হিরো আইএসএল টেবলের এক নম্বর দলের কাছে হারার পরে এ বার তিন নম্বর এফসি গোয়ার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামতে চলেছে দু’নম্বর দল এটিকে মোহনবাগান। রবিবার, ফতোরদা স্টেডিয়ামে। গত ম্যাচে শীর্ষে থাকা মুম্বই সিটি এফসি-র কাছে ০-১-এ হারার পরে এই ম্যাচে নিশ্চয়ই জেতার জন্য মরিয়া হয়েই নামবে কলকাতার দল। না জিততে পারলে নিজেদের জায়গাটা যে গোয়াকে ছেড়ে দিতে হবে তাদের। ফলে নিজেদের দুই নম্বরে টিকিয়ে রাখতে গেলে এই ম্যাচে জয় ছাড়া কোনও রাস্তা নেই আন্তোনিও লোপেজ হাবাসের দলের।

মাত্র দু’পয়েন্ট কম নিয়ে তাঁদের ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে আর এক স্প্যানিশ হুয়ান ফেরান্দোর দলের ফুটবলাররা। যদিও একটি ম্যাচ বেশি খেলেছে এফসি গোয়া। কিন্তু রবিবাসরীয় লড়াইয়ে একে অপরকে যে জোর টক্কর দিতে চলেছে এটিকে মোহনবাগান ও এফসি গোয়া এই নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই।   

ফারাক ধারাবাহিকতায়

রবিবারই দ্বিতীয় লেগের প্রথম ম্যাচে নামছে কলকাতার দল। এফসি গোয়া অবশ্য দ্বিতীয় লেগ শুরু করে দিয়েছে জামশেদপুর এফসি-র বিরুদ্ধে ম্যাচ দিয়ে। গত বৃহস্পতিবার সেই ম্যাচে তাদের প্রধান স্ট্রাইকার ইগর অ্যাঙ্গুলো খেলতে না পারা সত্ত্বেও ৩-০ গোলে জেতে তারা। গত চার ম্যাচে বরাদ্দ ১২ পয়েন্টের মধ্যে ১০ পয়েন্টই জিতে নিয়েছে ফেরান্দোর দল। বোঝাই যাচ্ছে, সুসময় চলছে তাদের। গত পাঁচটি ম্যাচে তিনটি জয় ও একটি করে ড্র ও হার রয়েছে তাদের। একই পরিসংখ্যান এটিকে মোহনবাগানেরও। তবে গোয়া যেমন শেষ চার ম্যাচে অপরাজিত রয়েছে, রয় কৃষ্ণাদের অবস্থা সে রকম নয়। গত ম্যাচেই হেরেছে তারা। তাই কিছুটা হলেও বাড়তি আত্মবিশ্বাস নিয়ে মাঠে নামবে এফসি গোয়া।

এক মাস আগে প্রথম লেগের ম্যাচে কৌশলের লড়াইয়ে দুই দল প্রায় সমানে সমানে টক্কর দেওয়ার পরে নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার পাঁচ মিনিট আগে রয় কৃষ্ণার দেওয়া গোলে ম্যাচ জেতে এটিকে মোহনবাগান। তার পরে যেমন গঙ্গা দিয়ে অনেক জল বয়েছে, তেমনই হিরো আইএসএলে ঘটনার ঘনঘটা প্রতি দলের মধ্যেই পরিবর্তন এনেছে। গত ছ’ম্যাচে রয় মাত্র দু’টি গোল পেয়েছেন। রবিবার ফতোরদায় সেই হারের বদলা নেওয়ার সুযোগ গোয়ার দলের সামনে। এ দিনই বোঝা যাবে এই দুই দলে ঠিক কতটা পরিবর্তন এসেছে।

মরিয়া সবুজ-মেরুন শিবির

মুম্বই সিটি এফসি-র বিরুদ্ধে দুর্ভাগ্যজনক ভাবে গোল না পেয়ে হতাশ হয় সবুজ-মেরুন শিবির। এডু গার্সিয়া ফাঁকা গোল পেয়ে সে দিকে বল ঠেললেও তা পোস্টের ভিতরের দিকে লেগে ফিরে আসে। সেই মিস নিয়ে এডু এটিকে মোহনবাগান মিডিয়াকে বলেছেন, “আমাদের দুর্ভাগ্য যে, সে দিন নিশ্চিত গোলটা আমরা পাইনি। ওই গোলটা হলে ম্যাচটা জিততে পারতাম। তবে এটা ঠিকই যে ওটা আমাদের সেরা ম্যাচ ছিল না। গোয়ার বিরুদ্ধে আমাদের সেরাটাই দিতে হবে”।

