কোচ হিসেবে এই নিয়ে তৃতীয় হিরো আইএসএল ফাইনাল তাঁর। এর আগের দুই ফাইনালে হারেনি তাঁর দল। এ বারও সেই সাফল্যের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারবেন কি না, সে তো শনিবারের আগে জানার কোনও উপায় নেই। তবে ফাইনালের ভাবনা যে ঢুকে পড়েছে তাঁর মাথায়, তা আন্তোনিও লোপেজ হাবাসের কথাতেই স্পষ্ট। এটিকে মোহনবাগানকে তাদের অভিষেক মরশুমেই ফাইনালে তোলার পরে হাবাস দলের উদ্দেশ্যে সতর্কবার্তা জারি করলেন, মুম্বই সিটি এফসি-কে হারানো মোটেই সোজা হবে না।

মঙ্গলবার ফতোরদা স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় সেমিফাইনালের দ্বিতীয় লেগে নর্থইস্ট ইউনাইটেড এফসি-কে ২-১ হারিয়ে আগামী শনিবারের খেতাবি লড়াইয়ে মুম্বই সিটি এফসি-র মুখোমুখি তাঁর দল। দুই দলের কাছেই এটা দেশের সেরা ফুটবল লিগের প্রথম ফাইনাল। এ দিন কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করে দুই দল। প্রথমার্ধে ডেভিড উইলিায়ামস ও দ্বিতীয়ার্ধে মনবীর সিংয়ের দর্শনীয় গোলে এটিকে মোহনবাগান এগিয়ে যাওয়ার পরে ভিপি সুহেরের গোলে ব্যবধান কমায় নর্থইস্ট। সমতা আনার সুযোগও তারা পেয়েছিল পেনাল্টিতে। কিন্তু সেই সুযোগ হাতছাড়া করেন লুই মাচাডো।

এই জয়ের ফলে ২০২২-এর এএফসি কাপের গ্রুপ পর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জন করল। কারণ, আর এক ফাইনালিস্ট মুম্বই সিটি এফসি এর মধ্যে লিগ শীর্ষে থেকে ২০২২-এর এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগের গ্রুপ লিগে খেলার ছাড়পত্র পেয়ে গিয়েছে। তাই ভারত থেকে এটিকে মোহনবাগানই এএফসি কাপে খেলার একমাত্র দাবিদার।

৯০ মিনিটেই শেষ করতে চেয়েছিলাম

মঙ্গলবার ফতোরদা স্টেডিয়ামে সেমিফাইনাল জয়ের পরে সাংবাদিকদের ভার্চুয়াল বৈঠকে হাবাস বলেন, “ছেলেদের এখন রিকভার করতে হবে। পরিস্থিতির বিশ্লেষণ করতে হবে। তার পরে ফাইনালে নামব। এই দলটা (মুম্বই) যে প্রতিপক্ষ হিসেবে বেশ কঠিন, এই নিয়ে কোনও সন্দেহই নেই। বিপক্ষের কাছে ওরা খুবই কঠিন দল”।

সেমিফাইনালে দলের পারফরম্যান্সে তিনি যে খুবই খুশি, তা জানিয়ে হাবাস বলেন, “দলের খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্সে আমি খুবই খুশি। স্টাফরাও যথেষ্ট ভাল দায়িত্ব পালন করেছে। দলের মধ্যে একটা দৃঢ়চরিত্র রয়েছে। ছেলেরা হয়তো ফাইনাল নিয়ে অনেক ভাবনা চিন্তা করছে। (এ রকম খেললে) আমাদের কোনও সমস্যা হবে না”।

মঙ্গলবারের ম্যাচটা ৯০ মিনিটেই শেষ করতে চেয়েছিলেন বলে জানিয়ে দেন হিরো আইএসএলের সবচেয়ে সফল কোচ। বলেন, “এই ম্যাচে যে আমাদের জিততেই হবে, তা তো জানাই ছিল। তবে ম্যাচটা অতিরিক্ত সময়ে টেনে নিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা ছিল না একেবারেই। ৯০ মিনিটেই শেষ করতে চেয়েছিলাম। ছেলেরা সবাই খুব ক্লান্ত। এত আর্দ্রতা এখানে। তার ওপর কোভিড তো আছেই”।

