সামনে কঠিন প্রতিপক্ষ কেরালা ব্লাস্টার্স, যারা এসসি ইস্টবেঙ্গলকে হারিয়ে এই ম্যাচে খেলতে নামবেন। এই ম্যাচেও পুরো দল পাবেন কি না, নিশ্চিত নন। তা সত্ত্বেও আত্মবিশ্বাসী এটিকে মোহনবাগানের স্প্যানিশ কোচ হুয়ান ফেরান্দো। এই ম্যাচের আগে একদিন বাড়তি সময় পেয়ে যাওয়ায় দলের পরিকল্পনায় রদবদল করছেন তিনি। শুক্রবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ রকমই ইঙ্গিত দিলেন ফেরান্দো। প্রশ্নোত্তর পর্বের উল্লেখযোগ্য অংশ এখানে তুলে ধরা হল।

এগারোটা ম্যাচে অপরাজিত থাকার পর কালকের ম্যাচে জেতার ব্যাপারে কতটা আশাবাদী?

প্রতিটা ম্যাচ নিয়ে আলাদা করে ভাবছি। নজির, রেকর্ড নিয়ে ভাবছিই না। আমরা লিগ ও ট্রফি জিততে চাই। সে জন্য প্রতি ম্যাচে জিততে হবে আমাদের। এর মধ্যে কোনও কঠিন দলের বিরুদ্ধে হারলে বা ড্র করলে হয়তো আর একটা সুযোগ পাব। তবে কেরালার বিরুদ্ধে ম্যাচ জিততেই হবে। এই ম্যাচটা আমাদের কাছে আপাতত ফইনালের মতো। কারণ, দুই দলেরই ট্রফি জয়ের সুযোগ আছে। হায়দরাবাদ, জামশেদপুর, মুম্বইয়ের প্রতি সম্মান রেখেই বলছি কথাটা।

কেরালা ব্লাস্টার্সের শক্তি কোথায় কোথায় এবং কে ওদের সবচেয়ে বিপজ্জনক তারকা?

সবাই জানে পেরেইরা, লুনা, ভাস্কেজরা কেমন দুর্দান্ত ফুটবলার। ওরা যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী দল। ওরা পরিকল্পনা অনুযায়ী খেলে। ওদের ম্যাচগুলোতে প্রায় একই রকম স্কোর থাকে। গত তিন-চারটে ম্যাচে ওরা তেমন ভাল খেলতে পারেনি। তবে আমরা ওদের যথেষ্ট সমীহ করি।

গত ম্যাচে আমরা দেখেছি, আপনার খেলোয়াড়রা বিপক্ষের মিডফিল্ডারদের কোনও জায়গা দেননি। পরের ম্যাচেও কি সে রকমই কিছু দেখা যাবে?

সব ম্যাচে তো এক রকম খেলা যায় না। প্রতি ম্যাচ আলাদা এবং প্রতি ম্যাচে পরিকল্পনাও অন্য রকম থাকে। এফসি গোয়ার বিরুদ্ধে যা খেলেছি আমরা, তাতে কিছু পরিবর্তন আনা দরকার। এফসি গোয়ার বিরুদ্ধে ম্যাচের আগে আমরা প্রস্তুতির জন্য মাত্র এক দিন সময় পেয়েছিলাম। কেরালার  বিরুদ্ধে আমরা আরও একদিন পেয়েছি। যার ফলে কিছু ব্যাপারে পরিবর্তন আনার সুযোগ পেয়েছি। আশা করি কাল দল আরও ভাল খেলবে।

পুরো দল না খেলতে পারলেও যাঁরা খেলছেন, তাঁরা দলকে জেতাচ্ছেন। এই সাফল্য থেকে আপনারা কতটা আত্মবিশ্বাস পাচ্ছেন?

