দুই দলই রয়েছে সেরা চারে। শনিবার এক দল নামবে প্রথম চারে টিকে থাকার জন্য। অন্য দলের কাছে এক নম্বরে ওঠার লড়াই। দুই দলেরই সেমিফাইনালে ওঠার সম্ভাবনা যথেষ্ট। তাই শনিবার সন্ধ্যায় তিলক ময়দানের এই ফুটবল-যুদ্ধে উত্তেজনার পারদ উঠতে পারে চরমে।

লিগ টেবলের দুই নম্বরে থাকা এটিকে মোহনবাগানের সামনে এখন একটাই রাস্তা, পরের সব ম্যাচ জিতে শীর্ষে থেকে লিগ শেষ করা। চার নম্বরে থাকা কেরালা ব্লাস্টার্সের উদ্দেশ্য এই ম্যাচ জিতে সেরা চারে নিজেদের জায়গা বজায় রাখা।

কলকাতার দল টানা এগারোটি ম্যাচে অপরাজিত থেকে এক নতুন নজির সৃষ্টি করেছে। কেরালা ব্লাস্টার্স সেই সময়টা পেরিয়ে এসেছে চলতি মরশুমের শুরুতেই। টানা দশটি ম্যাচে অপরাজিত থাকার পরে গত ছ’টি ম্যাচের মধ্যে দু’টিতে হেরেছে ও চারটিতে জিতেছে তারা।

গত ম্যাচে কলকাতার আর এক ক্লাব এসসি ইস্টবেঙ্গলকে ১-০ গোলে হারায় তারা। তবে সে দিন মনে ছাপ ফেলার মতো ফুটবল খেলতে পারেনি কেরালা। সারা ম্যাচে পাঁচবার গোলে শট নিলেও কর্নার থেকে এনেস সিপোভিচের গোলটি ছাড়া আর কোনও গোল করতে পারেনি তারা। সাতটি কর্নার পেয়েও একটির বেশি কাজে লাগাতে পারেনি তারা। পাসিংয়েও এসসি ইস্টবেঙ্গলের চেয়ে পিছিয়েই ছিল কেরালা ব্লাস্টার্স। সব মিলিয়ে খুব একটা উচ্চ মানের বা তীব্র পারফরম্যান্স দেখাতে পারেননি তারা। এ রকম পারফরম্যান্সে এটিকে মোহনবাগানকে হারানো খুব একটা সোজা হবে না বোধহয়।

দেশীয়রাই সম্বল সবুজ-মেরুনে

এটিকে মোহনবাগানও যে গত ম্যাচে এফসি গোয়ার বিরুদ্ধে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দেখাতে পেরেছে, তাও বলা যায় না। অসংখ্য গোলের সুযোগ নষ্ট করে শেষ পর্যন্ত ২-০ গোলে তারা ম্যাচটা জিতলেও বল দখল ও পাসিংয়ে তারা বিপক্ষের চেয়ে অনেক পিছিয়ে ছিল। তাদের বল পজেশন যেখানে ছিল ৩৮ শতাংশ, সেখানে বিপক্ষের অর্ধেক পাসও (৫৬০-২১৮) খেলতে পারেনি তারা। আক্রমণ নির্ভর ফুটবল খেলে হাফ ডজন শট গোলে রাখে এবং দু’টি গোল করেন মনবীর সিং। কিন্তু গোলের সুযোগ তৈরি করেছে অনেক। যা দেখে সবুজ-মেরুন বাহিনীর স্প্যানিশ কোচ হুয়ান ফেরান্দো দলের পারফরম্যান্স নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। কারণ, তিনি জানেন, এ ভাবে খেললে বড় দলের বিরুদ্ধে সফল হওয়া কঠিন হবে।

আসলে আক্রমণ বিভাগে তিন স্তম্ভ রয় কৃষ্ণা, ডেভিড উইলিয়ামস ও হুগো বুমৌসকে ছাড়াই খেলতে হচ্ছে তাদের। মাঝমাঠে কার্ল ম্যাকহিউকেও পাওয়া যাচ্ছে না। এই অবস্থায় আক্রমণে লিস্টন কোলাসো ও মনবীর সিংয়ের ওপরই নির্ভর করতে হচ্ছে। ভারতীয়দের মধ্যে কোলাসোই সবচেয়ে বেশি সাত গোলের মালিক। সর্বোচ্চ ভারতীয় স্কোরারদের তালিকায় মনবীর পাঁচ গোল করে রয়েছেন দ্বিতীয় স্থানে। মুম্বই সিটি এফসি-র বিপিন সিং-ও পাঁচ গোল করে মনবীরের সঙ্গে একই জায়গায় রয়েছেন। মনবীর আবার একটা অন্য নজিরও গড়ে ফেলেছেন হিরো আইএসএলে। তিনিই প্রথম ভারতীয়, যিনি টানা তিনটি ম্যাচে গোল করেছেন। এটিকে মোহনবাগানের শুধু রয় কৃষ্ণা ও ডেভিড উইলিয়ামসের এই কীর্তি রয়েছে।

