এক বছরেরও বেশি সময়ের পর মাঠে নেমে শূন্য থেকে শুরু করতে হবে ভারতীয় ফুটবল দলকে, বলছেন ক্রোয়োশিয়ান কোচ ইগর স্টিমাচ।

কোভিড-আতঙ্ক কাটিয়ে করোনায় জর্জরিত ক্রীড়াবিশ্ব যখন ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে, তখন সেই যজ্ঞে সামিল হতে চলেছে ভারতীয় ফুটবল দলও। বৃহস্পতিবার তারা ফ্রেন্ডলি ম্যাচে এশিয়ার অন্যতম শক্তিশালী দল ওমানের বিরুদ্ধে খেলতে নামছে। অতিমারির আগে দু’বার ওমানের মুখোমুখি হয়ে দু’বারই পরাজিত ভারতীয় দলের কোচ ইগর স্টিমাচ এ বার এক ঝাঁক নতুন মুখ নিয়ে ভারতীয় দল গড়েছেন।

এ বারের দলের গড় বয়স ২৪ থেকে ২৫-এর মধ্যে। এই রকম এক তারুণ্যে ভরপুর দল নিয়ে আবার শূন্য থেকে শুরু করতে চান স্টিমাচ। ওমানের বিরুদ্ধে মাঠে নামার আগে সাংবাদিক বৈঠকে বুধবার তিনি বলেন, “জাতীয় কোচ হিসেবে প্রতিটি ম্যাচই আমার কাছে নতুন সূচনা। কিন্তু এক্ষেত্রে ব্যাপারটা সোজা নয়। গত মরশুমে আমাদের অনেক পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু অতিমারি সব শেষ করে দিয়েছে। তাই ওমানের বিরুদ্ধে আমাদের শূন্য থেকে শুরু করতে হবে”।

দলে এ বার এক ঝাঁক নতুন মুখ। ২৭ জনের স্কোয়াডে ১৩ জনেরই বয়স ২৩-এর নীচে। দলের এই তরুণ ফুটবলারদের সামনে আসন্ন দুই ফ্রেন্ডলি ম্যাচকে কাজে লাগিয়ে ভারতীয় দলে পাকা জায়গা করে নেওয়ার সুবর্ণ সুযোগ রয়েছে বলে মনে করেন স্টিমাচ। তিনি বলেন, “দলের এমন অনেকে ছেলে রয়েছে, যাদের বয়স কম এবং এই প্রথম ভারতীয় দলে ডাক পেয়েছে। সবাইকে হয়তো একসঙ্গে মাঠে নামার সুযোগ দিতে পারব না। সেই ঝুঁকি নিতে পারব না। ওদের ক্ষেত্রে খুব সচেতন হতে হবে আমাদের। ওরা আমাদের ভবিষ্যৎ। ওদের ওপর আস্থা রাখতে হবে। অতীতে ওরা প্রমাণ করেছে ওরা ভাল ফুটবল খেলতে পারে। আশা করি, এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ওরা দলে থিতু হতে পারবে এবং এতেই ওদের আত্মবিশ্বাস বাড়বে”।

ওমানের বিরুদ্ধে শেষ দুই ম্যাচেই হার নিয়ে ক্রোয়েশিয়ার প্রাক্তন বিশ্বকাপার বলেন, “আগের ম্যাচগুলো দেখে আমার চোখে জল চলে এসে গিয়েছিল। প্রথম ম্যাচটা খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ওই ম্যাচেই ঠিক হয়ে যেত, আমরা গ্রুপের প্রথম দুটো জায়গার জন্য লড়াই করতে পারব কি না। কিন্তু অনভিজ্ঞতা ও দুর্ভাগ্যের কারণে সেটা যখন হল না, তখনই আমরা ভেঙে পড়ি। কষ্ট হয় সেই জন্যই। নিজের জন্য কষ্ট হয়নি। নিজের কেরিয়ারে বহুবার এ রকম পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছি আমি। কষ্ট হয়েছিল ফুটবলারদের জন্য”।

চলতি দুবাই সফরে ওমানের পরে ভারত ২৯ মার্চ দ্বিতীয় ম্যাচে মুখোমুখি হবে সংযুক্ত আরব আমিরশাহীর। এই দুই ম্যাচে কী ফল হবে, তা নিয়ে খুব একটা মাথাব্যথা নেই ভারতীয় কোচের। তিনি চান ভবিষ্যতের জন্য দলের তরুণ ফুটবলাররা অভিজ্ঞতা অর্জন করুক। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “হিরো আইএসএলের ম্যাচগুলো দেখে আমার দারুণ লেগেছে। এতগুলো তরুণ ফুটবলার একসঙ্গে এত ভাল খেলছে, নিজেদের খেলায় উন্নতিও করছে, যে কোনও সিদ্ধান্ত নিতে কোনও ভয়-ডর নেই, এ সব দেখে বেশ উত্তেজিত হয়ে উঠি আমি। ওদের আরও ভাল অভিজ্ঞতা যাতে হয়, আসন্ন দু’টি ম্যাচে সেই চেষ্টাই থাকবে। এর বেশি কিছু চাই না। ম্যাচের ফল নিয়ে আমি বেশি ভাবতে রাজি নই”।

ওমানের বিরুদ্ধে ম্যাচে দলের খেলোয়াড়দের কাছ থেকে কী চান, তা জিজ্ঞাসা করা হলে স্টিমাচ বলেন, “মাঠে নিজেদের মেলে ধরার স্বাধীনতা কাজে লাগাক আমাদের ছেলেরা, এটাই চাই। কোনও চাপ নিতে হবে না কাউকে। এই মুহূর্তে এই ধরনের ম্যাচ থেকে অভিজ্ঞতা অর্জন করাটাই এখন ওদের পক্ষে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। আমার মনে হয় ম্যাচটা আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে। আমরা ওমানের খেলা দেখেছি। ওরা শরীর দিয়ে ফুটবল খেলে। যথেষ্ট গোছানো দল ওদের। ধৈর্য্য ধরে খেলে। তাই ওদের স্টাইলের সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে খেলতে হবে আমাদের”।

সাংবাদিক বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন দলের তারকা ডিফেন্ডার সন্দেশ ঝিঙ্গনও। চোট-আঘাত সারিয়ে দীর্ঘদিন পর ভারতীয় দলে ফিরে যে তিনি গর্বিত, তা জানিয়ে সন্দেশ এ দিন বলেন, “আমি খুবই খুশি ভারতীয় দলে ফিরে। নিজের দেশের প্রতিনিধিত্ব করা যে কোনও ফুটবলারের কাছেই বড় সন্মান”। নিজেদের দল নিয়ে সন্দেশ বলেন, “ওমান বা আমিরশাহীকে জিজ্ঞেস করুন, ওরাও বলবে প্রতিপক্ষ হিসেবে আমরা শক্তিশালী। এতেই বোঝা যায়, কতদূর এগোতে পেরেছি আমরা। ওদের বিরুদ্ধে যত খেলব আমরা, তত আত্মবিশ্বাস বাড়বে আমাদের। এই ম্যাচে যে কোনও দল জিততে পারে বলে আমার মনে হয়”।  

ম্যাচ: ভারত বনাম ওমান (ফ্রেন্ডলি)

স্থান: মাকতুম বিন রশিদ মাকতুম স্টেডিয়াম, দুবাই

তারিখ: ২৪ মার্চ, ২০২১

কিক-অফ: সন্ধ্যা ৭.১৫ (ভারতীয় সময়)