প্রথম লেগের মতো দ্বিতীয় লেগেও ওডিশা এফসি-কে হারাতে পারল না এটিকে মোহনবাগান। বৃহস্পতিবার তিলক ময়দান স্টেডিয়ামে চলতি লিগের শততম ম্যাচটি ১-১-এ শেষ হলেও হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে যে কোনও দল জিততে পারত। সাত নম্বরে থাকা দলের বিরুদ্ধে সেরা চারে থাকা এটিকে মোহনবাগানের কাছ থেকে যে দাপুটে পারফরম্যান্স আশা করা গিয়েছিল, তা সে ভাবে পাওয়া যায়নি।

লিস্টন কোলাসো, হুগো বুমৌসদের খেলায় ক্লান্তির ছাপ ছিল স্পষ্ট। ডেভিড উইলিয়ামস এ দিন স্কোয়াডেই ছিলেন না। মনবীর সিং গোলের সুযোগ হাতছাড়া করার ধারাবাহিকতা বজায় রাখেন। চোট সারিয়ে আসা রয় কৃষ্ণা দ্বিতীয়ার্ধে মাঠে নামলেও মাথা গরম করে পরপর দু’টি হলুদ কার্ড দেখে মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে যেতে বাধ্য হন। ফলে পরের ম্যাচে খেলতে পারবেন না তিনি। তাও সবুজ-মেরুনের প্রাক্তন হাভি হার্নান্ডেজ পেনাল্টি পেয়েও গোল পাননি। তিনি সফল হলে ওডিশা হয়তো ম্যাচটা জিততেও পারত।

এই ড্রয়ের ফলে সেরা চারে টিকে থাকলেও এটিকে মোহনবাগানের শীর্ষে ওঠার স্বপ্ন জোর ধাক্কা খেল। ১৭ ম্যাচে ৩১ পয়েন্ট পেয়ে তারা তিন নম্বরেই রয়ে গেল। জামশেদপুর এফসি, যারা শুক্রবার নর্থইস্ট ইউনাইটেড এফসি-র বিরুদ্ধে খেলবে, তারা একটি ম্যাচ কম খেলে একই সংখ্যক পয়েন্ট অর্জন করেছে। শুক্রবার জিতলে তারা এটিকে মোহনবাগানের চেয়ে বেশ কিছুটা এগিয়ে যাবে। ১৮ ম্যাচে ৩৫ পেয়ে শীর্ষে রয়েছে হায়দরাবাদ।    

বৃহস্পতিবার দুই দলই ৪-২-৩-১-এ দল সাজিয়ে খেলা শুরু করে। তবে এটিকে মোহনবাগান একটু বেশিই আক্রমণাত্মক ছিল শুরু থেকে। প্রথম ২৫ মিনিটের মধ্যে ম্যাচে একের পর এক নাটকীয় মুহূর্ত তৈরি হয়। প্রথম পাঁচ মিনিটেই দু-বার গোলের সুযোগ পেয়েও ব্যর্থ হন হুগো বুমৌস। দুই দল দু-দু’টি গোল করে যেমন, তেমনই পেনাল্টিও মিস করেন ওডিশা এফসি-র অন্যতম সেরা তারকা হাভিয়ে হার্নান্ডেজ, যিনি গত মরশুম পর্যন্ত ছিলেন এটিকে মোহনবাগানে।

পাঁচ মিনিটের মাথাতেই দলকে এগিয়ে দেন ওডিশার তরুণ ফরোয়ার্ড রেদিম লাঙ। ডান দিক দিয়ে উঠে একেবারে মাপা লো ক্রসে তাঁকে প্রায় গোলটি সাজিয়ে দেন জেরি। তবে রেদিমের কাছে বল পৌঁছনোর আগে শুভাশিস বোস ও সন্দেশ ঝিঙ্গন তা ক্লিয়ার করার সুযোগ পেয়েছিলেন। রেদিমের পিছনেই ছিলেন প্রীতম কোটালও। কিন্তু তাঁরা সবাই ব্যর্থ হন।  

