কলকাতার এটিকে এফসি ও মুম্বই সিটি এফসি-র ফুটবলযুদ্ধের সঙ্গে ফুটবলারদের শরীরী যুদ্ধও দেখল শনিবার যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনের গ্যালারিতে আসা প্রায় ৩৩ হাজার দর্শক। ফল ২-২। তবে ম্যাচের শেষ আধঘণ্টায় তিনটি গোল দেখাটা বেশ উপভোগ্য হয়ে ওঠে। বিরতিতে মাইকেল সুসাইরাজের দেওয়া গোলে এগিয়ে ছিল এটিকে। ৬২ মিনিটে সমতা আনেন মুম্বইয়ের প্রতীক চৌধুরি। ম্যাচের স্টপেজ টাইমে প্রথমে কেভিন সার্জের গোলে এগিয়ে গেলেও তার পরেই সমতা ফেরান রয় কৃষ্ণা। এই ড্রয়ে এটিকে টানা পাঁচ ম্যাচে অপরাজিত থেকে ১১ পয়েন্ট নিয়ে লিগ টেবলের শীর্ষেই রয়ে গেল। অন্য দিকে মুম্বই এই মরশুমে অ্যাওয়ে ম্যাচে অপরাজিত থাকার ধারাবাহিকতা বজায় রেখে ৬ পয়েন্ট নিয়ে সাত নম্বরে।

  • ১৯ মিনিটে আক্রমণে উঠে বিপক্ষের বক্সে ঢুকে পড়েছিলেন জাভি হার্নান্ডেজ। সুসাইরাজের পাস থেকে তাঁর গোলমুখী শট এক ডিফেন্ডারের গায়ে লেগে বাইরে চলে যায়।
  • এডু গার্সিয়াকে বাধা দিতে গিয়ে তাঁর কপালে লাথি মেরে বসেন শুভাশিস বসু। হলুদ কার্ড দেখেন তিনি।
  • ৩৮ মিনিটে গার্সিয়া বাঁ দিক থেকে ওঠা সুসাইরাজকে থ্রু বাড়ান। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে এটিকে-কে এগিয়ে দেন তামিল ফরোয়ার্ড।
  • ৬২ মিনিটে গোল শোধ করে মুম্বই। কর্নার কিক থেকে অসাধারণ হেডে গোল করেন প্রাক্তন মোহনবাগানী প্রতীক চৌধুরি।
  • ৯১ মিনিটে বাঁ দিক থেকে ওঠা বিপিন সিংয়ের ক্রস থেকে গোলের সামনে প্রায় অরক্ষিত কেভিন সার্জ গোল করে এগিয়ে দেন মুম্বইকে।
  • ৯৪ মিনিটে মুম্বই ডিফেন্ডারদের ভুল কাজে লাগিয়ে শরীরের এক মোচড়ে গোল দেন এটিকে-র গোলমেশিন রয় কৃষ্ণা। 

এ দিন দলে দুটো পরিবর্তন করে মাঠে নামে এটিকে এফসি। এডু গার্সিয়াকে প্রথম এগারোয় রাখা হয় অগস্টিন ইনিগেজের জায়গায় এবং জয়েশ রানের জায়গায় শেহনাজ সিং। ৩-৪-২-১ ছকে দল সাজান হাবাস। অন্য দিকে তিন বাঙালি ডিফেন্ডার সার্থক গলুই, শুভাশিস বসু ও শুভাশিস চক্রবর্তীকে প্রথম এগারোয় রেখে ৪-৪-২ ছকে দল সাজান মুম্বই সিটি এফসি-র কোচ জর্জ কোস্তা।

ঘর সামলে পাল্টা আক্রমণে যাওয়ার এই ছক অবশ্য শুরুতে তেমন কাজে আসেনি এটিকে-র। শুরুতে বল দখলের প্রতিযোগিতায় মুম্বই সিটি এফসি-ই এগিয়ে ছিল। বিপক্ষকে সামলে মাঝে মাঝে পাল্টা আক্রমণে উঠছিল এটিকে। ১৯ মিনিটে এমনই এক আক্রমণে উঠে বিপক্ষের বক্সে ঢুকে পড়েছিলেন জাভি হার্নান্ডেজ। মাঝমাঠ দিয়ে ওঠা ডেভিড উইলিয়ামস বক্সের মধ্যে বাঁ দিকে স্কোয়ার পাস করেন মাইকেল সুসাইরাজকে। সুসাইরাজই জাভিকে পাস করলে তাঁর গোলমুখী শট বিপক্ষের এক ডিফেন্ডারের গায়ে লেগে গোলের বাইরে চলে যায়।

এই আক্রমণের পর থেকেই এটিকে ক্রমশ খেলায় ফিরতে শুরু করে। ২৬ মিনিটের মাথায় বক্সের বাইরে থেকে উইলিয়ামসের দূরপাল্লার শট গোলের বাঁ দিক গড়িয়ে যায়। এর পরেই মাঝমাঠ থেকে বল ধরে বিপক্ষের প্রায় ফাঁকা অর্ধে যখন ঢোকার চেষ্টা করছিলেন এডু গার্সিয়া, তখন বাধা দিতে গিয়ে তাঁর কপালে লাথি মেরে বসেন শুভাশিস। তাঁকে হলুদ কার্ড দেখান রেফারি রাহুল গুপ্তা। মাটিতে লুটিয়ে পড়েন এডু ও তাঁর কপাল ফেটে রক্ত ঝরতে শুরু করে। তাঁর শুশ্রুষার জন্য কয়েক মিনিট খেলা বন্ধ থাকার পর ফের মাঠে নামেন স্প্যানিশ মিডফিল্ডার। দশ মিনিট পরেই তার জবাব দেন এডু। মাইকেল সুসাইরাজকে এই মরশুমে তাঁর প্রথম গোলটি করতে সাহায্য করে। 

