মাত্র পাঁচ দিন আগে এফসি গোয়ার কাছে শোচনীয় হারের পর লিগের অন্যতম সেরা দলের বিরুদ্ধে ঘুরে দাঁড়ানো যে যথেষ্ট কৃতিত্বের, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই এটিকে মোহনবাগানের স্প্যানিশ কোচ হুয়ান ফেরান্দো-র। সেই ক্ষমতা যে তাঁদের আছে, শনিবার ঘরের মাঠে তা প্রমাণ করে দিতে পেরে খুবই খুশি কোচ। তাই দলের কোনও সমস্যা নিয়েই এই মুহূর্তে ভাবতে চান না। ফুটবলারদের এই অসাধারণ জয় উপভোগ করতে দিতে চান তিনি। অন্য দিকে, ম্যাচের নায়কের সন্মান পাওয়া শুভাশিস বোস তাঁর সাফল্যের কৃতিত্ব ভাগাভাগি করে নিতে চান দলের সঙ্গে। শনিবার হায়দরাবাদ এফসি-কে ১-০-য় হারানোর পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে শুভাশিস জানিয়ে দিলেন, তাঁরা যে গোল খাবেন না, তা ঠিক করেই মাঠে নেমেছিলেন এ দিন। দু’জনের সাংবাদিক বৈঠকের উল্লেখযোগ্য অংশ তুলে ধরা হল।  

হায়দরাবাদের মতো শক্তিশালী প্রতিপক্ষকে যখন হারাতে পারলেন, এ বার কি চ্যাম্পিয়ন হওয়ার কথা ভাবছেন?

আমি এখন বেঙ্গালুরু এফসি-র বিরুদ্ধে ম্যাচ ছাড়া কিছু ভাবছিই না। এখনই চূড়ান্ত লক্ষ্য নিয়ে ভাবার সময় আসেনি। এখন শুধু পরবর্তী লক্ষ্যস্থীর করার সময়। আজ এই পারফরম্যান্স খুবই জরুরি ছিল আমাদের খেলোয়াড়দের জন্য। কারণ, এত চোট-আঘাতের পরে দল হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করা খুবই জরুরি ছিল। আশিক, কিয়ান, হ্নামতের মতো খেলোয়াড়রা দলকে খুবই সাহায্য করে। ওরা খুবই পরিশ্রম করে। আমাদের পক্ষে এটা খুবই জরুরি। কাল থেকে আমাদের বেঙ্গালুরু ম্যাচের প্রস্তুতি শুরু হবে।

অনেক সুযোগ পাওয়া সত্ত্বেও আপনার ফুটবলাররা সেগুলো হাতছাড়া করছে। কী সমস্যা হচ্ছে ওদের?

আমরা ম্যাচটা জিতেছি, তিন পয়েন্ট অর্জন করেছি। এটাই তো যথেষ্ট। এটা আমার কাছে কোনও সমস্যা নয়। যদি কুড়িটা সুযোগ নষ্টের পরে ম্যাচটা হারতাম, তখন বলতাম এটা সমস্যা। আজ এই দুর্দান্ত জয়ের পরে ফুটবলারদের এটা বলা মোটেই ঠিক হবে না, তাদের কী ভুল হয়েছে। অসাধারণ দল আমাদের। হায়দরাবাদকে হারিয়েছি আমরা। ওরা গত তিন বছর ধরে একই ভাবে খেলে যাচ্ছে। ওগবেচে, ভিক্টর, চিয়ানিজ, বোরহাদের মতো খেলোয়াড়দের হারিয়েছি। এর পরে আমার কাছে এটা কোনও সমস্যাই নয়।

মনবীর সিং ও দিমিত্রিয়স পেট্রাটসের চোটের মাত্রা কী রকম?