তবে তিন মিনিটের বেশি এই ব্যবধান বজায় রাখতে পারেনি ওডিশা। আট মিনিটের মাথায় গোল শোধ করে দেয় এটিকে মোহনবাগান। বক্সের মধ্যে সাহিল পানওয়ার হুগো বুমৌসকে অবৈধ ভাবে বাধা দেওয়ায় পেনাল্টি দেন রেফারি। পেনাল্টি থেকে গোল করে সমতা আনেন জনি কাউকো।

মূলত দুই খেলোয়াড়ের তৎপরতায় এ দিন ওডিশা এফসি-কে বেশ বিপজ্জনক লাগছিল। ডান দিক দিয়ে বারবার আক্রমণে ওঠা জেরি এবং বিপক্ষের গোলের সামনে বিপজ্জনক ভাবে ছুটে বেড়ানো হাভি। এদেরকে সামলাতে গিয়ে বেশ কিছুটা সমস্যায় পড়ে এটিকে মোহনবাগান রক্ষণ। এ দিন সবুজ-মেরুন বাহিনীকে দেখে বেশ ক্লান্ত লাগে। তিন সপ্তাহে হাফ ডজন ম্যাচ খেলার ধকল হয়তো তাদের খেলায় প্রতিফলিত হয়। এই সুযোগটাই বারবার নেওয়ার চেষ্টা করে ওডিশা।

তবে ২২ মিনিটের মাথায় যে পেনাল্টি ওডিশা এফসি-কে দেন রেফারি আদিত্য পুরকায়স্থ, তাতে যথেষ্ট অসন্তোষ প্রকাশ করতে দেখা যায় সবুজ-মেরুন ফুটবলারদের। বক্সের মধ্যে আরিদাই সুয়ারেজের পা থেকে বল কাড়তে যান তিনি। তাঁর পা বলে লাগলেও রেফারি পেনাল্টি দেন। যদিও হাভির স্পট কিক বাঁদিকে ডাইভ দিয়ে বাঁচিয়ে নেন অমরিন্দর।

সমতা আসার পরে দুই দলই ব্যবধান বাড়ানোর জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে। কার্ল ম্যাকহিউ ও জেরির দূরপাল্লার শট বারের ওপর দিয়ে বেরিয়ে যায়। তবে ৪০ মিনিটের মাথায় চোট পেয়ে হাভিয়ে হার্নান্ডেজ মাঠের বাইরে চলে যাওয়ায় কিছুটা ধাক্কা খায় ওডিশা। প্রথম ৪৫ মিনিটে ওডিশা দু’টি ও এটিকে মোহনবাগান তিনটি শট গোলে রাখে।

প্রথমার্ধে প্রায় সারাক্ষণই সন্দেশ ঝিঙ্গনকে দেখে মনে হয়, তিনি স্বচ্ছন্দে ছিলেন না। তাই দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই তাঁর জায়গায় আশুতোষ মেহতাকে মাঠে নামতে দেখা যায়। শুধু সন্দেশ নয়, লিস্টন কোলাসোকেও এ দিন চেনা মেজাজে পাওয়া যায়নি।  দ্বিতীয়ার্ধে অবশ্য তাঁকে কিছুটা ভাল ফুটবল খেলতে দেখা যায়। ৬০ মিনিটের মাথায় বক্সের মধ্যে তাঁর পা থেকে বল কাড়ার চেষ্টা করেও পারেননি ওডিশার চার ফুটবলার। শেষ পর্যন্ত আর এক ডিফেন্ডার এসে তাঁকে আটকান।