কোচিং স্টাফ ম্যাচের জন্য তৈরি হতে দলের সবাইকে সাহায্য করছে। সন্দেশ, প্রবীরদের তৈরি করছে ওরাই। কিন্তু আমার খারাপ লাগছে যে পারফরম্যান্স মাঝে মাঝে একশো শতাংশয় পৌঁছচ্ছে না। যদিও এটা সব দলেরই সমস্যা। কোভিড-কোয়ারান্টাইনে খুব ক্ষতি করে দিয়েছে। শারীরিক সক্ষমতার দিক থেকে খেলোয়াড়রা একশো শতাংশে নেই। গত মাসে সব দলেরই কঠিন সময় কেটেছে। তবে এখন সে সব সামলে নিয়ে পারফরম্যান্স ভাল করতেই হবে।

রয়, ডেভিড, হুগো কার্লদের চোটের এখন কী অবস্থা?

ওরা দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠছে। তবে ওদের যে চোট লেগেছে, সেগুলো বেশ গুরুতর ছিল। তবে এখন যে রকম দ্রুত সেরে উঠছে, তাতে আমি খুশি। এখন ওরা একশো শতাংশ সেরে উঠে দলকে সাহায্য করার অপেক্ষায় আছি। তার পরে হয়তো আমাদের সেরা মুহূর্তগুলো আসবে।

পরের ম্যাচে কার্ড সমস্যার জন্য দীপক টাঙরি খেলতে পারবেন না। ওঁর জায়গায় কাকে ভেবে রেখেছেন?

সেটা কাল দেখব। পরিকল্পনা নিয়ে কিছু বলতে পারব না। দীপককে কাল পাব না ঠিকই। তবে যেহেতু সেটা গত ম্যাচের পরই জেনেছি, তাই সেই পরিস্থিতি অনুযায়ীই পরিকল্পনা করেছি। টাঙরি না খেললে সাহিল, বিদ্যানন্দ, অভিষেক রয়েছে দলকে সাহায্য করার জন্য।

আপনি এটিকে মোহনবাগানে যোগ দেওয়ার পর জনি কাউকোকে অন্য চেহারায় পাওয়া যাচ্ছে। এই ব্যাপারে কী বলবেন?

কারণ একটাই। দলের প্রত্যেকেই নিজের সেরাটা দিতে চায়। প্রত্যেকেরই লক্ষ্য রয়েছে। জনির ব্যাপারে আমি খুশি। ওর পারফরম্যান্স এখন ভাল। যখন বেঞ্চে ছিল, তখন পাঁচ, দশ বা কুড়ি মিনিটের জন্য খেলেও দলকে সাহায্য করেছে। ও খুব পেশাদার। ম্যাচের পরের দিনই অনুশীলনে নেমে পড়ে। ওর মতো খেলোয়াড়কে দলে পাওয়া খুবই আনন্দের। কারণ, দলের বাকিরা ওকে দেখে উদ্বুদ্ধ হয়।

গত ম্যাচে লিস্টন কোলাসোকে শেষ দিকে দেখে মনে হচ্ছিল অস্বস্তিতে ছিলেনতিনি কি এই ম্যাচে শুরু থেকে খেলতে পারবেন?

সেটা জানার জন্য আমাদের কাল সন্ধ্যা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। এর মধ্যে অনেক কিছু প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যেতে হবে ওকে। তার পরে বোঝা যাবে ও ম্যাচে নামার জন্য কতটা তৈরি।

অনেক দিন পর আপনারা ক্লিন শিট রাখতে সমর্থ হলেন। একে কি রক্ষণের সাফল্য বলবেন?

আমি আগের মতোই একই কথা বলব। আমরা তিন পয়েন্ট পেতে চাই। সে যদি ৩-১, ২-১ হলেও কোনও অসুবিধা নেই। বুঝতে পারি যে সমর্থকেরা ২-০, ৩-০-য় জিতলে খুব খুশি হন, সবার প্রশংসা পাওয়া যায়। ফুটবলে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হল কেন জিতলাম বা কেন হারলাম। ধরা যাক, আমরা ১-০-য় জিতলাম। কিন্তু বিপক্ষ ৬-৭টা সুবর্ণ সুযোগ তৈরি করে নিল। এটা কিন্তু ভাল নয়। ক্লিন শিটহল, না কি হল না, সেটা বড় কথা নয়। আমাদের পয়েন্ট কম হল কি না, ম্যাচে আমরা ঠিকমতো ওঠা-নামা করতে পারছি কি না, এগুলো নিয়ে ভাবতে হবে। কারণ, এগুলোই আমাদের গুরুতর সমস্যা।

