দেড় মাস আগে যাদের মাঠে গিয়ে তিন গোলে হারিয়ে এসেছেন, সেই নর্থইস্ট ইউনাইটেডের বিরুদ্ধে ম্যাচ যে ঘরের মাঠে এত কঠিন হয়ে পড়বে, তা বোধহয় ভাবতেই পারেননি এটিকে-র ফুটবলাররা। প্রথমার্ধে গোলমুখ প্রায় বন্ধ করে রেখেছিল নর্থইস্ট। তবুও গোটা দুয়েক সুযোগ তৈরি করতে পেরেছিল কলকাতার দল। দ্বিতীয়ার্ধেও প্রায় একই কৌশল দেখা যায় গুয়াহাটির দলের খেলায়। তাই শেষ পাঁচ মিনিটে অন্তত একটা গোল দেওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছিল এটিকে এফসি।

কর্নার, ফ্রি-কিক আদায় করে নেয় তারা এই সময়ে। শেষ পাঁচ মিনিটে এই চাপ দেওয়ার মরিয়া কৌশলেই জয় আসে বলে মনে করেন এটিকে-র সহকারী কোচ ম্যানুয়েল পেরেজ, যিনি এদিন হেড কোচ আন্তোনিও লোপেজ হাবাসের পরিবর্তে রিজার্ভ বেঞ্চের নেতৃত্বে ছিলেন। শেষ মিনিটে রিজার্ভ বেঞ্চ থেকে নেমে বলওয়ন্ত সিং গোলটা না করলে এ দিন এক পয়েন্ট নিয়েই মাঠ ছাড়তে হত এটিকে-কে। সেরা চারে টিকে থাকার লড়াই আরও কঠিন হত তাদের।

সোমবার ম্যাচের পরে সাংবাদিকদের পেরেজ বলেন,  “দারুণ জয় পেয়েছি আমরা। বেশ কঠিন ম্যাচ ছিল, তাই কোনও পক্ষই শুরুতে গোল করতে পারেনি”। সাত ম্যাচে মাত্র ৯৫ মিনিট মাঠে থাকা বলওয়ন্তের প্রশংসা করে সহকারী কোচ বলেন, “বলওয়ন্ত খুবই পেশাদার। ট্রেনিং করে খুব ভাল। ওই গোলটা করা খুব একটা সোজা ছিল না। এর আগেও শেষ দিকের গোলে জিতেছি আমরা। মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে শেষে গোল করেছি। আজ শেষ পাঁচ মিনিটে আমরা ডাইরেক্ট ফুটবল খেলেছি। ছেলেদের বলেই দিয়েছিলাম সে রকম খেলতে। সবাই চলে এসেছিল বিপক্ষের গোলের সামনে। তখন আমাদের একটাই লক্ষ্য ছিল। গোল করতেই হবে”।  

প্রথমার্ধের গোল খরা নিয়ে পেরেজ বলেন, “খুবই কঠিন পরিস্থিতি ছিল তখন। ওরা প্রথম ৪-১-৪-১-এ খেলা শুরু করেছিল। যার ফলে নিজেদের গোলের সামনে প্রায় দেওয়াল তুলে দিয়েছিল। ওদের বেশ কয়েকজন ভাল ডিফেন্সিভ ফুটবলারও আছে। তাই তখন আক্রমণ করা বেশ কঠিন হয়ে উঠছিল। তা ছাড়া আজ আমরা আমাদের সেরা খেলাটা আজ দেখাতে পারিনি। পরে আমরা হাফ টাইমে যে পরিবর্তনগুলো করলাম, সেগুলো আক্রমণের ধার বাড়ানোর জন্য, যাতে যথাসম্ভব বেশি আক্রমণে ওঠা যায়”।

এই জয়টা পাওয়ায় লিগের শেষ দিকের লড়াইটা কিছুটা হলেও সহজ হল বলে মনে করেন পেরেজ। তার ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, “এই জয়টা খুবই দরকার ছিল আমাদের। আমাদের গোল পার্থক্য খুব ভাল। তা লিগ টেবলের পাঁচ নম্বরে থাকা মুম্বইয়ের সঙ্গে আমাদের পার্থক্য এখন সাত পয়েন্টের। এখনও ওরা ১২ পয়েন্ট পেতে পারে। আমাদেরও অবশ্য সেটা পেতে হবে। তবে অবধারিত নয়। চারটে ম্যাচ বাকি আমাদের। দুটো বেশ কঠিন। ফলে এই ম্যাচটা জিতে থাকা খুব দরকার ছিল। প্রথমে থাকলে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে খেলতে পারব”।

পরের ম্যাচে ডেভিড উইলিয়ামস ও ম্যান্ডি সোসা খেলতে পারবেন বলে জানিয়ে হাবাসের সহকারী বলেন, “এটা আমাদের কাছে খুবই ভাল খবর। কারণ, জামশেদপুরে আমাদের কঠিন ও মাস্ট উইন ম্যাচ। ওই দু’জনকে পেলে খুবই ভাল হবে”।  

রাতে স্টেডিয়াম থেকে বেরোবার সময় মিক্সড জোনে দাঁড়িয়ে জয়ের নায়ক বলওয়ন্ত সিং বলে দিলেন,  “আমি একা নই, দলের সবাই নায়ক। আমি খুশি দলকে তিন পয়েন্ট এনে দিতে পেরে”।

ভারতীয় দলের হয়ে খেলা এই পাঞ্জাবি ফরোয়ার্ড বলেন, “যখনই মাঠে নামি, লক্ষ্য একই থাকে, দলকে যথাসাধ্য সাহায্য করব ও গোলের সুযোগ পেলে তা কাজে লাগাব। কর্নারটার আগে আমাদের কোনও পরিকল্পনা ছিল না”। এর আগে কখনও ইনজুরি টাইমে গোল করেছিলেন কি না মনে করতে পারলেন না বলওয়ন্ত। শুধু বললেন, “হয়তো মোহনবাগানের হয়ে একবার করেছিলাম। ঠিক মনে পড়ছে না”। তবে এটাই যে তাঁর ফুটবলজীবনের অন্যতম সেরা গোল, তা মানতে রাজি নন বলওয়ন্ত।