জামশেদপুরকে তিন গোলে হারিয়ে এই ম্যাচে তাদের মুখোমুখি হতে চলেছে এফসি গোয়া। এর ফলে তাঁরা বাড়তি আত্মবিশ্বাস নিয়ে মাঠে নামবে রবিবার। এডু অবশ্য তা মানতে রাজি নন। বলেন, “ওরা আগের দিন জামশেদপুরকে হারিয়েছে বলেই যে আমাদের কাছ থেকেও পয়েন্ট কেড়ে নিতে পারবে, তার কোনও মানে নেই। আমরা জয়ে ফিরতে চাই। সেই প্রস্তুতি নিয়েই মাঠে নামব। আর গোলের সুযোগ যাতে নষ্ট না হয়, সে দিকটাও দেখতে হবে।”।

গত ম্যাচে হেরে যাওয়ায় এই ম্যাচে তাঁরা আরও সতর্ক ও মরিয়া হয়ে খেলবেন বলে বিশ্বাস গোলকিপার অরিন্দম ভট্টাচার্যের। বলেন, “গত ম্যাচের হার নিয়ে আমরা আর ভাবছি না। আসন্ন ম্যাচটা জিততে না পারলে লিগ টেবলে আমরা পিছিয়ে পড়ব। তাই এই ম্যাচে বরং আমরা অনেক বেশি সতর্ক ও মরিয়া হয়ে খেলব”। মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে চোখে আঘাত লাগলেও এখন তা ঠিক আছে বলে জানান অরিন্দম। বলেন, “চোখ নিয়ে সমস্যা নেই। খেলতে গেলে চোট হয়ই। আমি ফের ‘ক্লিন শিট’ রেখে মাঠ ছাড়তে চাই”। তারকা ডিফেন্ডার তিরি বলছেন, গত ম্যাচে হারের প্রভাব এই ম্যাচে পড়বে না। তিনি বলেন, “ওই ম্যাচটা ভুলে গিয়েছি আমরা। এখন শুধু গোয়াকে নিয়ে ভাবছি। ওদের দলে যথেষ্ট ভাল ভাল খেলোয়াড় আছে। ওদের বিরুদ্ধে আমাদের আগের মতোই ভাল খেলতে হবে। না হলে সমস্যায় পড়তে হতে পারে”।     

কৌশলের লড়াই শুরু

গত ম্যাচের হার নিয়ে ভাবতে চান না তিরিদের কোচ হাবাসও। তিনি শুক্রবার সাংবাদিকদের ভার্চুয়াল বৈঠকে বলেন, “গত ম্যাচ এখন ইতিহাস। আর ইতিহাস বদলেও যায়। এটাই ফুটবল। আমাদের কঠিন লড়াই চালিয়ে যেতে হবে আর প্রতি ম্যাচেই জিততে হবে। শেষ ম্যাচে কী হয়েছে, তা ভাবলে চলবে না”।

মুম্বই সিটি এফসি-র বিরুদ্ধে তাঁদের ম্যাচ নিয়ে যেমন কোনও মাথাব্যথা নেই হাবাসের, তেমনই প্রথম লেগে গোয়ার বিরুদ্ধে ম্যাচ নিয়েও কোনও চর্চা করতে চান না তিনি। বললেন, “আমরা জানি গোয়ার দলে ভাল খেলোয়াড়রা আছে, ওরা ভাল দল। আমাদেরও দলও সে রকমই। আগের ম্যাচ এখন অতীত। এটা পুরো আলাদা লড়াই। ফুটবলে দুটো ম্যাচ কখনও এক রকমের হয় না। প্রতিপক্ষ হিসেবে ওরা কঠিন। তবে আমাদেরও চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেওয়ার ক্ষমতা আছে”।

