চলতি হিরো ইন্ডিয়ান সুপার লিগের সেরা চারে জায়গা প্রায় পাকা করেই ফেলেছে গতবারের রানার্স এটিকে মোহনবাগান। বৃহস্পতিবার ওডিশা এফসি-কে হারিয়ে সেরা চারে নিজেদের নিজেদের আরও মজবুত করার উদ্দেশ্য নিয়েই বাম্বোলিমের মাঠে নামতে চলেছে সবুজ মেরুন বাহিনী। অন্য দিকে, ওডিশার কাছে এ নেহাতই নিজেদের প্রমাণ করার ম্যাচ। লিগ টেবলে সাত নম্বরে থাকলেও সেমিফাইনালে ওঠার আশা তাদের আর প্রায় নেই বললেই চলে।

গত ম্যাচে কেরালা ব্লাস্টার্সের সঙ্গে ড্র করে ৩০ পয়েন্টের গণ্ডী ছুঁয়ে ফেলেছে এটিকে মোহনবাগান। কয়েক দিন আগেই তাদের কোচ হুয়ান ফেরান্দো বলেছিলেন, এক নম্বরে থাকতে ৩৮-এর বেশিই পেতে হবে। ৩০-এর ঘরে ঢুকে পড়েছে তারা। বৃহস্পতিবার চলতি লিগের শততম ম্যাচে তিন পয়েন্ট পেলে হায়দরাবাদ এফসির (১৮ ম্যাচে ৩৫) পরের জায়গাটাতে গিয়ে বসবে। যদিও শীর্ষে উঠতে চাই আরও সাফল্য।  

তবে শুক্রবার জামশেদপুর এফসি (১৬ ম্যাচে ৩১) যদি দশ নম্বর দল নর্থইস্ট ইউনাইটেড এফসি-কে হারাতে পারে, তা হলে তারা ফের এটিকে মোহনবাগানকে তিনে নামিয়ে দু’নম্বর জায়গাটা দখল করবে। এই অবস্থায় ওডিশার বিরুদ্ধে ড্র বা হার মানে এটিকে মোহনবাগানের সেরা চারে থাকাই বেশ অনিশ্চিত হয়ে যেতে পারে, এক নম্বরের রাস্তা তো দূর অস্ত।

দুঃসময়েও অপরাজিত সবুজ মেরুন

গত শনিবার টানা ১১ ম্যাচে অপরাজিত থাকার নজির প্রায় ভেঙে দিতে বসেছিল ২-১-এ এগিয়ে থাকা কেরালা ব্লাস্টার্স। কিন্তু শেষ মুহূর্তে জনি কাউকোর গোলে সেই নজির অক্ষুণ্ণ থাকে। দলের নির্ভরযোগ্য তারকাদের চোট থাকা সত্ত্বেও টানা তিনটি ম্যাচ জিতে তারা প্রমাণ করে দিয়েছে, এই মুহূর্তে সবুজ-মেরুন বাহিনীকে হারানো বেশ কঠিন। গত ম্যাচে সেই ধারণা ভাঙতে গিয়েও ব্যর্থ হয় কেরালার দলটি।

ফিনল্যান্ডের ইউরো দলের ফুটবলার জনি কাউকো শুরুর দিকে সে ভাবে নিজেকে মেলে ধরতে না পারলেও ক্রমশ নিজেকে দলের অন্যতম কার্যকরী খেলোয়াড় হিসেবে প্রমাণ করেছেন। যখনই দলের প্রয়োজন হয়েছে, তখনই নিজের সেরাটা দিয়ে দলকে সাহায্য করেছেন। দলের চার বিদেশি রয় কৃষ্ণা, ডেভিড উইলিয়ামস, হুগো বুমৌস এবং কার্ল ম্যাকহিউ যখন এক সঙ্গে চোট পেয়ে মাঠের বাইরে চলে গিয়ছিলেন, তখন এই কাউকো এবং লিস্টন কোলাসো, মনবীর সিংরা দলকে অপরাজিত রাখেন। এ পর্যন্ত পাঁচটি গোলে নিজের অবদান রেখেছেন কাউকো। দুটো করেছেন ও তিনটি করিয়েছেন। দলের দুঃসময়ে যে ভাবে পাশে দাঁড়িয়েছেন, তাতে তাঁর জাত বোঝা গিয়েছে।

