সময়টা যে খুব ভাল যাচ্ছে, তা নয়। তবে এই দুঃসময়ে দলের ফুটবলারদের পাশে থাকতে চান এটিকে মোহনবাগানের স্প্যানিশ কোচ হুয়ান ফেরান্দো। তাঁর ধারণা, এটাই বৃহস্পতিবার জামশেদপুর এফসি-র বিরুদ্ধে তাঁর দলকে জয়ে ফেরানোর সেরা উপায়।

কোচ একটু নরম হওয়ার চেষ্টা করলেও দলের অন্যতম সেরা বিদেশি তারকা হুগো বুমৌস কিন্তু বেশ কড়া ও আক্রমণাত্মক মেজাজে রয়েছেন। তাঁর মতে, বৃহস্পতিবারের ম্যাচে তাঁদের ঘুরে দাঁড়াতেই হবে এবং এর জন্য কঠিন মানসিকতা প্রয়োজন। অল্পেতেই খুশি হওয়ার মানসিকতা নিয়ে মাঠে নামতে রাজি নন বুমৌস। 

ডিসেম্বরে টানা তিন ম্যাচে জেতার পরে দু’টি ম্যাচে জয়হীন থাকে তারা। এর পরে এফসি গোয়াকে হারায় তারা এবং ফের দুটি ম্যাচ থেকে এক পয়েন্টের বেশি অর্জন করতে পারেনি তারা। কিন্তু ওডিশা এফসি-র বিরুদ্ধে এমন ভাবে ফিরে আসে, যাতে মনে হয়, এটাই তাদের মরশুমের সেরা পারফরম্যান্স। ওডিশার বিরুদ্ধে এত ভাল খেলার পরেও গত ম্যাচে বেঙ্গালুরু এফসি-র বিরুদ্ধে ঘরের মাঠে অবিশ্বাস্য খারাপ ফর্মে দেখা যায় তাদের। এই ধারাবাহিকতার অভাবই এখন সবচেয়ে বড় সমস্যা তাদের।

দূর্গরক্ষার লড়াইয়ে আপাতত সফল হলেও প্রতিপক্ষের দূর্গে চিড় ধরানোয় তেমন সাফল্য পাচ্ছেন না সবুজ-মেরুন ব্রিগেডের ফুটবলাররা। গোলের ঝুরি ঝুরি সুযোগ নষ্ট করেছেন দলের ফরোয়ার্ডরা। যার খেসারত এখনও দিতে হচ্ছে তাদের। এ রকম একটা কঠিন সময়ে দলের ছেলেদের পাশেই রয়েছেন কোচ ফেরান্দো।

জামশেদপুরের বিরুদ্ধে তাদের ঘরের মাঠে নামার আগে তিনি বলছেন, “টেকনিক বা কৌশলের ভুলের চেয়ে কিছু কিছু ম্যাচে ভাগ্যের সহায়তা না পাওয়ায় আমরা ব্যর্থ হয়েছি। যেমন মুম্বই, ওডিশার বিরুদ্ধে ওদের গোলকিপাররা এত ভাল ফর্মে ছিল যে, আমরা ওদের পরাস্ত করতে পারিনি। আমাদের প্রতিপক্ষরা বাড়তি মোটিভেশন নিয়ে মাঠে নামে, যেটা স্বাভাবিক। এটা মেনে নিতেই হবে। এটা ঠিকই যে আমাদের পরিস্থিতি খুব একটা ভাল নয়। কিন্তু এ রকম সময়ে ফুটবলারদের পাশে থাকা জরুরি। ওদের বোঝানো দরকার যে দলের জন্য তাদের আক্রমণ, রক্ষণে আরও ভাল খেলতে হবে”।

বেঙ্গালুরু এফসি-র বিরুদ্ধে সবুজ-মেরুন বাহিনী অন্তত ১৩টি গোলের সুযোগ তৈরি করে মাত্র একটিতে সফল হয়। দলের প্রায় সব খেলোয়াড়ই গোলের সুযোগ তৈরি করার ক্ষেত্রে অবদান রাখে। কিন্তু প্রতিপক্ষের গোল এরিয়ায় গিয়ে যে ভাবে বারবার খেই হারিয়ে ফেলছেন লিস্টন কোলাসো, মনবীর সিংরা, তা অবাক করার মতো। যার ফলে ধারাবাহিকতা পাচ্ছে না কলকাতার দল।

এই সমস্যার কথা মেনে নিয়েই ফেরান্দো বলেন, “আমরা সব সময়ই নির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নামি। কিন্তু আমাদের প্রতিপক্ষের গোলের সামনে গিয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। গত ম্যাচে আমরা আমাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রথমার্ধে খেলতে পারিনি। দ্বিতীয়ার্ধে কিছু কিছু সময়ে আমরা নিয়ন্ত্রণ নিয়েছি ঠিকই, কিন্তু ওঠা-নামায় সমস্যা ছিল। প্রতি ম্যাচই আলাদা ঠিকই। কিন্তু জামশেদপুর, ইস্টবেঙ্গল, বেঙ্গালুরুর মতো দলগুলো প্রায়ই একই রকম মানসিকতা নিয়ে মাঠে নামে। তবে প্রতি মুহূর্তে আমাদের সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তবে দলের ওপর আমার আস্থা আছে। সবাই জানে, এখন তিন পয়েন্ট কত জরুরি এবং আমার বিশ্বাস ছেলেরা এর চেয়ে ভাল খেলবে”।

