আগেরবার তাদের ঘরের মাঠে ৩-০-য় হারিয়ে এলেও এ বার ঘরের মাঠে নর্থইস্ট ইউনাইটেড এফসি-র বিরুদ্ধে দলকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দিচ্ছেন এটিকে এফসি-র কোচ আন্তোনিও লোপেজ হাবাস। তাঁর কাছে কোনও দলই দুর্বল নয়। তাই অসাবধান হয়ে পিছলে পড়তে রাজি নন তিনি।

নর্থইস্ট ইউনাইটেড ১১ ম্যাচে ১১ পয়েন্ট নিয়ে আপাতত লিগ টেবলে ৯ নম্বরে। তাই তাদের আর শেষ চারে যাওয়ার কোনও সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছেন না এটিকে কোচ। আবার এটাও ঠিক যে, অন্য দলগুলো যেখানে ১৩-১৪টা করে ম্যাচ খেলে ফেলেছে, সেখানে নর্থইস্ট তাদের চেয়ে দুটি ম্যাচ কম খেলেছে। তাই খাতায় কলমে কিন্তু তাদের শেষ চারে যাওয়ার সম্ভাবনা পুরো শেষ হয়ে যায়নি। শেষ আটটা ম্যাচে টানা জিতলে তারা মোট ৩৫ পয়েন্ট নিয়ে সেরা চারে ঢুকে পড়তে পারে।

তবে হাবাসের ব্যাখ্যা অন্য। তাঁর মতে, “ওদের ওপর প্রত্যাশার চাপ কম। তাই আমাদের সাবধান হতে হবে। ওদের সেন্ট্রাল মিডফিল্ড ও আক্রমণে ভাল খেলোয়াড় আছে। ফেদেরিকো গালোগো, মার্টিন চাভেস, অ্যান্ড্রু কিয়োঘ, ভারতীয় খেলোয়াড় মিলন সিং, কেউই খাারাপ নয়। তাই আমাদের বেশি আত্মবিশ্বাসী হলে চলবে না। অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস বিপদ ডেকে আনতে পারে। তাই ওরা কঠিন প্রতিপক্ষ ধরে নিয়েই মাঠে নামতে হবে আমাদের। আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। কারণ, আমাদের  আর হারলে চলবে না । যে পাঁচটা ম্যাচ বাকি আছে, তার সবকটাতেই জিততে হবে। মনসংযোগ, মানসিকতা, শৃঙ্খলা সবই চূড়ান্ত স্তরে থাকতে হবে”।

দলের তারকা স্ট্রাইকার রয় কৃষ্ণারও প্রায় একই মত। বললেন, “আমরা এখন ভাল খেলছি। সোমবারের ম্যাচে আমাদের সুইচ অন রাখতে হবে। এখন আমরা বড় লক্ষ্যের দিকে তাকিয়ে দৌড়চ্ছি। অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী হলে চলবে না”।

এর মধ্যে ভাল খবর, দলের তারকা স্ট্রাইকার ডেভিড উলিয়ামস দলের সঙ্গে ট্রেনিং করছেন। হাবাস নিজেই সেই খবর দিয়ে জানালেন, “কাল (রবিবার) প্র্যাকটিস সেশনে ওকে দেখে সিদ্ধান্ত নেব পরের ম্যাচে খেলাব কি না। পরের ম্যাচে খেলার সম্ভাবনা আছে ওর। তবে প্রথম এগারোয় থাকবে কি না, তা এখনই বলতে পারব না। প্রণয়ের (হালদার) এখনও দিন দশেক লাগবে মাঠে ফিরতে”।

সারা লিগে একবারের জন্যও প্রথম চারের বাইরে যায়নি এটিকে। শেষ পর্বে এসে আর কোনও রকম অঘটনের সম্মুখীন হতে চান না প্রথম আইএসএলে কলকাতার দলকে চ্যাম্পিয়ন করা কোচ। সাংবাদিকদের বললেন, “এখন আমাদের প্রথম চারে থাকাই একমাত্র লক্ষ্য। তার জন্য প্রতি ম্যাচই জিততে হবে। না হলে প্রথম চারে থাকা যাবে না। ম্যাচ ধরে ধরে এগোচ্ছি। তাই শেষ পাঁচ ম্যাচ জেতাই এখন লক্ষ্য আমাদের”।

হ্যামস্ট্রিং সমস্যায় জর্জরিত উইলিয়ামসের অনুপস্থিতিতে রয় কৃষ্ণা গত কয়েকটি ম্যাচে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দেখালেও গোল পাচ্ছেন না। এটিকে সমর্থকদের যার জন্য মন খারাপ। নিজের এই সমস্যার কথা স্বীকার করে নিয়ে রয় জানালেন, “ফুটবল তো আর একজনকে নিয়ে হয় না। আমি দলের জন্য যতটুকু করতে পারছি, তাতেই খুশি। প্রতি ম্যাচে গোল করতে ইচ্ছে করে, দলের সেরা খেলোয়াড় হতে ইচ্ছে করে। কিন্তু এই সময়ে দলগত চেষ্টাটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তিন পয়েন্টই আসল। দল সাফল্য পাচ্ছে বলে আমি খুশি। আশা করি সোমবারও দল সফল হবে আর আমিও গোলে ফিরব”।