কোলাসোর মতো সবচেয়ে বেশি (৫৭) গোলমুখী শটও এ পর্যন্ত মারেনি কোনও ভারতীয়। মনবীর ৩৫টি গোলমুখী শট নিয়ে এই তালিকায় তিন নম্বরে রয়েছেন। গত কয়েকটি ম্যাচে এই দু’জনই সবুজ-মেরুনের গোলমেশিনকে সচল রেখেছেন।  

প্রবীর দাস, শুভাশিস বোসদের ওপর ছেড়ে দিতে হয়েছে উইং প্লে। মাঝমাঠে লেনি রড্রিগেজ, দীপক টাঙরি, জনি কাউকোদের দের ওপর ভরসা করতে হচ্ছে ফেরান্দোকে। যত দিন না পুরো দল হাতে পাচ্ছেন, ততদিন পরিকল্পনা অনুযায়ী ভাল পারফরম্যান্স দেওয়া কঠিন। শনিবারের ম্যাচে চোট-তালিকার মধ্যে থেকে কাদের বার করে আনতে পারেন ফেরান্দো, এটা যেমন একটা প্রশ্ন, তেমনই বড় প্রশ্ন হল, মাত্র তিন দিনের ব্যবধানে নিজেদের ভুলগুলো কতটা শোধরাতে পারবেন। শুক্রবার সাংবাদিক বৈঠকে অবশ্য তেমন কোনও ভাল খবর দিতে পারেননি কোচ ফেরান্দো। শুধু জানান, দলের সঙ্গে অনুশীলনে যোগ দিয়েছেন তাঁরা।

তবে এটিকে মোহনবাগানের ভারতীয়রা যথেষ্ট ভরসা জোগাচ্ছে দলকে। ৩১টির মধ্যে ১৭টি গোলই করেছেন দলের ভারতীয়রা। আর কোনও দলের ভারতীয়রা এত গোল করতে পারেননি।  

ধারাবাহিকতার অভাব, তবু আত্মবিশ্বাসী ব্লাস্টার্স

সম্প্রতি খুব একটা ধারাবাহিক সাফল্যের মধ্যে নেই কেরালা ব্লাস্টার্সও। গত ম্যাচে এসসি ইস্টবেঙ্গলকে ১-০-য় হারানোর আগে জামশেদপুরের বিরুদ্ধে ০-৩-এ হারে তারা। প্রথমার্ধের শেষ দিকে পরপর দু’টি গোল খাওয়ার পরেই তাদের ছন্দপতন ঘটে। সে দিন সারা ম্যাচে মাত্র দু’টি শট গোলে রাখতে পেরেছিল ব্লাস্টার্স।

গত ম্যাচে ব্লাস্টার্স শিবিরের একটি বড় সমস্যা ছিল নির্ভরযোগ্য খেলোয়াড়দের অনুপস্থিতি। চোট-আঘাত ও সাসপেনশনের জন্য তারা বেশ সমস্যায় ছিল। এসসি ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে তারা পায়নি ক্রোয়েশিয়ান ডিফেন্ডার মার্কো লেসকোভিচ, অভিজ্ঞ মিডফিল্ডার হরমনজ্যোৎ সিং খাবরা ও তরুণ ডিফেন্ডার রুইভা হরমিপমকে। প্রথম দু’জন ছিলেন সাসপেন্ড ও শেষজনের চোট। এটিকে মোহনবাগানের বিরুদ্ধে প্রথম দু’জনকে পেতেই পারেন কোচ ইভান ভুকোমানোভিচ। ফলে গত ম্যাচের চেয়ে শক্তিশালী হয়েই নামবে তারা।

