শনিবার ফতোরদায় শুধু দুই দলের লড়াই নয়, হবে তারকা-যুদ্ধও। দুই দলেই একঝাঁক তারকা ফুটবলার রয়েছেন, যাঁরা এ বার সারা লিগেই ফুচবলপ্রেমীদের নজর কেড়ে নিয়েছেন। এ বার খেতাবের লড়াইয়ে কোন কোন তারকার মধ্যে হবে এই যুদ্ধ, কাদের ওপর নজর রাখতে হবে, তা দেখে নেওয়া যাক।  

অরিন্দম ভট্টাচার্য বনাম অমরিন্দর সিং 

শনিবার ফাইনালে যে দু’জনের ওপর সবচেয়ে বেশি নির্ভর করবে দলের হার-জিত, তাঁরা হলেন দুই দলের গোলকিপার। এ বারের লিগে দু’জনেই দলকে বহুবার বাঁচিয়েছেন। অনেকবারই এমন হয়েছে যে, গোলকিপারদের জন্যই হার বাঁচাতে পেরেছে দুই দল। শনিবার হিরো আইএসএল ফাইনালে তাই গোলকিপারদের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। এটিকে মোহনবাগানের গোলকিপার অরিন্দম ভট্টাচার্য যেমন এই মুহূর্তে দেশের অন্যতম সেরা গোলকিপার, তেমনই অমরিন্দর সম্পর্কেও একই কথা বলা যায়।

এ বারের আইএসএলে দু’জনের পারফরম্যান্সের পরিসংখ্যানই প্রায় সমান। অরিন্দম যেখানে ৫৫টি সেভ করেছেন, সেখানে অমরিন্দরের সেভের সংখ্যা ৫৮। দু’জনেরই ক্লিনশিটের পরিসংখ্যান সমান, ১০। তবে অরিন্দমের চেয়ে বেশি গোল খেয়েছেন অমরিন্দর। সেভের সংখ্যার দিক থেকে অমরিন্দর এগিয়ে থাকলেও গোল্ডেন গ্লাভসের দৌড়ে কিন্তু সবার ওপরে রয়েছেন অরিন্দম। কারণ, তিনি প্রতি ১১৬.৪৭ মিনিটে একটি গোল খেয়েছেন। অমরিন্দর রয়েছেন তাঁর ঠিক পরেই দু’নম্বরে। তিনি ১০০.৫ মিনিট অন্তর একটি গোল হজম করেছেন। শনিবার এই দু’জনের দিকে অবশ্যই তাকিয়ে থাকবে তাঁদের দল। যার পারফরম্যান্স যত ভাল হবে, তাঁর দল ততই এগিয়ে থাকবে খেতাবের দৌড়ে।  

হুগো বুমৌস বনাম রয় কৃষ্ণা 

রয় কৃষ্ণার সচল থাকা মানে যেমন এটিকে মোহনবাগানেরও সচল থাকা, তেমনই হুগো বুমৌস ভাল খেললে মুম্বই সিটি এফসি-কেও চেনা ছন্দে পাওয়া যায়। মাঝখানে নির্বাসিত থাকার জন্য বুমৌস চারটি ম্যাচে খেলতে পারেননি। সেই সময় তাঁর দলে কিন্তু সাফল্য ছিল না। রয় কৃষ্ণার ক্ষেত্রেও একই কথা বলা যায়। তিনি চনমনে থাকলে দলের গতি এবং আগ্রাসন দুইই বাড়ে। মাঝে যখন টানা কয়েকটি ম্যাচে চেনা ছন্দে ছিলেন না এই ফিজিয়ান ফরোয়ার্ড, তখন তাঁর দলের গোলের মিটারও ধীরগতিতে চলছিল। তিনি গোলে ফিরতেই গোলের সংখ্যা একলাফে অনেকটা বেড়ে যায়। শুধু যে নিজে গোল করেন কৃষ্ণা, তা নয়, গোল করাতেও তিনি ওস্তাদ।

এটিকে মোহনবাগানের ২৯টি গোলের মধ্যে ২১টি-তেই তাঁর যথেষ্ট অবদান রয়েছে। ১৪টি গোল নিজে করেছেন ও সাতটি করিয়েছেন। ফরাসি তারকা বুমৌস একটু নীচ থেকে খেলেন। তাই নিজে যত না গোল করেন, তার চেয়ে বেশি গোল করান। চলতি মরশুমে যে ১৫টি ম্যাচ খেলেছেন তিনি, তাতে সাতটি গোল তিনি করিয়েছেন এবং নিজে তিনটি গোল দিয়েছেন। দলের ফরোয়ার্ডদের গোলের সুবর্ণ সুযোগ তৈরি করে দেওয়াটাই তাঁর আসল কাজ। আর কৃষ্ণা দুইয়েই আছেন। তিনি গোল করার সুযোগ না পেলেও অন্যকে দিয়ে ঠিক গোল করিয়ে দেন।    

