মায়ানমারের বিরুদ্ধে জয় দিয়ে হিরো ত্রিদেশীয় টুর্নামেন্ট শুরু করল আয়োজক ভারত। ম্যাচের শেষে স্কোর ১-০ হলেও দুই দলই এ দিন ৯০ মিনিটে যা সুযোগ পেয়েছিল, তাতে ছবিটা পুরো অন্যরকম হত। ভারতীয় অধিনায়ক সুনীল ছেত্রী একাই প্রায় চারটি অবধারিত গোলের সুযোগ হাতছাড়া করেন। শেষ পর্যন্ত অনিরুদ্ধ থাপার গোলে জেতে ভারত।   

বুধবার ইম্ফলের খুমান লম্পক স্টেডিয়ামে প্রায় ৩০ হাজার সমর্থকের সামনে ভারত দাপুটে ফুটবল খেললেও মায়ানমারও প্রায়ই পাল্টা আক্রমণে উঠে ভারতীয় গোলকিপার অমরিন্দর সিং ও ডিফেন্ডারদের কড়া পরীক্ষার মুখে ফেলে। সারা ম্যাচে ভারত যেখানে ছ’টি গোলমুখী শট নেয়, সেখানে মায়ানমারের দু’টি শট ছিল গোলে। অমরিন্দর সিং দুর্দান্ত দক্ষতায় অবধারিত একাধিক গোল বাঁচাতে না পারলে ‘ক্লিন শিট’ রেখে মাঠ ছাড়া হত না ভারতের।

এ দিন শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ফুটবল শুরু করে ভারত। প্রতিপক্ষের এই আক্রমণাত্মক মেজাজ দেখে অবশ্য রক্ষণাত্মক ফুটবলে নিজেদের গুটিয়ে নেয়নি মায়ানমার। তারাও পাল্টা আক্রমণে উঠতে থাকে। ফলে ম্যাচ বেশ উপভোগ্য হয়ে ওঠে। তবে ভারতেরই দাপট ছিল বেশি। বল দখলের দিক থেকে সুনীল ছেত্রীর দলই এগিয়ে (৫৪-৪৬) এগিয়ে ছিল এদিন।

দশ মিনিটের মাথাতেই থাপার কাছ থেকে বল পেয়ে সুনীল গোলের সামনে থেকে হেড করেন, কিন্তু লক্ষ্যভ্রষ্ট হন। ১৮ মিনিটের মাথায় মায়ানমারের বক্সের মধ্যে সুনীলকে পিছন থেকে লাথি মারা হলেও রেফারি তাতে পেনাল্টির বাঁশি বাজাননি। ভারতীয়রা জোরালো আবেদন করলেও তিনি তাতে কর্ণপাত করেননি। অবশ্য রিপ্লে-তে দেখা যায় তাঁকে আঘাত করার সময় সুনীলের পায়ে বল ছিল না।

২৩ মিনিটের মাথায় দুর্দান্ত সেভ করেন অমরিন্দর। না হলে ম্যাচের প্রথম গোলটা তারাই পেয়ে যেত। ডানদিক থেকে ফিও উইন-এর বিপজ্জনক ক্রস ভারতের গোলে ঢোকার মুখে তা বিপদসীমার বাইরে বের করে অমরিন্দর। ৩৬ মিনিটের মাথায় বক্সের বাইরে থেকে ফের এক জোরালো গোলমুখী শট মারেন অউঙ থু। বারের নীচ দিয়ে সেই বল গোলে ঢোকার ঠিক আগের মুহূর্তে তালু দিয়ে বল গোলের ছাদে পাঠিয়ে দেন অমরিন্দর।

৩২ মিনিটের মাথায় ফের একটি সুবর্ণ সুযোগ পান সুনীল। লালিয়ানজুয়ালা ছাঙতে তাঁর মার্কারকে ধোঁকা দিয়ে বক্সের মধ্যে বল বাড়ান সুনীলের উদ্দেশ্যে। কিন্তু তিনি গোলের সামনে থেকে যে শট নেন, তা ছিল খুবই দুর্বল এবং মায়ানমার গোলকিপার নাইঙ তা অনায়াসে দখলে নিয়ে নেন। ৪২ মিনিটের মাথায় ক্লিয়ার করতে গিয়ে নিজের গোলের দিকেই হেড করে ফেলেছিলেন সুনীল। কিন্তু অমরিন্দর ফের একবার তাঁর অনবদ্য ক্ষিপ্রতা দিয়ে দলকে বাঁচান।

