পিচ সাইড সাংবাদিক, লিজা মংলাদাসকে অনুসরণ করুন তিনি হিরো আইএসএল সিজন ফোরের পিছনের  দৃশ্যে তুলে ধরবেন indiansuperleague.com এ। অপেক্ষা করুন নতুন পোস্টগুলির জন্য।

ম্যাচ সপ্তাহ ৩:  নভেম্বর ২৯-ডিসেম্বর ৩

চতুর্থ মরসুমের তৃতীয় সপ্তাহ, মানে প্রায় প্রত্যেকটা দল খেলে ফেলেছে নিজেদের দুটি করে ম্যাচ এবং প্রত্যেকে নিজেদের গরম করে নিয়েছে। প্রথম দু  সপ্তাহে আমরা কিছু অসাধারন মুহূর্তের সম্মুখীন হয়েছি। সব মিলিয়ে টিম এবং টিমের পিছনের টিম(সম্প্রচার সহ) শুরুর এই কদিনেই আমাদের পা ভিজে গেছে, চার মাসের একটানা এই ফুটবল অ্যাকশনে সামনে কি হতে চলেছে সেটাই এখন দেখার।

এফসি পুনে সিটি বনাম মুম্বই সিটি এফসি

বুধবারের রাত, সপ্তাহের প্রথম ম্যাচ, মহারাষ্ট্র ডার্বি। তবে এই ম্যাচ আমি গোয়ার বিচের ধারে এক হোটেলে বসেই দেখলাম। বৃহস্পতিবারই আমি গোয়া পৌছে গিয়েছিলাম। কোম্পানির মাখন-রসুন চিংড়ি ও ভাজা ক্যালামরির অবিরাম প্লেট দিয়েই ম্যাচটি উপভোগ করলাম, স্ট্যানডে লাইভ ম্যাচ দেখার পরেই যা আমার কাছে সেরা অনুভুতি।  

সেরাতে অবশ্যই ভাগ্য সাথ দেয়নি মুম্বই সিটি এফসি-র। এফসি পুনে সিটির কাছে ১-২ গোলে হারতে হল তাদের। বলওয়ান্ত সিং-কে ধন্যবাদ, ম্যাচের প্রথমার্ধে তাঁর গলেই এগিয়ে যায় মুম্বই। কিন্তু র‍্যাঙ্কো পপভিচের ছেলেরা ঘুরে দাঁড়াল দ্বিতীয়ার্ধে। অগ্নিশিখার মতো জ্বলে উঠলেন অ্যালফারো।

ম্যাচের চূড়ান্ত মুহূর্তের শেষ গোলের উত্তেজনার আঁচ কে না টের পেয়েছে? স্ট্যালিয়ন্সের সেলিব্রিটি সহ-মালিকা অর্জুন কাপুরও এদিন বেশ ইতিবাচক হয়ে উঠেছিলেন। নিঃশ্চই সেই রাতে পার্টি করেছিল পুনে।

আমি অবশ্য নিজের শেষ ক্যালেমারিতে খেয়ে, পরের দিনের ম্যাচের প্রস্তুতির জন্য নিজের হোটেল রুমের দিকে এগিয়ে গেলাম। এফসি গোয়া বনাম বেঙ্গালুরু এফসি প্রাক ম্যাচের পড়াশুনায় নিজেকে ডুবিয়ে দিলাম।

এফসি গোয়া বনাম বেঙ্গালুরু এফসি

বৃহস্পতিবার: গৌড়ের এই মরসুমের প্রথম হোম ম্যাচ ছিল। গোয়াতেই আমার বড় হয়ে ওঠা, তাই  আমিও বেশ রোমাঞ্চিত ছিলাম। এটি সবসময়ই সুন্দর যখন যদি কাজ আপনাকে বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে আসে তাহলে সেটা সর্বদাই খুব সুন্দর হয়। খুশি তখন বাড়ে যখন ঘর হয় গোয়া আর খেলা হয় ফুটবল।  

আমার সহকর্মী ক্রীড়াবিদ অর্জুন পণ্ডিত এবং আমাদের বিশেষজ্ঞ, ইংল্যান্ডের প্রাক্তন আন্তর্জাতিক রাসেল ওসমানের সহযোগিতায় আমি বেশ আনন্দেই আছি। যেহেতু সমগ্র প্রি-পোস্ট শো গোয়াতে স্টেডিয়াম থেকে সম্প্রচারিত হচ্ছে সেহেতু আনন্দ দ্বিগুণ হচ্ছে। মজার বিষয়: রাসেল এস্কেপ টু ভিক্টরি অন্যতম সেরা খেলার ছবিতে অভিনয় করেন।

