তাঁদের প্রিয় দল হিরো ইন্ডিয়ান সুপার লিগে (আইএসএল) নামলে কয়েক লক্ষ মোহনবাগান সমর্থকের স্বপ্ন পূরণ হবে বলে মনে করেন  হোসে রামিরেজ ব্যারেটো। ঐতিহ্যবাহী মোহনবাগান তিনবারের আইএসএল চ্যাম্পিয়ন এটিকে-র সঙ্গে হাত মিলিয়ে আসন্ন হিরো আইএসএলে নামতে চলেছে। এই ঐতিহাসিক পদক্ষেপ নিয়ে ব্যারেটোর ধারণা এ রকমই।

মোহনবাগানের ইতিহাসে অন্যতম সেরা বিদেশী ফুটবলার ব্রাজিলের ব্যারেটো দুই দফায় দীর্ঘ ১১ বছর খেলেছেন সবুজ-মেরুণ জার্সি গায়ে। মোহনবাগান সমর্থকদের নয়নের মণি ছিলেন তিনি। সেই ব্যারেটো মোহনবাগানের নাম বদলে এটিকে মোহনবাগান হওয়ায় বেশ খুশি। খুশি সমর্থকদের জন্যও। হিরো আইএসএলের প্রতিনিধির সঙ্গে এক ভার্চুয়াল আড্ডায় তিনি বলেন, “মোহনবাগান সমর্থকেরা বহু বছর ধরেই আইএসএলে খেলার স্বপ্ন দেখছেন। এ বার তাদের সেই স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে। (এটিকে-র সঙ্গে হাত না মিলিয়ে) শুধু মোহনবাগান হিসেবে আইএসএলে নামলে হয়তো এই লিগের গতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে ওদের অনেক সময় লেগে যেত। কিন্তু এটিকে-র সঙ্গে হাত মিলিয়ে মাঠে নামার ফলে সেই সমস্যা হবে না। আইএসএলের গতির সঙ্গে এটিকে যথেষ্ট ভাল ভাবে পরিচিত। কারণ, ওরা ছ’বছর ধরে এই লিগে খেলছে। তাই ওদের হাত ধরে এই লিগে নামার সিদ্ধান্তটা একেবারে সঠিক বলেই আমার বিশ্বাস। ওরা সঠিক সময়ে সঠিক দলের সঙ্গে হাত মেলানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সফল হওয়ার সব রকম উপাদান এই দলের রয়েছে”।

১৩১ বছর প্রাচীন এই ক্লাবের ঐতিহ্য ধরে রাখতে তাদের জার্সির রঙ ও প্রতীক রেখে দেওয়া হলেও ক্লাবের নামের সঙ্গে এটিকে-র নাম জোড়া হয়েছে বলে কিছু মোহনবাগান সমর্থক ক্ষুণ্ণ। তবে ৪৩ বছর বয়সি ব্যারেটো এর মধ্যে নেতিবাচক কিছু দেখতে চান না। তিনি বলেন, “প্রতীক ও জার্সিং রঙ একই থাকায় আমি খুব স্বস্তি পেয়েছি। কিন্তু এটিকে-র নাম আগে থাকাটা মোটেই ক্ষতিকর কিছু নয়। আমরা, সমর্থকেরা ক্লাবের প্রতীক ও জার্সির রঙের ব্যাপারেই বেশি আবেগপ্রবণ। এটিকে মোহনবাগানের বোর্ড অফ ডিরেক্টর্সের এই সিদ্ধান্তে আমরা খুশি। আসলে মোহনবাগানকে অন্য রঙের জার্সিতে খেলতে দেখার কথা সমর্থকেরা ভাবতেই পারেন না। এটা ওদের পক্ষে বেশ কঠিন। প্রাক্তন মোহনবাগানি ও একজন সমর্থক হিসেবে আমি খুব খুশি। মোহনবাগান কর্তারা একটা দারুন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। দুই বড় দল হাত মিলিয়ে আইএসএলে একটা বড় শক্তি তৈরি হতে চলেছে”।

গত মরশুমে এক দিকে আইএসএলে চ্যাম্পিয়ন হয় এটিকে এফসি। অন্য দিকে, আই লিগ চ্যাম্পিয়ন হয় মোহনবাগান। দুই সেরা ক্লাব হাত মিলিয়ে নামায় আইএসএল আরও জমে উঠবে বলেই মনে করেন ব্যারেটো, যাঁকে ভালবেসে মোহনবাগান সমর্থকেরা অনেকে ‘সবুজ তোতা’ বলে ডাকতেন। বলেন, “আইএসএল রীতিমতো জমে যাবে মনে হচ্ছে। সবার নজর থাকবে এই দলটার ওপরে। শুধু ভারতে নয়, সারা বিশ্বে মোহনবাগান সমর্থকেরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছেন। আমার মতো তাঁরা সবাই যথেষ্ট উত্তেজিত এই খবরে। এটিকে মোহনবাগানের গতিময় ফুটবল দেখার অপেক্ষায় নিশ্চয়ই থাকবেন সবাই। আমার তো মনে হয় আইএসএলের একটা বড় সম্পদ হয়ে উঠতে চলেছে এই দলটা”।

মোহনবাগানের হয়ে প্রথম দফায় (১৯৯৯-২০০৪) পাঁচটি মরশুমে  ১৫৬ গোল ও দ্বিতীয় দফায় (২০০৬-২০১২) ছ’টি মরশুমে ১৫২ গোল করা এই ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তি ফরোয়ার্ড মোহনবাগান সমর্থকদের হৃদয়ে যে ভাবে জায়গা করে নিয়েছেন, এ বার রয় কৃষ্ণা, ডেভিড উইলিয়ামসরা প্রত্যাশার চাপ সামলে সেই জায়গা নিতে পারবেন কি না, সেটা একটা বড় প্রশ্ন। তবে ব্যারেটো আশাবাদী। তিনি বলেন, “এটা খেলোয়াড়রা পছন্দ করে। মানুষ আমাদের ভালবাসুক, মাথায় করে রাখুক, এটা কে না চায়? এটিকে তারকারা এ বার অন্য রকম পরিস্থিতিতে পড়বে। গ্যালারিতে যাঁরা থাকবেন, তাঁরা শুধু তাঁদের ভালই বাসবে না, পুজোও করবেন। মহাতারকা হয়ে ওঠার সুযোগ থাকবে তাঁদের সামনে। সমর্থকদের এই আবেগ, পাগলামি কলকাতা ছাড়া আর কোথাও দেখা যায় না। কোচ মিস্টার হাবাস ও তাঁর টেকনিকাল স্টাফ এ বার এই পরিবর্তনটা অনুভব করতে পারবেন”।

শুধু মাঠের মধ্যে নয়, মাঠের বাইরেও এটিকে মোহনবাগান দুরন্ত গতিতে ফুটবলকে এগিয়ে নিয়ে যাক, এমনই চান ব্যারেটো। কী ভাবে? তাঁর বক্তব্য, “এটিকে মোহনবাগান কর্তাদের কাছে আমার অনুরোধ, তৃণমূল স্তর থেকে ফুটবলার গড়ার জন্য ও যুব ফুটবলের উন্নতির জন্য যত বিনিয়োগ দরকার, তা আপনারা করুন। বাংলার ফুটবলে এটা খুব দরকার। ভবিষ্যতে যাতে বাংলা থেকে প্রচুর ফুটবলার উঠে আসে”।  

দেশের দুই বড় ফুটবল শক্তির সংযুক্তিকরণের ইতিবাচক প্রভাব ভারতীয় ফুটবলেও পড়বে বলে বিশ্বাস ব্রাজিলীয় তারকার। বলেন, “এই কম্বিনেশনটা দুরন্ত। দুই শক্তির মিলন। এতে ভারতীয় ফুটবল দারুণ ভাবে উপকৃত হবে। মোহনবাগানের লক্ষ লক্ষ সমর্থক এ বার এটিকে-কের জন্যও গলা ফাটাবে। আর এটিকে-র শক্তিকে সঙ্গে পাবে মোহনবাগান। ভারতীয় ফুটবলে সম্পুর্ণ অন্য রকম একটা ছবি দেখা যাবে এ বার”।

মোহনবাগানের পরে এ বার ভারতীয় ফুটবলপ্রেমীরা তাকিয়ে বাংলার আর এক ঐতিহ্যবাহী ফুটবল ক্লাব ইস্টবেঙ্গলের দিকে। সেই দিনের অপেক্ষায় রয়েছে লাল-হলুদ বাহিনীর সমর্থকেরা, যে দিন তাঁদের প্রিয় ক্লাবও হিরো আইএসএলে নামার ছাড়পত্র পেয়ে যাবে। ব্যারেটোও চান বাংলার দুই প্রধানই দেশের এক নম্বর ফুটবল লিগে খেলুক। এই প্রসঙ্গে তিনি মন্তব্য করেন, “কলকাতার দুই প্রধান মোহনবাগান ও ইস্টবেঙ্গল। মহমেডান স্পোর্টিংয়ের কথা ভুললেও চলবে না। স্বপ্ন ততদিন চোখে লেগে থাকে, যত দিন না তা পূরণ হচ্ছে। এটা মোহনবাগানের সময়। ইস্টবেঙ্গলও নিশ্চয়ই খুব চেষ্টা করছে আইএসএলে যোগ দেওয়ার। ওদেরও নিশ্চয়ই সেই দিন আসবে। তার পরেই তো আমরা ফের ডার্বি দেখতে পাব। কে বলতে পারে, ইস্টবেঙ্গলও হয়তো ভিন্ন কোনও নামে আইএসএলে নামবে। সেটা লিগের পক্ষে আরও বড় খুশির খবর নিয়ে আসবে। এটা অসম্ভব নয়। আমি আশাবাদী। আমার বিশ্বাস, সেই দিন দূরে নেই”।