নিয়মরক্ষার জন্য ছাড়া আর কিছুই নয় এসসি ইস্টবেঙ্গলের সঙ্গে বেঙ্গালুরু এফসি-র দ্বিতীয় লেগের ম্যাচ। যে ম্যাচে জিতলেও নিজেদের অবস্থান থেকে এক ইঞ্চিও উঠতে পারবে না লাল-হলুদ বাহিনী। অন্য দিকে বেঙ্গালুরুও হারুক বা জিতুক, তারা ষষ্ঠ স্থানেই থেকে যাবে। ফলে নেহাত নিয়মরক্ষা ছাড়া কিছুই নয় এই ম্যাচ।

শনিবার তিলক ময়দান স্টেডিয়ামে এসসি ইস্টবেঙ্গল যদি লিগের দ্বিতীয় জয়টিও পায় এবং লিগ টেবলে পয়েন্টের দিক থেকে নর্থইস্ট ইউনাইটেড এফসি-কে ধরেও ফেলে, তা হলেও তারা এগারো থেকে দশে উঠতে পারবে না নর্থইস্টের সঙ্গে তাদের দুই ম্যাচের ফলের জন্য। দ্বিতীয় লেগে ১-১ ড্র হলেও প্রথম লেগে নর্থইস্ট লাল-হলুদ বাহিনীকে হারায় ২-০-য়। দুবারের মুখোমুখিতে নর্থইস্ট এগিয়ে থাকায় সেই সম্ভাবনা নেই মারিও রিভেরার দলের।

লক্ষ্যহীন লাল-হলুদ বাহিনী

লাল-হলুদ শিবিরের ফুটবলারদের একটাই লক্ষ্য থাকতে পারে, জয়ের সংখ্যা বাড়িয়ে কিছুটা হলেও নিজেদের স্বান্তনা দেওয়া। সারা লিগে মাত্র একটি ম্যাচে জিততে পেরেছে তারা। একাধিক ম্যাচে জয়ের জায়গায় গিয়েও হতাশ হয়ে মাঠ ছাড়তে হয়েছে তাদের। শেষ ম্যাচে দ্বিতীয় জয়টা পেলে হয়তো তাদের সেই হতাশা অল্প হলেও কাটবে। ১৯ ম্যাচে মাত্র ১১ পয়েন্ট পাওয়ার দুঃখ কিছুটা হলেও ভুলবে। তবে ক্লাবের ইতিহাসে এমন ফল যে আর কখনও হয়নি, এই সত্যিটা তারা কোনও ভাবেই মুছতে পারবে না।

গত বারেও তিনটি জয় পেয়ে লিগ টেবলের ননম্বরে ছিল রবি ফাউলারের প্রশিক্ষণাধীন দল। কিন্তু এ বার ২০ ম্যাচের লিগে তিন-তিনজন কোচ দলের দায়িত্ব নিয়েছেন। ফলে কোনও নির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে এগোতে পারেনি কলকাতার দল। দলের তিন নম্বর তথা বর্তমান কোচ মারিও রিভেরা অবশ্য শুক্রবার সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন, ফল ভাল না হলেও তাঁর দলের ফুটবলারদের পারফরম্যান্সে তিনি গর্বিত। তবে সমর্থকেরা তাঁর এই তত্ত্বে একমত হবেন কি না, সেটাই প্রশ্ন। কোচ অবশ্য এত খারাপ ফলের জন্য সমর্থকদের কাছে দুঃখপ্রকাশ করেছেন। তবে যা-ই হোক, এই মরশুম ভুলতেই চাইবেন ক্লাবের লক্ষ্য লক্ষ্য সমর্থক।

শনিবার গুরুত্বহীন ম্যাচে বেশির ভাগ তরুণ খেলোয়াড়দেরই মাঠে নামাতে চান কোচ। কারণ, তাঁর দলের একাধিক খেলোয়াড়ের চোট রয়েছে। ডিফেন্ডার হীরা মন্ডল গত ম্যাচে নাকে চোট পান। তিনি কলকাতায় ফিরে এসেছেন এবং কয়েক দিনের মধ্যেই তাঁর নাকে অস্ত্রোপচার হবে। ডাচ মিডফিল্ডার ড্যারেন সিডোল ও কলকাতা লিগের সর্বোচ্চ স্কোরার রাহুল পাশোয়ানেরও চোট। তাঁরাও খেলতে পারবেন না। স্প্যানিশ মিডফিল্ডার ফ্রান সোতাও কব্জির চোটের জন্য অনিশ্চিত।

সেটপিস-গোলের লড়াই

বেঙ্গালুরু শিবিরেরও একই অবস্থা। একাধিক ফুটবলার পেশীর চোটে ভুগছেন। কয়েকজনের চোট সারতে সময় লাগবে। এডমুন্ড লালরিন্দিকা পিঠে চোট নিয়ে বেঙ্গালুরুতে ফিরে আসছেন। তাই সুনীল ছেত্রীদের কোচ মার্কো পেজাউওলিও তরুণদেরই নামাতে পারেন। সুনীল নিজেও এই ম্যাচে খেলবেন বলে মনে হয় না। কারণ। পাঁচ দিন পরেই তাঁকে পুনেয় ভারতীয় দলের শিবিরে যোগ দিতে হবে।

শনিবারের ম্যাচে একটা জায়গায় দুই দলের মতো লড়াই হতে পারে দুই দলের এবং তা হল সেটপিস। বেঙ্গালুরুর দল এ বারের হিরো আইএসএলে সেট পিস থেকে ১৯টি গোল করেছে, যা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। জামশেদপুর সেটপিসে ২২টি গোল করে এই ব্যাপারে এক নম্বরে। এসসি ইস্টবেঙ্গল ১৯ ম্যাচে ১৩টি গোল করেছে সেটপিস থেকে। যা তাদের মোট গোলের ৭২ শতাংশ। তাই এই দুই দলের মুখোমুখিতে সেটপিস একটা বড় ফ্যাক্টর হয়ে উঠতে পারে।

