ভারতীয় ফুটবল দলকে একাধিক নতুন ও প্রতিভাবান খেলোয়াড় উপহার দেওয়ার জন্য হিরো আইএসএল-কে ধন্যবাদ জানিয়েছেন ভারতীয় দলের প্রধান কোচ ইগর স্টিমাচ। তাঁর মতে, “যে উদ্দেশ্য নিয়ে হিরো আইএসএলের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল, তা অনেকটাই সফল। এ বারের লিগ আমাদের একাধিক নতুন-তরতাজা প্রতিভা উপহার দিয়েছে। এ জন্য তাদের ধন্যবাদ”।

ভারতীয় দল নিয়ে আপাতত দুবাইয়ে রয়েছেন ক্রোয়েশিয়ার প্রাক্তন বিশ্বকাপার স্টিমাচ। চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে সেখানে ভারতীয় দলের দু’টি ফ্রেন্ডলি ম্যাচ খেলার কথা ওমান ও সংযুক্ত আরব আমিরশাহীর বিরুদ্ধে। ২৫ ও ২৯ মার্চ এই দু’টি ম্যাচের জন্য আপাতত প্রস্তুতি শিবির চলছে ভারতীয় শিবিরের, যেখানে ২৭ জন ফুটবলার রয়েছেন। সদ্যসমাপ্ত হিরো আইএসএল ৭-এর পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে অনেককেই এই দলে রেখেছেন স্টিমাচ। এটিকে মোহনবাগানের প্রীতম কোটাল, সন্দেশ ঝিঙ্গন ও মনবীর সিং এবং এসসি ইস্টবেঙ্গলের সার্থক গলুইকে এই দলে রেখেছেন তিনি। বাংলার গোলকিপার নর্থইস্ট ইউনাইটেড এফসি-র শুভাশিস রায়চৌধুরীও এই দলে রয়েছেন।

বৃহস্পতিবার সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের ইনস্টাগ্রাম লাইভে স্টিমাচ বলেন, “ভারতীয় দলে যারা ডাক পেয়েছে, তারা তাদের দক্ষতার ভিত্তিতেই ডাক পেয়েছে। এ বারের অসাধারণ হিরো আইএসএল মরশুমে তাদের পারফরম্যান্সের ভিত্তিতেই জাতীয় দলে ডাকা হয়েছে। অনেকেই ইউথ ডেভলপমেন্ট প্রোগ্রামে তৈরি হয়ে আসা খেলোয়াড়। অনেকে অনুর্ধ্ব ১৭ বিশ্বকাপ দলের। এই প্রকল্প (হিরো আইএসএল) যে আরও একবার যথেষ্ট সফল হয়েছে এবং ভারতীয় ফুটবলের ভবিষ্যৎকে যে আরও উজ্জ্বল করে তুলছে, সে জন্য আমি খুবই খুশি”।

ভারতীয় শিবিরের ২৭ জন খেলোয়াড়ের তালিকা দেখে এ দেশের ফুটবল মহলে অনেকে যেমন খুশি, তেমনই অনেকে অসন্তুষ্ট। একাধিক খেলোয়াড়ের যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও তাঁরা ডাক পাননি বলে বক্তব্য অনেকের। দল বাছাই পদ্ধতির ব্যাখ্যা দিয়ে স্টিমাচ এই লাইভ আড্ডায় বলেন, “এই দলের কয়েকজন খেলোয়াড় ইতিমধ্যেই প্রমাণ দিয়েছে যে, তারা আন্তর্জাতিক ফুটবলে খেলার যোগ্য। তাই সম্প্রতি কয়েকটা ম্যাচের খারাপ পারফরম্যান্সের জন্য তাদের দক্ষতার কথা মন থেকে মুছে ফেলা যায় না। তবে বেশির ভাগ খেলোয়াড়কেই এ বারের হিরো আইএসএলে পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে দলে নেওয়া হয়েছে। তারা প্রত্যেকেই এই সুযোগ অর্জন করেছে”।