হুয়ান ফেরান্দো কোচ হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর বেশির ভাগ ম্যাচেই দল হিসেবে যথেষ্ট সঙ্ঘবদ্ধ ফুটবল খেলেছে এটিকে মোহনবাগান। হারার জায়গা থেকেও বারবার নিজেদের ফিরিয়ে এনেছে তারা। পরিসংখ্যান বলছে, পিছিয়ে থেকেও মোট ১১ পয়েন্ট অর্জন করেছে তারা। একমাত্র বেঙ্গালুরু এফসি (১২) হারার জায়গা থেকে ফিরে এসে তাদের চেয়ে বেশি পয়েন্ট অর্জন করেছে।

গত কয়েকটি ম্যাচে লিস্টন, মনবীর, কাউকো-রা দলের গোলমেশিন সচল রাখলেও এ বার দেখার বিদেশিরা ফিরে এসে দলকে কতটা এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেন। গত ম্যাচেই কার্ল ও উইলিয়ামসকে প্রথম এগারোয় রাখেন ফেরান্দো। বুমৌস ও রয়কে পরে নামান। এখনও তাঁরা পুরো ফিট নন বলে এ দিন সাংবাদিকদের জানান স্প্যানিশ কোচ। তাঁদের যে ক্রমশ ম্যাচে ফিরিয়ে আনার পরিকল্পনা রয়েছে তাঁর, সেও জানিয়ে দেন। নক আউট পর্বের আগে ফের পুরো দল হাতে পাওয়ার জন্য হিসেব করেই এগোতে চান তিনি।

দৌড়ের বাইরে ওডিশা এফসি

গত ম্যাচে বেঙ্গালুরু এফসি-র কাছে ১-২ হারের পর ওডিশা সেরা চারের দৌড় থেকে কার্যত ছিটকে গিয়েছে। শুরুটা ভাল করলেও (১১ ম্যাচে ১৬ পয়েন্ট) গত সাতটি ম্যাচের মধ্যে মাত্র একটি জয় (এসসি ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে ২-১) তাদের অনেকটা পিছিয়ে দেয়।   

তবে তাদের ভারপ্রাপ্ত কোচ কিনো গার্সিয়া অবশ্য অন্য তত্ত্বে বিশ্বাসী। তাঁর মতে, “এটিকে মোহনবাগান এই লিগের অন্যতম সেরা দল। ওদের বিরুদ্ধে মাঠে নামাটাই আমাদের দলের ছেলেদের কাছে একটা বড় মোটিভেশন। প্রথম লেগে আমরা ওদের বিরুদ্ধে ভালই করেছিলাম (০-০)। এ বারও সমর্থকদের জন্য সেই ভাল খেলাটা বজায় রাখতে চাই। দল হিসেবে ভাল ফুটবল খেলতে চাই। ছোটখাটো ব্যাপারগুলোতে বেশি নজর দিতে হবে আমাদের। কোথায় কী ভুল হচ্ছে, তা বুঝতে পেরেছি আমরা। এ বার সেগুলোই শুধরে নেওয়ার পালা”। আসলে গত সাতটি ম্যাচে একাধিকবার জেতার জায়গা থেকে পয়েন্ট খুইয়েছে ওডিশা, যা সব মিলিয়ে দাঁড়ায় মোট দশ পয়েন্ট। এ বার আর সেই একই ভুল হোক, তা চান না ওডিশার কোচ। 

কিনোর দলের সেরা তারকা ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড জোনাথাস ক্রিস্টিয়ান আপাতত সেরা ফর্মে রয়েছেন। ১৫ ম্যাচে আট গোল করেছেন তিনি, চারটি করিয়েছেন। তাঁর সতীর্থ মিডফিল্ডার আইজ্যাক চাকছুয়াক দু’টি গোলে অ্যাসিস্ট করেছেন ঠিকই, তবে রক্ষণাত্মক দক্ষতার দিক থেকে তিনি আরও ভাল। ১৮টি ম্যাচে তিনি ৫১টি ট্যাকল, ২৩টি ব্লক ও ১৪টি ইন্টারসেপশন করেছেন। এই দুই তারকা ভোগাতে পারেন এটিকে মোহনবাগানকে।

