এই মরশুমের বাকি ম্যাচগুলিতে আর তাদের পক্ষে চাপমুক্ত হয়ে অল আউট খেলা সম্ভব নয় বলে মনে করেন এসসি ইস্টবেঙ্গলের স্প্যানিশ কোচ মারিও রিভেরা। তবে ভাগ্য সহায় হলে মঙ্গলবার গতবারের চ্যাম্পিয়ন মুম্বই সিটি এফসি-এর বিরুদ্ধে ড্র করা বা জেতা সম্ভব বলে মনে করেন তিনি। সোমবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে কী বললেন রিভেরা? জেনে নেওয়া যাক।   

মুম্বই সিটি এফসি সম্প্রতি খুব একটা ধারাবাহিক নয়। ওদের এই অবস্থায় প্রথম লেগের মতো এবারেও কি ওদের আটকানো সম্ভব?

আমরা যদি ড্রয়ের জন্য খেলি, তা হলে ওদের বিরুদ্ধে ড্র করা সম্ভব হবে না। তবে ভাগ্য একটু সঙ্গ দিলে আমরা ওদের বিরুদ্ধে ড্র করতে পারি। প্রথম লেগে যেমন করেছিলাম। তবে আমরা জেতার জন্য মাঠে নামব। সেক্ষেত্রে আমাদের একটু ঝুঁকি নিতেই হবে। ড্রয়ের জন্য খেলাটা অনেক বেশি কঠিন। আমার মনে হয় জেতার কথা ভেবে খেলাই ভাল। ক্লাবের ইতিহাসের প্রতি শ্রদ্ধা বজায় রেখে আমাদের জেতার চেষ্টা করতে হবে। আমাদের যদি ভাগ্য ভাল হয়, যেটা গত কয়েকটা ম্যাচে আমরা পাইনি, তা হলে এই ম্যাচে আমরা সফল হতে পারি।

মুম্বই সিটি এফসি সেরা চারে নিজেদের জায়গা এখনও পাকা করতে পারেনি। তাই এই ম্যাচে ওরা চাপে থাকবে। এতে কি আপনার দলের পক্ষে চাপমুক্ত হয়ে অল-আউট খেলতে সুবিধা হবে?

এই মরশুমে? আর সেটা সম্ভব নয়। এটা ঠিকই যে ওদের (মুম্বই) সেরা চারে থাকতে গেলে জয় খুব দরকার। তাই ওরা চাপে থাকবে। তবে মুম্বইয়ের দলে অনেক বড় বড় খেলোয়াড় আছে আর ওরা খুব ভাল করে জানে, কী করে চাপের মুখে ভাল খেলতে হয়। ওরা বড় বড় দলের হয়ে, জাতীয় দলের হয়ে খেলেছে। আমাদের পক্ষে মোটেই সোজা হবে না ম্যাচটা। কারণ, ওরা সেরা চারে ওঠার জন্য লড়বে।

শেষের ম্যাচগুলোতে ভুল শোধরানোর জন্য কী কী পরিকল্পনা আছে আপনার?

প্রতিবারের মতো ম্যাচের পরে আমরা বিশ্লেষণ করতে বসি। ভুলগুলো শোধরানোর চেষ্টা করি এবং ভালগুলোকে রেখে দেওয়ার চেষ্টা করি।

হিরো আইএসএলে এই যে এত প্রতিযোগিতা চলছে, এই নিয়ে আপনার কী মন্তব্য?

হ্যাঁ, এটা আমি বারবারই বলেছি। এই লিগে দলগুলোর মান একেবারে কাছাকাছি। প্রত্যেকেই প্রায় সমান স্তরের ফুটবল খেলছে এবং যে কোনও দিন যে কোনও দল জিততে পারে।

আকাশ মিশ্র, রওশন সিংয়ের তুলনায় হীরা মন্ডলকে আপনি কত নম্বর দেবেন? ভারতীয় দলের ডাক পেতে ওর আর কত দেরী বলে মনে হয় আপনার?

