গোয়ায় গিয়ে ১-২ হেরে এসেছিল এটিকে। শনিবার এফসি গোয়াকে ঘরের মাঠে পেয়ে সেই হারের প্রতিশোধ নিয়ে নিল কলকাতার দল। প্রীতম কোটাল ও জয়েশ রানের দেওয়া গোলে ২-০ জিতে ফের লিগ তালিকার শীর্ষে চলে গেল তারা। ১৩ টি করে ম্যাচ খেলার পরে এফসি গোয়া ও এটিকে-র পয়েন্ট সমান (২৪) হলেও গোল পার্থক্যে (১৩) এগিয়ে রয় কৃষ্ণারা।

  • জবি জাস্টিনকে শনিবার যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে প্রথম এগারোয় রেখে দল সাজায় এটিকে।
  • একেবারে ফাঁকা গোল কোনও দলই পায়নি প্রথমার্ধে। এটিকে যেখানে গোলে শট নিয়েছিল দুটি, সেখানে গোয়া একটিও শট নিতে পারেনি।
  • দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই গোল করেন এটিকে ডিফেন্ডার প্রীতম কোটাল। বক্সের ডানদিক থেকে রয় কৃষ্ণার নিখুঁত মাইনাসে জোরালো হেড করেন তিনি।
  • এটিকে-কে দ্বিতীয় গোল এনে দেন জয়েশ রানে। ডান দিক থেকে রয়ের নিখুঁত মাইনাস ধরে গোললাইনের সামনে থেকে গোল করেন জয়েশ।

শনিবার যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে জবি জাস্টিনকে প্রথম এগারোয় রেখে ৩-৪-২-১-এ দল সাজায় এটিকে। গত ম্যাচে বলবন্ত সিংকে প্রথম এগারোয় রাখা হলেও তিনি মোটেই ভাল পারফরম্যান্স দেখাতে পারেননি। তাই গোয়ার বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ও কঠিন ম্যাচে গত হিরো আই-লিগের সর্বোচ্চ গোলদাতাকেই প্রথম এগারোয় রাখা হয়।

অন্য দিকে গত দু’বারের সোনার বুটজয়ী ফেরান কোরোমিনাসকে একেবারে সামনে রেখে তাঁর পিছনে দুই অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার ও এক ফরোয়ার্ড মনবীর সিংকে রেখে ৪-২-৩-১-এ দল সাজান গোয়ার কোচ সের্জিও লোবেরা।

শুরু থেকে গোলের জন্য যতটা না মরিয়া লাগছিল এফসি গোয়াকে, তার চেয়ে বেশি মরিয়া মনে হচ্ছিল এটিকে এফসি-কে। শুরুতে বাঁদিকের উইং বরাবর আক্রমণ তৈরি করার চেষ্টা করেন মাইকেল সুসাইরাজ ও ক্রমশ ডানদিক থেকে আক্রমণে উঠতে থাকেন প্রবীর দাস। বাঁদিকে সুসাইরাজ ও জবি ও ডান দিক থেকে প্রবীর ও রয় কৃষ্ণার জুটিই মূলত আক্রমণ তৈরি করছিলেন। মাঝখান দিয়ে হাভিয়ে হার্নান্ডেজ বিপক্ষের ডিফেন্ডারদের ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করছিলেন। এটাই মোটামুটি এটিকে-র প্ল্যান অফ অ্যাকশন ছিল শনিবার।

অন্য দিকে, গোয়া খুব বেশি আক্রমণে উঠতে না পারলেও বল দখলের লড়াইয়ে এগিয়ে থেকে ম্যাচে নিয়ন্ত্রণ আনার চেষ্টা করছিল। কোরোমিনাসকে এ দিন প্রীতম কোটালরা নজরে রাখলেও মাঝে মাঝেই তিনি তাঁদের নজর এড়িয়ে ঢুকে পড়ছিলেন বিপক্ষের গোল এলাকায়। ১২ মিনিটের মাথায় বক্সের মধ্যে তাঁকে সুমিত রাঠি বাধা দেওয়ায় রেফারির কাছে পেনাল্টির আবেদনও জানিয়েছিলেন গোয়ার খেলোয়াড়রা। কিন্তু রেফারি তাতে আমল দেননি।

