হিরো আইএসএলের সেমিফাইনালিস্ট এটিকে মোহনবাগান ঘরের মাঠে, প্রায় পঁচিশ হাজার সমর্থকদের চোখের সামনে প্রথমবার খেলায় খুশির আবহাওয়া চার দিকে। যুবভারতীতে এএফসি কাপের প্রাথমিক পর্বের এই ম্যাচে শ্রীলঙ্কার সেরা ক্লাব ব্লু স্টার এসসি-র বিরুদ্ধে পাঁচ গোলে জেতায় এই খুশি দ্বিগুন হয়ে গিয়েছে।

তবে এমন দাপুটে জরে পরেও দলের খেলা নিয়ে পুরোপুরি চিন্তামুক্ত হতে পারছেন না এটিকে মোহনবাগানের স্প্যানিশ কোচ হুয়ান ফেরান্দো। এখনও কী কী সমস্যা রয়েছে তাঁর দলে? আগামী সপ্তাহের ম্যাচ নিয়েই বা কী ভাবছেন? মঙ্গলবার রাতে ম্যাচের পরে সাংবাদিক বৈঠকে কী বললেন তিনি, জেনে নেওয়া যাক। 

দল পাঁচ গোলে জেতার পরে আপনি নিশ্চয়ই খুশি?

আমি কখনও পুরোপুরি খুশি হতে পারি না। কারণ, আমি আমার খেলোয়াড়দের শক্তি ও দক্ষতা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। আমার দৃষ্টিভঙ্গি থেকে আমার দলই সেরা। হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে আমরা শেষ ম্যাচ খেলেছি প্রায় মাসখানেক আগে। এত দিন পরে মাঠে নেমে নিখুঁত ফুটবল খেলা সত্যিই খুব কঠিন। ছোটখাটো ব্যাপরগুলোতে আরও সংশোধন করে পরের ম্যাচে নামতে হবে। আশা করি আমাদের একশো শতাংশ ছেলেরা পারবে।

কোন কোন জায়গায় এখনও সংশোধন প্রয়োজন বলে মনে করেন?

সত্যি বলতে, প্রথম দশ মিনিটে আমরা ঠিকমতো জায়গা তৈরি করতে পারিনি। কারণ, ওরা খুবই ভাল খেলছিল। আমাদের ওই সময়ে যেহেতু সমস্যা হচ্ছিল, তাই প্রথমার্ধে আমাদের ওঠানামায় আরও নিয়ন্ত্রণ করা উচিত ছিল। কিন্তু এ রকম কঠিন সময়ে সমর্থকদের কাছ থেকে সাহায্য পাওয়া যায়। আজকের আবহাওয়াও (উষ্ণ ও আর্দ্র) মোটেই সোজা ছিল না। তা সত্ত্বেও ছেলেরা যা খেলেছে, তাতে আমি খুশি।     

এই ম্যাচে বড় ব্যবধানে জিতবেন, আশা করেছিলেন?

আগেও যা বলেছি, এখনও তা-ই বলছি। এই স্তরের ফুটবলে, যেখানে ৯০ মিনিটে ফয়সালা হয়, সেখানে কোনও কিছুই সোজা নয়। এক্ষেত্রে সঠিক ভারসাম্য এবং মনসংযোগ খুবই জরুরি। এখানে একটা ভুল করা মানেই সমস্যা ডেকে আনা। তবে আমি খুশি যে দলের ছেলেরা পরিশ্রম করে এ রকম একটা জয় অর্জন করেছে। তবে আমাদের আরও ভাল করতে হবে।  

অমরিন্দর সিংকে এই ম্যাচের স্কোয়াডে রাখলেন না কেন?

আমার স্কোয়াডে ২৮জন খেলোয়াড় রয়েছে এবং প্রত্যেকের ওপরই আমার যথেষ্ট আস্থা রয়েছে। আমার দল বা আলাদা করে অমরিন্দরকে নিয়ে আমি চিন্তিত নই। অমরিন্দর আজ একশো শতাংশ ফিট ছিল না। সে জন্যই ওকে আজ দলে নেওয়া হয়নি। এ ছাড়া আমাদের দলে সুব্রত (পাল) রয়েছে। ও অসাধারণ, কিন্তু ৯০ শতাংশ জায়গায় আছে। গোলকিপিং কোচ ওকে নিয়ে অনেক পরিশ্রম করছে।

রয় কৃষ্ণা ব্যক্তিগত কারণে আজ খেলতে পারেননি বলে শোনা গেল। পরের ম্যাচে কি খেলতে পারবেন?

রয়ের যদি সমস্যা থাকে বা কোনও খেলোয়াড়ের যদি চোট থাকে, তা হলে আমি বিচলিত হই না। কারণ, আমি জানি দলের প্রত্যেক খেলোয়াড় মাঠে নামার জন্য তৈরি। ও (রয়) না খেলতে পারলে ওই জায়গায় খেলার জন্য ডেভিড (উইলিয়ামস) আছে।

কলকাতার সমর্থকদের সম্পর্কে কী বলবেন?

অসাধারণ সমর্থক ওরা। আমি কোচ হিসেবে কথাটা বলছি। কিন্তু ওদের দেখে মনে হচ্ছিল আমিও মাঠে নেমে পড়ি। মাঠে খেলার সময় যদি এ রকম সমর্থক পাওয়া যায়, তা হলে এর চেয়ে ভাল আর কিছু হতে পারে না। এই ৪১ বছর বয়সেও আমাকে অনেক চাঙ্গা করে দেয় সমর্থকেরা। 

পরের ম্যাচে আপনার প্রতিপক্ষ ঢাকার আবাহনি লিমিটেড। এই দলটা নিয়ে কী ভাবছেন?

ওদের দেশের লিগ ম্যাচগুলোর মধ্যে কয়েকটা দেখেছি। তবে এই স্তরে ওরা কেমন খেলে, সেই ধারনা নেই। যতটুকু বুঝেছি ওদের ওঠানাম ও রক্ষণ দুটোই ভাল। দলটা সঙ্ঘবদ্ধ থেকে ফুটবল খেলে। ওদের চাপে রাখতে হবে। জায়গা তৈরি করতে হবে আমাদের। ব্যাপারটা ওরা খুব একটা সোজা হতে দেবে না হয়তো।  দলের প্রস্তুতির জন্য আমার হাতে সাত দিন রয়েছে। কাল পর্যন্ত দলের ছেলেরা এই জয়টা উপভোগ করুক। সমর্থকদের পক্ষেও এই জয়টা সুখকর হয়েছে। আগামী মঙ্গলবার আমাদের সামনে আর একটা ফাইনাল। কারণ, এই ম্যাচে জিতলে আমরা এএফসি কাপের গ্রুপ পর্বে খেলতে পারব। আমাদের ম্যাচটা জিততেই হবে।