মাসখানেক আগে যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে যে ভাবে শেষ হয়েছিল এটিকে এফসি বনাম মুম্বই সিটি এফসি ম্যাচটি, তাতেই বোঝা যায় দুই দলের রেষারেষিটা কোন পর্যায়ে রয়েছে। শুধু ওই ম্যাচে কেন, দুই দলের মুখোমুখি হওয়ার ইতিহাসটাও সেই একই ইঙ্গিত দিচ্ছে। দু’পক্ষের মধ্যে ১৩টি ম্যাচে এ পর্যন্ত মুম্বই জিতেছে পাঁচটি ও কলকাতা চারটি। চারটি ম্যাচ ড্র হয়েছে। যার মধ্যে চলতি লিগের প্রথম ম্যাচে ড্র-ও অন্যতম। 

কলকাতায় সেই ম্যাচে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ১-১ থাকার পরে স্টপেজ টাইমের দ্বিতীয় মিনিটে গোল দিয়ে মুম্বইকে এগিয়ে দিয়েছিলেন কেভিন সার্জ। এবং স্টপেজ টাইমের শেষ মুহূর্তে গোল করে হার বাঁচান রয় কৃষ্ণা।  তাঁর ওই গোলের বাঁশির সঙ্গে সঙ্গেই রেফারি খেলা শেষের বাঁশিও বাজিয়ে দেন।  এমন নাটকীয় পরিণতি হতে পারে যে ম্যাচে, সেই ম্যাচের দুই যুযুধান দল ফের মুখোমুখি হলে যে আবার একটা হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে, এমন আশা করাটা বোধহয় অন্যায় হবে না।

শনিবার মুম্বই ফুটবল এরিনায় সে রকমই আর একটা লড়াই দেখার আশা করা যেতে পারে। দুই দলই এখন আগের চেয়ে অনেক ভাল জায়গায় আছে। ধারাবাহিক ভাবে ভাল খেলছে দুই দলই। এটিকে যেখানে ঘরের মাঠে বেঙ্গালুরু এফসি-র মতো দলকে হারিয়ে বছর শেষ করেছে, নর্থইস্ট এফসি-কে তিন গোলে হারিয়েছে, দশ ম্যাচে ১৮ পয়েন্ট পেয়ে তারা এখন লিগ টেবলের দুই নম্বরে। সেখানে মুম্বই সিটি এফসি শেষ ছ’ম্যাচে অপরাজিত থেকে ১২ পয়েন্ট অর্জন করেছে একটু অন্যরকম স্টাইলের ফুটবল খেলে। ভাল লড়াই তো হবেই।

দুই তারকা স্ট্রাইকার রয় কৃষ্ণা ও ডেভিড উইলিয়ামসকে সামনে রেখে দুই উইং দিয়ে প্রবীর দাস ও মাইকেল সুসাইরাজের আক্রমণে ওঠা এখন এটিকে-র নিজস্ব স্টাইল হয়ে উঠেছে। অবাক করার মতো ব্যাপার হল বিপক্ষের কোচেরা এটা জেনে দল নামিয়েও কিন্তু কিছু করতে পারছেন না। পাল্টা আক্রমণে এতটাই ক্ষিপ্র কলকাতার দলের মাঝমাঠ ও আক্রমণের খেলোয়াড়রা যে, তাঁদের সামলানো বেশ কঠিন । এ ছাড়াও অনেকটা কৃতিত্ব দেওয়া যেতে পারে এটিকে-র দুর্ভেদ্য ডিফেন্স ও গোলকিপার অরিন্দম ভট্টচার্যকেও। সবচেয়ে কম গোল খাওয়ার দিক থেকে তারা এখন বেঙ্গালুরু এফসি-র পরেই।

কিন্তু আনাস এডাথোডিকা, অগাস্টিন ইনিগেজ, কার্ল ম্যাকহিউ-রা চোট পেয়ে যাওয়ায় এই রক্ষণ বিভাগ নিয়েই চিন্তায় পড়েছিলেন দলের কোচ আন্তোনিও লোপেজ হাবাস। তবে ঠিক সময়ে স্পেন থেকে দুই ডিফেন্ডার ম্যান্ডি সোসা ও ভিক্টর মনজিলকে নিয়ে এসে তাঁর চিন্ত দূর করেছে এটিকে ম্যানেজমেন্ট। ম্যান্ডিকে মাঠে নামিয়ে খুশি হাবাস। ভিক্টরকে শনিবার গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে মাঠে নামান কি না, সেটাই দেখার। তবে সেরা দলই নামাতে চাইবেন কোচ। কারণ, তিনি নিজেই বলছেন, “এ বারই আসল পরীক্ষা শুরু হবে আমাদের। এই পর্বে আর কোনও ভুল করা যাবে না, নিজেদের সেরাটা খেলে যেতে হবে ধারাবাহিক ভাবে”।  ডিফেন্সটা ঠিকঠাক হয়ে গেলে এটিকে আরও দুর্ভেদ্য হয়ে উঠতে পারে।

এটিকে-র ডিফেন্স নিয়ে মুম্বই সিটি এফসি-র কোচ জর্জ কোস্টা বলেন, “ওরা সব ম্যাচ তিন ব্যাক নিয়ে খেলে না। কোনও কোনও ম্যাচে চার ব্যাক নিয়েও খেলে। দু’রকম পরিস্থিতির জন্যই আমাদের তৈরি থাকতে হবে। আমরা তৈরি”।   

