আগামী মরশুমের জন্য দলবদলে নেমে পড়ল এটিকে মোহনবাগান। গতবারের মতো এ বারও যে দল গোছানোর কাজটা ভাল ভাবেই শুরু করে দিয়েছে তারা, তা প্রথম ঘোষণাতেই বোঝাতে চাইছে গতবারের সেমিফাইনালিস্টরা।

এ দিন ক্লাবের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয় ডিফেন্ডার আশিস রাই ও উইঙ্গার আশিক কুরুনিয়ানকে। গতবারের হিরো আইএসএল চ্যাম্পিয়ন হায়দরাবাদ এফসি থেকে আশিসকে নিয়ে এসে পাঁচ বছরের জন্য সই করাল এটিকে মোহনবাগান। অন্য দিকে বেঙ্গালুরু এফসি থেকে নিয়ে আসা হল ২৫ বছর বয়সি এই ফুটবলারকে। তাঁর চুক্তির মেয়াদও পাঁচ বছর।

২০১৯-এর সেপ্টেম্বরে হায়দরাবাদ এফসি-তে যোগ দেন ২৩ বছর বয়সি সিকিমিজ ফুটবলার আশিস। হিরো আইএসএলে ১৪টি ম্যাচ খেলেছেন তিনি। গতবার তিনি হায়দরাবাদের রক্ষণে অন্যতম সেরা স্তম্ভ হয়ে ওঠেন। এ বার এটিকে মোহনবাগান রক্ষণে প্রীতম কোটাল, শুভাশিস বোস, সন্দেশ ঝিঙ্গনদের অভিজ্ঞতার সঙ্গে জুড়বে আশিসের তারুন্য ও ছটফটানি।

গতবার সেমিফাইনালে এটিকে মোহনবাগানকে দুই লেগেই হারায় হায়দরাবাদ। তাদের কাছেই হেরে টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে যায় তার আগের বারের রানার্স আপদের। তাই এ বার বোধহয় চ্যাম্পিয়নদের শিবির থেকেই প্রথম বাছাই তুলে নিয়ে কিছু একটা বার্তা দিতে চাইল সবুজ-মেরুন শিবির।

সোমবার দুপুরে যে ভিডিওর মাধ্যমে সোশ্যাল মিডিয়ায় আশিসের আগমনের খবর ছড়িয়ে দেওয়া হয়, তাতে তাঁকে বলতে শোনা যায়, “এটিকে মোহনবাগানের হয়ে মাঠে নামা আমার স্বপ্ন ছিল। এখন এটাই আমার ‘হোম’ আমি এই ঘরেরই ছেলে। সবাই জানে এটা কত বড় ক্লাব এবং এই ক্লাবের সমর্থকেরা কতটা আবেগপ্রবণ। এই ক্লাবে অনেক বড় বড় ফুটবলার, কিংবদন্তিরা খেলে গিয়েছেন। আমার স্বপ্ন, তাঁদের একজন হয়ে ওঠা এবং ওঁদের মধ্যে অন্যতম সেরা হয়ে ওঠা। দলের রক্ষণে সেরা হয়ে ওঠাই আমার স্বপ্ন”।

অন্য দিকে কেরালার মলপ্পুরম থেকে উঠে আসা মহম্মদ আশিক কুরুনিয়ান বেঙ্গালুরু এফসি থেকে আসছেন সবুজ-মেরুন শিবিরে। গত মরশুমে বেঙ্গালুরু এফসি-র হয়ে ১৩টি ম্যাচে খেলেন তিনি। জানুয়ারির শেষ দিকে এফসি গোয়ার বিরুদ্ধে ম্যাচে চোট পাওয়ার পরে ফিরে এসে শুধু একটি ম্যাচে খেলেছিলেন, এটিকে মোহনবাগানের বিরুদ্ধে। কলকাতার দলের ২-০-য় জেতা সেই ম্যাচে ৬৪ মিনিট খেলার পরে কোচ তাঁকে তুলে নেন।

