দু’বছর পরে দর্শকে ভরা গ্যালারির সামনে হতে চলেছে হিরো আইএসএল। এর ফলে ফুটবলার থেকে শুরু করে ফুটবলপ্রেমীরা সবাই খুশি। তবে আরও একটা অভিনব ব্যাপার ঘটছে এ বারের হিরো আইএসএলে এবং তা হল সপ্তাহান্তে খেলা। ইউরোপের বিভিন্ন লিগের ধাঁচে এ বার হিরো আইএসএলের ক্রীড়াসূচী তৈরি করা হয়েছে। লিগের এই বৈশিষ্টের প্রশংসা করেছেন ভারতীয় ফুটবলের কিংবদন্তি আই এম বিজয়ন। তাঁর মতে, ক্রীড়াসূচীর এই বৈশিষ্টের জন্য উপকৃত হবে খেলোয়াড় থেকে দর্শক সবাই।

এ বারের হিরো ইন্ডিয়ান সুপার লিগে ম্যাচগুলি রাখা হয়েছে সপ্তাহের শেষ দিকে। মূলত বৃহস্পতিবার থেকে রবিবার হবে ম্যাচগুলি। প্রতি শনিবার দু’টি করে ম্যাচ হবে, যাতে ফুটবলের ভরপুর আনন্দ উপভোগ করতে পারেন দেশের ফুটবলপ্রেমীরা।

এই বিষয়ে প্রাক্তন ভারত অধিনায়কের বক্তব্য, “সপ্তাহের শেষে ম্যাচ থাকলে, তা যেমন ফ্যানদের পক্ষে খুবই ভাল, তেমনই খেলোয়াড়দের পক্ষেও ভাল। দলগুলো যেহেতু নির্দিষ্ট সময় অন্তর ম্যাচ খেলবে, সমর্থকেরা তাদের প্রিয় দলের ম্যাচ ভাল করে উপভোগ করার ভরপুর সুযোগ পাবে। এর ফলে তাদের আগ্রহও অনেক বাড়বে। খেলোয়াড়রাও যথেষ্ট বিশ্রাম পাবে”।

ইউরোপের লিগের ধাঁচে সূচী তৈরির ফলে ভারতীয় ফুটবলের বিজ্ঞানসম্মত উন্নতি হবে বলে মনে করেন প্রাক্তন তারকা ফরোয়ার্ড। তিনি বলেন, “এশীয় স্তরে ভারতীয় ফুটবলকে এখন ভাল জায়গায় আসতে হবে। ইউরোপিয়ান-স্টাইলের ক্যালেন্ডারের ফলে আমাদের ফুটবলে উন্নতিই হবে। জাতীয় স্তর বলুন বা স্থানীয়, সব ক্ষেত্রেই ফুটবলের সঙ্গে জড়িত মানুষদের এতে সুবিধা হবে। যে তরুণরা ফুটবলকে পেশা হিসেবে নিতে চায়, তারাও এর ফলে উজ্জীবিত হবে”।

এ বার থেকে, অর্থাৎ ২০২২-২৩ মরশুম থেকে, ফুটবল মরশুমের মেয়াদ বাড়িয়ে ন’মাস করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যেমনটা ইউরোপের ফুটবলে হয়। তাই চলতি মরশুমে ক্লাব ফুটবল অগস্টে শুরু হয়ে মে মাসে শেষ হবে। হিরো আইএসএলে ২০টি ছাড়াও ক্লাবগুলিকে দীর্ঘায়িত মরশুমে অন্তত ২৮টি করে ম্যাচ খেলতে হবে। চলতি ডুরান্ড কাপ ও হিরো আইএসএলের পরে সুপার কাপে অন্তত চারটি করে ম্যাচ খেলার সুযোগ পাচ্ছে ক্লাবগুলি।

এই সিদ্ধান্তেরও ভাল দিকগুলির প্রসঙ্গ টেনে বিজয়ন বলেন, “আমি এর আগেও বলেছি, এর ফলে ফুটবলাররা সারা বছরে আরও দীর্ঘ সময় ধরে এবং আরও বেশি সংখ্যক ম্যাচ খেলার সুযোগ পাবে। দীর্ঘ মরশুমে ফুটবলাররা যদি নিয়মিত অবকাশে যথেষ্ট বিশ্রাম পায়, তা হলে তা সবসময়ই ভাল প্রভাব ফেলে। এর ফলে শক্তিশালী ফুটবলারদের একটা প্রজন্ম তৈরি করতে পারব আমরা”।

এর ফলে দেশের প্রতিভাবান ও তারকা ফুটবলারদের চোট-আঘাতের সমস্যাও অনেকটা নিয়ন্ত্রণ করা যাবে বলে মনে করেন কেরালার প্রাক্তন ফুটবল মহাতারকা বিজয়ন। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “ম্যাচের সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ম্যাচের মধ্যে ফুটবলারদের বিশ্রামের সময়ও সমানুপাতিক ভাবে বাড়াতে হবে। না হলে কিন্তু তাদের চোট-আঘাতের পরিমাণ বাড়ার সম্ভাবনা থাকে। এক্ষেত্রে ম্যাচের সংখ্যার সঙ্গে সঙ্গে বিশ্রামের সময়ও বাড়ানো হচ্ছে, যা ফুটবলারদের পক্ষে খুবই ভাল হবে”।

৭ অক্টোবর কোচিতে কেরালা এফসি-র বিরুদ্ধে ইস্টবেঙ্গল এফসি-র ম্যাচ দিয়ে শুরু হবে আসন্ন হিরো আইএসএল। অংশগ্রহনকারী দলগুলিকে আরও উৎসাহিত করতে এ বারের ফরম্যাটে সামান্য পরিবর্তন করা হয়েছে। এ বার নক আউট পর্বে চারটি সেমিফাইনাল ও একটি ফাইনালের সঙ্গে দু’টি এলিমিনেটরও যুক্ত হচ্ছে। প্রথম এলিমিনেটরে লিগ টেবলের তিন ও ছয় নম্বর দল মুখোমুখি হবে। দ্বিতীয় এলিমিনেটরে মুখোমুখি হবে চার ও পাঁচ নম্বরে থাকা দল।

প্রথম সেমিফাইনালে এক নম্বর দল ও দ্বিতীয় এলিমিনেটরের জয়ী দল মুখোমুখি হবে এবং দ্বিতীয় সেমিফাইনালে দুই নম্বর দল ও প্রথম এলিমিনেটরের জয়ী দল মুখোমুখি হবে। দুই সেমিফাইনালই হবে হোম অ্যান্ড অ্যাওয়ে পদ্ধতিতে। অর্থাৎ লিগ টেবলে ছয় নম্বরে থাকা দলের সামনেও এ বার ফাইনালে ওঠার সুযোগ থাকছে। এর ফলে এ বার লিগে ম্যাচের সংখ্যাও বেড়ে হচ্ছে ১১৭। 

কুড়ি রাউন্ডের লিগ পর্ব ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হয়ে চলবে ২০২৩-এর ২৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এবং নক আউট পর্ব হবে মার্চে। কলকাতার দুই প্রধানকে নিয়ে কলকাতা ডার্বি হবে যথাক্রমে ২৯ অক্টোবর ও আগামী বছর ২৫ ফেব্রুয়ারি।