মঙ্গলবার ভারতীয় দলের বিশ্বকাপ বাছাই পর্বের ম্যাচে গুয়াহাটির ফুটবলপ্রেমীরা প্রিয় যেমন জাতীয় দলের জয় দেখার আশা নিয়ে মাঠে আসবেন, তেমনই আরও একটি বিশেষ ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী হতে চলেছে তারা। এই ম্যাচটিই হতে চলেছে ভারতীয় ফুটবলের কিংবদন্তি সুনীল ছেত্রীর ১৫০তম আন্তর্জাতিক ম্যাচ।

শুক্রবার এশীয় বাছাই পর্বের অ্যাওয়ে ম্যাচে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে গোলশূন্য ড্র করেছে ভারত। এ বার তারা আফগানদের বিরুদ্ধে হোম ম্যাচ খেলবে গুয়াহাটিপ ইন্দিরা গান্ধী স্টেডিয়ামে। সে দিন দেশের হয়ে ১৫০তম ম্যাচ খেলার জন্য সুনীলকে বিশেষ সংবর্ধনা জানাবে সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশন।

ভারতের জার্সি গায়ে সুনীল ছেত্রী প্রথম মাঠে নামেন ১৯ বছর আগে ২০০৫-এর জুনে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে, কোয়েটায়। ১-১-এ ড্র হওয়া সেই ম্যাচে ভারতের হয়ে একমাত্র গোলটিও করেছিলেন তিনিই। তারপর থেকে এ পর্যন্ত ১৪৯টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন তিনি। ৯৩টি গোলও করেছেন, যা ভারতীয় ফুটবলে সর্বোচ্চ। এ পর্যন্ত যতগুলি মাইলস্টোন ম্যাচ খেলেছেন তিনি, অর্থাৎ ২৫, ৫০, ৭৫, ১০০ ও ১২৫তম ম্যাচ, তার প্রতিটিতেই গোল করেছেন তিনি। এ বার ১৫০তম ম্যাচেও গোল পাবেন তিনি, এমনই আশা করছেন ভারতীয় ফুটবলপ্রেমীরা। তা ছাড়া এই ম্যাচে সুনীলকে জয় উপহার দেওয়াই নিশ্চয়ই তাঁর সতীর্থদের কাছে বাড়তি মোটিভেশন হতে চলেছে।

চলতি বাছাই পর্বের দ্বিতীয় হোম ম্যাচ খেলতে ভারতীয় দল ইতিমধ্যেই গুয়াহাটিতে পৌঁছে গিয়েছে ভারতীয় দল। শনিবার পৌঁছেই দল নিয়ে অনুশীলনে নেমে পড়েন ভারতীয় দলের কোচ ইগর স্টিমাচ। গত ম্যাচে দলের পারফরম্যান্সে খুব একটা খুশি হতে পারেননি তিনি। বিশ্বের ১৫৮ নম্বর ফুটবলখেলিয়ে দেশ আফগানিস্তানকে সে দিন হারানো উচিত ছিল বলে মনে করেন তিনি। একাধিক গোলের সুযোগও তৈরি করেছিল তাঁর দলের ফুটবলাররা। কিন্তু কোনও সুযোগ থেকেই গোল করতে পারেননি তাঁরা, যা ইদানীং ভারতীয় ফুটবল দলের একটা বড় সমস্যায় পরিণত হয়েছে। গত পাঁচটি ম্যাচে একটিও গোল করতে পারেনি ভারতীয় দল।

মঙ্গলবারের ম্যাচে গোলের খরা কাটিয়ে তাদের জয়ে ফেরাটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ। এবং দলকে গোলে ও জয়ে ফিরিয়ে নিজের এই বিশেষ ম্যাচকে চিরস্মরণীয় করে রাখাটা সুনীল ছেত্রীর কাছেও একটা বড় চ্যালেঞ্জ। এশীয় বাছাই পর্বের গ্রুপে ভারত আপাতত দু’নম্বরে রয়েছে, কাতারের পরেই। এই ম্যাচে জিততে পারলে তারা সেই জায়গা ধরে রাখতে পারবে। এই ম্যাচ জিতে রাখতে পারলে জুনে যখন কুয়েত ও কাতারের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় রাউন্ডের শেষ দু’টি ম্যাচ খেলবে তারা, তখন কিছুটা চাপমুক্ত থেকে খেলতে পারবে স্টিমাচের দল।

এই ম্যাচ নিয়ে কোচ স্টিমাচ বলেছেন, “হাজার হাজার ছেলে একদিন দেশের হয়ে মাঠে নামার স্বপ্ন চোখে নিয়ে ফুটবল জীবন শুরু করে। সেখানে ১৫০তম আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে নামে যে, তাকে সর্বকালের সেরা ছাড়া আর কিছুই বলা যায় না। আশা করি, আমাদের অধিনায়ক মঙ্গলবার ভক্তদের সামনে তার এই ঐতিহাসিক ম্যাচকে চিরস্মরণীয় করে রাখবে”।

শনিবার অসমের রাজধানীতে ভারতীয় ফুটবলারদের উষ্ণ অভ্যর্থনা জানানো হয়। বিমানবন্দর থেকে টিম হোটেলে যাওয়ার পথে বিভিন্ন স্কুলের ছেলেমেয়েরা তাঁদের শুভচ্ছা জানানোর জন্য পথের দু’ধারে দাঁড়িয়ে ছিল। এই অভ্যর্থনায় মুগ্ধ দলের গোলকিপার গুরপ্রীত সিং সান্ধু বলেছেন, “সমর্থকেরা আমাদের কত ভালবাসে, তা বুঝিয়ে দিয়েছে। আশা করি, মঙ্গলবার আফগানিস্তানকে হারিয়ে ওদের এই ভালবাসার প্রতিদান দিতে পারব। ওদের মুখে হাসি ফোটাতে পারব”।

গুয়াহাটিতে ভারতীয় ফুটবল দল শেষ খেলেছে পাঁচ বছর আগে। ফিফা বিশ্বকাপ ২০২২ বাছাই পর্বের ম্যাচে তারা সে বার ওমানের কাছে ১-২-এ হেরেছিল। সেই ম্যাচেও গোল সামলেছিলেন গুরপ্রীত। তার স্মৃতি হাতড়ে ভারতীয় দলের গোলকিপার বলেন, “খুব ভাল ম্যাচটা ছিল। তখন কোচ স্টিমাচের সঙ্গে সবে পথ চলা শুরু করেছিলাম আমরা। আমরা আশি মিনিট ভাল খেলেছিলাম। এখানকার সমর্থকদের কাছ থেকে অসাধারণ সমর্থন পেয়েছিলাম। গতবারের মতো এ বারেও সে রকমই সমর্থন পাব, আশা করি”।