ডেভিড উইলিয়ামস বনাম বার্থোলোমিউ ওগবেচে 

যখনই দলের গোল প্রয়োজন হয়, তখনই এই দু’জন জ্বলে ওঠেন। এই দু’জনই হলেন তাঁদের দলের কার্যকরী ফুটবলার। ডেভিড উইলিয়ামসের গোলের সংখ্যা হয়তো কম, পাঁচটি গোল করেছেন তিনি। কিন্তু তাঁর প্রতিটি গোলই দলকে জয় এনে দিয়েছে। এখন এই কথাটা সমর্থকদের সবার মনে গেঁথে গিয়েছে যে, ডেভিড গোল করলে দল হারে না। সেমিফাইনালে দ্বিতীয় লেগের ম্যাচে তাঁর গোলেই এগিয়ে যায় দল। প্রথম লেগেও তাঁর গোলেই ম্যাচের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত এগিয়ে ছিল এটিকে মোহনবাগান। কলকাতা ডার্বির দ্বিতীয় লেগে ১-১ হয়ে যাওয়ার পরে ডেভিডের ৭২ মিনিটের গোলই ফের এগিয়ে দেয় সবুজ-মেরুন শিবিরকে।

ওগবেচেও সেভাবেই যখনই দলের প্রয়োজন হয়, তিনি গোল করেন। ওডিশা এফসি-র বিরুদ্ধে তাদের ৬-১ জয়ে ওগবেচে দু’টি গোল করেন। এটিকে মোহনবাগানের বিরুদ্ধে লিগের শেষ ম্যাচেও দ্বিতীয় গোলটি করেন তিনি। এ পর্যন্ত আটটি গোল করেছেন তিনি। দু’টি অ্যাসিস্ট। ফাইনালে কে বেশি কার্যকর হয়ে উঠবেন দলের কাছে, সে দিকে অবশ্যই নজর থাকবে।

সন্দেশ ঝিঙ্গন বনাম মুর্তাদা ফল 

দুই দলের দুই নিয়মিত সেন্ট্রাল ডিফেন্ডারের মধ্যে লড়াই জমজমাট হবে হিরো আইএসএল ফাইনালে। দু’জনেই দলের ডিফেন্সে তাঁদের কোচের অন্যতম প্রধান ভরসা। কার্যকারিতা ও পারফরম্যান্সের দিক থেকে কেউ কাউকে এক চিলতেও জমি ছাড়েননি এ বারের লিগে। দীর্ঘদেহী ফল বরং নিজের জায়গা ছেড়ে উঠে গিয়ে অনেকগুলো গোলও করেছেন।

চোটের জন্য গত মরশুমে একেবারেই খেলতে না পারার পরে এ বার ক্লাব বদলে সবুজ-মেরুন জার্সিতে মাঠে ফিরে এসে কোচ হাবাসকে যথেষ্ট ভরসা জুগিয়েছেন পঞ্জাবের এই তারকা ডিফেন্ডার। শুধু সেমিফাইনালের প্রথম লেগে খেলতে পারেননি তিনি। বাকি সব ম্যাচেই খেলেছেন। ১১৪টি ক্লিয়ারেন্স রয়েছে তাঁর হিসাবের খাতায়। ৪৮টি ট্যাকল, ২৪টি ইন্টারসেপশন ও ৩৯ বার ব্লক করেছেন তিনি। তাই সন্দেশ ঝিঙ্গন থাকা মানে কোচের চিন্তা অনেকটা দূর হওয়া। অন্য দিকে, সেনেগালের ফল শুধু গোল বাঁচান না, গোল করেনও। তিনটি মরশুমে এ পর্যন্ত মোট ১৩টি গোল করেছেন তিনি। ডিফেন্ডারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি গোল তাঁরই ঝুলিতে রয়েছে। আর নিজের জায়গায় থেকে ৪৯টি ট্যাকল, ৩০টি ইন্টারসেপশন, ১২৮টি ক্লিয়ারেন্স ও ৩২বার ব্লক করেছেন তিনি। এই ফাইনালে দুই তারকা ডিফেন্ডারের অনেক দায়িত্ব।