রয় কৃষ্ণা, ডেভিড উইলিয়ামসদের মাঝমাঠের ওপারে যেতে না দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে নামলেও দুই উইং দিয়ে সমানে হানা দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন সুসাইরাজ, গার্সিয়ারা। ৩৮ মিনিটে গার্সিয়া ডানদিক থেকে বল নিয়ে বিপক্ষের দুই ডিফেন্ডারকে ধোঁকা দিয়ে পিছনে উইলিয়ামসের সঙ্গে ওয়াল খেলে বক্সের সামনে থেকে বাঁ দিক থেকে ওঠা সুসাইরাজকে থ্রু বাড়ান। সেই সুযোগ কাজে লাগাতে বিন্দুমাত্র ভুল করেননি ২৫ বছর বয়সি এই তামিল ফরোয়ার্ড। গত কয়েক ম্যাচেই এরকমই একটা গোল করার মরিয়া চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন জামশেদপুর এফসি থেকে আসা এই তারকা। কিন্তু পারছিলেন না। এ বার সেটাই পারলেন।   

মুম্বই সিটি এফসি পাল্টা দেওয়ার চেষ্টা করলেও দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই এটিকে-র আক্রমণ ছিল অব্যাহত। ৫১ মিনিটে বিপক্ষের বক্সের মধ্যে গোলের সামনে ভাল সুযোগ পেয়েছিলেন ডান দিক থেকে উঠে আসা প্রবীর দাস, কিন্তু লক্ষ্যভ্রষ্ট হন। বল পজেশনে কলকাতার দলকে পিছনে ফেলে দিলেও এ দিন মুম্বই সিটি এফসি তেমন পজিটিভ আক্রমণে উঠতে পারেনি, যেটা বারবার করে এটিকে। দুদিকের উইং দিয়ে বারবার আক্রমণে উঠছিলেন তাঁরা। মাঝখান দিয়েও বেশ কয়েকবার হাণা দেন উইলিয়ামসরা। মুম্বই ডিফেন্ডারদের সারা ম্যাচেই ব্যস্ত রাখেন তাঁরা।

৬০ মিনিটের মাথায় তিউনিশিয়ান ফরোয়ার্ড আমিন চেরমিতির সঙ্গে সংঘর্ষে পায়ে চোট পেয়ে মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে যেতে বাধ্য হন এটিকে-র আইরিশ মিডফিল্ডার কার্ল ম্যাকহিউ। তাঁর জায়গায় নামেন অগস্টিন ইনিগেজ। তার দুমিনিট পরেই গোল শোধ করে মুম্বই। কর্নার কিক থেকে অসাধারণ হেডে গোল করেন প্রাক্তন মোহনবাগানী প্রতীক চৌধরি।

শেষ কুড়ি মিনিটে উত্তেজনার পারদ চড়তে শুরু করে। দুপক্ষের মধ্যেই আক্রমণ-প্রতি আক্রমণের খেলা চলতে থাকে। সঙ্গে দুই দলের ফুটবলারদের মধ্যেও চলতে থাকে বাগযুদ্ধ। তাঁদের সামলাতে হিমশিম খেয়ে যান রেফারি। এরমধ্যেই ব্যবধান তৈরির সুযোগ পেয়ে গিয়েছিল মুম্বই। ৭৪ মিনিটে বাঁ দিক দিয়ে ওঠা গ্যাবনের মিডফিল্ডার কেভিন সার্জের ক্রসে ঠিকমতো পা ছোঁয়াতে পারলে অবধারিত গোল পেতেন মোহাম্মেদ লারবি। কিন্তু তাঁর শট বারের ওপর দিয়ে বেরিয়ে যায়।

শেষ দিকে ফুটবল যুদ্ধের চেয়ে শরীরি যুদ্ধই বেশি দেখা যায় য়ুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে। পাঁচ মিনিট স্টপেজ টাইম দেন রেফারি। এই বাড়তি সময়ের মধ্যেই জয়সূচক গোলটি করে নেয় মুম্বই। বাঁ দিক থেকে ওঠা বিপিন সিংয়ের ক্রস থেকে গোলের সামনে প্রায় অরক্ষিত কেভিন সার্জ গোল করে এগিয়ে দেন মুম্বইকে।

এর পরেও যে সমতা আনতে পারে এটিকে তা বোধহয় কেউই ভাবতে পারেননি গ্যালারিতে। ঘরমুখী জনতাকে ফিরিয়ে আনে রয় কৃষ্ণার গোল। মুম্বই ডিফেন্ডারদের ভুলকে কাজে লাগিয়ে শরীরের এক মোচড়ে  গোল দেন ফিজির এই গোলমেশিন। তাতেই প্রায় খোয়া যাওয়া এক পয়েন্ট ফিরে পায় এটিকে।