তাদের রক্ষণ বিভাগ এবং গোলকিপার ধারাবাহিক ভাবে ভাল পারফরম্যান্স দেখিয়ে আসছে। এ পর্যন্ত ছ’টি ম্যাচে ‘ক্লিন শিট’ বজায় রেখেছে তারা। ২০১৪-য় যে বার ফাইনালে উঠেছিল কেরালার দল, সে বার তাদের ক্লিন শিটের সংখ্যা ছিল সাত। এ বার সেই সংখ্যাকে ছাপিয়ে যেতে পারে প্রভসুখন গিলরা। চলতি মরশুমে গোল্ডেন গ্লাভের দৌড়ে তিনি এক নম্বরে রয়েছেন পাঁচটি ‘ক্লিন শিট’ নিয়ে। প্রতি ১০০.৪ মিনিটে একটি করে গোলের গড়ে ১২ ম্যাচে ১০ গোল খেয়েছেন তিনি।

সেন্টার ব্যাক লেসকোভিচ এই ম্যাচে ফিরে আসায় গত ম্যাচের একমাত্র গোলদাতা সিপোভিচকে দলে রাখতে পারবেন কি না কোচ, তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন। আক্রমণ বিভাগে আদ্রিয়ান লুনা, আলভারো ভাস্কেজ ও জর্জ পেরেইরা দিয়াজ ভাল ফর্মে রয়েছেন। তাঁদের কাউকে বসানোর সিদ্ধান্তও কঠিন হতে পারে।

ফ্ল্যাশ ব্যাকে প্রথম লেগ

এ বারের লিগের উদ্বোধনী ম্যাচে কেরালা ব্লাস্টার্সকে ৪-২-এ হারিয়েছিল এটিকে মোহনবাগান। গত বারের চ্যাম্পিয়ন মুম্বই সিটি এফসি থেকে নিয়ে আসা ফরাসি মিডফিল্ডার হুগো বুমৌস তৃতীয় ও ৩৯ মিনিটের মাথায় দু’টি অনবদ্য গোল করেন। ২৭ মিনিটে পেনাল্টি থেকে গোল করেন রয় কৃষ্ণা এবং ৫০ মিনিটের মাথায় রয়ের পাস থেকে অনবদ্য গোল পান লিস্টন কোলাসোও। ফতোরদার পন্ডিত জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামে সে দিন ২৪ মিনিটের মাথায় প্রথম গোল শোধ করেন সাহাল আব্দুল সামাদ এবং ৬৯ মিনিটে দ্বিতীয় গোলটি করেন পেরেইরা দিয়াজ। এ বারের ম্যাচে এত গোল হওয়ার সম্ভাবনা কম। কারণ, দুই দলই যথেষ্ট লড়াকু মেজাজে। তাই কোনও পক্ষই একে অপরকে এক ইঞ্চিও জমি ছাড়তে রাজি নয়।

 এটিকে মোহনবাগান স্কোয়াড

গোলকিপার: অমরিন্দর সিং, অভিলাষ পাল, সুব্রত পাল, অর্শ আনোয়ার শেখ;

ডিফেন্ডার: তিরি, আশুতোষ মেহতা, সুমিত রাঠি, শুভাশিস বোস, প্রীতম কোটাল, প্রবীর দাস, মাইকেল সুসাইরাজ, দীপক টাঙরি, গুরসিমরত গিল, জোস আরোয়ো, রবি রাণা, রিকি সাবং;

মিডফিল্ডার: জনি কাউকো, কার্ল ম্যাকহিউ, হুগো বুমৌস, বিদ্যানন্দ সিং, শেখ সাহিল, অভিষেক সূর্যবংশী, লেনি রড্রিগেজ, ইঙ্গসন সিং;

ফরোয়ার্ড: রয় কৃষ্ণা, ডেভিড উইলিয়ামস, লিস্টন কোলাসো, মনবীর সিং, কিয়ান নাসিরি।

ম্যাচের খুঁটিনাটি

মুখোমুখি: কেরালা ব্লাস্টার্স এফসি গোয়া বনাম এটিকে মোহনবাগান

তারিখ ও সময়: ১৯ ফেব্রুয়ারি, সন্ধ্যা ৭.৩০

ভেনু: তিলক ময়দান স্টেডিয়াম

সম্প্রচার: স্টার স্পোর্টস ২, স্টার স্পোর্টস ২ এইচডি, স্টার স্পোর্টস ৩, স্টার স্পোর্টস ১ হিন্দি, স্টার স্পোর্টস ১ হিন্দি এইচডি, স্টার স্পোর্টস ১ বাংলা

অনলাইন স্ট্রিমিং: ডিজনি+হটস্টার ও জিও টিভি