গতকাল অনুশীলনে দিমি খুব একটা ভাল বোধ করছিল না। তাই ওর পক্ষে আজ মাঠে নামা খুবই কঠিন ছিল। দেখা যাক ও কত তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে ওঠে। মনবীরের স্ক্যান রিপোর্টে কী বেরোয়, তা দেখতে হবে। এখন আমাদের ছ-সাতজন গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়ের চোট রয়েছে। কয়েকজনের হালকা চোটও রয়েছে। যদিও এগুলো ফুটবলের অঙ্গ। তবে আমাদের দলে অনেক ভাল ভাল ফুটবলার আছে। মনবীর না পারলে কিয়ান, কিয়ান না পারলে ফারদিন, সেও না পারলে রাণা। ২৬ জনের দল আমাদের। সবাইকে নিয়েই আমি খুশি।

আশিক কুরুনিয়ান ও আশিস রাইকে কি এ বার থেকে বাঁ দিক দিয়েই বেশি খেলাবেন?

ওরা দুজনেই আমাদের হয়ে প্রথম মরশুমে খেলছে। তাই এখনই কিছু বলা সম্ভব নয়। তা ছাড়া হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে যতটা তীব্র পারফরম্যান্স করতে হয়েছে আমাদের, বেঙ্গালুরুর বিরুদ্ধে ততটা চাপ নাও থাকতে পারে। তাই কৌশল বদলাতে হতে পারে। ওদের বিভিন্ন পজিশনে খেলতে হবে। দ্রুত নতুন দলের সতীর্থদের সঙ্গে পুরোপুরি ভাবে মানিয়ে নেওয়াটা ওদের পক্ষে কঠিন। ওরা দলের সঙ্গে খুব বেশি ম্যাচ খেলার সুযোগও পায়নি। তবে দলের সবার মতো ওদের ওপরও আমার যথেষ্ট আস্থা আছে। ক্রমশ ওরা আরও উন্নতি করবে, দলের সঙ্গে আরও মানিয়ে নেবে এবং দলকে সাহায্য করতে পারবে।

এই বিশ্বকাপের মধ্যেও ২৬ হাজার সমর্থক আজ যুবভারতীর গ্যালারিতে আপনাদের জন্য গলা ফাটাতে এসেছিল। এই ব্যাপারে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?

আমরা সমর্থকদের জন্যই ফুটবল খেলি। এখানকার সমর্থকেরা তাদের প্রিয় দলের প্রতি খুবই আবেগপ্রবণ। তাই এত মানুষ আজ গ্যালারিতে ছিল। এটা খুবই ভাল। ফুটবলে সমর্থকেরা খুবই গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তাদের আনন্দ পাওয়াটা খুবই জরুরি।

সাংবাদিকদের শুভাশিস বোস যা  বললেন, তা এ রকম,

শেষ কুড়ি মিনিটে এটিকে মোহনবাগানকে সে ভাবে আক্রমণে উঠতে দেখা যায়নি। এটা কি প্রতিপক্ষের দেওয়া চাপের কারণে?

ম্যাচে আমাদের সব ফুটবলারের মানসিকতাই খুব ইতিবাচক ছিল। তাই এটা ঠিক করেই মাঠে নেমেছিলাম যে, এক গোল করলেও আজ ‘ক্লিন শিট’ রাখবই। লিস্টন থেকে শুরু করে গোলকিপার বিশাল, প্রত্যেকে নিজেদের একশো শতাংশ দিয়েছে আজ। এক গোল করার পরে ‘ক্লিন শিট’ রেখে ম্যাচটা যে জিততে পেরেছি, তা আমাদের দলের পক্ষে খুবই ভাল। পাঁচ গোল দিয়ে দু’গোল খাওয়ার চেয়ে এক গোল করে কোনও গোল না খেয়ে জেতাটা আমাদের রক্ষণের পক্ষে ভাল।

যুবভারতীতে পরপর দুটো ম্যাচে সেরা ফুটবলারের পুরস্কার পাওয়ার কথা কি কখনও স্বপ্নেও ভেবেছেন?

সব সময়ই নিজের সেরাটা দেওয়ার জ্ন্য মাঠে নামি। এর পুরো কৃতিত্ব দলের। দলের সবাই আমাকে খুবই সাহায্য করেছে। অন্যেরা সবাই সেরাটা দিয়েছে বলেই আমি নিজের সেরাটা দিতে পেরেছি। ম্যাচের সেরা হওয়ার চেয়ে দলের জয়টা আমার কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। লিগ টেবলের এক নম্বর জায়গাটা এবং চ্যাম্পিয়নের খেতাবটাই আমাদের লক্ষ্য।