এখন অর্জুনের রসিকবোধ আমাদের মধ্যে সব থেকে খারাপ, তাই আমরা বেশির ভাগ সময়টাই মজা করতাম। কিন্তু আমরা ম্যাচ নিয়েও কথা বলতাম, দু দলের শক্তি, দুর্বলতা, দুই দলের আক্রমণের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। দুই স্প্যানিশ কোচের মুখোমুখি লড়াই নিয়ে আলোচনা করার পাশাপাশি ম্যাচটা তেকি গোলের বন্যা হবে নাকি ম্যারম্যারে ম্যাচ হবে সে দিকেও আলোকপাত করলাম।

ম্যাচের আগে, আমি বেঙ্গালুরু এফসির এরিক পারটালুর সঙ্গে কথা বললাম, আগের ম্যাচে জোড়া গোল করে আত্মবিশ্বাস তুঙ্গে থাকা ভাল খেলার প্রতিস্রুতি দেওয়ার পাশাপাশি সাধু ব্যাক্তির মতো আমার সঙ্গে মজার মুখ করে ছবি তোলার জন্য রাজি হয়ে গেলেন।

সমস্ত মজাকে একপাশে রাখলে এদিন আমরা একটা রোমাঞ্চকর ম্যাচ উপহার পেয়েছিলাম।

প্রথমার্ধের আগে বেঙ্গালুরু গোলরক্ষক গুরপ্রিত সিং সান্ধুর লাল কার্ড দেখা ও বেঙ্গালুরু দশ জনে হয়ে যাওয়া একটা বড় প্রশ্ন তুলেছিল। সকলে ভেবেছিলেন ম্যাচটা এক পেশে হবে। কিন্তু দারুন লড়াই দিয়েছিল বেঙ্গালুরু। কোরোর হ্যাটট্রিক, গোয়ার ৪-৩ গোলে ম্যাচ জয়, খেলায় মোট সাতটি গোল ও একটি লাল কার্ড, যা একটা ছোট নাটকের থেকে কম কিছু নয়।এই কারনেই ফুটবলকে মস্তিষ্কপূর্ণ খেলা বলা হয়।

জামশেদপুর এফসি বনাম এটিকে

শুক্রবার একদিনের জন্য আমি মুম্বই ফিরে এলাম – এবং এদিন বেশির ভাগ সময়টা মেনি-পেডি করতে করতে জামশেদপুর এফসি বনাম এটিকে ম্যাচ দেখেই কাটল। আপনি যখন পুরো দেশ ঘুরছেন, পায়ে হেঁটে মাঠে সাংবাদিকতা করেন, সর্বদা তথ্য মুখস্থ করতে হয়, এত কিছুর মধ্যেও আপনাকে নিজের নোখকে পারফেক্ট ভাবে পালিশ করাটা খুব দরকার।

বন্ধুরা আপনারা প্রতি সন্ধ্যায় সাত গোলের মজা পাবেননা।এদিনের ম্যাচের ফল ০-০। মরসুমের প্রথম গোলটা পেলনা ম্যান অফ স্টিল। তাঁর থেকেও বেশি খারাপ লাগার বিষয়, নতুন দল নিজেদের ঘরের মাঠে প্রথমবার নেমে না জিততে পারল, না গোল করতে পারল।

দিল্লি ডায়নামোস এফসি বনাম নর্থইস্ট ইউনাইটেড এফসি

শনিবার আমায় ঘুম থেকে উঠতে হল ভোর পাঁচটায়, বিমান বন্দরে গিয়ে দিল্লি উরে গেলাম। সারা সপ্তাহের ক্লান্তি, ভোরের ফ্লাইটে ঘুমন্ত চোখেই উঠলাম, কিন্তু লায়ন্স বনাম হাইল্যান্ডরসদের ম্যাচ আমায় উত্তেজিত করছিল।   

যেহেতু আমরা প্রতি সপ্তাহে কার্যক্রমে উড়ে যেতে হচ্ছে, সেহেতু দলের প্রত্যেক সদস্য তাদের নিজস্ব ঢালের টিপস এবং ট্রিকস রেখে দেয়, যাতে তারা এই সময়টা ঘুমিয়ে নিতে পারে। আমার সিক্রেট হল একটি সুপার নরম রেশম চোখের মাস্ক, যেটা আলোকে সম্পূর্ণ আটকে দেয়।

এদিনের সন্ধ্যায় দিল্লি নিঃশ্চল ছিল, কিন্তু হাইল্যান্ডারসরা আগুনে পুড়ছিল। তারা যে এখনও পর্যন্ত খেলে ফেলেছিল দুটি ম্যাচ, কিন্তু এখনও জয়ের মুখ দেখেনি, এমনকি এখনও পর্যন্ত গোলও করতে পারেনি নর্থইস্ট, তাই এই ম্যাচে জ্বলে উঠতে চেয়েছিল তারা, ম্যাচের প্রথমার্ধেই দুটো গোল করে তারা সেটা স্পষ্ট করে দেয়।   

