তরুণ স্ট্রাইকার কিয়ান নাসিরিকে আরও দুই মরশুমের জন্য চুক্তিবদ্ধ করল এটিকে মোহনবাগান। সদ্যসমাপ্ত হিরো ইন্ডিয়ান সুপার লিগে সবুজ-মেরুন জার্সি গায়ে দারুন অভিষেক হওয়ার পরে এই মরশুমে নিয়মিত দলের হয়ে মাঠে নামেন ২১ বছরের কিয়ান। মরশুমের শেষে ক্লাব কর্তারা তাঁকে আরও দু’বছরের জন্য দলে রেখে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

এটিকে মোহনবাগানের সোশ্যাল পেজে এই ঘোষণা করে লেখা হয়েছে, “কিয়ান নাসিরি আমাদের সঙ্গেই থাকছেন। আরও দু’বছরের চুক্তিতে সই করেছেন তিনি”। সঙ্গে ২৫ নম্বর সবুজ-মেরুন জার্সি হাতে তাঁর ছবি।

এই মরশুমে এক দুর্দান্ত আবিষ্কার এই কিয়ান নাসিরি। কলকাতায় খেলা কিংবদন্তি ফুটবলার জামশেদ নাসিরির পুত্র ডার্বির অভিষেকে যে কাণ্ড করে বসেন, তা দেখে হতবাক হয়ে যায় সারা দেশের ফুটবল মহল। দ্বিতীয়ার্ধে পরিবর্ত হিসেবে নেমে হ্যাটট্রিক করে সবার মন জয় করে নেন এই তারকা। এর পরে আর কোনও ম্যাচে গোল না পেলেও যে সব নিখুঁত ও দর্শনীয় ক্রস ও পাস দিয়েছেন তিনি তাতে প্রমাণ করেই দিয়েছেন যে, তাঁর রক্তে ফুটবল আছে।

কোচ হুয়ান ফেরান্দোরও বেশ পছন্দের খেলোয়াড় কিয়ান। তাঁর মতে, “একজন স্ট্রাইকারের কাজ শুধু গোল করা নয়, গোলের সুযোগ তৈরিতে সাহায্য করাও। কিয়ান এই কাজটাও খুব ভাল ভাবে করতে পারে। আইএসএলে ওর দেওয়া কয়েকটা পাস, ক্রস ছিল অসাধারণ ও নিখুঁত। কিয়ান যথেষ্ট কার্যকরী একজন ফুটবলার”।

আসন্ন এএফসি কাপের ম্যাচেও শিবিরে রয়েছেন কিয়ান। ডার্বিতে হ্যাটট্রিক করে যে ভাবে কেরিয়ার শুরু করেছেন, সে ভাবেই আন্তর্জাতিক মঞ্চেও তিনি শুরু করতে চান। সম্প্রতি এটিকে মোহনবাগান মিডিয়াকে তিনি বলেন, “যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে গ্যালারি ভর্তি সমর্থকের সামনে খেলার সুযোগ পেলে গোল করে দলকে জেতানোই হবে আমার প্রধান লক্ষ্য”।

গত শুক্রবার থেকে এটিকে মোহনবাগানের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে ঘরের মাঠে। আপাতত ফিজিক্যাল কন্ডিশনিংয়ের ওপর বেশি জোর দিচ্ছেন কোচ হুয়ান ফেরান্দো। দলের বিদেশি ফুটবলার জনি কাউকো, রয় কৃষ্ণা, হুগো বুমৌস, তিরি ও ডেভিড উইলিয়ামস রয়েছেন এই শিবিরে। ১২ এপ্রিলের ম্যাচে প্রতিপক্ষ কে, মঙ্গলবারের আগে জানার উপায় নেই। তাই এখনও নির্দিষ্ট কোনও কৌশল তৈরি করেননি ফেরান্দো।

হিরো আইএসএলের মতো এএফসি কাপের ম্যাচেও যেহেতু চারজনের বেশি বিদেশি খেলাতে পারবেন না, তাই কিয়ানের মতো তরুণ খেলোয়াড়দের ওপর বেশ নজর দিচ্ছেন এটিকে মোহনবাগান কোচ। রবিবার তিনি অনুশীলনের পরে এ কথা স্বীকার করে বলেন, “আমার দলের যুব ফুটবলারদের গুরুত্ব যথেষ্ট। ভারসাম্য রাখতে কিয়ানদের মতো যুব প্রতিভা দরকার”।

এই কারণেই কিয়ানের আশা, এএফসি কাপের ম্যাচে তিনি মাঠে নামতে পারবেন। বলেন, “এটিকে মোহনবাগান দেশের অন্যতম সেরা দল। সেই দলের কোচ আমাকে চেয়েছেন এবং আমি সবুজ-মেরুন জার্সি পরে খেলতে পারলে, এটা আমার কাছে বিরাট ব্যাপার। ডার্বির হ্যাটট্রিক এখন অতীত। এখন সামনের দিকে তাকাতে চাই। আগামী মরশুমে আরও ভাল খেলতে হবে ও দলকে জেতাতে হবে”।

আগামী ১২ এপ্রিল কাদের বিরুদ্ধে খেলতে হবে এটিকে মোহনবাগানকে, তা এখনও জানা যায়নি। এটা জানা যাবে ৫ এপ্রিল, নেপালের মাচিন্দ্রা এফসি ও শ্রীলঙ্কার ব্লু স্টার এসসি-র মধ্যে প্রাথমিক রাউন্ড ১-এর ম্যাচে। ওই ম্যাচের জয়ী দলই ১২ এপ্রিল যুবভারতীতে এটিকে মোহনবাগানের মুখোমুখি হবে।

১২ এপ্রিল জিতলে এটিকে মোহনবাগানকে খেলতে হবে ১৯ এপ্রিল দক্ষিণ এশীয় প্লে অফে। সেই ম্যাচে তাদের মুখোমুখি হতে পারে বাংলাদেশের আবাহনী লিমিটেড। এই প্লে অফে খেলতে আবাহনীকে ১২ এপ্রিল সিলেটে মলদ্বীপের ক্লাব ভ্যালেন্সিয়া বা ভুটানের পারো এফসি-র মধ্যে একটি ক্লাবকে হারাতে হবে।

১৯ এপ্রিলের ম্যাচে জিততে পারলে এটিকে মোহনবাগান জায়গা পাবে মূলপর্বের ‘ডি’ গ্রুপে, যেখানে উঠে বসে রয়েছে গোকুলাম কেরালা, বাংলাদেশের বসুন্ধরা কিংস ও মলদ্বীপের মাজিয়া এসআরসি। গ্রুপ পর্বের এই ম্যাচগুলি হওয়ার কথা ১৮ মে থেকে। একে অপরের বিরুদ্ধে খেলার পরে গ্রুপের এক নম্বর দল ইন্টার জোন প্লে অফ সেমিফাইনালে খেলার যোগ্যতা অর্জন করবে। গত বারও এই স্তর পর্যন্ত উঠেছিল এটিকে মোহনবাগান। কিন্তু সফল হতে পারেনি।