শুক্রবার জামশেদপুর এফসি ৫-১-এ ওডিশা এফসি-কে হারিয়ে দেওয়ার পরে বেঙ্গালুরু এফসি-র ছয় নম্বর জায়গাটা হারানোর আর কোনও ভয় নেই। তবে জিতলে পাঁচ নম্বরে থাকা মুম্বই সিটি এফসি-কে ছোঁয়ারও কোনও সম্ভাবনা নেই। কারণ, মুম্বই তাদের চেয়ে পাঁচ পয়েন্ট এগিয়ে। তাই পেজাউওলির দল জিতলেও তাদের কোনও ভাবেই ছুঁতে পারবে না। এই নিয়ে টানা দ্বিতীয় মরশুমে প্রাক্তন হিরো আইএসএল চ্যাম্পিয়নরা সেরা চারে থাকতে পারল না। যা ক্লাব কর্তৃপক্ষকে নিশ্চয়ই ভাবিয়ে তুলেছে।

শুক্রবার সাংবাদিকদের কোচ বলেন, আমরা অনেক ভাল কিছু করেও প্রথম চারে থাকতে পারলাম না, এটাই হতাশার। গত ম্যাচে জিতলে তাদের সেরা ওঠার একটা ক্ষীণ সম্ভাবনা থাকত। কিন্তু সেই ম্যাচে এটিকে মোহনবাগানের কাছে হেরে তাদের যাবতীয় সম্ভাবনা শেষ হয়ে যায়। গত মরশুমে ২০ ম্যাচে ২২ পয়েন্ট পেয়ে সাত নম্বরে থেকে লিগ শেষ করেছিল। এ বার তার চেয়ে বেশি পয়েন্ট অর্জন করেছে তারা। এ ছাড়া কোনও সান্ত্বনা নেই তাদের।

ফিরে দেখা প্রথম লেগ

রক্ষণে ক্রমশ উন্নতি করলেও আক্রমণে যে কিছুই উন্নতি হয়নি, তা বোঝা যায় বাম্বোলিমে সেই ম্যাচে। ২৮ মিনিটের মাথায় অসাধারণ গোলে সেম্বয় হাওকিপ দলকে এগিয়ে দিলেও ৫৬ মিনিটের মাথায় নিজগোলে তা শোধ করেন তাঁরই সতীর্থ সৌরভ দাস। অন্তর্বর্তী কোচ রেনেডি সিংয়ের প্রশিক্ষণে প্রথম খেলা লাল-হলুদ বাহিনীর দুই বিদেশি টমিস্লাভ মর্সেলা ও ড্যানিয়েল চিমা ছিলেন নিষ্প্রভ। একাধিক গোলের সুযোগ নষ্ট করেন চিমা। তবে মর্সেলা ও তাঁর সতীর্থ ডিফেন্ডাররা এ দিন নিজেদের ঘর বাঁচানোর ভূমিকা ভাল ভাবেই পালন করেন। বিশেষ করে হীরা মন্ডল ও আদিল খান ছিলেন নিজেদের জায়গায় অটল। তাঁদের তৎপরতাতেই সে দিন ব্যবধান তৈরি করতে পারেননি সুনীল ছেত্রীরা।

এসসি ইস্টবেঙ্গল স্কোয়াড

গোলকিপার: অরিন্দম ভট্টাচার্য, শুভম সেন, শঙ্কর রায়;

ডিফেন্ডার: আদিল খান, স্যারিনিও ফার্নান্ডেজ, রাজু গায়কোয়াড়, হীরা মন্ডল, জয়নার লরেন্সো, অঙ্কিত মুখার্জি, ড্যানিয়েল গোমস, গৌতম সিং, আকাশদীপ সিং, নাওচা সিং, ফ্রানিও পর্চে, অনন্ত তামাং;

মিডফিল্ডার: অমরজিৎ সিং কিয়াম, জ্যাকিচন্দ সিং, রোমিও ফার্নান্ডেজ, সৌরভ দাস, সংপু সিঙসিট, লালরিনলিয়ানা হামতে, আঙ্গুসানা ওয়াহেংবাম লুয়াং, মহম্মদ রফিক, বিকাশ জায়রু, লোকেন মেতেই, ফ্রান সোতা, ড্যারেন সিডোল;

ফরোয়ার্ড: নাওরেম মহেশ সিং, থঙখোসিম সেম্বয় হাওকিপ, বলওয়ন্ত সিং, সিদ্ধার্থ শিরোদকর, শুভ ঘোষ, রাহুল পাশোয়ান, আন্তোনিও পেরোসেভিচ, মার্সেলো রিবেইরো ডস স্যান্টোস।     

ম্যাচের খুঁটিনাটি

এসসি ইস্টবেঙ্গল এফসি বনাম বেঙ্গালুরু এফসি

তারিখ ও সময়: ৫ মার্চ, সন্ধ্যা ৭.৩০

ভেনু: তিলক ময়দান স্টেডিয়াম

সম্প্রচার: স্টার স্পোর্টস ২, স্টার স্পোর্টস ২ এইচডি, স্টার স্পোর্টস ৩, স্টার স্পোর্টস ১ হিন্দি, স্টার স্পোর্টস ১ হিন্দি এইচডি, স্টার স্পোর্টস ১ বাংলা

অনলাইন স্ট্রিমিং: ডিজনি+হটস্টার ও জিও টিভি