এদিন দুরন্ত ম্যাচ খেললেন হিলিচরণ নারজারি, পোস্ট ম্যাচ সাক্ষাৎকারের সময় আমি বুঝতে পারলাম সে দলের আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে এনেছে, সত্যি নিজের দলকে গর্বিত করেছে সে। এদিনের ম্যাচে এই ফলটা খুব দরকার ছিল।   

এটি ছিল একটি তারকা খচিত রাতারাতি। জন আব্রাহাম আনন্দে ভেসে গেলেন, দলের সঙ্গে তিনি পোস্ট ম্যাচ হাডেলডও করলেন। দিল্লি ডায়নামোসের নতুন ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর জ্যাকলিন ফার্নান্দেজের এদিনের উপস্থিতি দলের ছেলেদের খারাপ ফলের হতাশাটা কিছুটা কাটিয়েছিল। এবং সর্বপরি শ্রীমতি নিতা আম্বানি ব্যাখ্যা করলেন এই মরসুমে কিভাবে এই মরসুমে ভারতীয় উদীয়মান ফুটবলাররা উজ্জ্বল ফুটবলের আকাশে ফুটে উঠছে। সত্যি একটা দারুন মুহূর্ত তৈরি হয়েছিল।   

রবিবারের সকাল: আমার জন্য আরেকটি লাল চোখ! কিন্তু আমি মুম্বই যাচ্ছিলাম, যেখানে আমি বর্তমানে থাকি, সোমবার ও মঙ্গলবার কোন ম্যাচ না থাকায় দুই দিনের ছুটি। এই দুদিনের জীবন আমার হোটেল এবং স্যুটকেসেই বন্ধ রাখি।  সপ্তাহে একবার আপনি বাড়িতে এসেছেন মানে আপনি আপনার লন্ড্রির কাজটা  সঠিকভাবে করিয়ে নিন।

এরপর রবিবারের দুটো ম্যাচই আমি আমার বিছানায় বসে স্বাচ্ছন্দ্যেই দেখলাম।  

এফসি পুণে সিটি বনাম চেন্নাইয়িন এফসি

আয়োজক দল পুনের বিরুদ্ধে ১-০ গোলে জয় পেল চেন্নাই। ম্যাচ দেখার পর আমার জন ক্রুফের কথা মনে পরে গেল, তিনি বলেছিলেন, ফুটবল ম্যাচে গোল করা আর জেতাটাই শেষ কথা। এদিন রাতের ম্যাচে সেই জিনিসটাই দেখতে পেলাম আমরা। পুরো ম্যাচে প্রাধান্য বজায় রাখল পুনে, কিন্তু ম্যাচের শেষে গোল করে তিন পয়েন্ট নিয়ে ঘরে ফিরল চেন্নাই। একেই তো বলে সুপার মাচান্স, এদিনের রাতের ম্যাচে যা দেখলাম আমরা।

কেরালা ব্লাস্টার্স এফসি বনাম মুম্বই সিটি এফসি

অন্যদিকে ঘরের মাঠে নিজেদের তৃতীয় ড্র টাও করে ফেললো কেরালা। এদিনের ম্যাচে তাদের বিপক্ষে ছিল মুম্বই। তবে এদিন প্রথম গোল করে এগিয়ে গিয়েছিল কেরালা। বারবাতভের থ্রু বল ফলো করে রিনো অ্যান্টো একটা অসাধারন ক্রস বারান, যা মার্ক সিফনিওস গোলে বদল করতে ব্যর্থ হননি।

মুম্বইকে স্মতায় ফেরানোর জন্য বলওয়ান্ত সিং-কে ধন্যবাদ। ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধে, খেলা শেষ হওয়ার কিছুক্ষণ আগে গোল করেন বলওয়ান্ত। প্রথম হলুদ কার্ড দেখার কিছুক্ষণের মধ্যেই দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখেন সিকে বিনিথ।   

কোচিতে ম্যাচ শেষ হয় ১-১ এ, তৃতীয় সপ্তাহের ম্যাচ শেষ হয়।

দ্বিতীয় রাউন্ড শেষ হওয়ার সাথে সাথেই আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। চতুর্থ সপ্তাহের জন্য নিজেকে রিচার্জ করার জন্য। আগামী সপ্তাহে আমার হিরো আইএসএল অভিজ্ঞতার কথা জানার জন্য সঙ্গে থেকেও। আনেক গল্প নিয়ে আমি ফিরব হির আইএসএল অভিজ্ঞতায়।