মুম্বই সিটি এফসি ও এফসি গোয়ার মধ্যে সেমিফাইনালের প্রথম লেগ ২-২ ড্র হওয়ায় সোমবারের দ্বিতীয় লেগের ম্যাচ আরও আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। এই ম্যাচে নির্ধারিত সময়ে নিষ্পত্তি না হলে তা গড়াবে অতিরিক্ত সময়ে। এবং তাতেও ফয়সালা না হলে পেনাল্টি শুট আউটে। ফলে সোমবার দুই দলকেই ১২০ মিনিট লড়াই করার প্রস্তুতি নিয়ে নামতে হবে।

শুক্রবার প্রথম লেগের ম্যাচে এফসি গোয়ার দাপট বেশি থাকলেও শেষ পর্যন্ত হার বাঁচিয়ে নেয় মুম্বই সিটি এফসি। ২০ মিনিটের মাথায় পেনাল্টি থেকে গোল করে দলকে এগিয়ে দেন ইগর অ্যাঙ্গুলো। মান্দার রাও দেশাই বক্সের মধ্যে গোলমুখী জর্জ অর্টিজকে অন্যায় ভাবে বাধা দেওয়ায় পেনাল্টি পায় এফসি গোয়া। ৩৮ মিনিটের মাথায় গোল শোধ করেন মুম্বইয়ের সেরা তারকা হুগো বুমৌস।

দ্বিতীয়ার্ধে সেভিয়ার গামার নিজের উদ্যোগে করা অসাধারণ এক গোলে ফের এগিয়ে যায় এফসি গোয়া। গামার গোলের দু’মিনিট পরেই ফের সমতা আনে মুম্বই। এ বার গোল করেন তাদের নিয়মিত স্কোরার-ডিফেন্ডার মুর্তাদা ফল।

গত ম্যাচে যে রকম হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়েছিল, সোমবারও বাম্বোলিমের জিএমসি স্টেডিয়ামে সে রকমই হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। হয়তো আরও বড় যুদ্ধ দেখতে চলেছেন ফুটবলপ্রেমীরা। চলতি লিগে এই নিয়ে চতুর্থবার মুখোমুখি হতে চলেছে দুই দল। প্রথমবার মুম্বই সিটি এফসি ১-০ গোলে জেতে। লিগের দ্বিতীয় লেগে ৩-৩ ড্র হয় তাদের। সেমিফাইনালের প্রথম লেগে আবার ড্র। এই দুই দলের মধ্যে টানা দু’বার ড্র অনেক বছর পরে হল। ২০১৪-য় প্রথম হিরো আইএসএলের পর থেকে এমন ঘটনা ঘটেনি।

এমনিতেই এফসি গোয়ার বিরুদ্ধে মুম্বই সিটি এফসি-র রেকর্ড খুব একটা ভাল নয়। ১৭টি ম্যাচে তারা মুখোমুখি হয়েছে। গোয়ার দল জিতেছে সাতটিতে ও মুম্বই পাঁচটিতে। বাকি পাঁচটি ড্র হয়েছে। তবে মুম্বইয়ের সমর্থকদের কাছে দুশ্চিন্তার বিষয় হল তাদের প্রিয় দল ও এফসি গোয়ার গত ন’টি মুখোমুখিতে মুম্বই জিতেছে মাত্র দু’বার। পাঁচবার গোয়া জিতেছে ও দু’বার ড্র হয়েছে।

এ বারে অবশ্য দুই দলই ভাল ফর্মে রয়েছে। তবে লিগ পর্বে সাফল্যের দিক থেকে গোয়ার চেয়ে এগিয়ে ছিল মুম্বই। লিগ টেবলে তারা এক নম্বরে ছিল, এফসি গোয়া ছিল চার নম্বরে। কিন্তু সেমিফাইনালে এডু বেদিয়াদের উজ্জীবিত ফুটবল দেখে তা বোঝার উপায় ছিল না। ধারাবাহিকতার দিক থেকে অবশ্য গোয়ার দলই এগিয়ে। টানা ১৪টি ম্যাচে হারেনি তারা। সোমবারই হার-জিতের ফয়সালার সামনে দাঁড়িয়ে দু’বারের ফাইনালিস্টরা।

