ডার্বি যে বিশাল কঠিন ম্যাচ নয়, বরং সমর্থকদের আবেগ ও গুরুত্বের দিক থেকে বড়, এসসি ইস্টবেঙ্গলের স্প্যানিশ হেড কোচ মারিও রিভেরা সেটাই বোঝাতে চাইছেন দলের ছেলেদের, বিশেষ করে বিদেশিদের। গত ম্যাচে চার গোলে হারের প্রভাব যে এই ম্যাচে পড়বে না, তেমনই আশা করছেন তিনি। বরং তাঁর ধারণা, ওই হারই এই ম্যাচে বাড়তি মোটিভেশন জোগাতে পারে দলের খেলোয়াড়দের। মরশুমের দ্বিতীয় ডার্বির আগে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে রিভেরা একেবারেই উত্তেজিত নন। বরং একটু বেশিই শীতল।

তিন বছর ইস্টবেঙ্গল কোনও ডার্বি জেতেনি। এ বার কি ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন আপনারা। ০-৪ হারের পর কতটা কঠিন এই কাজটা?

অবশ্যই আমরা জিততে পারি। লিগ টেবলে আমরা কোথায় আছি, সেটা মাথায় রাখার দরকারই নেই। ডার্বি মানে সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দীর মুখোমুখি হওয়া এবং জেতার জন্য তৈরি থাকা। ডার্বির আগে অবস্থান বা পরিস্থিতি, কোনওটাই বড় কথা নয়। খেলোয়াড়রা পেশাদার। খেলায় হার-জিত-ড্র আছেই। হারের পরে আর একটা ম্যাচ খেলতে নামাটা তো স্বাভাবিক ব্যাপার। বিশ্বের অন্যতম সেরা এক কোচ বলেছিলেন, ফুটবলার ও কোচেদের সব সময়ই তৈরি থাকতে হয়। জয়ের থেকে হারই বেশি আসে। পেশাদারদের যে কোনও ফলের জন্য তৈরি থাকতে হয়। জেতার পরের ম্যাচও যে ভাবে শুরু করতে হয়, হারের পরেও সে ভাবেই আর একটা ম্যাচ শুরু করতে হবে।

আপনি নিজে জানেন কলকাতা ডার্বির গুরুত্ব এবং ডার্বিতে আপনার একশো শতাংশ রেকর্ড আছে। দলের ছেলেদের, বিশেষ করে বিদেশি খেলোয়াড়দের কী ভাবে মোটিভেট করছেন?

বিদেশি খেলোয়াড়দের বোঝানোর চেষ্টা করছি কলকাতা ডার্বি আসলে কী। ওদের ফাঁকা গ্যালারির সামনে খেলতে হচ্ছে। তাই ওদের ভরা সল্টলেক স্টেডিয়ামে হাজারা হাজার সমর্থকের সামনে হওয়া কয়েকটা ডার্বি ম্যাচের ভিডিও দেখিয়েছি। এখানকার সমর্থকেরা কেমন, ডার্বির আবহ কেমন হয়, সেটাই ওদের বোঝানোর চেষ্টা করেছি। এই আবহটা ওরা মিস করবে। তবে ওদের বোঝা দরকার, সমর্থকদের জন্য ডার্বি জেতা কতটা গুরুত্বপূর্ণ।

এটিকে মোহনবাগানের আক্রমণ বিভাগকে কী ভাবে আটকাবেন বলে ভেবে রেখেছেন?

ওদের আক্রমণ বিভাগ অন্যতম সেরা। তবে আমাদের অঞ্চলে ওদের বেশি দৌড়তে দিলে সর্বনাশ হয়ে যেতে পারে। এ ছাড়া ওদের বেশি জায়গা দেওয়াও চলবে না। খুব তাড়াতাড়ি বল নিয়ে উঠতে হবে। এই দুটো ব্যাপার যদি আমরা নিখুঁত ভাবে করতে পারি, তা হলে ওদের আটকানো সম্ভব।

অনেকেই বলছেন এই ম্যাচে এসসি ইস্টবেঙ্গল আন্ডারডগ। আপনি কী বলছেন?

সত্যি বলতে, অবস্থাটা এ রকম নয়। পেশাদার খেলোয়াড়রা প্রতি ম্যাচে জয়ের কথা ভেবেই নামে। দলের বাইরে অনেকে এ ভাবে ভাবতে পারে। কিন্তু কোনও দলই জয় ছাড়া অন্য কোনও লক্ষ্য নিয়ে ম্যাচের প্রস্তুতি নেয় বলে আমার মনে হয় না।

গত ম্যাচে চার গোলে হারার পরে এ রকম একটা কঠিন ম্যাচের জন্য দলের ছেলেদের কী ভাবে উজ্জীবিত করছেন?