অন্য দলের ফুটবলারদের নিয়ে কিছু বলব না। এটুকু বলতে পারি, হীরা মন্ডল খুবই ভাল খেলোয়াড়। ওর স্কিল খুবই ভাল। ও যদি প্রতিদিনই নিজেকে উন্নত করে তুলতে পারে, ওর ভারতীয় দলের হয়ে খেলার সম্ভাবনা যথেষ্ট। ওকে এখন অনেক পরিশ্রম করতে হবে, অনেক কিছু শিখতে হবে, নিজের ভুলগুলো শোধরাতে হবে এবং গুণগুলো বজায় রাখতে হবে। ভবিষ্যতে জাতীয় দলে ওর ডাক পাওয়া উচিত বলে আমি মনে করি।

এই ম্যাচে আরও আগ্রাসী ফুটবল খেলতে চাই

অন্য দিকে, মুম্বই সিটি এফসি-র কোচ ডেস বাকিংহাম সাংবাদিকদের জানালেন, প্রথম লেগে যেহেতু এসসি ইস্টবেঙ্গলকে হারাতে পারেননি তাঁরা, তাই এই ম্যাচে আক্রমণ-নির্ভর ফুটবলই খেলবে তাঁর দল। এসসি ইস্টবেঙ্গল টেবলের নীচের দিকের দল বলে তাদের খাটো করে দেখতে চান না তিনি। সোমবারের ভার্চুয়াল সাংবাদিক বৈঠকের উল্লেখযোগ্য অংশ এখানে তুলে দেওয়া হল।

হারের পরে এই ম্যাচ খেলতে নামছেন আপনারা এবং জিতলে সেরা চারে ফিরতে পারবেন। সে দিক থেকে এই ম্যাচটা কতটা গুরুত্বপূর্ণ?

এর পরেও আরও চারটে ম্যাচ বাকি আমাদের। তবু বলব এসসি ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে ম্যাচটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সে ওরা যে জায়গাতেই থাকুক, নতুন কোচের প্রশিক্ষণে ওরা কিন্তু অন্য রকম ফুটবল খেলছে। ওরা প্রতিপক্ষ হিসেবে কঠিন। আমাদের এখন এই ম্যাচটার দিকেই মনোনিবেশ করতে হবে।

জাহুর চোটের পরে আপনার দল ৪-৩-৩-এ খেলা শুরু করেছে। এই ম্যাচেও কি একই সিস্টেম দেখা যাবে?

এটা নির্ভর করছে বিপক্ষ কী করবে, অনেকটা তার ওপর। এসসি ইস্টবেঙ্গল নতুন কোচের তত্ত্বাবধানে অন্য ধরনের কিছু পরিকল্পনা নিয়ে নামছে। জাহুর চোটের জন্য শুধু নয়, বিপক্ষের খেলার ধরনের কথা মাথায় রেখেও আমরা এটা করতে পারি। সেরা ফল আনতে গেলে যেটা করা দরকার, তা তো করতেই হবে।

এসসি ইস্টবেঙ্গল যেহেতু টেবলের একেবারে নীচে থাকা দল, তাই মুম্বইয়ের সমর্থকেরা সবাই আশা করবেন, এই ম্যাচটা আপনারা অবশ্যই জিতবেন। এটা কি আপনাদের বাড়তি চাপ?

আমরা এর আগেও দেখেছি। যে অবস্থানেই থাকুক না কেন, যে কোনও দল যে কোনও দলকে হারাতে পারে। সে দিন আমরা নর্থইস্টের ক্ষেত্রে এটাই দেখেছি। তাই এটা ভেবে কোনও লাভ নেই যে, আমাদের অবস্থান অনুযায়ী খেলে এই ম্যাচে আমরাই সাফল্য পেতে চলেছি। কারণ, ওদের বিরুদ্ধে একটা ম্যাচ খেলা হয়ে গিয়েছে আমাদের। সেই ম্যাচে তিন পয়েন্ট নিয়ে মাঠ ছাড়া উচিত ছিল আমাদের। কিন্তু আমরা দুই পয়েন্ট খুইয়েছিলাম। তাই এই ম্যাচে নিজেদের জেতার জায়গায় নিয়ে যেতে হবে। তা ছাড়াও শেষ তিনটে ম্যাচের জন্যও নিজেদের তৈরি করে নিতে হবে এই ম্যাচেই।

প্রথম লেগে ড্রয়ের অভিজ্ঞতার কথা মাথায় রেখে কি এই ম্যাচে আরও আগ্রাসী ফুটবল খেলবেন আপনারা? না কি যেমন খেলছেন, সে রকমই খেলবেন?

এই ম্যাচে আরও আগ্রাসী ফুটবল খেলতে চাই আমরা। আমি দলের সবাইকে বলে দিয়েছি যে, সাইডলাইনে দাঁড়িয়ে দলের ছেলেদের পারফরম্যান্স দেখে আমি উত্তেজনায় কাঁপতে চাই। ওদের সে রকমই আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলতে হবে। আমাদের গোল করতে হবে এবং রক্ষণও আঁটোসাঁটো করতে হবে, গত দু’টি ম্যাচে আমরা যা পারিনি।