প্রায় চার মাস কঠোর জৈব সুরক্ষা বলয়ের মধ্যে থেকে এগারোটি দলের ফুটবলার, কোচ, সাপোর্ট স্টাফদের এ বার হিরো আইএসএলে অংশ নিতে হয়েছে। সেই অভিজ্ঞতা নিয়ে সবুজ-মেরুন কোচ বলেন, “এই মরশুমটা বেশ কঠিন ছিল। কারণ, খেলোয়াড় থেকে টেকনিক্যাল স্টাফ সবাই জৈব সুরক্ষা বলয়ে ছিল। ২৪ ঘণ্টা ফুটবল ছাড়া কিছুই ছিল না। পরিবারও না। এই অবস্থায় মাথা ঠাণ্ডা রাখা খুবই কঠিন। খেলোয়াড়দের আচরণের ওপর আবার ১০ পয়েন্ট রয়েছে”। 

যাদের হারিয়ে ফাইনালে উঠল এটিকে মোহনবাগান, সেই ভারতীয় কোচ খালিদ জামিলের দল নিয়ে হাবাস বলেন, “নর্থইস্ট ইউনাইটেড যথেষ্ট ভাল দল। চমৎকার খেলেছে ওরা এই মরশুমে। আক্রমণ ও রক্ষণে ওদের ভাল ভাল ফুটবলার রয়েছে। ওদের বিরুদ্ধে জেতা যে কোনও দলের পক্ষেই কঠিন। তবে আজ ওদের চেয়ে আমরা ভাল খেলেছি”।

হাল ছেড়ো না, পরের বার নিশ্চয়ই সফল হব

নর্থইস্ট ইউনাইটেড এফসি-র কোচ খালিদ জামিল তাঁর দলের ছেলেদের জন্য গর্বিত। বলেন, “প্রথমার্ধে ওরা (এটিকে মোহনবাগান) খুবই ভাল খেলেছে। আমাদের ছেলেদের মধ্যে ওই সময়ে বোঝাপড়া ঠিক হচ্ছিল না। কিন্তু আমরা (বিরতিতে) সেই সমস্যা মিটিয়ে নিই। দ্বিতীয়ার্ধে আমরা ভাল খেলি। আমরা একাধিক সুযোগও তৈরি করেছি। দলের ছেলেদের নিয়ে আমি গর্বিত। ওরা খুব পরিশ্রম করেছে”।

এ দিন পেনাল্টি থেকে সমতা আনার সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া করেন দলের তারকা ফরোয়ার্ড লুই মাচাডো। তবে এই নিয়ে তাঁর প্রতি কোনও অভিযোগ নেই কোচের। বলেন, “যে কোনও খেলোয়াড়ের ক্ষেত্রেই যে কোনও সময়ে এটা হতে পারে। কখনও গোল পায়, কখনও পায় না। আমি বলতে চাই, হাল ছেড়ে দিও না, পরের বার নিশ্চয়ই সফল হব আমরা”।

নর্থইস্ট ইউনাইটেডের বিদেশি কোচ জেরার নুস মরশুমের মাঝে দায়িত্ব ছেড়ে চলে যাওয়ার পরে দলের দায়িত্ব নেন খালিদ। তাঁর প্রশিক্ষণে টানা ১০টি ম্যাচে হারেননি ফেদরিকো গালেগোরা। ১১ নম্বর ম্যাচে হারের মুখ দেখলেন তিনি। তাঁর এই সাফল্যের পরে এ বার আইএসএলে ভারতীয় কোচেরা আরও গুরুত্ব পাবেন বলে আশা খালিদের। বলেন, “ভারতীয় কোচেদের আরও আত্মবিশ্বাস জোগানো প্রয়োজন। বিদেশি কোচেরা ভাল ঠিকই। কিন্তু ভারতীয় কোচেরাও যোগ্য। আমাদের দেশে অনেক ভাল ভাল কোচেরা রয়েছেন। তাঁরা সুযোগ পেলে নিশ্চয়ই নিজেদের প্রমাণ করে দেখাতে পারবেন”।