মাঝে মাঝে এ রকম বড় হারের পরে ডার্বি খেলাই ভাল। কারণ, কিছু কিছু খেলোয়াড়দের আর মোটিভেশনের দরকার হয় না। তাদের আর নতুন করে উজ্জীবিত করার মতো কিছু থাকে না। সেরা খেলাটা যদি তারা খেলতে না পারে, তা হলে মোটিভেশন আপনি থেকেই আসে। সে জন্য নতুন করে তাদের উজ্জীবিত করতে হয় না।

চার গোলে হারের পরে কি আপনার দলের ছেলেদের দক্ষতার চেয়ে মানসিক শক্তির বেশি প্রয়োজন?

আমার তা মনে হয় না। উঁচু স্তরের ফুটবলে ম্যাচ জিততে গেলে কোনওটাই কম হলে চলে না। কৌশল, দক্ষতা, মানসিকতা সব দিক থেকেই সেরা জায়গায় না থাকলে ম্যাচ জেতা যায় না। আগের ম্যাচে হেরেছি বলে একটা দিক বেশি দরকার, ব্যাপারটা সে রকম নয়। সবই সমান ভাবে দরকার।

মার্সেলো ও সোতা— এই দুই নতুন বিদেশিকে কি ডার্বিতে খেলতে দেখা যাবে?

সোতা পারবে বলে মনে হয় না। কারণ ও কোয়ারান্টাইনে ছিল এবং কোভিড পজিটিভও হয়েছিল। তাই ওকে আগে সেই ফিটনেস আনতে হবে। কয়েক মিনিটের বেশি ও খেলতে পারবে না। শুরু থেকে তো নয়ই।

প্রথম ম্যাচে পাওয়া প্রথম জয়ের আত্মতুষ্টিই কি গত ম্যাচে আপনাদের অত বড় হারের সামনে দাঁড় করাল?

প্রতিটা জয়ের পরেই আবার শূন্য থেকে শুরু করতে হয়। ভাল জিনিসগুলো মনে রেখে পরের ম্যাচের প্রস্তুতি শুরু করতে হয়। সেগুলোতে যাতে আরও উন্নতি করা যায়, সেই চেষ্টাই থাকে। এক্ষেত্রেও তাই হয়েছে।

এটিকে মোহনবাগানের সামনে যেহেতু এই ম্যাচ জিতে সেরা চারে ঢোকার সুযোগ রয়েছে, তাই ওরাই কি বেশি চাপে থাকবে বলে আপনার মনে হয়?

অবশ্যই। আমাদের চেয়ে ওরাই সেরা চারের বেশি কাছাকাছি রয়েছে। ওদের তাই জিততেই হবে। সেজন্য ওদের ওপর চাপই বেশি। ডার্বিতে অবশ্য দুই দলের ওপরই চাপ থাকে। জয় আমাদেরও চাই। কিন্তু শুধু ড্র করলে সেরা চারে পৌঁছতে পারবে না ওরা, ম্যাচটা জিততেই হবে। তাই ওরাই বেশি চাপে ভুগবে।

এই ম্যাচে এসসি ইস্টবেঙ্গলের জেতার সম্ভাবনা কতটা দেখছেন?

সম্ভাবনা অবশ্যই আছে। ডার্বি সব সময়ই ৫০-৫০। কে টেবলের নীচে, কারা ওপরে, সে সব দেখে লাভ হয় না। সব দেশেই ডার্বিতে ৫০-৫০ সম্ভাবনা নিয়েই দুই দল খেলতে নামে।          

এটিকে মোহনবাগানের মসৃণ পাসিং ফুটবল বানচাল করবেন কী ভাবে?

সেরকম ভাবে ভাবিনি। বিপক্ষের পজিশনাল অ্যাটাক আমরা সফল ভাবেই আটকেছি। আমাদের কাছে ট্রানজিশনই (বল নিয়ে দ্রুত ওঠা ও নামা) বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এই জায়গায় আমাদের উন্নতি করতে হবে। তবে এটিকে মোহনবাগানের পজিশনাল অ্যাটাক আমাদের কাছে এমন কিছু আহামরি ব্যাপার নয়। কারণ, আমরা রক্ষণ যথেষ্ট ভাল সামলেছি। গোয়ার পজিশনাল অ্যাটাক আরও ভাল ছিল। তাই মোহনবাগানকেও আটকানো সম্ভব।

এই ম্যাচটা এসসি ইস্টবেঙ্গলের আইএসএল-সম্ভাবনার পক্ষে কতটা গুরুত্বপূর্ণ? জানুয়ারির দলবদলে আসা নতুন খেলোয়াড়রা কি দলের সমস্যাগুলো দূর করতে পারবেন?

ডার্বিতে আমরা সমর্থকদের অভাব বোধ করব। এর বেশি আর বিশেষ কিছু বলার নেই। নতুন যারা এসেছে, তাদের নিয়ে আশা করি আরও ভারসাম্যযুক্ত দল মাঠে নামাতে পারব। প্রতি ম্যাচেই উন্নতি করব আমরা। আমাদের হাতে বেশি সময় নেই। নতুন খেলোয়াড়দের দ্রুত ফিট হয়ে উঠতে হবে। তবে আমাদের প্রতি ম্যাচেই উন্নতি করতে হবে।