বেঙ্গালুরু এফসি-র বিরুদ্ধে চার গোলে জয় মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট শিবিরকে যতটা আত্মবিশ্বাস জুগিয়েছে, সেই আত্মবিশ্বাসই তাদের শেষ লিগ ম্যাচে দারুণ ভাবে কাজে লাগবে বলে মনে করেন, দলের অন্যতম নির্ভরযোগ্য মিডফিল্ডার অনিরুদ্ধ থাপা। 

সোমবার নতুন বাংলা বর্ষের দ্বিতীয় দিনে ঘরের মাঠ যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে মুম্বই সিটি এফসি-র বিরুদ্ধে নামবে সবুজ-মেরুন বাহিনী। এই ম্যাচে জিতলে প্রথমবার লিগশিল্ড অর্জন করবে কলকাতার ঐতিহ্যবাহী ক্লাব। লিগশিল্ড জিততে পারলে তারা এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগের গ্রুপ পর্বে সরাসরি খেলার যোগ্যতা অর্জন করতে পারবে। 

থাপাদের সামনে লড়াইটা বেশ কঠিন। কারণ, সোমবারের ম্যাচে হারলে বা ড্র করলে শুধু যে লিগশিল্ড হাতছাড়া হবে, তা-ই নয়, এফসি গোয়া ও মুম্বই তাদের শেষ ম্যাচে জিতলে সেরা দুইয়েও থাকতে পারবে না মোহনবাগান। কারণ, গোয়ার দলের বিরুদ্ধে তাদের দুই ম্যাচের পরিসংখ্যানে পিছিয়ে রয়েছে সবুজ-মেরুন বাহিনীই। অন্যদিকে, সোমবারের ম্যাচে শুধু ড্র-ই মুম্বই সিটি এফসি-কে লিগশিল্ড এনে দেবে। 

এই ম্যাচে অবশ্য জয় ছাড়া কিছু ভাবছেন না মোহনবাগানের ফুটবলাররা এবং সে জন্য তাঁরা যথেষ্ট উজ্জীবিত হয়েই মাঠে নামবেন বলে জানালেন অনিরুদ্ধ থাপা। indiansuperleague.com কে তিনি বলেন, “অবশ্যই আমরা যথেষ্ট উজ্জীবিত। কারণ, লিগশিল্ড জিততে গেলে আর একটা ম্যাচ জিততে হবে আমাদের। তার ওপর ম্যাচটা হবে আমাদের ঘরের মাঠে সমর্থকদের সামনে। তাই এই সাফল্য উদযাপন করার এটাই সবচেয়ে ভাল সুযোগ। যেহেতু, এটাই আমাদের প্রথম লিগ শিল্ড জয় হতে পারে, তাই আমাদের দলের খেলোয়াড়রা সবাই জানে, এই ম্যাচের গুরুত্ব কতটা”। 

গত বৃহস্পতিবার রীতিমতো দাপুটে ফুটবল খেলে সুনীল ছেত্রীর বেঙ্গালুরু এফসি-কে ৪-০-য় হারায় মোহনবাগান এসজি। সুনীল ছেত্রীর পেনাল্টি মিস করার মাশুল তাদের চরম ভাবে দিতে হয় সে দিন। বাগান-বাহিনীর সে দিনের পারফরম্যান্সে মুম্বইয়ের দলও বুঝে নেয়, তাদের লিগ শিল্ড জয়ের রাস্তা বেশ কঠিন হয়ে উঠতে চলেছে। 

একই ধারনা ঘুরপাক খাচ্ছে বাগান শিবিরেও। গত ম্যাচে ৮৪ শতাংশ নিখুঁত পাস খেলা মিডফিল্ডার বলেন, “চাপ সব সময়ই থাকে। আমরা ঘরের মাঠের সমর্থকদের সামনে খেলব। প্রথম লিগশিল্ড জেতার সুযোগ আমাদের কাছে। প্রত্যেক সমর্থকই আমাদের জয় দেখতে চান। আশা করি, প্রায় ষাট হাজার মানুষ গ্যালারিতে থাকবে। সব মিলিয়ে আমরা চাপে থাকব। আমাদের সেটা উপলব্ধি করে সে রকমই পারফরম্যান্স দেখাতে হবে”। 

লিগপর্বের শেষ ম্যাচে মুম্বই সিটি এফসি-র মুখোমুখি হওয়া নিয়ে থাপার মতোই উত্তেজিত দলের সেন্টার ব্যাক আনোয়ার আলিও। মোহনবাগানের রক্ষণে তিনি বড় ভরসা।  গত ম্যাচে ৯৪ শতাংশ পাস নিখুঁত ছিল তাঁর। ৯০ মিনিটে তাঁর ৩৩টির মধ্যে ৩১টি পাসই ছিল নিখুঁত। এ ছাড়াও ছ’টি গুরুত্বপূর্ণ ক্লিয়ারেন্সও করেন তিনি। আমরা যথেষ্ট পরিশ্রম করেছি। তার ফল আমরা গত ম্যাচেই পেয়েছি। সেই ম্যাচে জেতার পরেই আমরা লিগশিল্ডের দোরগোড়ায় চলে এসেছি। এ বার আমরা মুম্বই ম্যাচের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে আছি”।

মুম্বইয়ের দলের প্রতি তাঁর শ্রদ্ধার কথা জানিয়ে আনোয়ার বলেন, “মুম্বই সিটি এফসি-র প্রতি যথেষ্ট শ্রদ্ধাশীল আমরা। কিন্তু আমরাও যথেষ্ট ভাল খেলছি এবং সেজন্যই আমরা দু’নম্বরে রয়েছি। আমরা শীর্ষে ওঠার জন্য ও লিগশিল্ড জেতার জন্য ওদের বিরুদ্ধে আপ্রাণ লড়াই করব”। 

আইএসএলে দুই দল মুখোমুখি হয়েছে আটবার। তার মধ্যে ছ’বার জিতেছে মুম্বই সিটি এফসি। দু’বার ড্র হয়েছে। হিরো আইএসএলে প্রথম মুখোমুখিতে মুম্বই জেতে ১-০ ও ২-০-য়। সে মরশুমে ফাইনালে শেষ মুহূর্তে বিপিন সিংয়ের গোলে মুম্বই জেতে। ২০২১-২২ মরশুমে প্রথম লেগে ৫-১-এ জেতে মুম্বই। দ্বিতীয় লেগে মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে প্রথম ড্র ১-১ করে কলকাতার দল। গত মরশুমেও এই ব্যর্থতার খরা কাটেনি। ফল হয় ২-২। ফিরতি লেগে দুই দলের সাত নম্বর যুদ্ধে ফের ১-০-য় জেতে মুম্বই বাহিনী। 

চলতি লিগে গত ডিসেম্বরে মুম্বই ফুটবল এরিনায় গতবারের নক আউট চ্যাম্পিয়নদের ২-১-এ হারায় গতবারের লিগশিল্ডজয়ীরা। প্রথমার্ধে জেসন কামিংসের গোলে এগিয়ে যাওয়া সত্ত্বেও সেই ব্যবধান ধরে রাখতে পারেনি মোহনবাগান। ৪৪ মিনিটে সমতা আনেন গ্রেগ স্টুয়ার্ট এবং ৭৩ মিনিটে বিপিন সিংয়ের দেওয়া গোলে ছ’নম্বর জয়টি পায় আরব সাগরপাড়ের দল। এ বারই মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে প্রথম আইএসএল ম্যাচ জিতে প্রথমবার লিগ শিল্ড জেতারও হাতছানি মোহনবাগানের সামনে।