লিগ পর্বে এক নম্বরে থাকলে সরাসরি এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগের বাছাই পর্বে খেলার সুযোগ পাওয়া যাবে। তাই হিরো আইএসএলে লিগ তালিকায় এক নম্বরে থাকাটাই মূল লক্ষ্য দলগুলির। দশ রাউন্ড হয়ে গিয়েছে প্রায় সব দলেরই (চেন্নাইন এফসি ও নর্থইস্ট ইউনাইটেড এফসি ছাড়া)। শেষ আট রাউন্ডে কেউ কাউকে এক ইঞ্চিও জমি ছাড়তে চাইবে না। বিশেষ করে ওপরের দিকের দলগুলি তো নয়ই। শনিবারের ম্যাচে সেটা বোধহয় ভাল ভাবেই টের পাওয়া যাবে।  বছরের শেষ সপ্তাহটা প্রায় পুরোটাই ফুটবল থেকে ছুটি পেয়ে এটিকে-র ফুটবলাররা এখন তরতাজা। হাবাসের দাবি, আসন্ন কঠিন লড়াইয়ের জন্য ৯০ শতাংশ তৈরি তাঁর দল।  সত্যিই কতটা প্রস্তুত তারা, তার ইঙ্গিত এই ম্যাচেই মিলতে পারে।

অন্য দিকে, মুম্বইয়ের সুবিধাটা হল দলের সবাই গোল করতে মরিয়া এবং সফলও। এটিকে যেমন গোল করার ব্যাপারে মূলত দুই বিদেশী স্ট্রাইকারের ওপর নির্ভরশীল, মুম্বই সিটি এফসি-র কিন্তু তা নয়। এ পর্যন্ত এই মরশুমে ১৩ জন ফুটবলার গোল পেয়েছেন জর্জ কোস্টার দলে। এমনকী  ডিফেন্ডাররাও উঠে গিয়ে চার-চারটি গোল করে এসেছেন। যেটুকু চিন্তা ছিল কোচের, তা ঘরের মাঠে সফল হওয়া নিয়ে। এই ব্যর্থতা তাঁকে গত ম্যাচের আগে পর্যন্ত খুঁচিয়ে যাচ্ছিল। গত মাস তথা বছরের শেষ আইএসএল ম্যাচে হায়দ্রাবাদ এফসি-কে ২-১ গোলে হারিয়ে যে ব্যর্থতার জাল ছিঁড়ে বেরিয়ে আসতে পেরেছে তারা। কিন্তু ঘরের মাঠে ১০ গোল খাওয়ার পরিসংখ্যান তাঁদের খুঁচিয়েই যাচ্ছে।  ১৭ গোল যেমন তারা দিয়েছে, ১৭ গোল খেয়েওছে। এই ডিফেন্স নিয়ে এটিকে-র ধারালো আক্রমণ কী ভাবে সামলাবে মুম্বই, সেটাই দেখার।

মাঝমাঠের অন্যতম সেরা অস্ত্র পর্তুগিজ তারকা পাওলো মাচাডোকে ছাড়াই দল নামাতে হবে কোস্টাকে। পুরো লিগ থেকেই ছিটকে গিয়েছেন মাচাডো। গত ম্যাচের পরেই তা জানতে পেরেছেন কোচ। এ ছাড়াও রাওলিন বোর্জেসকে ছাড়া মাঠে নামতে হয়েছিল গত ম্যাচে। যে ম্যাচে বাংলার ডিফেন্ডার সার্থক গলুই ৬৭ মিনিটে লাল কার্ড দেখে বেরিয়ে যান। দলের সবচেয়ে বেশি গোলের মালিক আমিন চেরমিতিকেও সেই ম্যাচে পায়নি। এই অবস্থায় রিজার্ভ বেঞ্চ থেকে একাধিক খেলোয়াড় নামিয়ে (সৌরভ দাস, রেইনিয়ে ফার্নান্ডেজ), প্রায় ২৫ মিনিট দশজনে খেলে হায়দ্রাবাদকে সামলানো গেলেও এটিকে-কে সামলানো যাবে কি না সেটাই প্রশ্ন।  শনিবার অবশ্য মাচাডো ও সার্থক ছাড়া সকলকেই পাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন মুম্বইয়ের কোচ কোস্টা।

সম্ভাব্য এটিকে একাদশ :  অরিন্দম ভট্টাচার্য (গোল), প্রীতম কোটাল, সালাম রঞ্জন সিং, প্রবীর দাস, সুমিত রথি, ম্যান্ডি সোসা, জয়েশ রানে, হাভিয়ে হার্নান্ডেজ, মাইকেল সুসাইরাজ, ডেভিড উইলিয়ামস, রয় কৃষ্ণা।  

সরাসরি সম্প্রচার :  মুম্বই সিটি এফসি বনাম এটিকে এফসি, শনিবার, ৪ জানুয়ারি, সন্ধ্যা ৭.৩০, মুম্বই থেকে সরাসরি স্টার স্পোর্টস নেটওয়ার্ক, হটস্টার এবং জিও টিভিতে