ফ্ল্যাশ ব্যাকে প্রথম লেগ

প্রথম লেগে দুই দলের মুখোমুখিতে অন্তত হাফ ডজন শট গোলে রাখলেও একবারও বল জালে জড়াতে পারেননি এটিকে মোহনবাগান ফরোয়ার্ডরা। বহু দিন পরে রয় কৃষ্ণা ও ডেভিড উইলিয়ামস জুটিকে শুরু থেকে খেলতে দেখা গেলেও তাঁরা দলকে জেতাতে পারেননি। সে দিন একাধিক সুবর্ণ সুযোগ নষ্ট করে জয় হাতছাড়া করে কলকাতার দল। সারা ম্যাচে ওডিশার তিনটি শট লক্ষ্যে ছিল। কিন্তু কোনওটিই গোলে পরিণত হয়নি। পরিসংখ্যানে সব দিক দিয়ে এগিয়েও সে দিন আসল কাজের কাজটি করে উঠতে পারেনি সবুজ-মেরুন শিবির। যতক্ষণ রয় কৃষ্ণা মাঠে ছিলেন, ততক্ষণ তাঁরা বিপক্ষের গোল এরিয়ায় ঝড় তুলে দেন। ওই সময়ে বিপক্ষকে যথেষ্ট চাপে রাখে তাঁরা। ওডিশার ডিফেন্ডাররা, বিশেষ করে ভিক্টর মঙ্গিলের তৎপরতায় বারবার ব্যর্থ হন তাঁরা। কিন্তু ৬০ মিনিটের মাথায় অপ্রত্যাশিত ভাবে রয় কৃষ্ণাকে কোচ মাঠের বাইরে ডেকে নেওয়ার পর থেকেই গতবারের রানার্স আপ দলের আক্রমণের ধার উল্লেখযোগ্য ভাবে কমে যায়।

এটিকে মোহনবাগান স্কোয়াড

গোলকিপার: অমরিন্দর সিং, অভিলাষ পাল, সুব্রত পাল, অর্শ আনোয়ার শেখ;

ডিফেন্ডার: তিরি, আশুতোষ মেহতা, সুমিত রাঠি, শুভাশিস বোস, প্রীতম কোটাল, প্রবীর দাস, মাইকেল সুসাইরাজ, দীপক টাঙরি, গুরসিমরত গিল, জোস আরোয়ো, রবি রাণা, রিকি সাবং;

মিডফিল্ডার: জনি কাউকো, কার্ল ম্যাকহিউ, হুগো বুমৌস, বিদ্যানন্দ সিং, শেখ সাহিল, অভিষেক সূর্যবংশী, লেনি রড্রিগেজ, ইঙ্গসন সিং;

ফরোয়ার্ড: রয় কৃষ্ণা, ডেভিড উইলিয়ামস, লিস্টন কোলাসো, মনবীর সিং, কিয়ান নাসিরি।

ম্যাচের খুঁটিনাটি

মুখোমুখি: ওডিশা এফসি গোয়া বনাম এটিকে মোহনবাগান

তারিখ ও সময়: ২৪ ফেব্রুয়ারি, সন্ধ্যা ৭.৩০

ভেনু: অ্যাথলেটিক স্টেডিয়াম, বাম্বোলিম  

সম্প্রচার: স্টার স্পোর্টস ২, স্টার স্পোর্টস ২ এইচডি, স্টার স্পোর্টস ৩, স্টার স্পোর্টস ১ হিন্দি, স্টার স্পোর্টস ১ হিন্দি এইচডি, স্টার স্পোর্টস ১ বাংলা

অনলাইন স্ট্রিমিং: ডিজনি+হটস্টার ও জিও টিভি