হিরো আইএসএলে পাঁচটি মরশুম খেলা হয়ে গিয়েছে তাঁর। মোট ৬৫টি ম্যাচ খেলেছেন, পাঁচটি গোল করেছেন ও পাঁচটিতে অ্যাসিস্ট করেছেন। ২০১৬-১৭ মরশুমে স্পেনের ক্লাব এফসি ভিয়ারিয়েলেও খেলে এসেছেন। পুনে এফসি থেকে লোনে সেখানে গিয়েছিলেন। ফিরে এসে এফসি পুনে সিটিতে যোগ দেন ও সেখান থেকে বেঙ্গালুরুতে আসেন ২০১৯-এর অগাস্টে। তিন বছর পরে ফের দল বদলে এটিকে মোহনবাগানে আসছেন তিনি। 

ভারতীয় সিনিয়র দলের হয়ে তিনি প্রথম মাঠে নামেন ২০১৮-র জুনে, স্টিফেন কনস্টানটাইনের প্রশিক্ষণে। তার পর থেকে ভারতের হয়ে মোট ২৫টি ম্যাচ খেলেছেন, একটি গোল করেছেন ও ৫টি করিয়েছেন। কার্যকরী ফুটবলার হিসেবে পরিচিত আশিকের আসল জায়গা লেফট উইঙ্গার। তবে প্রয়োজনে রাইট উইংয়ে ও লেফট ব্যাক হিসেবেও খেলতে পারেন।    

নতুন শিবিরে যোগ দেওয়ার পরে আশিক বলেন, “ইউরোপে জুনিয়র স্তরে খেলার অভিজ্ঞতা আছে আমার। কলকাতার ফুটবলের পরিকাঠামোও দারুন। কলকাতায় খেলা যে কোনও ফটুবলারের স্বপ্ন। আর এটিকে মোহনবাগান তো দেশের সেরা ফুটবল ক্লাব। ফেরান্দোর মতো সফল কোচ রয়েছেন পরামর্শ দেওয়ার জন্য। কয়েক দিন আগে যুবভারতীতে খেলতে নেমে বুঝলাম এখানকার ফুটবলপ্রেমীদের আবেগ, আগ্রহ কতটা। আমার লক্ষ্য কোটি কোটি সবুজ-মেরুন সমর্থককে খুশি করা। দলকে এএফসি কাপ, আইএসএল ও ডুরান্ড কাপে চ্যাম্পিয়ন করা। নতুন জার্সি পরে মাঠে নামার অপেক্ষায় রইলাম”।   

অন্য দিকে, এ দিনই বেঙ্গালুরু এফসি-তে যোগ দেওয়ার প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করলেন এটিকে মোহনবাগানের প্রাক্তন উইং ব্যাক প্রবীর দাস। নিজের সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডলেও প্রোফাইল ছবি বদলে বেঙ্গালুরু এফসি-র জার্সি সহ ছবি পোস্ট করেন তিনি। পরে একটি আবেগপূর্ণ ভিডিও-ও প্রকাশ করেন প্রবীর। তাতে তিনি বলেন, “আমার দুঃসময়ে পাশে দাঁড়িয়েছিল মোহনবাগান ক্লাব। তাই এই ক্লাবের সঙ্গে আমার আবেগ জড়িয়ে রয়েছে। সে জন্যই এই ক্লাবকে আমি এত ভালবাসি। কোনও দিন এই ক্লাবকে ভুলতে পারব না। এই ক্লাব সব সময় আমার কাছে স্পেশ্যাল। নতুন ক্লাবে নিজের দুশো শতাংশ দেওয়ার চেষ্টা করব। এত ভালবাসা দেওয়ার জন্য সমর্থকদের অনেক ধন্যবাদ। সবাই বুঝিয়ে দিয়েছেন, এখনও ফুটবলে আমার গুরুত্ব আছে। আমি খুব গর্বিত। মাঠে ও মাঠের বাইরে অনেক মজা করতাম। সেই মুহূর্তগুলো মিস করব। নতুন ক্লাবে গিয়েও একই রকম থাকার চেষ্টা করব”। এটিকে মোহনবাগানের সতীর্থদের সই করা জার্সিও নিজের কাছে রেখে দিয়েছেন প্রবীর।