মঙ্গলবার ফতোরদায় দুই দলেরই মূলমন্ত্র হওয়া উচিত ‘করেঙ্গে ইয়া মরেঙ্গে’। কারণ, পরিস্থিতিই সে রকম। চলতি হিরো আইএসএলের দ্বিতীয় সেমিফাইনালের প্রথম লেগে গত শনিবার এটিকে মোহনবাগান খেলা শেষ হওয়ার তিন মিনিট আগে পর্যন্ত এক গোলে এগিয়ে থাকা সত্ত্বেও শেষ মুহূর্তে গোল খেয়ে ম্যাচ ড্র করার যন্ত্রণা সহ্য করতে হয়েছে তাদের। মঙ্গলবার সেই জ্বালা মেটাতে গঙ্গাপাড়ের দলকে ম্যাচ জিততেই হবে। নির্ধারিত সময়ে না পারলেও অতিরিক্ত সময় বা পেনাল্টি শুট আউটে। আর শেষ মুহূর্তের গোলে যারা লড়াইয়ে ফিরে এসেছে, সেই নর্থইস্ট ইউনাইটেড এফসি-র কাছে এটা ঘুরে দাঁড়ানোর সুবর্ণ সুযোগ।

দাপুটে বাগান

প্রথম লেগের ম্যাচে যে দাপট নিয়ে খেলেছে এটিকে মোহনবাগান, তা যদি মঙ্গলবার ফতোরদাতেও অব্যহত থাকে, তা হলে তাদের ফাইনালে ওঠার সম্ভাবনা যথেষ্ট। প্রথম ম্যাচের পরে অবশ্য এমন আশার কথা বলেন সবুজ-মেরুন বাহিনীর স্প্যানিশ কোচ আন্তোনিও লোপেজ হাবাসও। তাঁর ধারণা, ফাইনালে তাঁর দলেরই যাওয়া উচিত। এমন জোর গলায় বলতে না পারলেও নর্থইস্ট ইউনাইটেড দলের ভারতীয় কোচ খালিদ জামিলের মত, গত ম্যাচের চেয়ে অনেক ভাল খেলতে হবে তাদের। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নিজেদের সেরা জায়গায় থাকতে পারলে ইতিবাচক কিছু হওয়া সম্ভব। কিন্তু সামনের দলটা যেহেতু এটিকে মোহনবাগান, তাই কাজটা বেশ কঠিন।

বাম্বোলিমের জিএমসি স্টেডিয়ামে শনিবার কলকাতার দলের দাপটই ছিল বেশি। বল দখলের লড়াইয়ে এটিকে মোহনবাগান কিছুটা পিছিয়ে থাকলেও আক্রমণ ও গোলের সুযোগ তৈরি এবং রক্ষণের দিক থেকে আগের দশ ম্যাচে অপরাজিত নর্থইস্ট ইউনাইটেড এফসি-কে পিছনেই ফেলে দেয়।

৩৪ মিনিটের মাথায় রয় কৃষ্ণার পাস থেকে ডেভিড উইলিয়ামস যে দর্শনীয় গোল করে দলকে এগিয়ে দেন, সেই গোলেই ম্যাচ শেষ হওয়ার তিন মিনিট আগে পর্যন্ত এগিয়ে ছিল সবুজ-মেরুন বাহিনী। সারা ম্যাচে যে রক্ষণ প্রায় দুর্ভেদ্য দেওয়াল তুলে রেখেছিল, সেই এটিকে মোহনবাগান রক্ষণের শেষ মুহূর্তের অসাবধানতায় গোল খেয়ে প্রায় নিশ্চিত জয় হাতছাড়া করতে হয় তাদের। নর্থইস্টের পক্ষে হেডে এই গোলটি করেন গিনির ফরোয়ার্ড ইদ্রিসা সিলা। মঙ্গলবার ফাইনালে উঠতে গেলে তাদের এর চেয়েও ভাল পারফরম্যান্স দেখাতে হবে।

বিকল্প রক্ষণেও ভরসা

সন্দেশ ঝিঙ্গন ও তিরিকে ছাড়া এটিকে মোহনবাগানের ডিফেন্স কতটা কার্যকরী হয়ে উঠতে পারবে, গত ম্যাচের আগে তা নিয়ে সমর্থকদের মনে সংশয় থাকলেও শেষ পর্যন্ত সেই সংশয় কাটিয়ে বিপক্ষের সামনে দুর্ভেদ্য দেওয়াল তুলে দিয়েছিলেন প্রীতম কোটাল, কার্ল ম্যাকহিউরা, প্রবীর দাস ও শুভাশিস বসু। নর্থইস্টের কোচ খালিদকে ম্যাচের শেষে বলতে শোনা যায়, “এটিকে মোহনবাগানের রক্ষণ দারুণ শক্তিশালী। ওদের রক্ষণ ভেঙে গোল করাটা মোটেই সোজা নয়। তবু আমরা গোল করেছি। সেই জ্ন্যই আমি বেশি খুশি”।

মঙ্গলবার অভিজ্ঞ স্প্যানিশ ডিফেন্ডার তিরি প্রথম এগারোয় ফিরলে হয়তো কার্ল ম্যাকহিউকে মাঝমাঠে নিয়ে যাওয়া হবে। সেক্ষেত্রে মাঝমাঠ শক্তিশালী হবে ঠিকই। কিন্তু তিরির সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স যে রকম, চাপের মুখে যে ভাবে ভেঙে পড়তে দেখা যাচ্ছে তাঁকে, তার পরে চোট সারিয়ে ফিরে তিরি কতটা দুর্ভেদ্য হয়ে উঠতে পারবেন, এটা বড় প্রশ্ন।

