মঙ্গলবার ফতোরদায় ফয়সালার ম্যাচ। কারা খেলবে ১৩ তারিখের হিরো আইএসএল ফাইনালে। এটিকে মোহনবাগান, না নর্থইস্ট ইউনাইটেড। গত শনিবার তাদের মধ্যে সেমিফাইনালের প্রথম লেগে ১-১ ড্র হওয়ার পর এই ম্যাচটাই এখন ‘ডু অর ডাই’ ম্যাচ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফয়সালা হবেই এই ম্যাচে। কারণ, নির্ধারিত সময়ে অমীমাংসিত থাকলে ম্যাচ গড়াবে অতিরিক্ত সময়ে এবং তাতেও নিষ্পত্তি না হলেও পেনাল্টি শুট আউটে ঠিক হবে ফাইনালে খেলবে কারা।

গত ম্যাচের চেয়ে এই ম্যাচে চ্যালেঞ্জটা দুই দলের কাছেই অনেক বেশি কঠিন। সেই চ্যালেঞ্জ নেওয়ার জন্য কারা কতটা প্রস্তুত, কোন দল কী অবস্থায় রয়েছে, তা জেনে নেওয়া যাক দুই দলের কোচের ভার্চুয়াল সাংবাদিক বৈঠক থেকে।  

আন্তোনিও লোপেজ হাবাস (প্রধান কোচ, এটিকে মোহনবাগান)

মরণ-বাঁচন ম্যাচের আগে দল চাপে?

কোনও চাপ নেই। এটা একটা বড় সুযোগ। যে সুযোগ হয়তো আর কখনও আসবে না। আমাদের ম্যাচটা উপভোগ করতে হবে। নিজেদের সেরাটা দিতে হবে এই সেমিফাইনাল ও (সম্ভব হলে) ফাইনালে। এর পরেও জীবন চলবে, থেমে যাবে না। মাঠে আমাদের ব্যক্তিত্ব, শৃঙ্খলা, কৌশল এগুলো বজায় রাখতে হবে। 

মঙ্গলবারের ম্যাচে কৌশল কী?

আমাদের কৌশল হল মাথা ঠাণ্ডা রেখে তীব্রতা বজায় রাখো ও ম্যাচটা জেতার চেষ্টা করো। মাথা ঠাণ্ডা রেখে খেলে ফাইনালে ওঠাটাই আমাদের কাছে এখন বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এই পর্যায়ে দলগুলোর মধ্যে ফারাক খুব সামান্যই। কারণ এগুলোই সেরা দল। ছোট্ট ভুলেই ম্যাচের ফারাক তৈরি হয়ে যেতে পারে। আমাদের আগে নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। তার পরে গোলের চেষ্টা করতে হবে। বরাবর এটাই আমাদের নীতি।

লিগে এগিয়ে ছিলেন, এটা প্লাস পয়েন্ট?

লিগে কে কোন জায়গায় ছিল, প্লে অফে সেটা খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার নয়। যেমন গতবার যখন আমার দল (এটিকে এফসি) আইএসএল চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল, সে বার কিন্তু আমরা লিগে এক নম্বর ছিলাম না।   

এডু, সন্দেশ, তিরি খেলতে পারবেন?

এডু গার্সিয়া ও সন্দেশ ঝিঙ্গন কী অবস্থায় রয়েছে দেখতে হবে। সন্দেশ গুরুত্বপূর্ণ। তিরি খেলবে কি না, তা অনুশীলনের পরে ঠিক করব।

গত ম্যাচে শেষ মুহূর্তের ভুল প্রসঙ্গে...

ম্যাচে বিভিন্ন রকমের পরিস্থিতি তৈরি হয়। খেলোয়াড়রাও মানুষ, যন্ত্র নয়। কোনও এক মুহূর্তে বোঝাপড়ার অভাব অথবা ডিফেন্সে কৌশলগত ভুল হতেই পারে। তবে এটা সব দলের ক্ষেত্রেই হয়। আমাদের যথাসম্ভব কম গোলের সুযোগ তৈরি করতে দিতে হবে ওদের। 

বেশি গোল পাচ্ছেন না কেন?

স্ট্রাইকাররা তো আর জাদুকর নয়। বিপক্ষেরও তো ভাল ভাল খেলোয়াড় রয়েছে। নর্থইস্ট প্রতিপক্ষ হিসেবে যথেষ্ট ভাল। এইরকম পরিস্থিতিতে খেলোয়াড়দের ওপরই নির্ভর করে সবকিছু।

খালিদ জামিল (কোচ, নর্থইস্ট ইউনাইটেড এফসি)

মরণ-বাঁচন ম্যাচের আগে দল চাপে?

হ্যাঁ, এটা মরা-বাঁচার লড়াই। তাই ফলাফলের দিকে ফোকাস করতেই হবে। চাপ তো সবসময়ই থাকে। ছেলেদের বলেছি, এই চাপটাই উপভোগ করো। দুই দলকেই রেজাল্টের জন্য লড়াই করতে হবে কাল। কারণ, অ্যাওয়ে গোলের নিয়ম এখানে কার্যকর হচ্ছে না। বিপক্ষের কাছেও ব্যাপারটা একই রকম। আমাদের আরও বেশি গোলের সুযোগ তৈরি করে ওদের চাপে ফেলতে হবে। যে কোনও দলকে ম্যাচটা নির্ধারিত সময়ে জিততেই হবে। কারণ, ড্র হওয়া মানে আরও ৩০ মিনিট খেলতে হবে। 

প্রতিপক্ষের শক্তি প্রসঙ্গে...

ওরা ওদের কৌশল নিয়ে খেলবে, আমরা আমাদের কৌশল অনুযায়ী খেলব। গত দুটো ম্যাচে আমরা প্রমাণ করে দিয়েছি যে, আমরা নিজেদের ওদের জায়গায় নিয়ে গিয়ে টক্কর দিতে পারি। কালও আমরা নিজেদের সেরাটাই দেব। ওদের বিরুদ্ধে যে তিনটে ম্যাচ খেলেছি আমরা, তার একটাতে জিতেছি, একটাতে হেরেছি আর একটাতে ড্র করেছি। তাই আমার মনে হয় না, ওরা আমাদের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে।

সিলা, ব্রাউন কী অবস্থায়?

ইদ্রিসা সিলা (গত ম্যাচে) একশো শতাংশ ফিট ছিল না। তাই ওকে শুরু থেকে খেলিয়ে ঝুঁকি নিতে চাইনি। যখন ওর প্রয়োজন পড়েছে ওকে নামিয়েছি এবং ও কাজের কাজটা করে দিয়েছে। ও খুবই ভাল খেলোয়াড়। ব্রাউনের ক্ষেত্রে যেটা ভাল হয়, সেটাই করা হবে।

গত ম্যাচের ফল কি বাড়তি মোটিভেশন?

গত ম্যাচ নিয়ে আমরা ভাবছি না। এই ম্যাচে যারা জিতবে, তারাই ফাইনালে উঠবে। এটাই ছেলেদের কাছে সবচেয়ে বড় মোটিভেশন। এ পর্যন্ত ওরা যথেষ্ট ভাল খেলেছে। এই খেলাটাই যদি কালও বজায় রাখতে পারে, তা হলে আমরা এগোতে পারি। না পারলেও লজ্জার কিছু নেই। ওরা এর মধ্যেই সবাইকে যথেষ্ট গর্বিত করেছে। এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার।