শনিবার হিরো আইএসএল ২০১৯-২০-র ফাইনালে নামার আগে আত্মবিশ্বাসী এটিকে এফসি শিবির। যারা বলছে, নিজেদের স্বাভাবিক ছন্দ ধরে রাখতে পারলে তাদের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।

শনিবার ফতোরদার জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামে এটিকে ও চেন্নাইন এফসি দুই দলই তাদের তৃতীয় আইএসএল খেতাব জয়ের লক্ষ্য নিয়ে নামবে। চেন্নাইনের সাম্প্রতিক ধারাবাহিকতা কলকাতার দলের চেয়ে ভাল। টানা ন’টি ম্যাচে অপরাজিত থাকার পরে গত ম্যাচে, অর্থাৎ, সেমিফাইনালের দ্বিতীয় লেগে এফসি গোয়ার কাছে হারে তারা।    

অন্য দিকে, শেষ পাঁচটি ম্যাচের মধ্যে এটিকে জিতেছে মাত্র দু’টিতে। ফেব্রুয়ারির শুরুতে ওডিশাকে হারানোর পরে গত ম্যাচে, অর্থাৎ সেমিফাইনালের দ্বিতীয় লেগে তারা জেতে বেঙ্গালুরুর বিরুদ্ধে। মাঝখানের তিনটি ম্যাচে জয়হীন ছিল তারা। কিন্তু গত রবিবার বেঙ্গালুরুর বিরুদ্ধে ঘরের মাঠে ৩-১ জয়টাই কলকাতার শিবিরকে চাঙ্গা করে তুলেছে।

শুক্রবার গোয়া রওনা হওয়ার আগে বৃহস্পতিবার কলকাতায় দলের অন্যতম সেরা স্ট্রাইকার ডেভিড উইলিয়ামস জানিয়ে দেন, তিনি আত্মবিশ্বাসী, দল ফাইনাল জেতার জন্য প্রস্তুত। বলেন, “আমার বিশ্বাস, আমাদের দল এখন খুব ভাল জায়গায় আছে। দলের প্রত্যেকেই খুব আত্মবিশ্বাসী। আমি নিজে তো বটেই। আমরা নিজেদের সেরাটা উজাড় করে দেব, জানি। এটিকে-ই যে সেরা, তা প্রমাণ করার মরিয়া চেষ্টা করব আমরা। সেটা আমাদের ওপরই নির্ভর করছে। আমাদের যে আরও বেশি পরিশ্রম করতে হবে, তা নয়। আমরা যথেষ্ট করেছি। নিজেদের উজাড় করে দিয়েছি। এখন শেষটাই ভাল হওয়ার বাকি”।  

উইলিয়ামসের অসাধারণ গোলেই ফাইনালে ওঠে এটিকে এফসি।  যিনি তাঁকে সেই গোল করতে প্রত্যক্ষ মদত জোগান, সেই বঙ্গ তারকা প্রবীর দাসও শনিবার জয়ের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী। চেন্নাইনের কাছে শেষ ম্যাচে তাঁদের হারের প্রসঙ্গ তুলতে তিনি বলেন, “আমরা যখন নর্থইস্টের বিরুদ্ধে খেলি, তখন ওরাও অপরাজিত ছিল, আমরাই ওদের সেই অবস্থায় হারাই। মুম্বইও পরপর ম্যাচ জেতার পরে আমাদের কাছে হারে। চেন্নাইনের বিরুদ্ধে শেষ ম্যাচটা অন্য রকম ছিল। ওদের সেমিফাইনালে উঠতে গেলে ম্যাচটা জিততেই হত আর আমরা তখন সেরা চারে উঠে গিয়েছি। সে জন্যই হয়তো আমরা সে দিন ফোকাস থেকে একটু সরে গিয়েছিলাম। না হলে হারতাম না। ফাইনাল পুরো অন্য ম্যাচ। কোচের পরিকল্পনা অনুযায়ী খেলতে হবে। ফাইনালে আমাদের মানসিক ভাবে শক্তিশালী থাকতে হবে। ৯০ মিনিটের পরে আরও ৩০ মিনিট খেলতে হতে পারে, সেই মানসিকতা নিয়ে মাঠে নামতে হবে। নিজেদের সেরাটা দেওয়ারই চেষ্টা করব”।

অস্ট্রেলিয়া থেকে আসা এটিকে-র তারকা স্ট্রাইকার ডেভিডের বক্তব্য, মাঠের মাপ নয়, মানের ওপর অনেকটা নির্ভর করে দলের পারফরম্যান্স। ফতোরদায় ভাল মাঠই আশা করছেন তিনি। বলেন, “মাঠের মান পারফরম্যান্সের ওপর অনেকটা প্রভাব ফেলে। এখানে যেক’টা মাঠে খেলেছি, তার মধ্যে জামশেদপুর, কোচির মাঠ খুব ভাল। গোয়াও খারাপ নয়। গত সপ্তাহে টিভিতে দেখে ভালই লেগেছে। যুবভারতীরল মাঠে ঘাস একটু বড় বলে মাঝে মাঝে সমস্যা হয়েছে।  মাঠটা বড় না ছোট, সেটা তাই আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার নয়। কৌশলটাই বড় কথা। কৌশল যদি ঠিক হয় ও আমরা যদি তা ঠিকমতো কাজে লাগাতে পারি, তা হলে আমাদের জেতার সম্ভাবনা যথেষ্ট। আমাদের উইং প্লে খুব ভাল। বিশেষ করে ডানদিকের উইং। আসলে ম্যাচের সময় ঠিক কী কী ঘটছে, বিপক্ষে কেমন খেলছে, তার ওপরই বেশিরভাগ জিনিস নির্ভর করে। তবে আমরা যদি শুরু থেকে আক্রমণের মেজাজে থাকি, তা হলে বিপক্ষ চাপে পড়বে”।  