রবিবার এফসি গোয়ার কোচ হুয়ান ফেরান্দো ভার্চুয়াল সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, “প্রথম ম্যাচটাই আমরা জিততে চেয়েছিলাম। কারণ, আমরা জানি যে মাত্র দু’দিন বিশ্রাম নিয়ে ফের তরতাজা হয়ে দ্বিতীয় লেগে সমান বা তার চেয়েও ভাল খেলাটা মোটেই সহজ নয়। তবে সৌভাগ্যবশত আমাদের দলের ছেলেরা পরের ম্যাচের জন্য সবাই তৈরি। সবাই চনমনে রয়েছে। আশা করি কাল আমরা ফাইনালে উঠব”।

এই ম্যাচে তিনি স্প্যানিশ ডিফেন্ডার ইভান গঞ্জালেস ও তাঁর দেশেরই মিডফিল্ডার আলবার্তো নগুয়েরাকে পাবেন। তাঁরা আগের ম্যাচে খেলতে পারেননি। এই দু’জনকে ফিরে পাওয়ায় দল আরও ভাল পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নামতে পারবে বলে মনে করছেন ফেরান্দো। তিনি বলেন, “আমার কাছে সব খেলোয়াড়ই সমান গুরুত্বপূর্ণ। তবে যখন সব খেলোয়াড়ই সুস্থ থাকে। তখন তাদের নিয়ে পরিকল্পনা করতে সুবিধা হয়। কয়েজন না থাকলে সেই অনুযায়ী বিকল্প পরিকল্পনা তৈরি করতে হয়। সে দিক থেকে দেখতে গেলে কাল আমাদের কৌশল তৈরিতে সুবিধাই হবে বলতে পারেন। একাধিক পরিকল্পনা তৈরি করে রাখতে পারব”। পেনাল্টি শুট আউটের জন্যও নিজেদের তৈরি রাখছেন বলে জানালেন গোয়ার কোচ। তবে তিনি চান ওই পর্বে পৌঁছনোর আগেই ম্যাচের নিষ্পত্তি হয়ে যাক।

অন্য দিকে, তাঁরই স্বদেশীয় মুম্বই সিটি এফসি-র কোচ সের্খিও লোবেরা বলেন, “গত ম্যাচে আমার দলের পারফরম্যান্স খুশি হওয়ার মতো ছিল না। এই ম্যাচে আমাদের আরও ভাল খেলতে হবে। ম্যাচে আমাদের আরও বেশি নিয়ন্ত্রণ নিতে হবে। আরও বেশি গোলের সুযোগ তৈরি করতে হবে। সে দিন বিপক্ষকে আমরা অনেক জায়গা দিয়েছিলাম, গোল তৈরির সুযোগও দিয়েছিলাম। এ বার আর ও সব করলে চলবে না। আমাদের অনেক উন্নতি করতে হবে”।

এফসি গোয়ার প্রাক্তন কোচ লোবেরাও জানালেন, সোমবার তাঁর হাতে পুরো দল থাকছে প্রথম এগারো বাছাইয়ের জন্য। বলেন, “আমি বেশি অজুহাত দেওয়া, দল নিয়ে কান্নাকাটি করা পছন্দ করি না। দলে কে সাসপেন্ড, কার চোট-এ সব নিয়ে বেশি কথা বলতে ভাল লাগে না। এই ম্যাচে আমাদের সবাই প্রস্তুত মাঠে নামার জন্য। এটাই আসল কথা আর আমরা গত ম্যাচের চেয়ে ভাল খেলার ক্ষমতা রাখি”।