প্রতিপক্ষের দল, ফর্মেশন নিয়ে ভেবে আমাদের লাভ নেই       

প্রথম ম্যাচের হার ভুলে এখন ফিরতি লিগের ম্যাচে জেতার জন্য দল নামাতে চান কেরালা ব্লাস্টার্সের কোচ ইভান ভুকোমানোভিচ তাঁর মতে, তাঁর দল এখন অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী। তাই এ বারে জিততে অসুবিধা হবে না তাঁদের। শুক্রবারের ভার্চুয়াল সাংবাদিক বৈঠকের উল্লেখযোগ্য অংশ এখানে তুলে দেওয়া হল। 

প্রথম ম্যাচে এটিকে মোহনবাগানের বিরুদ্ধে হার দিয়েই শুরু করেছিলেন আপনারা। তার পরে দুই দলেই অনেক কিছু পাল্টেছে। ওদের কোচ বদলেছে, আপনাদের পারফরম্যান্সে উন্নতি এসেছে। এখনকার পরিস্থিতি নিয়ে কী বলবেন?

প্রথম ম্যাচে যে হেরেছিলাম ওদের কাছে, আমার কাছে সেটা যেন দুবছর আগের ঘটনা। এখন অনেক কিছু পাল্টে গিয়েছে, আমরা এখন অনেক ভাল খেলছি। আমাদের মধ্যে লড়াকু মনোভাব এসেছে। প্রতি ম্যাচে তিন পয়েন্টের জন্য আমরা লড়াই করছি। কাল আশা করি, একটা ভাল লড়াই হবে। আমরা শুধু প্রস্তুত নই, উজ্জীবিতও। একটা ভাল দলের বিরুদ্ধে খেলে আমরা প্রমাণ করতে চাই যে, সত্যিই সেরা চারে থাকার মতো দল আমরা। প্রতি ম্যাচেই যে দল ভাল খেলে, তারাই যেতে। আমরা সেই ভাল খেলা দল হতে চাই।

এটিকে মোহনবাগানের নিয়মিত বিদেশিরা এখন যেহেতু খেলতে পারছেন না, তাই ওরা হয়তো ফরমেশনে বা সিস্টেমে পরিবর্তন আনতে পারে। এই অনিশ্চয়তা কি আপনাদের ভাবাচ্ছে?

না। কারণ, কোনও ম্যাচের প্রস্তুতিতে মূলত নিজেদের নিয়েই বেশি ভাবি। কোচ হিসেবে আমি মনে করি, যে বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রণে নেই, সেগুলো নিয়ে বেশি উদ্বিগ্ন না হওয়াই ভাল। বিপক্ষ সম্পর্কে জেনে রাখা ভাল। কিন্তু তারা কী দল নামাবে, কাদের খেলাবে, তা যখন আমাদের হাতে নেই, তখন এই নিয়ে ভেবেও লাভ নেই। ওরা যথেষ্ট ভাল দল। ওদের হারাতে গেলে আমাদের সেরা ফুটবল খেলতে হবে, এটাই শেষ কথা।

আপনার দলের সবাই ফিট?

হ্যাঁ সবাই ফিট আছে। সবাই কাল খেলার জন্য তৈরি। আশা করি, আমরা আমাদের সেরা খেলা খেলতে পারব। অনুশীলনের পরে ঠিক করব, প্রথম একাদশে কাদের রাখব বা রাখব না।  

কালকের ম্যাচে আপনি লেসকোভিচকে পাচ্ছেন। সেক্ষেত্রে উইনিং কম্বিনেশন ভাঙবেন, নাকি একই দল নামাবেন?

আজ অনুশীলনে কিছু সমস্যার সমাধান করতেই আমরা নেমেছিলাম। এখন আমাদের হাতে আরও কয়েকজন খেলোয়াড় রয়েছে। আমাদের এখন পয়েন্টের জন্য লড়তে হবে, যাতে লিগ টেবলের শীর্ষে পৌঁছতে পারি। আমরা ভাল দলের বিরুদ্ধে খেলতে চাই, যাতে নিজেদের প্রতিভার প্রমাণ দিতে পারি। এখন আমাদের লক্ষ্য সেরা চারে থেকে শেষ করা।