অতিমারি অবস্থার মধ্যে ভারতে যে এত বড় খেলার আসর সফল ভাবে আয়োজন করা যায়, তা ভাবতেও পারেননি প্রাক্তন ভারতীয় ক্রিকেট অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলি। ইন্ডিয়ান সুপার লিগের আয়োজক ফুটবল স্পোর্টস ডেভলপমেন্ট লিমিটেড (এফএসডিএল) যে তা করে দেখাতে পেরেছে, এতে অভিভূত তিনি। বলেছেন, “হিরো আইএসএল সারা খেলার দুনিয়াকে এক নতুন দিশা দেখাল”।

হিরো আইএসএলের ছ’মাসের (২০২০-২১) মরশুম শেষ হল গত শনিবার। কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে অতিমারি পরিস্থিতিতে ভারতের মাটিতে এত বড় খেলার আসর এই প্রথম। গত বছর ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) আয়োজন করা হলেও তা ভারতের বাইরে নিয়ে গিয়ে করতে হয়। অতিমারি ও তার জেরে হওয়া লকডাউনের হতাশা কাটিয়ে উঠে ভারতীয় ক্রীড়াপ্রেমীদের জীবনে খেলার মাঠের টাটকা বিনোদন ফিরিয়ে আনে এফএসডিএল।

সৈকতনগরী গোয়ার ১৪টি নামী বিলাসবহুল হোটেলে ১৮টি জৈব সুরক্ষা বলয় তৈরি করে এ বারের হিরো আইএসএলের সঙ্গে জড়িয়ে ১৬০০ জনকে তার মধ্যে রাখার ব্যবস্থা করা হয়। এই কয়েক মাসে তাঁদের প্রত্যেকের শরীরে একাধিকবার কোভিড পরীক্ষা করা হয়। লিগের আগে থেকে শুরু করে লিগ চলাকালীন সব মিলিয়ে ৭০ হাজার আরটি-পিসিআর টেস্ট করা হয়। এই পুরো সুরক্ষা প্রক্রিয়া তৈরি করতে ও তা বজায় রাখতে প্রায় ১৭ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে।

এ ছাড়াও আটটি ট্রেনিং গ্রাউন্ড ও তিনটি ম্যাচ-ভেনু ফতোরদা স্টেডিয়াম, জিএমসি স্টেডিয়াম ও তিলক ময়দান স্টেডিয়ামকে আন্তর্জাতিক মানের মতো করে গড়ে তোলার জন্য ও তাদের ভাড়া বাবদ আরও বাড়তি প্রায় ২০ কোটি টাকা ব্যয় করে এফএসডিএল।

দেশবাসীর জীবনে ফুটবল ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা সফল করতে এই বিপুল যজ্ঞ দেখে মুগ্ধ সৌরভ বলেন, “এই কঠিন সময়ে যাবতীয় বাধা পেরিয়ে ইন্ডিয়ান সুপার লিগ সফল ভাবে শেষ করাটা একটা বিশাল ব্যাপার। ভারতীয় ক্রীড়া ক্ষেত্রে এই উদ্যোগ এক দৃষ্টান্ত হয়ে থেকে যাবে। শুরুর দিকে যে রকম অনিশ্চয়তার ঘন কুয়াশায় ঢাকা ছিল চারদিক, তাতে উদ্যোক্তারা একটা বিশাল চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলেন। বলতেই হচ্ছে যে, গত ছ’মাসে দারুণ কাজ করেছে তারা”।

গত বছর নভেম্বরের ২০ তারিখে হিরো আইএসএল ৭ শুরুর দিনে এফএসডিএল-এর চেয়ারপার্সন নীতা অম্বানি বলেছিলেন, “এই দুঃসময়ে আমাদের জীবনে ফুটবল ফিরিয়ে আনার জন্য অনেক সাহস, প্রত্যয় ও পরিকল্পনার প্রয়োজন হয়েছে। আমি নিশ্চিত যে, আগামী চার মাস আইএসএল আমাদের জীবনে অনেক আনন্দ, উত্তেজনা ও ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে আসবে”। শ্রীমতি অম্বানি তখন যেমন বলেছিলেন, গত চার মাসে ঠিক তেমনই হয়েছে। দেশের ও দেশের বাইরেও লক্ষাধিক মানুষ ফুটবলের উত্তেজনা ও আনন্দ ভরপুর উপভোগ করেছেন।

শতবর্ষ প্রাচীন ক্লাব এসসি ইস্টবেঙ্গল যোগ দেওয়ায় গত মরশুমের চেয়ে এ বার ২০টি ম্যাচ বেশি খেলা হয় হিরো আইএসএলে। ১১৫টি ম্যাচে এ বার ২৯৮টি গোল দেখেছেন ফুবলপ্রেমীরা। শেষ পর্যন্ত অন্য সব দলকে পিছনে ফেলে রেখে লিগশিল্ড ও চ্যাম্পিয়নের ট্রফি, দুইই জেতে মুম্বই সিটি এফসি।

সৌরভ মনে করেন হিরো আইএসএল-কেই পথপ্রদর্শক হিসেবে অনুসরণ করা উচিত অন্যান্য খেলার সঙ্গে যুক্ত খেলোয়াড়-কর্তাদের। তিনি বলেন, “আইএসএল সারা ক্রীড়াবিশ্বকে দেখিয়ে দিল এই কঠিনতম সময়েও ভারত খেলার দীর্ঘ আসরের আয়োজন করতে পারে সফল ভাবে। এই লিগই অন্য খেলার সঙ্গে জড়িত মানুষদের তাদের নিজ নিজ মরশুম শুরু করার প্রেরণা জোগাবে”।

এ বারের হিরো আইএসএলে গ্যালারিতে দর্শক না থাকলেও লিগের ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে প্রায় ১৭ কোটি ৫০ লক্ষ মানুষ যোগ দেন। লিগের বিভিন্ন মুহূর্তের মোট চার হাজারেরও বেশি মিনিটের ভিডিও দেখেছেন প্রায় ৩৬ কোটি মানুষ। টিভি প্রোডাকশনেও এলাহি ব্যবস্থা করা হয়। মুম্বই ও গোয়ায় দু’টি ব্রডকাস্ট সেট-আপ স্থাপন করা হয়। প্রায় দেড়শো কর্মী এতে নিযুক্ত ছিলেন। লিগ পর্যায়ে ১৯টি ক্যামেরা ব্যবহার করে ম্যাচের সম্প্রচার করা হয়। প্লে অফ স্টেজে এর সঙ্গে আরও দু’টি ক্যামেরা জুড়ে দেওয়া হয়। পাঁচ মাস ধরে তিনটি ওবি কিট ও দু’টি ব্রডকাস্ট টিম সমস্ত ম্যাচের টিভি প্রোডাকশন ও সম্প্রচারের দায়িত্বে ছিল। ফুটবলের আসরে এমন মহাযজ্ঞ এর আগে সম্ভবত কখনও হয়নি।