বেঙ্গালুরু এফসি-র বিরুদ্ধে অসাধারণ একটা যুগলবন্দীতে গোল করে দলকে ফাইনালে তোলেন ডেভিড ও প্রবীর। ডানদিক থেকে প্রবীরের সেন্টারে বক্সের প্রায় মাঝখানে থাকা ডেভিড হেড করে গোল করেন। সেই অসাধারণ গোল নিয়ে অস্ট্রেলীয় তারকা বলেন, “গত ম্যাচে শেষ গোলটা যে ভাবে হয়েছিল, সে রকম সিচুয়েশন আমরা অনুশীলনের সময় প্র্যাকটিস করি। ওই সময়ে আমার আশেপাশে অনেকটা জায়গা ছিল। গোলের সামনে তখন বরং বেশি ভিড় ছিল। রয় গোলের সামনে চলে গিয়েছিল বলে আমি পিছনে রয়ে যাই। ওই অবস্থায় প্রবীর সেন্টার করে আমাকে। তখন যদি একটা বাইসাইকেল কিকের চেষ্টা করতাম, তা হলে হয়তো সুযোগটা নষ্ট হত। বলটা গতিতে আসছিল বলে আমি মাথা দিয়ে শুধু তা গোলের দিকে ঘুরিয়ে দিই। তাতে আর বাড়তি গতি যোগ করার চেষ্টা করিনি। কারণ, বলে এমনিতেই বেশ গতি ছিল”।  

আর প্রবীর সেই গোল নিয়ে বলেন, “ওদের (বেঙ্গালুরু) ডিফেন্ডাররা লম্বা, গোলকিপার লম্বা। তাই আমাদের পরিকল্পনাই ছিল গোলের কাছ থেকে গ্রাউন্ড শট নেব প্রথম পোস্টে। প্রথমার্ধে পরপর কয়েকটা সে রকম চেষ্টা করার পরে ওরা আমাদের পরিকল্পনাটা ধরে ফেলে। তাই ওরা বারবার প্রথম পোস্ট ব্লক করে দিচ্ছিল। তখন আমার মাথায় আসে আমি যদি কাট ব্যাক করে বল পিছনে রাখতে পারি, তা হলে কাজ হতে পারে। ওই গোলটার ক্ষেত্রে প্রথমে উইলিয়ামসের পাশে ওদের এক স্টপার ছিল। যখন আমি বলটা লাইনের দিকে নিয়ে যাই, তখন ও উইলিয়ামসকে ছেড়ে প্রথম পোস্ট কভার করতে চলে যায়। ওটা দেখেই আমি উইলিয়ামসকে কাট ব্যাক করে বলটা দিই আর ও গোল করে দেয়। পরিকল্পনায় এই পরিবর্তনটার জন্যই গোলটা পাই আমরা”।

তবে এখন আর সেমিফাইনালে সাফল্যের কথা মনে রাখতে চান না প্রবীর বা ডেভিড কেউই। প্রবীর বলছেন, “সেমিফাইনালের কথা ভুলে গেছি। এ বার সামনে ফাইনাল। তার পরিকল্পনা কোচ তৈরি করছেন। মন দিয়ে ফাইনাল ম্যাচের জন্য প্রস্তুতি নিতে চাই”। বিপক্ষ সম্পর্কে ডেভিডের বক্তব্য, “ওদের আগের ম্যাচগুলো  দেখে মনে হয়েছে, ওরা যখন বেশি উত্তেজিত হয়ে পড়ে, তখন ওদের অনেক বেশি খেলোয়াড় ওপরের দিকে উঠে যায়। ফাইনালেও সে রকম হলে আমরা কাউন্টার অ্যাটাকের সুযোগ পেয়ে যাব। দুই দলের কাছেই ম্যাচটা কঠিন হবে। কারণ, দুই দলই যোগ্য দল হিসেবে ফাইনালে উঠেছে। তবে চেন্নাইন নিয়ে বেশি কথা বলব না। কারণ, নিজেদের দিকে মনোনিবেশ করাই ভাল। আমাদের ভাল দল হিসেবে মাঠে নামতে হবে এই ম্যাচে”।

একদিকে আত্মবিশ্বাস, অন্য দিকে হোমওয়ার্ক। নিজেদের দক্ষতা ও ফর্ম তো রয়েছেই। সব নিয়ে শনিবার ফতোরদায় হিরো আইএসএল ফাইনালে বিপক্ষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য প্রস্তুত এটিকে শিবির।