এএফসি কাপের নক আউট পর্বে ওঠার পরে উচ্ছ্বসিত এটিকে মোহনবাগান শিবির। খুশি কোচ, খেলোয়াড়রা। যে ভাবে প্রথম ম্যাচে হারের পরেও টানা দুই ম্যাচে রীতিমতো দাপুটে পারফরম্যান্স দেখিয়ে গ্রুপ সেরা হয়ে এই লিগ পর্বের গণ্ডী পেরোল তারা, তার পরে আর সবুজ-মেরুন শিবিরের দক্ষতা নিয়ে কোনও প্রশ্ন ওঠার অবকাশই নেই। গত কয়েক দিন ধরে যাঁরা প্রশ্ন তুলেছিলেন, তারা এ বার নিশ্চয়ই নিজেদের ভুল বুঝতে পারছেন। 

মঙ্গলবার যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে মাজিয়া এসআর-কে ৫-২ গোলে কার্যত উড়িয়ে দেওয়ার পর পুরো দল দর্শকদের অভিবাদন গ্রহণ করে। পাল্টা অভিবাদনও জানান। একে অপরকে শুভেচ্ছাও জানান। কারণ, অনেকেরই ধারণা, দলের বেশ কয়েকজন খেলোয়াড়ের হয়তো সবুজ-মেরুন জার্সি গায়ে এটাই শেষ ম্যাচ। হয়তো পরের বার যখন দল মাঠে নামবে, তখন এঁদের অনেককেই সেই জার্সিতে দেখা যাবে না। সাংবাদিক বৈঠকে এই নিয়ে প্রশ্নেরও মুখোমুখি হন এটিকে মোহনবাগানের স্প্যনিশ কোচ হুয়ান ফেরান্দো। এর উত্তরে এবং অন্যান্য প্রশ্নে যা বললেন, তার উল্লেখযোগ্য অংশ তুলে ধরা হল।

শেষ ম্যাচে এমন পাঁচ-তারা জয় প্রসঙ্গে কী বলবেন?

দলের ছেলেদের জন্য ও সমর্থকদের জন্য আমি খুবই খুশি। গত ছ’দিন ধরে আমাদের নিয়ে অনেক সমালোচনা হয়েছে, যা বেশ হতাশাজনক। এটিকে মোহনবাগান বড় ক্লাব। প্রতিপক্ষকে আমরা শ্রদ্ধা করি। সবচেয়ে বড় কথা ফুটবলটা আমরা মাঠে খেলি, প্রেস কনফারেন্সে নয়।

আপনারা তা হলে প্রমাণ করেই দিলেন যে আপনারাই গ্রুপের সেরা দল?

অবশ্যই। একটা দল যদি ৪-০, ৫-২-এ জেতে, তা হলে তাকে সেরা বলতেই হবে। আগেও বলেছি, আমরা বড় ক্লাব এবং অন্যদের প্রতি যথেষ্ট শ্রদ্ধা রয়েছে আমাদের। কিছু লোক তা করে না, এটা মোটেই ভাল না। ফুটবল অসাধারণ খেলা। ফুটবলটা উপভোগ করতে হয়। এখানে অনর্থক মন্তব্য করে অসন্মান করার দরকারই পড়ে না।

এই ম্যাচের পারফরম্যান্স নিয়ে কী বলবেন?

আমরা একই রকম খেলেছি। আমি খুশি যে তাতেই সাফল্য এসেছে। প্রতিপক্ষ সারাক্ষণ জায়গা তৈরি করে আক্রমণে ওঠার চেষ্টা করেছে। আমরা ওদের আটকেছি। ২-১ হয়ে যাওয়ার পরে পরিস্থিতি আরও কঠিন হয়ে উঠেছিল। তবে আমি খুশি যে দলের ছেলেরা পরিকল্পনা অনুযায়ী, নিজেদের স্বাভাবিক খেলা বজায় রেখেই সব কিছু করেছে এবং সাফল্যও পেয়েছে।

এএফসি কাপের নক-আউট পর্বে ওঠার পর এ বার কি আপনাদের সামনে কোনও নির্দিষ্ট লক্ষ্য রয়েছে?

অনেক কিছুই রয়েছে। তবে এখন আমাদের বিশ্রাম নিতে হবে। গত কয়েকটা ম্যাচের কথা মাথায় রাখতে হবে আমাদের। এই টুর্নামেন্টটা খুবই ভাল। কারণ, এখানে প্রতিপক্ষরা প্রত্যেকেই যথেষ্ট উঁচু মানের ফুটবল খেলে নিজেদের সেরা প্রমাণ করতে আসে। এখন আমাদের পরের রাউন্ডের কথা ভাবতে হবে, যা আরও কঠিন। সে জন্য আমাদেরও দল হিসেবে আরও উন্নতি করতে হবে।

নক আউট পর্বে আপনাদের অন্য অঞ্চলের দলের বিরুদ্ধে খেলতে হবে, যেটা আরও কঠিন চ্যালেঞ্জ। এই নিয়ে কী ভাবছেন?

অবশ্যই এটা ক্লাবের পক্ষে একটা বড় চ্যালেঞ্জ। ইন্টার জোনাল সেমিফাইনাল মোটেই সহজ হবে না। আমাদের সেরাটাই দিতে হবে ওখানে। ওখানে সম্পুর্ণ নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হব আমরা। ক্লাব, দল, খেলোয়াড়দের সবাই মিলে সেই লড়াইয়ের জন্য দল হিসেবে নিজেদের উন্নত করে তুলতে হবে। আমরা জানি ওই পর্বে আমাদের প্রতিপক্ষ আরও শক্তিশালী হবে। আমাদের ছোটখাটো ব্যাপারে আরও জোর দিতে হবে। এই টুর্নামেন্টটা এমনই উঁচু মানের, যেখানে প্রতিদিনই সেরাটা দিতে হয়। কারণ, প্রতিপক্ষ আমাদের চেয়ে অনেক ভাল।  

এই টুর্নামেন্টটা যেহেতু দুই মরশুমের মাঝখানে হচ্ছে, তাই দলে টুর্নামেন্ট চলাকালীনই অনেক পরিবর্তন আসে। আপনি নিজের দলের নির্ভরযোগ্য খেলোয়াড়দের দলে ধরে রাখার বিষয়ে কতটা আশাবাদী?

ফুটবলে তো এ রকমই হয়। খেলোয়াড়, কোচেরা আসে ও যায়। দলের ভবিষ্যতের কথা ভেবে এটা করতেই হয়। আশা করি, আমাদের খেলোয়াড়রা, আমাদের সঙ্গেই থাকবেন। আশা করি, আমরা একসঙ্গেই কাজ করে যাব। আমরা আমাদের ৫০ শতাংশ মেলে ধরতে পেরেছি বলেই আমার মনে হয়। এখনও অনেকটা উন্নতি করতে হবে। যত অনুশীলন হবে, এগুলোতে তত উন্নতি আসবে। আক্রমণে, রক্ষণে আরও উন্নতি দরকার। কয়েক মাস পরে আমরা আশা করি, সেই জায়গায় অবশ্যই পৌঁছে যাব।