লিস্টন কোলাসো, মনবীর সিংরা এ মরশুমে উল্লেখযোগ্য ভাবে খারাপ ফর্মে রয়েছেন। দলের ২০টি গোলে তাঁদের অবদান মাত্র তিনটিতে। মনবীর মাঝে চোট পেয়ে বেশ কয়েকটি ম্যাচে মাঠের বাইরে ছিলেন। কিন্তু কোলাসো নিয়মিত সুযোগ পেয়েও বারবার হতাশ করেছেন। গত মরশুমে আটটি গোল করে সেরা ভারতীয় গোলাদাতার স্থান অধিকার করলেও এ বার তার পুণরাবৃত্তি ঘটেনি। তাই বারবার তাঁকে নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

জামশেদপুরের বিরুদ্ধে ম্যাচের আগেও কোলাসোকে নিয়ে প্রশ্ন ওঠে, যার উত্তরে কোচ সেই একই কথা বলেন, “এই সময়ে ওর পাশে থাকা দরকার। ওকে আত্মবিশ্বাস জোগানো দরকার। এখানকার স্থানীয় খেলোয়াড়রা অল্পেতেই আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলে। ফলে তাদের পারফরম্যান্সে আরও অবনতি হতে থাকে। তাই কোনও ম্যাচে একাধিক খেলোয়াড় যদি ভাল খেলতে না পারে, তা হলে পরের ম্যাচে যেন আটজন খেলোয়াড় নিয়ে মাঠে নামতে হয়। লিস্টনের পাশে এখন আমাদের থাকতে হবে। ওর বয়স সবে ২৪। ওর সেরা সময় আসবে ২৬ থেকে ২৯-এ। এখন ভুল করলেও তা থেকে শিক্ষা নিয়ে উন্নতি করতে পারবে”।

অন্যদিকে দলের অন্যতম সেরা তারকা হুগো বুমৌস মনে করেন, এই কঠিন সময়ে নেতিবাচক মনোভাব দলের ক্ষতি করবে। তাই শিবিরের মধ্যে কোনওরকম হীনমন্যতা আসতে দেওয়া যাবে না। সাংবাদিকদের বুমৌস বলেন, “আমাদের ঘুরে দাঁড়াতেই হবে। গত ম্যাচে আমাদের হারে নিশ্চয়ই কেউই খুশি হতে পারেনি। ওই ম্যাচে আমাদের অন্যতম প্রধান প্রতিপক্ষ বেঙ্গালুরুর বিরুদ্ধে পয়েন্ট খোয়ানোটা মোটেই ভাল খবর নয়। কারণ, ওরাও প্লে অফে থাকার দৌড়ে রয়েছে। সুতরাং, জামশেদপুরে আমাদের গত ম্যাচের ভুলগুলো শুধরে নিয়ে খেলতে হবে এবং কোচের কথা অনুযায়ী একটাই মানসিকতা নিয়ে মাঠে নামতে হবে, জয় চাই”।

বেঙ্গালুরুর কাছে হারের পর ফেরান্দো জানান, দলের ছেলেরা মাঠে আত্মবিশ্বাসের অভাবে ভুগছেন। সেই আত্মবিশ্বাসই ফিরিয়ে আনতে চান বুমৌস। বলেন, “আত্মবিশ্বাসের অভাব হলে চলবে না। আমাদের এককাট্টা থাকতে হবে। ৯০ মিনিট ধরে দলের প্রত্যেকের মানসিকতা ও লক্ষ্য একই হওয়া উচিত। আমাদের দলে অনেক ভাল ভাল খেলোয়াড় আছে। প্রত্যেকেই নিজেদের প্রমাণ করেছে। এমন নয় যে দলে অনেক তরুণ খেলোয়াড় রয়েছে, যাদের অভিজ্ঞতা কম। রিজার্ভ বেঞ্চে থাকা কয়েকজন ছাড়া আমরা প্রত্যেকেই যথেষ্ট অভিজ্ঞ। এই অভিজ্ঞতা এ বার কাজে লাগাতে হবে”।

বৃহস্পতিবারের ম্যাচে সতীর্থদের সারাক্ষণ আক্রমণাত্মক মেজাজ বজায় রাখার পরামর্শ দিচ্ছেন ফরাসি তারকা বুমৌস, যিনি তাঁর দলকে সবচেয়ে বেশি গোলের সুযোগ তৈরি করে দিয়েছেন। বলেন, “আমাদের সারাক্ষণ আক্রমণাত্মক মেজাজটা ধরে রাখতে হবে। গোল করতে হবে। একটা গোল হয়ে গেলে দ্বিতীয়, তৃতীয় গোলের জন্য ঝাঁপাতে হবে। এটাই তো বড় দলের বৈশিষ্ট। আমরা সেই মানেরই দল। কখনওই অল্পেতে খুশি হওয়ার মানসিকতা নিয়ে মাঠে নামতে পারি না আমরা”।

নিজেরা আক্রমণাত্মক হতে গিয়ে অবশ্য প্রতিপক্ষকে কম গুরুত্ব দেওয়ার পক্ষে নন প্রাক্তন মুম্বই সিটি এফসি ও এফসি গোয়ার তারকা। তিনি বলেন, “দলের খেলোয়াড়দের গুণ থাকলে তা কাজে লাগাতে হবে, না হলে সেই গুণ থেকে লাভ কী? তবে আমাদের প্রতিপক্ষকে সমীহ করা উচিত। ওদেরও ভাল মানের ফুটবলার আছে। ওদের রক্ষণ ভাল। শরীররী ফুটবল খেলে অনেকেই। পিছন থেকে লং বলে স্ট্রাইকারদের কাছে বল পাঠানোর অনুশীলন ওরা করে নিয়মিত। দু’সপ্তাহ আগে মুম্বই সিটি এফসি ওদের হারাতে হিমশিম খেয়ে গিয়েছে। এতটাই লড়াকু দলটা। তাই ওদের হারানো সহজ হবে না”।