ভারতীয় ফুটবল দল একটা পরিবারের মতো মনে করেন স্টিমাচ। তিনি বলেন, “আমাদের দলের প্রত্যেকে একসঙ্গে থাকি, একসঙ্গে নিঃশ্বাস নিই। আমরা একটা পরিবার। এখানে কারও কোনও কিছু নিয়ে ভয় পাওয়ার কোনও কারণ নেই। দু-একটা ভুলের জন্য কেউ এই দল থেকে বাদ যাবে না। কেউ যেন একই ভুল বারবার না করে, তা দেখার চেষ্টা করি আমরা। আমি আগেও বলেছি, আমাদের দলকে হারানো কঠিন। কারণ, আমরা খুব পরিশ্রম করি। বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে প্রমাণ হয়েছে যে, আমরা কিন্তু বেশি গোল খাই না”।

আসন্ন দু’টি ফ্রেন্ডলি ম্যাচ নিয়ে স্টিমাচ বেশ খুশি। তিনি মনে করেন ওমান ও সংযুক্ত আরব আমিরশাহীর মতো দলের বিরুদ্ধে খেলার সুযোগ পাওয়া বড় ব্যাপার। এই প্রসঙ্গে ৫৩ বছর বয়সি কোচ বলেন, “শুরু থেকেই বলে এসেছি যে কোনও সহজ প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে ফ্রেন্ডলি ম্যাচ আমি চাই না। আমাদের চেয়ে কঠিন দলের বিরুদ্ধে খেললে, উঁচু মানের ফুটবলারদের বিরুদ্ধে খেলতে পারলেই আমরা উন্নতি করতে পারব। সেই চেষ্টাই করছি। যখনই জানতে পারি যে আমাদের বিশ্বকাপ বাছাই পর্বের ম্যাচ জুন পর্যন্ত পিছিয়ে গিয়েছে, তখনই (এআইএফএফ-এর সহসচিব) অভিষেক যাদব ও (এআইএফএফ-এর সচিব) কুশল দাস ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এই দুটো ম্যাচের ব্যবস্থা করে ফেলেন। কাজটা মোটেই সোজা ছিল না। তবে আমরা করতে পেরেছি”।

জোড়া ফ্রেন্ডলির দুই প্রতিপক্ষকে নিয়ে ভারতীয় কোচ বলেন, “এশিয়ার অন্যতম দুই সেরা দলের বিরুদ্ধে খেলার সুযোগ পাওয়াটাই বড় ব্যাপার। এতে ভয়ের কিছু নেই। আমাদের মাঠে নেমে নিজেদের স্বাভাবিক ও সেরা খেলাটা খেলতে হবে। অনুশীলনে যা যা করি আমরা, সেগুলো ম্যাচেও করার চেষ্টা করতে হবে। স্বাধীন ভাবে খেলে দ্রুত ওঠানামা করতে হবে। বল পজেশনও যথাসম্ভব বেশি রাখার চেষ্টা করতে হবে ও নিজেদের ফুটবলটা উপভোগ করতে হবে। দলের ছেলেদের কাছ থেকে এটাই চাই আমি”।

এ বছর জুনে কাতার, বাংলাদেশ ও আফগানিস্তানের মতো দলের বিরুদ্ধে বিশ্বকাপের বাছাই পর্বের ম্যাচ খেলবে ভারত। তার আগে ও এই দুই ফ্রেন্ডলির পরে ভারতীয় দলকে নিয়ে স্টিমাচের পরিকল্পনা কী, তা জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, “এই পরিকল্পনা নিয়ে কাজ চলছে। কয়েক দিনের মধ্যেই পরবর্তী শিবিরগুলো নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়ে যাবে। ব্যাপারটা সোজা হবে না। কারণ, দেশের তিনটি ক্লাব এএফসি-র প্রতিযোগিতায় খেলবে। এফসি গোয়া, এটিকে মোহনবাগান ও বেঙ্গালুরু এফসি। পুরো এপ্রিল ও মে মাস জুড়ে এরা এএফসি কাপ ও এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগে খেলবে। তাই আমাদের কাজটা বেশ কঠিন। তবে অসম্ভব নয়। টেকনিক্যাল ডিপার্টমেন্টের সঙ্গে এই ব্যাপারে কথা বলতে হবে আমাকে। এপ্রিলের শেষ দিকে একটা শিবির করতে পারলে ভাল হয়। এটা ভারতে হলেই ভাল হয়। যাতে সমস্ত খেলোয়াড়কে পরখ করে দেখে নেওয়া যেতে পারে। যাতে ওরা বেসিক অ্যারোবিকগুলো করতে পারে”।