যে তিন-তিনটি গোল করে দলকে লিগ শিল্ডের দোরগোড়ায় পৌঁছে যায় গতবারের নক আউট চ্যাম্পিয়নরা। গত ম্যাচের চেয়ে যে এ দিন গোলের সুযোগকে গোলে পরিণত করার ক্ষেত্রে যে তারা অনেক তৎপর ছিলেন, তা ম্যাচের পর স্বীকার করে নেন দলের সহকারী কোচ মানুয়েল। বলেন, “গত ম্যাচে আমরা আক্রমণে তেমন ভাল করতে পারিনি। অনেক গোলের সুযোগ হাতছাড়া করেছি। আজ সেই ভুল শুধরে নিয়েই নেমেছিল দলের ছেলেরা। তাই গত ম্যাচের মতো অত গোলের সুযোগ হাতছাড়া হয়নি। ৬৫ মিনিট ধরে আমরা ওদের ওপর আধিপত্য বিস্তার করেছি এবং সেটাই ম্যাচটা নিয়ন্ত্রণের জন্য যথেষ্ট ছিল। এখন সপ্তাহান্তে আমাদের খেলোয়াড়দের বিশ্রাম দিতে হবে। তার পরে সোমবারের ম্যাচের প্রস্তুতি শুরু হবে”। 

এ দিনও সাইডলাইনে দেখা যায়নি দলের হেড কোচ আন্তিনিও হাবাসকে। তিনি এখনও অসুস্থ হয়েছে। তাঁর অভাব যে টের পাচ্ছেন, তা স্বীকার করে নিয়ে মানুয়েল বলেন, “আমাদের হোড কোচ আন্তোনিও হাবাসকে আমরা খুবই মিস করছি। কলকাতার ফুটবল নিয়ে ওঁর অভিজ্ঞতা, সাফল্য সবই যথেষ্ট উল্লেখযোগ্য। তাই ওঁকে ছাড়া মাঠে নেমে ভাল খেলা আমাদের খেলোয়াড়দের পক্ষে কঠিন কাজ। কিন্তু আগেও বলেছি, আমরা পেশাদার। যাই হোক না কেন, আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। উনি দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠছেন। কাল না হোক পরশু বা তার পরের দিন নিশ্চয়ই উনি দলের অনুশীলনে যোগ দেবেন। হয়তো শেষ ম্যাচে সাইডলাইনে ওঁকে দেখা যাবে”। 

মোহনবাগানের সামনে লড়াইটা বেশ কঠিন। কারণ, সোমবারের ম্যাচে হারলে শুধু যে লিগশিল্ড হাতছাড়া হবে, তা-ই নয়, এফসি গোয়া ও মুম্বই তাদের শেষ ম্যাচে জিতলে সেরা দুইয়েও থাকতে পারবে না তারা। কারণ, গোয়ার দলের সঙ্গে দুই মুখোমুখির পরিসংখ্যানে পিছিয়ে রয়েছে সবুজ-মেরুন বাহিনীই। 

তাই শেষ ম্যাচে তারা অনেক বেশি চাপে থাকবেন বলে মনে করেন মানুয়েল। হাবাসের সহকারী বলেন, “শেষ ম্যাচে আমরা প্রতিপক্ষের চেয়ে অনেক বেশি চাপে থাকব। কারণ, আমাদের জেতা ছাড়া সামনে আর কোনও রাস্তা নেই। সোমবার আমাদের জিততেই হবে। না জিতলে সেরা দুইয়েও আমাদের জায়গা হবে না। ওদের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা উল্টো। ওরা ড্র করলেও লিগশিল্ড পেয়ে যাবে। আমাদের ফিরে গিয়ে ভাল প্রস্তুতি নিতে হবে এবং পরের ম্যাচে সমর্থকদের জন্য আমাদের তিন পয়েন্ট জিততেই হবে”। 

চোটগ্রস্থ তারকা উইঙ্গার সহাল আব্দুল সামাদকে পরের ম্যাচে পাওয়া নিয়েও আশাবাদী মোহনবাগানের সহকারী কোচ। বলেন, “আশা করি, সহাল শেষ ম্যাচে মাঠে নামতে পারবে। ও দ্রুত সেরে উঠছে। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে ওকে শেষ ম্যাচে আমরা দলে পেতে পারি”। সমর্থকদের এ ভাবেই আশ্বস্ত করেন তিনি।