সদ্যসমাপ্ত হিরো আইএসএলে লিগশিল্ড বা চ্যাম্পিয়নের ট্রফি জিততে না পারলেও স্প্যানিশ কোচ হুয়ান ফেরান্দোর ওপরই আস্থা রাখছে এটিকে মোহনবাগান। তাই আগামী মরশুমেও তাঁকেই কোচের দায়িত্বে বহাল রাখার সিদ্ধান্ত নিল তারা। বৃহস্পতিবার সরকারি ভাবে এ কথা ঘোষণা করা হল। স্বাভাবিক ভাবেই আসন্ন এএফসি কাপের ম্যাচগুলিতেই তিনিই দল নামাবেন বলেও জানানো হয়েছে এ দিন।

বৃহস্পতিবার এটিকে মোহনবাগান কতৃপক্ষ জানিয়ে দেন, দীর্ঘ আলোচনার পর এ দিনই ফেরান্দো তাদের চুক্তিতে সই করেছেন। যার ফলে ২০২২-২৩ মরশুমেও তিনিই দলের প্রশিক্ষণের দায়িত্বে থাকবেন। পারফরম্যান্সের জন্যই তাঁর ওপর আস্থা রাখল সবুজ-মেরুন শিবির।

এ বারের মরশুমের মাঝামাঝি সময়ে ফেরান্দো দলের দায়িত্ব নেন। রানার্স আপ কেরালা ব্লাস্টার্স ও এসসি ইস্টবেঙ্গলকে যথাক্রমে ৪-২ ও ৩-০-য় হারিয়ে শুরুতেই গোলের বন্যা বইয়ে দাপুটে জয়ের ফলে এটিকে মোহনবাগান শিবিরের আত্মবিশ্বাস যখন তুঙ্গে, তখনই চারটি ম্যাচের মধ্যে দু’টিতে হার (মুম্বই সিটি এফসি ও জামশেদপুর এফসি-র কাছে) ও দু’টিতে ড্র করে তারা।

টানা চার ম্যাচে জয়হীন থাকায় তারা লিগ টেবলে সাত নম্বরে নেমে যায়। টানা চার ম্যাচে সাফল্যের খরার জেরে এটিকে মোহনবাগানের কোচ আন্তোনিও লোপেজ হাবাস দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়ার আকস্মিক সিদ্ধান্ত নেন। তবে তড়িঘড়ি হাবাসের সঠিক বিকল্প খুঁজে বার করতে কোনও ভুল করেননি ক্লাব কর্তারা এবং এফসি গোয়া থেকে নিয়ে আসেন কোচ হুয়ান ফেরান্দোকে।

ফেরান্দো দায়িত্ব নিয়ে এটিকে মোহনবাগানের ফুটবলারদের লড়াই করে ঘুরে দাঁড়ানোর মন্ত্রে দীক্ষিত করেন। ৪০ বছর বয়সি এই কোচ সবুজ-মেরুন শিবিরে যোগ দেওয়ার পরে টানা ১৩টি ম্যাচে অপরাজিত থাকে তারা। যার শুরু নর্থইস্ট ইউনাইটেড এফসি-র বিরুদ্ধে ৩-২ জয় দিয়ে। হাবাস দায়িত্ব ছাড়ার আগে দু’টি ম্যাচে ড্র করে তাঁর দল। সব মিলিয়ে ১৫টি ম্যাচে হারহীন ছিল গতবারের রানার্স আপ-রা। এই ১৫ ম্যাচ থেকে মোট ৩১ পয়েন্ট পায় তারা এবং এই লড়াই-ই তাদের লিগ টেবলের সাত নম্বর থেকে শীর্ষে নিয়ে চলে আসে। দলকে এই লড়াই করার জন্য উজ্জীবিত করেছিলেন যিনি, সেই ফেরান্দোর ওপরই আস্থা রাখতে চান এটিকে মোহনবাগান কর্তারা।

আগামী ১২ এপ্রিল এটিকে মোহনবাগান এএফসি ম্যাচ খেলবে ঘরের মাঠ যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে। ১ এপ্রিল থেকে তার প্রস্তুতি শুরু হয়ে যাবে যুবভারতীতেই। যদিও কাদের বিরুদ্ধে খেলতে হবে তাদের, তা এখনও নিশ্চিত নয়। তবে এটা নিশ্চিত যে সমর্থকেরা প্রায় দু’বছর পর প্রিয় দলের খেলা গ্যালারিতে বসে দেখতে পারবেন।

পরের মরশুমেও দলের দায়িত্ব পেয়ে ফেরান্দো জানিয়েছেন, “আমার কাজের প্রতি আস্থা রাখায় ক্লাবের প্রধান কর্ণধার ড. গোয়েঙ্কা ও ক্লাব ম্যানেজমেন্টকে ধন্যবাদ জানাই। মরশুম শেষ হওয়ার পর ড. গোয়েঙ্কার সঙ্গে আমার বিস্তারিত কথা হয়েছে এবং আমাদের লক্ষ্যে আমরা কী করে পৌঁছতে পারব, তা নিয়ে আমরা একমত। আইএসএল শেষ হওয়ার পর থেকেই আমরা যুবভারতীতে খেলতে নামার জন্য প্রহর গোণা শুরু করে দিয়েছি। সমর্থকদের ভালবাসার উষ্ণতা অনুভব করার অপেক্ষায় রয়েছি আমরা”।

গত এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগের গ্রুপ পর্বে এফসি গোয়ার ফুটবলারদের মধ্যে কঠিন লড়াইয়ের বীজ রোপন করেছিলেন ফেরান্দো। সেই লড়াইয়ের মন্ত্র বুকে নিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে দুর্দান্ত খেলে তাঁর দল। তাঁর কৌশল সারা দেশের এমনকী, আন্তর্জাতিক ফুটবল মহলেও প্রশংসা পেয়েছিল। এ বার এটিকে মোহনবাগানকে এশীয় স্তরে কতটা এগিয়ে দিতে পারবেন তিনি, সেটাই দেখার।