এএফসি কাপের গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচের আগে এটিকে মোহনবাগানের স্প্যাানিশ কোচ আন্তোনিও লোপেজ হাবাস জানিয়ে দিলেন, মঙ্গলবার বাংলাদেশের বসুন্ধরা কিংসের বিরুদ্ধে গোল না খাওয়ার সংকল্প নিয়ে নামবেন তাঁর দলের ছেলেরা। অবশ্য তার মানে যে পুরোপুরি রক্ষণাত্মক ফুটবল নয়, তা জানাতেও ভোলেননি তিনি।

মঙ্গলবার মালের ন্যাশনাল স্টেডিয়ামে এএফসি কাপ গ্রুপ ‘ডি’ (দক্ষিণাঞ্চল)-র দুই শীর্ষস্থানীয় দল মুখোমুখি হতে চলেছে। এই ম্যাচে যে দল জিতবে, তারাই সেপ্টেম্বরে ইন্টার জোনাল সেমিফাইনালে খেলার যোগ্যতা অর্জন করবে। এটিকে মোহনবাগান যেহেতু ছ’পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপের শীর্ষস্থানে রয়েছে এবং বসুন্ধরার চার পয়েন্ট,  তাই সবুজ- মেরুন শিবিরের পক্ষে ড্র করলেই যথেষ্ট। তাই আগে ঘর সামলে, রক্ষণ আঁটোসাঁটো করে তার পরে বিপক্ষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ার পরামর্শ দলকে দিচ্ছেন হাবাস।

হাবাসের সতর্কবার্তা

সোমবার তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “আমি জানি বসুন্ধরা খুব ভাল দল। ওরা বাংলাদেশের চ্যাম্পিয়ন। তাই ওদের শ্রদ্ধা করতেই হবে। আমাদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল গোল না খাওয়া। কোনও অবস্থাতেই গোল খাওয়া চলবে না এই ম্যাচে। তার মানে অবশ্য এই নয় যে, আমরা আক্রমণে উঠব না। আমাদের ব্যালান্স করে খেলতে হবে। এই ম্যাচটাই ঠিক করে দেবে, কারা নক-আউট পর্বে যাবে। তাই মাঠে আমাদের একশো শতাংশ দিতে হবে”।

কলকাতার দলকেই এই ম্যাচে ফেভারিট বলা হলেও হাবাস তা মানতে রাজি নন। তাঁর মতে, ফুটবলে ফেভারিট বলে কিছু হয় না। বলেন, “ফেভারিট নিয়ে কোনও কথা বলতে রাজি নই আমি। কারণ, ফুটবল জটিলতায় ভরা। আমাদের দলে পেশাদার ফুটবলাররা রয়েছে। মাঠে তারা যথেষ্ট শৃঙ্খলাবদ্ধ ও কৌশলী। প্রত্যেক দিন ওরা কিছু না কিছু শেখে। দলের ছেলেদের পারফরম্যান্সে আমি খুশি”।

এটিকে মোহনবাগানের চেয়ে অবশ্য বেশি চাপে রয়েছে বাংলাদেশের প্রিমিয়ার লিগ চ্যাম্পিয়ন বসুন্ধরা কিংস। কারণ, এটিকে মোহনবাগানের মতো তাদের এই ম্যাচ ড্র করলে চলবে না, বরং জিততেই হবে। আর পরপর দু’টি ম্যাচে জেতা সবুজ- মেরুন বাহিনীকে হারানো মোটেই সোজা কাজ নয়।

প্রতিপক্ষের প্রশংসা শোনা গেল বসুন্ধরার কোচ অস্কার ব্রুজোনের মুখে।  হাবাসের দেশেরই মানুষ ব্রুজোন ব্যক্তিগত ভাবেও চেনেন বিপক্ষের কোচকে। বলেন, “ওদের প্রশংসা করতেই হবে। ওরা নিখুঁত পরিকল্পনা তৈরি করে এবং তা কার্যকর করার মতো যোগ্য খেলোয়াড়ও ওদের দলে রয়েছে। আন্তোনিও লোপেজ (হাবাস) স্পেনে আমার সতীর্থ ছিলেন। উনিও আমাকে চেনেন। দেখা যাক কাল কী হয়। দুটো ভাল দলের সামনে যোগ্যতা অর্জন করার সুযোগ রয়েছে। একটি ক্লাবই এগোতে পারবে। আমরাই কাল জিতে সেই ক্লাব হতে চাই”।

ব্রুজোনের আত্মবিশ্বাস

বাংলাদেশের চ্যাম্পিয়নদের অবশ্য হারের অভ্যাস নেই। তাঁদের দেশের লিগে ২১টি ম্যাচের মধ্যে মাত্র একটি ম্যাচে হেরেছে বসুন্ধরা। চলতি এএফসি কাপেও দু’টির একটি ম্যাচেও হারেনি তারা। একটি জয় ও একটি ড্র পেয়েছে তারা। এএফসি তাদের কোচ ব্রুজোনের বিশ্বাস, এই ধারাবাহিকতা এই ম্যাচেও বজায় থাকবে।

সোমবার তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “ম্যাচটা সমানে সমানে হতে চলেছে বলেই মনে হয়। পরের রাউন্ডে খেলার যোগ্যতা অর্জন করার জন্য এই দুই ক্লাব ছাড়া আর কেউ নেই এই গ্রুপে। ৯০ মিনিট হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। যদি আমরা স্মার্ট হতে পারি ও সুযোগের অপেক্ষায় থাকতে পারি, তা হলে আমরা কাল তিন পয়েন্ট পাব। এই মরশুমে আমরা একটামাত্র ম্যাচ হেরেছি। এটাই আমাদের আত্মবিশ্বাসের কারণ। কাল দ্বিতীয় হার আসবে বলে মনে হয় না আমার। মানসিক ভাবে আমরা কতটা সবল, তার প্রমাণ পেয়ে যাবেন”।

এই ম্যাচে জয় ছাড়া কোনও উপায় নেই তাদের। তাই আক্রমণাত্মক ফুটবলই খেলবেন তাঁর দলের ছেলেরা, এমনই আশ্বাস দিলেন ব্রুজোন। বলেন, “বেঙ্গালুরুর সঙ্গে আমাদের ড্র করলেও চলত। কিন্তু এই ম্যাচে পরিস্থিতি সম্পূর্ণ অন্য রকম। এ বার জয় ছাড়া কোনও উপায় নেই আমাদের। এটিকে মোহনবাগান কিছুটা এগিয়ে থেকেই নামবে। আমাদের কাল জিততে হলে একটু বেশি আক্রমণাত্মক হতেই হবে”।