২৫ মিনিটে বক্সের ঠিক বাইরে থেকে নেওয়া ফ্রি কিকে প্রায় গোল করেই ফেলেছিলেন হাভিয়ে হার্নান্ডেজ। কিন্তু গোয়ার গোলকিপার মহম্মদ নাওয়াজ তা বাঁচিয়ে দেন। এর জেরে পাওয়া কর্নার থেকে গোলের সামনে ভাল সুযোগ পেয়ে গিয়েছিলেন জবি। কিন্তু সেই সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি তিনি।

একেবারে ফাঁকা গোল কোনও দলই পায়নি প্রথমার্ধে। এটিকে যেখানে গোলে শট নিয়েছিল দুটি, সেখানে গোয়া একটিও শট নিতে পারেনি গোল লক্ষ্য করে। এক্ষেত্রে অবশ্য এটিকের ডিফেন্সকেই কৃতিত্ব দিতে হবে।

দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই গোলের মুখ অপ্রত্যাশিত ভাবে খুলে ফেলেন এটিকে ডিফেন্সের প্রধান ঘুটি প্রীতম কোটাল। বক্সের ডানদিক থেকে রয় কৃষ্ণার নিখুঁত মাইনাসে জোরালো হেড করে বিপক্ষের জালে বল ঠেলে দেন তিনি। গোলকিপার মহম্মদ নাওয়াজ বলটাকে ফিস্ট করে ওপর দিকে পাঠানোর চেষ্টা করলেও তা বারে লেগে জালে জড়িয়ে যায়। এই মরশুমে প্রীতমের প্রথম গোল এটি এবং হিরো আইএসএলে তাঁর তিন নম্বর গোল।  দ্বিতীয়ার্ধের শুরুর দশ মিনিটেই ঝড় তুলে দেয় এটিকে।  গোল হওয়ার পরেও একের পর এক আক্রমণ শানাতে থাকে কলকাতার দল। রয় কৃষ্ণাকে একবার বক্সের মধ্যেই ফেলে দেন কার্লোস পেনা। বক্সের বাঁ দিক থেকে জবির দেওয়া বল বারের ওপর দিয়ে মারেন হার্নান্ডেজ। এর পরেই বল দখলের লড়াইয়ের সময় রয় কৃষ্ণাকে সাইড লাইনের ধারে ঠেলে ফেলে দেন মুর্তাদা ফল। যা নিয়ে দুই দলের খেলোয়াড়দের মধ্যে বচসাও শুরু হয়ে যায়। যার জেরে গোয়ার সেনেগালি ডিফেন্ডারকে হলুদ কার্ড দেখান উজবেকিস্তানের রেফারি কাসিমভ শেরজদ।

দ্বিতীয়ার্ধের শুরুর এই ঝড় কোনও রকমে সামলে নিয়ে পাল্টা আক্রমণে ওঠে এফসি গোয়া। এই সময় এটিকে-র গোলকিপার অরিন্দম দু-দু’বার দলকে বিপদের হাত থেকে বাঁচান একবার গোলের সামনে কিছুটা উঠে এসে গোলমুখী বল ক্লিয়ার করে ও পরে গোল লাইনে দাঁড়িয়ে সিমিনলেন দুঙ্গেলের অবধারিত গোল বাঁচিয়ে। একটা সময় এটিকে-র পুরো দলটাই নেমে আসে নিজেদের গোল এরিয়ায়।

তবে এটিকে ব্যবধানটা বাড়িয়ে নিতে পারত অনায়াসে, যদি ফাঁকা গোল পেয়েও গোল লাইনের সামনে থেকে গোলের সুযোগ নষ্ট না করতেন জয়েশ রানে। যিনি জবি জাস্টিনের জায়গায় নামেন ৭০ মিনিটে। বক্সের ডান দিক থেকে নিখুঁত ক্রস করেছিলেন রয় কৃষ্ণা। সুবর্ণ সুযোগ পেয়েও কাজে লাগাতে পারেননি জয়েশ। তবে সাত মিনিট পরেই সেই ভুল শুধরে নিয়ে এটিকে-কে দ্বিতীয় গোল এনে দেন জয়েশ। একই ভাবে রয় ডান দিক থেকে নিখুঁত মাইনাস করে গোল লাইনের সামনে জয়েশকে বল দিলে এ বার তিনি ভুল করেননি।

গত ম্যাচে লাল কার্ড দেখায় এ দিন এটিকে-র কোচ আন্তোনিও লোপেজ হাবাস ছিলেন গ্যালারিতে। তবে সারা ম্যাচে একই ভাবে সমান উত্তেজিত দেখিয়েছে তাঁকে। টিভির পর্দায় বারবার দেখা গিয়েছে উত্তেজিত হেড কোচকে।