বাহরিনে জোড়া ফ্রেন্ডলি খেলতে এসে প্রথমটিতে ১-২-এ হারলেও সেই ম্যাচে দলের পারফরম্যান্স জাতীয় দলের কোচ ইগর স্টিমাচকে খুশিই করেছে। ৮৮ মিনিট পর্যন্ত ফিফা ক্রমতালিকায় থাকা বাহরিনকে ১-১-এ ঠেকিয়ে রাখার পরে গোল খেয়ে হেরে যায় ভারত। ক্রমতালিকায় ১৫ ধাপ ওপরে থাকা বাহরিনের বিরুদ্ধে ভারতীয় ফুটবলারদের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই নিয়ে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া হয়েছে দেশের ফুটবল মহলেও।

এই ম্যাচের পরে শনিবার সফরের দ্বিতীয় ও শেষ ম্যাচে ভারতের মুখোমুখি ক্রমতালিকায় ৯৪ নম্বরে থাকা বেলারুশ। দশ বছর পরে কোনও উয়েফা সদস্য দেশের বিরুদ্ধে মাঠে নামার সুযোগ পাচ্ছে ভারত। ২০১২-র ফেব্রুয়ারিতে শেষবার ভারতীয় দল উয়েফা সদস্য দেশ আজারবাইজানের বিরুদ্ধে খেলেছিল। সেই ম্যাচে আজারবাইজান ৩-০-য় জিতেছিল।

তবে বাহরিনের চেয়ে বেলারুশ অন্যরকম ফুটবল খেলে। তাই ভারতীয় দলের কৌশল এবং প্রথম এগারোও অন্য রকম হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিলেন কোচ স্টিমাচ। শুক্রবার সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের ওয়েবসাইটে তিনি বলেন, “বেলারুশ ম্যাচে দলে কিছু বড় পরিবর্তন হবে। আমি একটা নতুন দল নামাতে চাই, যেখানে অনেক নতুন মুখ থাকবে এবং তাজা শক্তিও থাকবে, যার জেরে পুরো দলটা ভাল পাস খেলতে পারবে”।

এই দলের সাতজন ফুটবলার এই প্রথম সিনিয়র ভারতীয় দলে ডাক পেয়েছেন। এঁরা হলেন গোলকিপার প্রভসুখন গিল, হরমিপাম রুইভা, আনোয়ার আলি, রোশন সিং, ভিপি সুহের, দানিশ ফারুক এবং অনিকেত যাদব। প্রথম ম্যাচেই পাঁচ জনের অভিষেক হয়ে গিয়েছে। প্রথম এগারোয় ছিলেন দানিশ ও সুহের। দ্বিতীয়ার্ধে পরিবর্ত হিসেবে নামেন রোশন, অনিকেত ও আনোয়ার। কোচের কথা অনুযায়ী ধরে নিতে হবে শনিবারের ম্যাচে প্রভসুখন ও হরমিপামকে দেখা যেতে পারে।

মোট ২৫ জনের দল নিয়ে বাহরিনে গিয়েছেন স্টিমাচ। তার মধ্যে প্রথম ম্যাচে ১৬ জনকে নামিয়েছেন স্টিমাচ। বাকি ন’জনকে বেলারুশের বিরুদ্ধে নামাবেন কি না, তা জিজ্ঞাসা করায় স্টিমাচ বলেন, “ফ্রেন্ডলি ম্যাচেই খেলোয়াড়দের মাঠে নামার বেশি সুযোগ দেওয়া যায়। আমার বিশ্বাস, ঝুঁকি নিতে না পারলে কখনও সাফল্য পাওয়া যায় না”।

এই ক্যালেন্ডার বছরে এই প্রথম মাঠে নামছে বেলারুশের জাতীয় দল। এর আগে তারা নভেম্বরে বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে খেলে ওয়েলসের বিরুদ্ধে, যাতে তারা ১-৫-এ হারে। তার আগে অক্টোবরে চেক প্রজাতন্ত্রের কাছে ০-২-এ হারে। এস্তোনিয়াও তাদের ২-০-য় হারায়। সেপ্টেম্বরে বেলজিয়াম তাদের হারায় ১-০-য়। ইউরোপীয় বাছাই পর্বে গ্রুপ ‘ই’-তে একটিমাত্র ম্যাচ জিতে (এস্তোনিয়ার বিরুদ্ধে) বেলারুশ ছিল পাঁচ দলের মধ্যে সবার নীচে। আটটি ম্যাচে সাতটি গোল দিয়ে ২৪টি গোল খায় তারা। ইউরোপের ফুটবলের মানের দিক থেকে তেমন ভাল জায়গায় না থাকলেও এই উপমহাদেশের কোনও দলের পক্ষে তারা যথেষ্ট শক্তিশালী। ফিফা ফ্রেন্ডলি ম্যাচে জর্ডনকে ১-০ হারিয়ে বছর শেষ করে তারা।  

এই দলটি সম্পর্কে স্টিমাচ বলেন, “বেলারুশ আমার খুবই পরিচিত ফুটবল দল। বাহরিনের চেয়ে ওরা অনেক বেশি টেকনিক্যাল। ওরা সম্প্রতি বেলজিয়াম, ওয়েলশের মতো (বাহরিনের চেয়ে) ওপরে থাকা দলের সঙ্গে খেলেছে। ওরা বেশিরভাগই রক্ষণাত্মক ও প্রতি আক্রমণ নির্ভর ফুটবল খেলে। আন্তর্জাতিক ফুটবলে আসলে খুব পরিশ্রম করতে হয়। বিশেষ করে যখন ক্রমতালিকায় ওপরে থাকা দলের বিরুদ্ধে যখন খেলতে হয়। তবে আমাদের বিরুদ্ধে ওরা অতটা রক্ষণাত্মক খেলবে বলে মনে হয় না”।

এই দলের সেরা গোলদাতা আন্দ্রে সোলোভে, যিনি দেশের লিগে ১৮টি গোল করেছেন ও সাতটি করিয়েছেন। আপাতত সে দেশের সবচেয়ে দামী ফুটবলারদের মধ্যে তিনিই দ্বিতীয়। এক নম্বরে রয়েছেন ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার এভগেনি ইয়াবলনস্কি, যিনি সাইপ্রাসের আরিস ক্লাবে খেলেন।    

নিজের দল নিয়ে স্টিমাচ বলেন, “প্রতি ম্যাতের মতো গত ম্যাচ থেকেও আমরা অনেক ইতিবাচক ও নেতিবাচক পেয়েছি। দলের মানসিকতা মাঠে ভাল ছিল। তবে পা থেকে বল খোয়া গেলে ওদের আরও প্রতিক্রিয়া দেখানো উচিত। রোশন ও রহিমের মতো কয়েকজনের পারফরম্যান্সে আমি খুবই খুশি। ওরা অসাধারণ খেলেছে”।

যাঁর প্রশংসায় পঞ্চমুখ জাতীয় দলের ক্রোয়েশিয়ান কোচ, সেই নাওরেম রোশন সিং দেশের হয়ে প্রথম মাঠে নেমে রীতিমতো রোমাঞ্চিত। বলেন, “দেশের জন্য খেলা সব সময়ই গর্বের ব্যাপার। আমি এবং আমার পরিবার এই অভিষেকে খুবই গর্বিত। আন্তর্জাতিক ফুটবলে খেলার অভিজ্ঞতা সম্পুর্ণ অন্যরকম। আমি অনেক নতুন কিছু শেখার চেষ্টা করছি এবং কোচ ও সতীর্থদের সাহায্য নিয়ে এই স্তরের ফুটবলকে বোঝার চেষ্টা করছি। কোচ আমাকে যথেষ্ট সাহায্য করছেন এবং উদ্দীপ্তও করছেন। উনি আমাকে নিজের খেলা উপভোগ করতে বলেছেন এবং সেরাটা দিতে বলেছেন”।

বুধবার বাহরিনের বিরুদ্ধে রাহুল ভেকের গোলে অ্যাসিস্ট করেন রোশন। সেই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “ক্রসিংয়ে প্রচুর পরিশ্রম করেছি। দেশের হয়ে প্রথম ম্যাচেই গোলে সাহায্য করতে পেরে খুবই খুশি আমি”।

জুনে এশিয়ান কাপ বাছাই পর্বে গ্রুপ ডি-র খেলাগুলি হবে কলকাতায়। এই প্রস্তুতি সফর সেই জন্যই। এই গ্রুপে ভারত ছাড়াও রয়েছে হংকং, আফগানিস্তান ও কম্বোডিয়া। এরা প্রত্যেকেই ফিফা ক্রমতালিকায় ভারতের নীচে রয়েছে। জুনের ৮, ১১ ও ১৪ তারিখে এই ম্যাচগুলি হওয়ার কথা কলকাতায়। তার এক বছর পরে ২০২৩-এর ১৬ জুন থেকে চিনে আগামী এএফসি এশিয়ান কাপ হওয়ার কথা।

এএফসি এশিয়ান কাপের বাছাই পর্বে ছ’টি গ্রুপের জয়ীরা যেমন মূলপর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জন করবে, তেমনই দ্বিতীয় স্থানাধিকারী দলগুলির মধ্যে থেকে সেরা পাঁচটি দলকে মূলপর্বে খেলার ছাড়পত্র দেওয়া হবে। ভারত টানা দ্বিতীয়বারের জন্য এই টুর্নামেন্টের মূলপর্বে যোগ্যতা অর্জন করার লক্ষ্য নিয়ে নামবে।