ফর্মে তারকারা

গত ম্যাচে প্রচুর গোলের সুযোগ তৈরি করতে দেখা যায় এটিকে মোহনবাগানের ফুটবলারদের। প্রবীর তাঁর স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে চান দিকের উইং দিয়ে উঠে হয় বিপক্ষের বক্সে ঢুকে শট মারেন, নয় দুর্দান্ত ও নিখুঁত ক্রসে ফরোয়ার্ডদের গোলের সামনে বল সাজিয়ে দেন। ফরোয়ার্ড মনবীর সিংও ডান দিক দিয়ে গোলের সুযোগ তৈরি করার চেষ্টা করেন বারবার। সবচেয়ে বড় কথা ডেভিড উইলিয়ামস ও রয় কৃষ্ণা দু’জনেই ফর্মে রয়েছেন।

বরং মার্সেলিনহো তেমন ভাল ফর্মে নেই। যাঁর ফলে তাঁকে মাঝপথেই তুলে নিতে হয়। মঙ্গলবার তাঁকে প্রথম এগারোয় দেখা না গেলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই। এডু গার্সিয়া চোট পেয়ে যাওয়ায় সমস্যায় পড়েছেন হাবাস। ফাইনালের কথা ভেবে তাঁকে হয়তো জোর করে মাঠে নামাতে রাজি হবেন না হাবাস।

ব্রাউনের অপেক্ষায় নর্থইস্ট

অন্য দিকে, জিম্বাবোয়ের ফরোয়ার্ড দেশর্ন ব্রাউন না থাকায় গত ম্যাচে নর্থইস্টের আক্রমণে সে রকম ধার ছিল না। তার ওপর বিপক্ষের কঠিন ডিফেন্সে তারা বাধা পাচ্ছিল বারবার। তবু উরুগুয়ের ফরোয়ার্ড ফেদরিকো গালেগো প্রায়ই প্রতিপক্ষের এলাকায় বিপজ্জনক হয়ে ওঠেন। পরে যখন ইদ্রিসা সিলা পরিবর্ত হিসেবে নামেন, তখন সবুজ-মেরুন ডিফেন্সের ওপর চাপ মারাত্মক বেড়ে যায়।

পরিসংখ্যান বলছে, সে দিন এটিকে মোহনবাগান গোলে শট নিয়েছিল দু’বার আর নর্থইস্ট চারবার। এর মধ্যে তিনটিই শেষ ১৫ মিনিটে। যখন বেশ ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন সবুজ-মেরুন ফুটবলাররা। তখন কয়েকজন পরিবর্ত ফুটবলার নামালে হয়তো ক্লান্তির সমস্যাটা থাকত না। কিন্তু সে দিন হাবাস মাত্র একটি পরিবর্তন আনেন দলে।

মঙ্গলবার দেশর্ন ব্রাউন দলে ফিরে এলে এটিকে মোহনবাগান চাপে পড়ে যেতে পারে। বেঙ্গালুরু এফসি থেকে নর্থইস্টে আসার পরে তিনি প্রায় জ্বলে উঠেছেন। খালিদ জামিলের দলে যোগ দেওয়ার পরে আটটি ম্যাচে পাঁচ গোল করেছেন তিনি। লুই মাচাডো, গালেগোদের সঙ্গে ব্রাউনও নামলে প্রীতম কোটালদের চাপ যথেষ্ট বাড়বে। সেই চাপ তারা কী করে সামলাবে, সেটাই দেখার।

আর এক প্রতিপক্ষ

প্রথম লেগের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে দ্বিতীয় লেগে ভাল খেলার কথা বলেছেন দুই কোচই। সেটা পারলেও ক্লান্তির সমস্যা দুই দলকেই ঘিরে ধরতে পারে মঙ্গলবারের ম্যাচে। দশ দিনে তৃতীয় ম্যাচ খেলতে হচ্ছে হাবাসের দলকে। নর্থইস্টের ক্ষেত্রে সেটা ১২ দিন। এমনিতেই জৈব সুরক্ষা বলয়ের মধ্যে চার মাস থেকে মানসিক ভাবে বেশ ক্লান্ত ফুটবলাররা। তার ওপর পরপর ম্যাচ খেলায় শারীরিক ক্লান্তিও এখন বড় সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে তাদের কাছে। সেই সমস্যা সামলে সফল হওয়াটা দুই দলের কাছেই বড় চ্যালেঞ্জ। তাই মঙ্গলবার ফতোরদায় শুধু বিপক্ষ নয়, ক্লান্তিও দুই দলের বড় প্রতিপক্ষ।

এটিকে মোহনবাগান স্কোয়াড:

গোলকিপার: অরিন্দম ভট্টাচার্য, অভিলাষ পাল, আর্শ শেখ

ডিফেন্ডার: তিরি, প্রীতম কোটাল, প্রবীর দাস, সন্দেশ ঝিঙ্গন, শুভাশিস বসু, সুমিত রাঠি, সালাম সিং

মিডফিল্ডার: প্রণয় হালদার, হাভিয়ে হার্নান্ডেজ, এডু গার্সিয়া, কার্ল ম্যাকহিউ, লেনি রড্রিগেজ, জয়েশ রানে, রেজিন মাইকেল, শেখ সাহিল, এন ইংসন সিং

ফরোয়ার্ড: ডেভিড উইলিয়ামস, রয় কৃষ্ণা, মনবীর সিং, মার্সেলো পেরেইরা, কোমল থাটাল, মহম্মদ ফারদিন আলি মোল্লা   

সরাসরি দেখুন:

সন্ধ্যা ৭.৩০ থেকে

টিভিতে: স্টার স্পোর্টস নেটওয়ার্ক

স্ট্রিমিং: ডিজনি প্লাস হটস্টার ও জিও টিভি