৫৪ মিনিটের মাথায় কার্লের জায়গায় নামেন রয় কৃষ্ণা। গোলের সংখ্যা বাড়ানোই ছিল এই পরিবর্তনের উদ্দেশ্য। মাঠে নামার পরেই ডান দিক দিয়ে উঠে বক্সের মাথায় থাকা মনবীরকে একটি গোলের ক্রস দেন রয়, যা বারের ওপর দিয়ে উড়িয়ে দেন মনবীর। রয় আসার পরে দলের আক্রমণের গতি বাড়ে। শুরু থেকেই তাঁর চেনা মেজাজে ফেরার চেষ্টা শুরু করেন ফিজিয়ান ফরোয়ার্ড।

লিস্টন বেশিক্ষণ মাঠে থাকতে পারেননি। ৬৮ মিনিটের মাথায় তাঁকে তুলে কিয়ান নাসিরিকে নামান কোচ। লেনি রড্রিগেজের জায়গায় নামেন দীপক টাঙরি। আক্রমণে গতি এলেও তাতে ধার ছিল না তেমন। এটাই সমস্যায় ফেলে এটিকে মোহনবাগানকে। রয় কৃষ্ণার দু-দু’টি শট গোলের বাইরে ও ওপর দিয়ে চলে যায়। লিস্টন বেরিয়ে যাওয়ার পরে গোলের জন্য মরিয়া ভাব সে ভাবে দেখা যায়নি। তা ছাড়া এক পয়েন্টের গন্ধ পেয়ে ওডিশার রক্ষণও অত্যন্ত তৎপর হয়ে ওঠে। ফলে গোলের সুযোগও সে ভাবে তৈরি করতে পারেনি এটিকে মোহনবাগান।

৮৬ মিনিটের মাথায় বিপক্ষের বক্সের সামনে ডান কোণ থেকে ফ্রি কিক পেয়েও সেই সুযোগ হাতছাড়া করেন শুভাশিস বোস। তাঁর কিক সোজা বারের ওপর দিয়ে বেরিয়ে যায়। ম্যাচের শেষ দু’মিনিটে দুই দলই একটি করে গোলের সুবর্ণ সুযোগ পায়। বক্সের মাঝখান থেকে নেওয়া ওডিশার লিরিডন ক্রাসনিকির শট বারে লেগে ফিরে আসে। পরের মিনিটেই ডান দিক দিয়ে ওঠা কিয়ান নাসিরির ক্রস থেকে মনবীর সিং গোলের সামনে বিপক্ষের ডিফেন্ডারের গায়ে বল মারেন।

স্টপেজ টাইমে আরও বড় ধাক্কা খায় এটিকে মোহনবাগান। ম্যাচে দ্বিতীয়বার হলুদ কার্ড তথা লাল কার্ড দেখায় মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে যান রয় কৃষ্ণা। অর্থাৎ বেঙ্গালুরু এফসি-র বিরুদ্ধে পরবর্তী ম্যাচে তিনি খেলতে পারবেন না। এর পরে আর গোল শোধ করার কোনও সুযোগ পায়নি গতবারের রানার্স-আপরা।

এটিকে মোহনবাগান দল: অমরিন্দর সিং (গোল), তিরি, সন্দেশ ঝিঙ্গন (আশুতোষ মেহতা), শুভাশিস বোস, প্রীতম কোটাল (অধি) (মাইকেল সুসাইরাজ), কার্ল ম্যাকহিউ (রয় কৃষ্ণা), জনি কাউকো, লেনি রড্রিগেজ (দীপক টাঙরি), হুগো বুমৌস, মনবীর সিং, লিস্টন কোলাসো (কিয়ান নাসিরি)।

পরিসংখ্যানে ম্যাচ        

বল পজেশন: ওডিশা এফসি ৪১% - এটিকে মোহনবাগান ৫৯%

সফল পাস: ১৯৯/২৮২ (৭১%) - ৩৯৬/৪৮৩ (৮২%), গোলে শট: ২-৪, ফাউল: ৮-১৩, সেভ: ৩-১, ইন্টারসেপশন: ১৭-৯, কর্নার: ৭-৮, হলুদ কার্ড: ২-৫, লাল কার্ড: ০-১, ম্যাচের সেরা: সেবাস্তিয়ান থাঙমুয়ানসাঙ