২০১৭-১৮ মরশুমের ব্যর্থতার জ্বালা ভুলে নতুন মরশুমে নতুন লক্ষ্য নিয়ে দল গোছায় এটিকে৷ ভাল দেশীয় ফুটবলার বাছার দায়িত্ব দেওয়া হয় মোহনবাগানকে আই লিগ দেওয়া কোচ সঞ্জয় সেনকে। সেই মতো তিনি একের পর এক তারকা ফুটবলারকে সই করিয়ে চমক দিতে থাকেন। তালিকায় প্রণয় হালদার, কেভিন লোবো, বলবন্ত সিংদের মতো ভারতীয় ফুটবলে সাড়া জাগানো ফুটবলার।

কোচের আসনে বসানো হয় ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডের প্রাক্তন ফুটবলার স্টিভ কপেলকে। ফুটবলারের পাশাপাশি কোচ হিসাবেও যাঁর দারুণ খ্যাতি। কেরালা ব্লাস্টার্সের কোচ হয়েই যিনি ফাইনালে তুলেছিলেন দলকে। তাঁর কোচিং দক্ষতায় মুগ্ধ হয়ে পরের বছরই তাঁকে কোচ করে নেয় জামশেদপুর এফসি। সেই স্টিভ কপেল এবার এটিকে'র দায়িত্বে। তাঁর ক্ষুরধার মস্তিষ্কে আস্থা রাখল দু'বারের চ্যাম্পিয়ন দলের টিম ম্যানেজমেন্ট। কিন্তু শুরুটা খারাপ করে বসল এটিকে। ঘরের মাঠে পরপর দুটো ম্যাচে হার। চারদিকে সমালোচনার ঝড়। কিন্তু এটিকে কোচের মুখে ঘুরে দাঁড়ানোর অঙ্গীকার। জানিয়ে দিলেন, লম্বা লিগে আমরা ফিরে আসবই। যেমন কথা তেমন কাজ। দুর্দান্তভাবে ঘুরে দাঁড়াল স্টিভ কপেলের দল। পরের তিনটে ম্যাচে দুটো জয় একটা ড্র।

গোটা লিগ জুড়ে উত্থানপতনের মধ্যে দিয়ে এগিয়ে চলল স্টিভ কপেলের দল। লম্বা বিরতিতে যাওয়ার আগে এটিকে থাকল লিগ টেবিলের ৬ নম্বরে। ১২ ম্যাচে পয়েন্ট ১৬। তবে এটিকের কি এতটা পিছনে থাকার কথা ছিল? উত্তর, অবশ্যই 'না'। কাগজে কলমে শক্তিশালী আক্রমণ হলেও ভোগাল গোলখরা। কালু উচের চোট এক বড়সড় ধাক্কা হয়ে সামনে এল। সেই সঙ্গে এভার্টন, বলবন্ত গোল না পাওয়াও দলকে ভোগাল। বাড়তি চাপ গিয়ে পড়ল লাংজারোতির ওপর। এবং সে চাপ তিনি দারুণভাবে সামলালেন। তবে ফুটবলে সব ম্যাচ একক দক্ষতায় জেতা যায় না। 

কালু উচে চোট পাওয়ার পর আলফারোকে সই করানো হল। কিন্তু প্রথম ট্রেনিংয়ের পরেই তিনিও চোট পেয়ে ছিটকে গেলেন। পরিবর্ত হিসাবে অস্ট্রেলিয়া থেকে আনা হল এলি বাবালজে-কে। কিন্তু তাঁকেও ছাড়তে হল। এভাবেই খারাপ সময়ের মধ্যে যেতে হয়েছে স্টিভ কপেল এবং তাঁর দলকে। তার মধ্যেও কয়েক ম্যাচ পর বিকে এসে রক্ষণে ভরসা জোগালেন। নজর কাড়লেন তরুণ প্রতিভা কোমল থাটাল।

দ্বিতীয় পর্ব শুরুর আগে একটাই প্রশ্ন ঘোরাফেরা করছিল সমর্থকদের মনে, এটিকে কি পারবে শেষ চারের টিকিট কালেক্ট করতে? দু'বারের চ্যাম্পিয়নরা কিন্তু মরিয়া। তার প্রমাণ ট্রান্সফার উইন্ডোতে দুই গুরুত্বপূর্ণ ফুটবলারকে সই করানো। দিল্লী ডায়নামোস থেকে প্রীতম কোটালকে তুলে আনা এবং বেঙ্গালুরুর হয়ে নজরকাড়া ফুটবল খেলা এডু গার্সিয়াকে সই করানো- কলকাতার দল বুঝিয়ে দিল কঠিন লড়াইয়ের জন্য নিজেদের ভালমতোই গুছিয়ে নিচ্ছে তারা। সঙ্গে যোগ করতে হবে কোচ স্টিভ কপেলের ইতিবাচক চিন্তাধারা এবং হাল না ছাড়া মনোভাবের কথা। 

দ্বিতীয় পর্বে দারুণ শুরু করল কলকাতার দল। প্রথম ম্যাচেই গোল এডু গার্সিয়ার। কেরালা ব্লাস্টার্সের বিরুদ্ধে শেষ মুহূর্তে গোল হজম করে জয় হাতছাড়া হয়। পরের ম্যাচে জামশেদপুরের বিরুদ্ধে জয়। তার পরের ম্যাচেই পুনে সিটির বিরুদ্ধে ২-২ গোলে ড্র। প্লেঅফের আশা তখন উজ্জ্বল  হচ্ছে। সমর্থকরা আশায় বুক বাঁধছেন।

ঠিক তখনই আবারও ঘটে গেল বিপত্তি। গার্সিয়া-লাংজা জুটি যখন বিপক্ষের ত্রাস হয়ে উঠেছে, ঠিক তখনই চোট পেয়ে বসলেন লাংজারোতি। মাঠে এডু একা হয়ে পড়লেন। চোট সারিয়ে এলেও নিজের ফর্মে ফিরতে পারলেন না কালু উচে। সেই সঙ্গে ডিফেন্স আলগা হয়ে গেল প্রণয়ের চোটে। গোয়া এবং মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে পরপর দু'ম্যাচে হেরে প্লেঅফের আশা গেল শেষ হয়ে। ডিফেন্সের অভাবই প্রকট হল সবচেয়ে বেশি।

প্লে-অফের আশা না থাকলেও অনেক মোটিভেশন নিয়েই শেষ ম্যাচে মাঠে নামলেন স্টিভ কপেলের ছেলেরা। ঘরের মাঠে জিতে সম্মান রাখা এবং সুপার কাপে সরাসরি এন্ট্রি। জিতে সেই লক্ষ্য পূরণ হল। আর বাড়তি প্রাপ্তিযোগ তরুণ অঙ্কিত মুখার্জীর উত্থান। তাঁর ডেবিউ গোলেই যে জয় এল। 

তবে একটা কথা বলতেই হচ্ছে। গুরুত্বপূর্ণ ফুটবলাররা বারবার চোটের কবলে না পড়লে ৬ নম্বর নয়, হয়ত প্রথম চারে থেকেই লিগ পর্যায়ের খেলা শেষ করত এটিকে। এবং প্লেঅফ থেকে আরও দূর এগোতে পারত। কিন্তু ভাগ্য কেড়ে নিল সাফল্যের অনেকটাই ভাগ। কী আর করা যাবে! এটাও খেলার অংশ। এই শিক্ষা নিয়েই সামনে তাকাতে হবে। স্বপ্ন দেখতে হবে পরের মরশুমের।