প্রায় জেতা ম্যাচ হাতছাড়া হওয়ার পরে স্বাভাবিক ভাবেই অখুশি এটিকে মোহনবাগানের স্প্যানিশ কোচ আন্তোনিও লোপেজ হাবাস। তবে মোটেই হতাশ নন। বরং বলছেন, তাঁদের ফাইনালে ওঠার সম্ভাবনাই বেশি। নর্থইস্টের ভারপ্রাপ্ত কোচ খালিদ জামিল অবশ্য শেষ মুহূর্তে ড্র করে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন। শনিবার বাম্বোলিমে চলতি হিরো আইএসএলের দ্বিতীয় সেমিফাইনালের প্রথম লেগে নর্থইস্ট ইউনাইটেডের বিরুদ্ধে ১-১ ড্র করে তাঁর দল।

দুই দলের মধ্যে এ দিন কলকাতার দলের দাপটই ছিল বেশি। ৩৪তম মিনিটে রয় কৃষ্ণার পাস থেকে ডেভিড উইলিয়ামস যে দর্শনীয় গোল করে দলকে এগিয়ে দেন, সেই গোলেই ম্যাচ শেষ হওয়ার তিন মিনিট আগে পর্যন্ত এগিয়ে ছিল সবুজ-মেরুন বাহিনী। সারা ম্যাচে যে রক্ষণ প্রায় দুর্ভেদ্য দেওয়াল তুলে রেখেছিল, সেই রক্ষণের শেষ মুহূর্তের অসাবধানতায় গোল খেয়ে প্রায় নিশ্চিত জয় হাতছাড়া করতে হয় তাদের। নর্থইস্টের পক্ষে হেডে এই গোলটি করেন গিনির ফরোয়ার্ড ইদ্রিসা সিলা।

জিতে ফাইনালে ওঠার দৌড়ে এগিয়ে থাকার সুযোগ ফস্কে যাওয়ায় তাই বেশ হতাশ হাবাস। তবে দলের খেলায় তিনি খুশি। ম্যাচের পরে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “আমাদের প্রতিপক্ষ কোনও গোলের সুযোগ তৈরি করতে পেরেছে বলে আমার মনে পড়ছে না। ওরা শুধু কয়েকটা ফ্রিকিক আর লং বল পেয়েছিল। আমার মনে হয় পরের ম্যাচ জেতার যথেষ্ট সুযোগ আমাদের রয়েছে”।

তিনি আরও বলেন, “এখানে দুই লেগের সেমিফাইনাল হয়। তাই ৪-০-য় জিতে রাখতে পারলে ভাল হয়। কিন্তু এত বড় ব্যবধানে বেশি দল জিতেছে বলে আমার মনে পড়ে না। গত মরশুমে এফসি গোয়া করেছিল বোধহয়। কিন্তু আর কারও কথা মনে পড়ছে না”।

দলের একাধিক তারকা খেলোয়াড় ছাড়াই খেলতে হয় তাদের। এই প্রসঙ্গে হাবাস বলেন, “আমাদের আজ তিরি, সন্দেশ, এডু ছিল না। তাতে কোনও সমস্যা হয়নি। আমার তো মনে হয় না কোনও সমস্যা হয়েছে”। এটিকে মোহনবাগান কোচের ধারণা, তাঁরা ৭৫ মিনিট নর্থইস্টের চেয়ে ভাল খেলেছেন। বলেন, “৭৫ মিনিট আমরা ওদের চেয়ে ভাল খেলেছি। তার পরে আমরা একাধিক ফাউল করেছি, ওদের ফ্রি কিক দিয়েছি। কিন্তু ওদের কোনও সুযোগ দিইনি”।

তবে প্রথম সেমিফাইনালে জয় হাতছাড়া হলেও আশা ছাড়তে একেবারেই রাজি নন হিরো আইএসএলের সবচেয়ে সফল কোচ।  তিনি বলেন, “প্রথম ম্যাচে জিততেই হবে, এমন কোনও কথা নেই। সেমিফাইনালের প্রথম লেগে ৩-০ জিতেও ফাইনালে উঠতে পারেনি, এমন দলের কথাও আমার মনে পড়ছে। মনে রাখবেন, আমরাই এই আইএসএলের সবচেয়ে মোটিভেটেড টিম”।  

শনিবারের ম্যাচের প্রথম গোলদাতা ডেভিড উইলিয়ামসের গলাতেও প্রায় একই সুর। ম্যাচের পরে হিরো আইএসএল ডিজিটালকে বলেন, “নর্থইস্টের বিরুদ্ধে আমাদের গত ম্যাচটা ভাল যায়নি। এই ম্যাচে আমরা ছন্দে ছিলাম। ম্যাচটা জেতাও উচিত ছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে মনসংযোগের অভাবে ভুল হয়ে যায়। অবশ্যই হতাশ। তবে এখনও দ্বিতীয় লেগের ম্যাচ রয়েছে। তাই সুযোগ এখনও রয়েছে। আশা করি, পরের ম্যাচে আমরা জিতে ফাইনালে উঠব এবং চ্যাম্পিয়নও হব। আমাদের দলটা খুবই ভাল। প্রত্যেকেই যথেষ্ট ভাল ফর্মে রয়েছে। মনে হয় সমস্যা হবে না”।

অন্য দিকে, নর্থইস্ট ইউনাইটেড এফসি-র কোচ খালিদ জামিল বলেন, “এই পয়েন্টটা আমাদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এখন আমরা পরের ম্যাচ নিয়ে ভাবনা শুরু করে দিয়েছি। আমরা দারুণ ভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছি। এ আমাদের ছেলেদের পরিশ্রমের ফল। ব্রিটো, সিলা, মাচাডো, এমনকী গালেগোও খুবই ভাল খেলেছে। ম্যাচটা ড্র রাখতে পেরে আমরা খুশি। প্রথমার্ধে এক গোলে পিছিয়ে থাকার পরে এই পয়েন্টটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটিকে মোহনবাগানের রক্ষণ দারুণ শক্তিশালী। ওদের রক্ষণ ভেঙে গোল করাটা মোটেই সোজা নয়। তবু আমরা গোল করেছি। সেই জ্ন্যই আমি বেশি খুশি”।

জিম্বাবোয়ের স্ট্রাইকার দেশর্ন ব্রাউন চোট থাকায় এ দিন খেলতে পারেননি। পরের ম্যাচে খেলার মতো অবস্থায় থাকলে তিনি খেলবেন বলে জানিয়ে দেন খালিদ। গোলদাতা ইদ্রিসা সিলাকে নিয়ে খালিদ বলেন, “ও খুব শান্ত, ঠাণ্ডা মাথার ছেলে। কখনও চাপ নেয় না। দলে না থাকলে কখনও জিজ্ঞেস করে না, কেন সুযোগ পেল না। দলের জন্য খেলে। খুব খাটে। আমাদের অন্যতম সেরা স্ট্রাইকার”।

পরের ম্যাচে শুরুতেই গোল দিয়ে এগিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা আছে কি না, জানতে চাইলে হিরো আই লিগজয়ী কোচ  বলেন, “শুরুতেই গোল নিয়ে ভাবি না। ৯০ মিনিট যাতে মনসংযোগ সমান রাখতে পারি, সেটাই আমাদের কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। দ্বিতীয় লেগে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আমাদের শক্তিশালী থাকতে হবে”।