একেই ফিফা ক্রমতালিকায় বাংলাদেশ ভারতের চেয়ে অনেক নিচে I তার ওপর এক মাস আগেই ভারত এশিয়াসেরা কাতারের বিরুদ্ধে তাদের মাঠে গিয়ে গোলশূন্য ড্র করে এসেছে I মূলত এই দুই কারণেই মঙ্গলবার কলকাতার যুবভারতী ক্রিড়াঙ্গনে বিশ্বকাপের বাছাই পর্বের ম্যাচে ভারতই ছিল ফেভারিট I কিন্তু বাংলাদেশকে হারাতে পারল না ভারত I কাতারের বিরুদ্ধে ড্রয়ের পর এ বার বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ১-১ ড্র করল তারা I

মঙ্গলবার বাংলাদেশের সাহসী পারফরম্যান্স ভারতকে চাপে ফেলে দিয়েছিল I ৪২ মিনিটে গোল খাওয়ার পরে ৮৮ মিনিটের মাথায় গোয়ার ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার আদিল খান চমৎকার হেডে গোল না করলে ভারতকে হয়তো ম্যাচ হেরেই মাঠ ছাড়তে হত I শেষ পর্যন্ত ফল ১-১ হল ঠিকই, কিন্তু বাংলাদেশ ৪২ মিনিটে গোল করার পরে সেই ব্যবধান বাড়ানোর সুবর্ণ সুযোগ হারায় আদিল খানেরই অসাধারণ গোল লাইন ক্লিয়ারেন্সের জন্য I মহম্মদ জীবনের লব গোল লাইন থেকে মাত্র এক ইঞ্চি দূরে থাকা অবস্থায় তা ক্লিয়ার করেন আদিল I স্বাভাবিক ভাবেই তাঁকেই ম্যাচের সেরার পুরস্কার দেওয়া হয় I

প্রথমার্ধের প্রায় পুরোটাই ভারতীয় দল আধিপত্য রেখে গেলেও গোলমুখে গিয়ে বারবার ব্যর্থ হচ্ছিলেন সুনীল ছেত্রীরা I ভারতীয় ফরোয়ার্ডরা গোলের মুখে যখনই যাচ্ছিলেন, তখনই গোলের সামনে লোক বাড়িয়ে দিয়ে তাঁদের চেষ্টা বারবার ব্যর্থ করে দিচ্ছিলেন বাংলাদেশীরা I প্রায় একই কৌশলে মাস খানেক আগে কাতারকেও আটেক দিয়েছিল ভারত I বেশ কিছু সহজ সুযোগ নষ্ট করেন ভারতীয়রা I

চতুর্থ মিনিটেই ছেত্রী সুবর্ণ সুযোগ পেয়ে গিয়েছিলেন বিপক্ষের গোলের সামনে I কিন্তু গোলরক্ষককে পরাস্ত করতে পারেননি I চোট সারিয়ে মাঠে ফিরে আসা রাহুল ভেকে অনিরুদ্ধ থাপার কর্নার থেকে আরও একটি সুযোগ পেয়ে যান I কিন্তু ২৮ বছর বয়সি বেঙ্গালুরু এফ সি-র ডিফেন্ডারের হেড ক্রসবারের ওপর দিয়ে চলে যায় I ২৪ মিনিটের মাথায় যখন বাংলাদেশের পেনাল্টি বক্সের ঠিক বাইরে থেকে ফ্রি কিকে ছেত্রী-মনবীরের যুগলবন্দিতে বল প্রায় গোলে ঢুকে পড়েছিল, তখন গ্যালারিতে ৬০ হাজারেরও বেশি সমর্থকদের হৃদস্পন্দন প্রায় বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছিল I কিন্তু সে যাত্রাও বেঁচে যায় বাংলাদেশ I

অবশেষে ৪২ মিনিটের মাথায় আসে সেই মুহূর্ত, যখন গ্যালারির সমস্ত ভারতীয় সমর্থককে স্তব্ধ করে দেন বাংলাদেশের ফরোয়ার্ড সাদ উদ্দিন I আগের দিনই সাংবাদিক বৈঠকে বাংলাদেশ অধিনায়ক জামাল ভুঁইয়া বলেছিলেন, “কাল ভারতীয় সমর্থকদের হৃদয় ভাঙতে চাই I” সেই জামালের ভাসানো শটেই হেড করে ভারতের জালে বল জড়িয়ে দেন সাদ I ভারতীয় গোলকিপার গুরপ্রীত সিং, যিনি কাতারের বিরুদ্ধে ম্যাচে নায়কের ভূমিকা পালন করেছিলেন, সেই তিনিই এ দিন অপ্রত্যাশিত ভাবে ব্যর্থ হন গোলের সামনে I জামালের দেওয়া বলটি তিনি ধরে ফেললে সাদ এ দিন গোলটি করার সুযোগই পেতেন না I কিন্তু গুরপ্রীতের ভুলকেই কাজে লাগিয়ে নেন তিনি I

দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকে ভারত পাল্টা জবাব দেওয়ার চেষ্টা করলেও ফের সেই একই সমস্যায় আক্রান্ত হচ্ছিল তারা I তবে পাল্টা আক্রমণে আগের তুলনায় বেশি তৎপরতা দেখা যায় বাংলাদেশের মধ্যে I ৫১ মিনিটের মাথায় ভারতের গোলমুখে মহম্মদ জীবনের সামনে শুধু গুরপ্রীত ছিলেন I কিন্তু ভারতীয় গোলরক্ষক সে বার আর কোনও ভুল করেননি I কিন্তু ভারতীয় রক্ষণকে সেই সময় বেশ দুর্বল দেখাচ্ছিল I এই সুযোগই কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশ ক্রমশ চাপ বাড়িয়ে যায় I ৭৩ মিনিটে আদিল জীবনের লব গোল লাইনের এক ইঞ্চি দূর থেকে না বাঁচালে তখনই ২-০ এগিয়ে যেত বাংলাদেশ I