শনিবার যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে মুম্বই সিটি এফসি-র বিরুদ্ধে লড়াইটা মোটেই সোজা হবে না বলে মনে করেন এটিকে এফসি-র কোচ আন্তোনিও লোপেজ হাবাস। প্রতি ম্যাচের মতোই শনিবারও তাঁদের জয় ও তিন পয়েন্ট চাই ঠিকই। ভাল ম্যাচ খেলে হাসি মুখেই মাঠ ছাড়তে চান তিনি। কিন্তু পথটা যে সোজা হবে না, তা খুব ভাল করেই জানেন হাবাস।

শুক্রবার সাংবাদিকদের তিনি বলেন,ওদের মাঝমাঠ, আক্রমণ বিভাগ ভাল। প্রতিপক্ষ হিসেবে ওরা কঠিন দল। কাল আমাদের জেতা সোজা হবে না। ওরা কাউন্টার অ্যাটাকও দারুণ করে। আমাদের সাবধান থাকতে হবে

মুম্বই সিটি এফসি অবশ্য টানা তিনটি ম্যাচে জয় পায়নি। প্রথম দুই ম্যাচে চার পয়েন্ট পাওয়ার পর তারা দুই ম্যাচেই ২-৪ গোলে হেরে যায়। গত বুধবার গুয়াহাটিতে নর্থ-ইস্ট ইউনাইটেডের বিরুদ্ধে ২-২ গোলে ড্র করে। পাঁচ ম্যাচে দশ গোল খেয়ে তারা গোল খাওয়ার তালিকায় যৌথ ভাবে দ্বিতীয় স্থানে। তা সত্ত্বেও অবশ্য বিপক্ষকে একেবারেই কম গুরুত্ব দিতে চান না হাবাস।

চার ম্যাচে ৯ পয়েন্ট পাওয়ার পরে পঞ্চম ম্যাচে এটিকে হোঁচট খায় ওডিশা এফসি-র বিরুদ্ধে। কোনও রকমে ড্র করে তারা এক পয়েন্ট নিয়ে ফেরে ওই ম্যাচ থেকে। হঠাৎ ছন্দপতন নিয়ে হাবাস বলেন, প্রতি ম্যাচই আলাদা রকমের হয়। ওডিশা সে দিন ভাল খেলেছে। ম্যাচের যা তীব্রতা ছিল তাতে ৯০ মিনিট ধরেই ফুটবলারদের প্রচুর পরিশ্রম করতে হয়েছে। আমাদের বুঝতে হবে, প্রতি ম্যাচ জেতা সম্ভব নয়। জেতার চেষ্টা থাকে বটে, তবে তা বাস্তবসম্মত নয়। তবে এক পয়েন্ট পেয়েও অখুশি নই আমি। গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট ছিল ওটা

মুম্বই সিটি এফসি-র পর্তুগীজ কোচ জর্জ কোস্তা এ দিনই বলেন, দেশের অন্যতম সেরা দল এটিকে। খুব ভাল খেলছে ওরা। কাল কঠিন লড়াই করতে হবে আমাদের। এই মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে অবশ্য কিছু বলতে চাননি হাবাস। তিনি বলেন, এটিকে সেরা কিনা, ফেব্রুয়ারি-মার্চের আগে তা বলতে পারব না। বিপক্ষ যা বলেছে, সেটা অবশ্য গুরুত্বপূর্ণ। শুনে ভালই লাগছে। তবে আমাদের ক্রমশ আরও উঁচু স্তরের ফুটবল খেলতে হবে, এটাই আসল কথা

তাঁর হাতে আছেন দুই দুরন্ত ফরোয়ার্ড রয় কৃষ্ণা ও ডেভিড উইলিয়ামস। অন্য দিকে মুম্বইয়ের রক্ষণ বিভাগ সেরা ফর্মে নেই। এটিকে এফসি-র কাছে এটা প্লাস পয়েন্ট হয়ে উঠতে পারে। তবে সেটা স্বীকার করছেন না তাদের কোচ। বলছেন, প্রতি দলেরই সমস্যা আছে। ব্রাজিললের এক কোচ বলেছিলেন, ফুটবল হল ছোট কম্বলের মতো। মাথা ঢাকতে গেলে পা বেরিয়ে পড়ে, পা ঢাকতে গেলে মাথা বেরিয়ে পড়ে। সমস্যা থাকবেই। ওদের যেমন আছে, আমাদেরও তো আছে। নিখুঁত দল বলে কিছু হয় না ফুটবলে। কারও সেটপিসে সমস্যা আছে তো কারও অন্য জায়গায়। বিপক্ষের সমস্যা নিয়ে কথা বলতে চাই না। সেটা ভাল দেখায় না। 

 

এটিকে কোচ প্রতি ম্যাচ ধরে ধরে চিন্তাভাবনার কথা বললেও দলের সিনিয়র ডিফেন্ডার আনাস এডাথোডিকা কিন্তু বলছেন, এ ভাবে তাঁরা খেলে যেতে পারলে সেরা চারে যাওয়া অসম্ভব নয়। তিনি বলেন, এ রকম ফর্মে থাকলে আমরা সেরা চারে যেতেই পারি। আমাদের যে কোনও খেলোয়াড় যে কোনও পজিশনে খেলতে পারে এখন। এরকমই তো চাই

