এ বারের হিরো ইন্ডিয়ান সুপার লিগে সে ভাবে উজ্জ্বল হয়ে উঠতে না পারলেও এটিকে মোহনবাগানের তারকা স্ট্রাইকার রয় কৃষ্ণা কিন্তু নিজের দেশের হয়ে রীতিমতো ভাল খেলছেন। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক ফুটবলে তিনি যা পারফরম্যান্স দেখিয়েছেন, তা সেই চেনা রয় কৃষ্ণাকেই মনে করায়।

এ বারের হিরো আইএসএলের মাঝপথেই শোনা যায় রয়কে এটিকে মোহনবাগান শিবির ছেড়ে জাতীয় কর্তব্য পালন করার জন্য দেশে ফিরে যেতে হতে পারে। কারণ, হিরো আইএসএলের পরেই বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে তাঁর দেশ ফিজির জাতীয় দলের ম্যাচ ছিল, যে ম্যাচে রয়কে ভীষণ ভাবে চেয়েছিলেন ফিজির কোচ। কিন্তু হিরো আইএসএল ছেড়ে জাতীয় দলের প্রস্তুতি শিবিরে যোগ দিতে পারেননি রয়।

প্রস্তুতি শিবিরে যোগ দিতে না পারলেও বিশ্বকাপ বাছাই পর্বের ম্যাচ খেলার জন্য জাতীয় দলে ঠিক যোগ দেন তিনি এবং হিরো আইএসএলের ফাইনালের পরের দিনই দোহায় ফিজির হয়ে নিউ ক্যালিডোনিয়ার বিরুদ্ধে মাঠেও নেমে পড়েন তিনি।

এ বার হিরো আইএসএলে প্রচুর বাধা বিপত্তি কাটিয়ে মাঠে নামতে হয়েছে রয়কে। প্রথমত সন্তানসম্ভবা স্ত্রী-র অসুস্থতা, তার পরে তাঁর পড়তি ফর্ম, তার ওপর চোট ও কোভিডে আক্রান্ত হওয়া—সব মিলিয়ে এ বারের লিগ তাঁর খুব একটা ভাল কাটেনি। ১৬টি ম্যাচে সাতটি গোল করেন ও চারটি করান। তাঁর গোলের সুযোগ থেকে গোল করার হার (গোল কনভারশন রেট) ছিল ১৯ শতাংশ। গত বছর ২৩ ম্যাচে ১৪টি গোল ও ৮টি অ্যাসিস্ট ছিল তাঁর। হিরো আইএসএল কেরিয়ারে যেখানে তাঁর গোল কনভারশন রেট ২৩%, সেখানে এ বারের ১৯ শতাংশ যে সেই তুলনায় তেমন ভাল নয়, এ আর আলাদা করে বলার কী আছে?

তবে লিগের শেষের দিকে তাঁকে ফের ফর্মে ফিরতে দেখা যায় এবং প্রায় দু’বছর পরে দেশের জার্সি পরে মাঠে নেমে সেই ছন্দই ধরে রাখার চেষ্টা করেন। বিশ্বকাপ বাছাই পর্বের প্রথম ম্যাচেই দলের তরুণ স্ট্রাইকার সাইরুসি নালাউবুকে একটি গোল করতে প্রত্যক্ষ ভাবে সাহায্য করেন। ফিজির ২-১ জয়ে নালাউবু একাই দু’টি গোল করেন। ৮৯ মিনিটের মাথায় দ্বিতীয় গোলটিতে অ্যাসিস্ট করেন রয়।

 তাঁদের পরের ম্যাচ ছিল শক্তিশালী নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে, যে ম্যাচে ৪-০-য় জেতে কিউয়িরা। সেই ম্যাচেও রয় খেলেছিলেন। কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও দলের হয়ে কোনও গোল করতে পারেননি। বিপক্ষের কড়া পাহাড়ায় ছিলেন তিনি। সেই পাহাড়া ভাঙতে গিয়ে তাঁকে ৬৫ মিনিটের মাথায় আবার হলুদ কার্ডও দেখতে হয়। পাপুয়া নিউ গিনির বিরুদ্ধেও তারা ১-২-এ হেরে বাছাই পর্ব থেকে ছিটকে। সেই ম্যাচেও খেলেন রয়।

বাছাই পর্ব শেষ হয়ে যাওয়ার পরে একটি ফ্রেন্ডলি খেলে ফিজি। দোহায় এই ম্যাচে ভানুয়াতুকে ২-১-এ হারায় ফিজি। এই দু’টি গোলই করেন রয় কৃষ্ণা। দু’টি গোলই তিনি করেন প্রথমার্ধে। বিপক্ষের বক্সের মধ্যে এক ডিফেন্ডারের পা থেকে বল কার্যত ছিনিয়ে নিয়ে মাটি ঘেঁষা শটে প্রথম গোলটি করেন তিনি। এর ১৫ মিনিট পরে দ্রুত গতিতে আক্রমণে ওঠার সময়ে বক্সের মধ্যে বাধা পান রয় এবং রেফারি পেনাল্টি দেন। এই পেনাল্টি থেকেই দ্বিতীয় গোলটি করেন ফিজির অধিনায়ক। দেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার নজির তিনি আগেই গড়েছেন। এ বার সবচেয়ে বেশি আন্তর্জাতিক গোলের রেকর্ডের পাশেও নিজের নাম লিখে দিলেন রয়।

২০০৭-এ ফিজির সিনিয়র দলের হয়ে প্রথম মাঠে নামা রয় কৃষ্ণা ২০১৬-র অলিম্পিক্সেও দেশের হয়ে গোল করেছিলেন মেক্সিকোর বিরুদ্ধে। সেটাই ছিল অলিম্পিক্সে মেক্সিকোর প্রথম গোল। এ পর্যন্ত ফিজির হয়ে ৪২টি ম্যাচ খেলে ২৩টি গোল করেছেন তিনি। তাঁর দেশের আর কোনও ফুটবলার জাতীয় দলের হয়ে এত গোল করেননি। গত বছর ওশিয়ানিয়া ফুটবল কনফেডারেশন তাদের দূত হিসেবে বাছেন রয় কৃষ্ণাকে।