সেই ম্যাজিকটাই যেন হিরো আইএসএলের আসর থেকে হারিয়ে গিয়েছিল, যার নাম রয় কৃষ্ণা। বৃহস্পতিবার ফিরে এল সেই ম্যাজিক। যদিও চেনা ছন্দে এখনও পুরোপুরি পাওয়া যায়নি রয় কৃষ্ণাকে, কিন্তু চেন্নাইন এফসি-র বিরুদ্ধে ম্যাচে তার ইঙ্গিত অবশ্যই পাওয়া গিয়েছে।

বৃহস্পতিবার যে ভাবে জনি কাউকোর বাড়ানো থ্রু পেয়ে ডান দিক দিয়ে বক্সে ঢুকে জেরি লালরিনজুয়ালার বাধা উপেক্ষা করে গোলকিপারের বাঁ দিক দিয়ে গোলে বল ঠেলে দেন ফিজিয়ান তারকা, তাতে চেনা রয় কৃষ্ণারই ছায়া দেখতে পান এটিকে মোহনবাগানের লক্ষ লক্ষ সমর্থক।

প্রথমার্ধের বাড়তি সময়ে এই গোলটি তিনি করলেও অনেক আগেই দলকে এগিয়ে দিতে পারতেন রয়। কিন্তু দুর্ভাগ্য তাঁকে সেই গোল থেকে বঞ্চিত করে। ম্যাচের দ্বিতীয় মিনিটে একই ভাবে ডান দিক দিয়ে বক্সে ঢুকে গোলে শট নেন তিনি, যা পোস্টে লেগে ফিরে আসে। পরেরবার আর ভুল করেননি।

এত দিন ধরে রয় কৃষ্ণাকে মাঠে দেখতে না পেয়ে বেশ হতাশ হয়ে উঠেছিলেন সমর্থকেরা। নতুন বছর পড়ার পরে আর গোলই পাননি তিনি। সেই ২৯ ডিসেম্বর শেষ গোল পেয়েছিলেন এফসি গোয়ার বিরুদ্ধে ২-১ জয়ে। তার পরে পাঁচটি ম্যাচ খেললেও গোল পাননি ‘গোলমেশিন’। হয়তো ক্রমশ হতাশায় ডুবে যাচ্ছিলেন। যার ফলে গত সপ্তাহে ওডিশা এফসি-র বিরুদ্ধে মেজাজ হারিয়ে লাল কার্ডও দেখেন তিনি।

লাল কার্ড দেখায় বোধহয় শাপে বর হয়। একটা ম্যাচে খেলতে না পারায় মাঝখানে যে ছ’দিনের সময়টা পেয়ে যান, সেই সময়টাকেই কাজে লাগিয়ে বৃহস্পতিবার ছন্দে ফেরার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করে নেন তিনি। ম্যাচের পরে দলের স্প্যানিশ কোচ হুয়ান ফেরান্দো রয়ের এই প্রত্যাবর্তনে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, “রয়ের জন্য আমি খুবই খুশি। কারণ, ও আর ওর পরিবার খুব কঠিন সময় পেরিয়ে এসেছে। কোয়ারান্টাইন, ওর বাচ্চার কথাও নিশ্চয়ই সবাই শুনেছেন, কোভিড সব মিলিয়ে দুঃসময় কাটিয়ে এসেছে ও। তবে আমি খুশি যে কোভিডের সঙ্গে লড়াইটা ও প্রায় শেষ করে এনেছে”।

চেন্নাইনকে হারিয়ে এটিকে মোহনবাগান সেমিফাইনালে জায়গা পাকা করে নিলেও এখনও জোড়া চ্যালেঞ্জ জেতা বাকি রয়েছে তাদের। প্রথমটা হল লিগশিল্ড জেতা ও দ্বিতীয়টা হিরো আইএসএল চ্যাম্পিয়ন হওয়া। এই লড়াইয়ে চেনা রয় কৃষ্ণাকে পেলে সবুজ-মেরুন শিবিরের পক্ষে এর চেয়ে ভাল আর কিছুই হতে পারে না। মানসিক ভাবে রয় সেই জন্যই তৈরি হচ্ছে। লিগের শেষ ম্যাচে ও নক-আউট পর্বে নিজেরে সেরাটা দেওয়ার জন্য।

শুক্রবার এটিকে মোহনবাগান মিডিয়াকে তিনি বলেন, “চেন্নাইন এফসি-কে হারানো সহজ ছিল না। কারণ, ওরা ভাল দল। প্লে অফে পৌঁছে গিয়েছি। এ বার লিগ শীর্ষে ওঠার লড়াই। তাই জামশেদপুরের বিরুদ্ধে লিগের শেষ ম্যাচটাই আমাদের কাছে আপাতত ফাইনাল। জামশেদপুর শক্তিশালী দল। কিন্তু আমাদের নিজেদের নিয়ে মনোনিবেশ করতে হবে। আমরা এক নম্বর হতে পারি, এই আত্মবিশ্বাস নিয়েই মাঠে নামতে চাই। সেই সুযোগ আমাদের সামনে আছে”।

নিজের ফর্মে ফেরা নিয়ে রয় বলেন, “গোল করতেই হবে, এমন কোনও চাপ আমার ওপর ছিল না। গোল পেয়ে ভাল ভাল লাগছে। তবে এটা আমার একার কৃতিত্ব নয়। দলগজ সাফল্য। পরপর দুটো ম্যাচে ‘ক্লিন শিট’ রাখতে পেরেছি। এই ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে। আমরা প্রত্যেকে একে অপরকে জানি। ফলে জামশেদপুরের বিরুদ্ধে ম্যাচে কী করতে হবে আমাদের, তা সকলেরই জানা। ফাইনাল খেলতে নেমে যা যা করতে হয়, সেগুলোই করতে হবে। রিকভারি প্রক্রিয়াটা ঠিকমতো করে নিয়ে লিগের শেষ ম্যাচে মাঠে নামব আমরা”।

এক সময় যে সবুজ-মেরুন সমর্থকেরা স্লোগান তুলেছিলেন, ‘রাখে কৃষ্ণ মারে কে?’, সেই সমর্থকদের উদ্দেশ্যে তাঁদের প্রিয় তারকার বার্তা, “সমর্থকেরা চেয়েছিলেন আমরা প্লে অফে উঠি, উঠে পড়েছি। এ বার আমাদের লিগে এক নম্বর হওয়ার চ্যালেঞ্জ। তার পরে সেমিফাইনাল ও ফাইনালও আছে। এই ম্যাচগুলোতেও যাতে সফল হতে পারি, সে জন্য সবাই আমাদের পাশে থাকুন এবং আমাদের উদ্বুদ্ধ করুন”।

রয়ের মতো দলের অধিনায়ক প্রীতম কোটালও আত্মবিশ্বাসে ভরপুর। তিনি বলেন, “গত মরসুমেও একই রকম পরিস্থিতি হয়েছিল। সে বার পারিনি। বোধহয় তাড়াহুড়ো করে বেশি চাপ নিয়ে নিয়েছিলাম বলেই পারিনি। এ বার আর সেই ভুল করতে চাই না। এ বার নিজেদের খেলা খেলতে হবে। গোলের সুযোগের জন্য অপেক্ষা করতেই হবে”।

লিগে এক নম্বর হয়ে এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ছাড়পত্রও চান তিনি। বলেন, “এখন আমাদের লক্ষ্য লিগশিল্ড জিতে এসিএল খেলার যোগ্যতা অর্জন। তাই সোমবার জামশেদপুরের বিরুদ্ধে ম্যাচটা একেবারে ফাইনালের মতো”।