অবশেষে ম্যাচের একমাত্র গোলটি পান চেন্নাইন এফসি-র মিডফিল্ডার অনিরূদ্ধ থাপা। প্রথমার্ধের এক মিনিটের স্টপেজ টাইমে ডানদিক দিয়ে ওঠা রাহুল ভেকের ক্রস মায়ানমারের এক ডিফেন্ডার ক্লিয়ার করতে গিয়ে গোলের দিকে বল ঠেলে দেন। গোলের সামনে ছিলেন থাপা। তিনি সেই বল গোলে ঠেলে দিতে বিন্দুমাত্র ভুল করেননি (১-০)। এই নিয়ে ভারতের হয়ে চতুর্থ গোল করলেন ২৫ বছর বয়সী থাপা।

দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই গোল শোধের সুযোগ পেয়ে যায় মায়ানমার। তাদের অধিনায়ক লুইন গোলের ঠিকানা লেখা শট নিলেও অমরিন্দর ফের অনবদ্য সেভ করেন ও গোলমুখী বলে হাত ছুঁইয়ে তার গতিপথ বদলে দেন। দ্বিতীয়ার্ধের মাঝপথে খেলার গতি কমিয়ে নিয়ন্ত্রণ হাতে আনার চেষ্টা শুরু করে মায়ানমার। এই সময়ে মাঝমাঠে মহম্মদ ইয়াসিরের জায়গায় সুরেশ ওয়াংজাম নামেন।

এ দিন সুনীল ছেত্রীকে কড়া পাহাড়ায় রাখেন মায়ানমারের ডিফেন্ডাররা। ভারত অধিনায়ক বল পেলেই তৎপর হয়ে ওঠেন তাঁরা। ৬৭ মিনিটের মাথায় বিপিন চিপ করে সুনীলের কাছে বল পাঠান এবং ৭০ মিনিটের মাথায় বক্সের মাথা থেকে গোলে শট নেওয়ারও সুযোগ পান। কিন্তু দু’বারই তাঁর পা থেকে বল কেড়ে নেন ডিফেন্ডাররা। ৭৪ মিনিটের মাথায় তিনি প্রতিপক্ষের জালে বল জড়ালেও তার আগেই অফসাইডের পতাকা তুলে দেন সহকারী রেফারি।

ব্যবধান বাড়ানোর জন্য ৭১ মিনিটের মাথায় মনবীর সিং ও নাওরেম মহেশকে একসঙ্গে নামান ভারতীয় কোচ ইগর স্টিমাচ। মনবীর মাঠে নামার মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই ডানদিক থেকে একটি মাপা উড়ন্ত ক্রস দেন সুনীলের উদ্দেশ্যে। দূরের পোস্টের সামনে থাকা অধিনায়ক তাতে হেডও করেন। কিন্তু অবধারিত গোল বাঁচিয়ে দেন গোলকিপার নাইঙ।

ম্যাচের শেষ দশ মিনিটে মায়নমারের খেলোয়াড়দের বেশ ক্লান্ত দেখায়। তার আগে পর্যন্ত যে লড়াইটা করছিল তারা, শেষ দিকে তা আর ধরে রাখতে পারেনি। এই সময়ে নিজেদের দূর্গরক্ষার কাজেই বেশি মন দিতে দেখা যায় সাদা জার্সির খেলোড়দের।

এই সুযোগে ব্যবধান বাড়িয়ে নিতে পারত ভারত। ৮৬ মিনিটের মাথায় থাপার ফ্রি কিকে হেড করে সেই চেষ্টাও করে জাতীয় দলের হয়ে প্রথম মাঠে নামা মেহতাব সিং। কিন্তু লক্ষ্যভ্রষ্ট হন। ৮৭ মিনিটের মাথায় ফের বক্সের মধ্যে থাপাকে ফাউল করা হয়। তবে এ বারেও পেনাল্টি দেননি রেফারি।

এ দিন মেহতাব শুরু থেকে খেললেও বঙ্গসন্তান ঋত্বিক দাস জাতীয় দলের জার্সি গায়ে প্রথম মাঠে নামার সুযোগ পান নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার দু’মিনিট আগে। তবে তিনি ৯০ মিনিট হয়ে যাওয়ার পরেও আরও চার মিনিট অতিরিক্ত খেলার সুযোগ পান। ম্যাচের একেবারে শেষ মিনিটে ডানদিক থেকে হাওয়ায় ভাসানো মাপা ক্রস পাঠিয়ে ঋত্বিককে গোলের সুযোগও তৈরি করে দেন মনবীর। কিন্তু ঠিকমতো বল নিয়ন্ত্রণ করতে না পারায় সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে পারেননি তিনি। ভারতকে এক গোলে জয় নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়।         

ভারতীয় দল: অমরিন্দর সিং (গোল), রাহুল ভেকে, চিংলেনসানা সিং, আকাশ মিশ্র, মেহতাব সিং, মহম্মদ ইয়াসির, লালিয়ানজুয়ালা ছাঙতে (রোশন সিং), বিপিন সিং (নাওরেম মহেশ সিং), জিকসন সিং, অনিরুদ্ধ থাপা (ঋত্বিক দাস), সুনীল ছেত্রী