রয় কৃষ্ণা গত ছ’টি ম্যাচে মাত্র দু’টি গোল পেয়েছেন। এই নিয়ে সমর্থকেরা চিন্তিত হয়ে পড়লেও কোচের কিন্তু কোনও দুশ্চিন্তা নেই। বললেন, “রয় কৃষ্ণা তো আর আমাদের দলে একা খেলে না। গত ম্যাচে আমাদের দলের সব স্ট্রাইকাররা খেলেছিল। ডেভিড, মনবীর, রয়, এডু, হাভি সবাই। এরা ছাড়া আমাদের আর স্ট্রাইকার নেই। তা ছাড়া বিপক্ষের ডিফেন্সকেও তো গুরুত্ব দিতে হবে”।

রবিবার পুরো শক্তির দলই নামাতে পারবেন সবুজ-মেরুন শিবিরের স্প্যানিশ কোচ। কার্ল ম্যাকহিউও এখন ফিট বলে জানান তিনি। বলেন, “কাল আমরা পুরো দলই পাচ্ছি। কার্ল এখন চোটমুক্ত। মরশুমের প্রথমার্ধের পরে আমার দলের পারফরম্যান্সে আমি বেশ খুশি। তবে আমাদের আরও ভাল খেলতে হবে। এখন এটাই আমাদের লক্ষ্য”।

অন্যদিকে, এফসি গোয়ার কোচ হুয়ান ফেরান্দো দলের ভাল পারফরম্যান্সের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে চান। তাঁর মতে, “কাল একটা ভাল দলের বিরুদ্ধে ম্যাচ আমাদের। আরও তিন পয়েন্ট তোলার সুযোগও রয়েছে আমাদের সামনে। দ্বিতীয় লেগে সব দলই উন্নতি করেছে। তাই আমাদের আরও নতুন নতুন কৌশল নিয়ে মাঠে নামতে হবে”।

রবিবারের প্রতিপক্ষ নিয়ে ফেরান্দো বলেন, “এটিকে মোহনবাগান প্রতিপক্ষ হিসেবে বেশ কঠিন। আমরাও তাই। আশা করি, কালকের ম্যাচটা ভাল হবে। দুই দলই তিন পয়েন্ট পেতে চাইবে। যার ফলে নিশ্চয়ই একটা সুন্দর ম্যাচ উপহার দিতে পারব আমরা”। গত ম্যাচে চোট পেয়েছিলেন দলের সর্বোচ্চ স্কোরার ইগর অ্যাঙ্গুলো। রবিবার তিনি খেলতে পারবেন কি না, জিজ্ঞাসা করা হলে ফেরান্দো বলেন, “আমাদের দল খুবই ভাল। সব খেলোয়াড়কে নিয়েই প্রস্তুতি সারি আমরা। খেলোয়াড়দের ফিটনেস খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কয়েকজন ক্লান্ত। এটিকে মোহনবাগানের বিরুদ্ধে সেরা ও সবচেয়ে কার্যকরী এগারোজন কারা, তা নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেব (রবিবারের ম্যাচের আগে) শেষ অনুশীলনের পরে”।  

এটিকে মোহনবাগান স্কোয়াড:

গোলকিপার: অরিন্দম ভট্টাচার্য, ধীরজ সিং, অভিলাষ পাল, আর্শ শেখ, আরিয়ান নিরজ লাম্বা

ডিফেন্ডার: তিরি, প্রীতম কোটাল, প্রবীর দাস, সন্দেশ ঝিঙ্গন, শুভাশিস বসু, সুমিত রাঠি

মিডফিল্ডার: প্রণয় হালদার, ব্র্যাডেন ইনম্যান, হাভিয়ে হার্নান্ডেজ, এডু গার্সিয়া, কার্ল ম্যাকহিউ, গ্ল্যান মার্টিন্স, জয়েশ রানে, বরিস সিং, রেজিন মাইকেল, শেখ সাহিল, এন ইংসন সিং

ফরোয়ার্ড: ডেভিড উইলিয়ামস, রয় কৃষ্ণা, মনবীর সিং, মহম্মদ ফারদিন আলি মোল্লা   

 সরাসরি দেখুন:

সন্ধ্যা ৭.৩০ থেকে

টিভিতে: স্টার স্পোর্টস নেটওয়ার্ক

স্ট্রিমিং: ডিজনি প্লাস হটস্টার ও জিও টিভি