সাত-আটজন নতুন খেলোয়াড় থাকলেও দলের মধ্যে বোঝাপড়া তৈরি হয়ে গিয়েছে বলে দাবি ভারতীয় দলের ফুটবলার আনাসের। এই নিয়ে তিনি বলেন, টিমের বন্ডিংটা ভাল হয়েছে। দেশী-বিদেশীদের মধ্যে বোঝাপড়া ভাল হয়েছে। এ সবই হয়েছে কোচের জন্য। দলের ছেলেদের একসঙ্গে থাকা, একসঙ্গে খেলা, এগুলো বেশ ভাল। আমি যে দলে খেলি, সেই দলের জন্যই সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করি। এটিকে অন্যতম সেরা দল। পেশাদার দল। এখানে ফুটবলারদের অসুবিধা হওয়ার কথাই নয়

লিগ টেবলের শীর্ষে পৌঁছনোটা যেমন কঠিন, সেই জায়গাটা ধরে রাখা আরও বেশি চাপের। তবে এই প্রসঙ্গে আনাস বলেন, শীর্ষে থাকাটা আমাদের কাছে চাপের নয়। প্রতি ম্যাচই জেতার লক্ষ্যে নামি আমরা। সে জন্য পরিশ্রমও করছি সবাই। আমরা আত্মবিশ্বাসী। আমাদের স্ট্রাইকাররা খুব ভাল খেলছে। ওদের জন্য আমাদেরও ভাল ডিফেন্স করতে হবে। ওরা যে কোনও সময় আমাদের গোল এনে দিতে পারে। তা ধরে রাখতে হবে

মুম্বইয়ের রক্ষণ বিভাগে ডিফেন্ডাররা সবাই ভারতীয়। যাঁরা আবার আনাসেরও ভারতীয় দলের সতীর্থ। শনিবার রয়, উইলিয়ামসদের যদি তাঁরা আটকে দিতে পারে, সেটা ওঁদের পক্ষে যথেষ্ট কৃতিত্বের হবে বলে মনে করছেন। দলের তরুণ ফুটবলারদের নিয়ে তিনি বলেন, আমার জায়গায় কেউ ভাল খেললে আমার কোনও আপত্তি নেই। আমাকে খেটে আবার নিজের জায়গায় ফিরে আসতে হবে। তরুণ ফুটবলাররা ভাল খেললে আমার খুব ভাল লাগে। ওরাই দেশের ফুটবলকে ভবিষ্যতে এগিয়ে নিয়ে যাবে। আমার দিক থেকে যতটা সাহায্য করা যায়, আমি করি

অন্য দিকে মুম্বই সিটি এফসি-র কোচ ২০০২ বিশ্বকাপে পর্তুগালের অধিনায়ক ফার্নান্দো কুতোর সতীর্থ ডিফেন্ডার জর্জ কোস্তা-র বক্তব্য, আমাদের জানা আছে, এটিকে-র বিরুদ্ধে জিততে গেলে কী করতে হয়। আশা করি, তিন পয়েন্ট নিয়েই আমরা এখান থেকে ফিরতে পারব। এটিকে-কে আটকানোর ক্ষমতা আছে আমাদের দলের এগারোজন খেলোয়াড়র আছে। ওদের খেলা যা দেখেছি, ওরা বিভিন্ন সিস্টেমে খেলে। তবে সামনে ওদের বরাবর দুজন থাকে। সেই দুজনকে আটকানোই শুধু আমাদের কাজ না। বাকি নজনকেও আটকাতে হবে। সেই ক্ষমতা আমাদের দলে রয়েছে

নিজেদের সম্পর্কে কোস্তা বলেন, আমাদের কিছু ব্যক্তিগত ভুল হচ্ছে। যেগুলো শোধরাতে হবে। এগুলো শোধরানো সম্ভবও। সময় আছে আমাদের হাতে। এ বারের মতো গত বছরেও আমাদের প্রথম চার ম্যাচে চার পয়েন্ট ছিল। এ বার তৃতীয় ম্যাচ থেকে চোট-আঘাতের সমস্যা দেখা দেয়। গত ম্যাচে আমাদের এক পয়েন্টের চেয়ে বেশি পাওয়া ছিল। তবে নিজেদের শোধরাতে হবে। কাল কঠিন পরিস্থিতি। ৭২ ঘণ্টার মধ্যে দুটো ম্যাচ খেলতে হচ্ছে আমাদের। তবু সেই বাধা পেরোতে হবে

দলের খেলোয়াড়দের চাপ সামলানোর ক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন উঠলে কোচ বলেন, আমাদের খেলোয়াড়রা চাপ সামলাতে না পারলে অন্য কাজ করুক। বাজারে, ব্যাঙ্কে গিয়ে বসুক। ওরা সবাই জানে, সমর্থকেরা সবাই ওদের দেখছে, সাংবাদিকরা ওদের নিয়ে লিখবে। এর পরেও যদি ওরা চাপ সামলাতে না পারে, তা হলে আর কিছু বলার নেই