ফিজির অলিম্পিয়ান আরও বলেন, “গোল করতে পারছি না, এটা যে কোনও স্ট্রাইকারের জীবনেই হয়। টানা বেশ কয়েকদিন ধরে গোল আসে না। তবে আমি চেষ্টা করছি। গোলের সামনে তো পৌঁছতে পারছি বারবার। এটাই ভাল। এখন সময়ের অপেক্ষা। হয়তো সোমবারের ম্যাচেই গোলে ফিরব”।

 তবে গোল না পাওয়ায় যে তিনি নিশ্চিন্ত বসে নেই, সে কথা স্বীকার করে নিয়ে রয় বলেন, “গোল যখন পাচ্ছি না, তখন কী করে নিশ্চিন্তে বসে থাকব? তবে চেষ্টা তো করে যাচ্ছি। দলকে জেতানোর চেষ্টা করছি। গোল করতে সাহায্য করছি। আমি গোল না পাওয়া সত্ত্বেও যদি দল জেতে, তিন পয়েন্ট আসে, তা হলেও আমি খুশি”।

তবে সর্বোচ্চ স্কোরার হয়ে সোনার বুট পাওয়াই যে তাঁর চূড়ান্ত লক্ষ্য নয়, প্রধান লক্ষ্য অন্য, তা স্পষ্ট জানিয়ে রয় বলে দেন, “আমার প্রথম লক্ষ্য দলকে চ্যাম্পিয়ন করা। সর্বোচ্চ স্কোরার হলাম কি না, এটা বড় কথা নয়। শেষ চারে যাওয়া নিয়েও এখন কথা হচ্ছে না ড্রেসিংরুমে। শুধু পরের ম্যাচ নিয়ে কথা বলছি আমরা”।

গত ম্যাচে হাতে চোট পেয়েছিলেন রয়। সেই চোট নিয়ে জিজ্ঞেস করায় তিনি বলেন, “আমার একাধিক চোট আছে। দলের চিকিৎসকেরা খুব ভাল। দলের সবার প্রতিই ওঁরা যথেষ্ট যত্ন নেন। কারণ, এতগুলো ম্যাচের পরেও আমাদের চোট পাওয়া খেলোয়াড় মাত্র দুজন। ডেভিড উইলিয়ামস তো ট্রেনিংও করছে। দলকে ফিট ও সুস্থ রাখার পুরো কৃতিত্ব ওঁদের”।    

শেষ চারে থাকা ও চ্যাম্পিয়ন হওয়ার কথা এখনও ভাবনা-চিন্তা শুরু করেনি তাঁর দল, বলেন কোচ হাবাস। বলেন, “আইএসএলে এখন যা অবস্থা, তাতে যে কোনও দল চ্যাম্পিয়ন হতে পারে। তাই ভবিষ্যৎ নিয়ে এখন থেকে ভেবে লাভ নেই। বর্তমান নিয়েই বেশি ভাবছি। প্রতি দলই প্রায় সমান”। একাধিক আইএসএলে বিভিন্ন দলকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার পরে হাবাসের উপলব্ধি, “এই আইএসএল-ই অন্যান্যবারের তুলনায় সবচেয়ে কঠিন। সব দল ভাল খেলছে। একঝাঁক ভাল স্কোরার আছে। পরস্পরের পয়েন্টের মধ্যে খুবই কম ফারাক। শেষ কয়েক রাউন্ডে যে কী হবে, তা কেউ এখন থেকে আগাম বলতে পারে না। তাই এখন থেকেই ভেবে কোনও লাভ নেই”।

সোমবার যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে এটিকে-র বিপক্ষ নর্থইস্ট ইউনাইটেড এফসি-র কোচ রবার্ট জার্নির গলাতেও হাবাসের সুর। বললেন, “যে কোনও দল এই লিগ জিততে পারে। আমরা অনেক ম্যাচই শেষ মুহূর্তে গোল খেয়ে হেরেছি। ম্যাচের শেষ বাঁশি না পড়া পর্যন্ত আপনি বলতে পারেন না কে জিতল বা কে হারল। প্রতি দলই সমান। তাই আগাম  বলা কঠিন”।

নিজের দল নিয়ে জার্নি বলেন, “চোট সমস্যা মিটে গিয়েছে। সবাই এখন সুস্থ। দলে কতগুলো পরিবর্তন আনা হয়েছে। সেগুলোর জন্য অবশ্য তৈরিই ছিলাম আমরা। ছেলেরা ভাল খেলছে। সবাই সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করছে”।